বরগুনার আমতলীতে বাস কাউন্টার দখলে নেওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ১৭ জন আহত হয়েছে। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমতলী পৌর এলাকার বাঁধঘাটে এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে রাহাত ফকির (২৯), ফরহাদ ফকির (৩২), আলী (২৫), সামসুল হক চৌকিদার (৪২), রেজাউল চৌকিদার (৩৫), বেল্লাল চৌকিদার (৩০), আল আমিন (৩৭), মিজানুর রহমান (৩৫), শহীদ (২১), বায়েজিদ (২৬) ও মিল্টনকে (৩৮) পটুয়াখালী ও বরিশাল শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অন্য ব্যক্তিদের স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আমতলী পৌরসভার বটতলা ইউনিক পরিবহনের কাউন্টার দখল নিয়ে আমতলী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কবির ফকির ও আমতলী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সামসুল হক চৌকিদারের মধ্যে বিরোধ চলছে।
সামসুল হক চৌকিদারের দাবি, তাঁকে ইউনিক পরিবহন কর্তৃপক্ষ কাউন্টার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। অন্যদিকে কবির ফকিরের দাবি, ইউনিক পরিবহন কর্তৃপক্ষ তাঁকে কাউন্টার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। তবে চার মাস ধরে কবির ফকির ওই বাস কাউন্টার পরিচালনা করেছেন।

শনিবার সকালে যুবদল নেতা সামসুল হক চৌকিদারের লোকজন বাস কাউন্টারটি দখল করতে যান। এ সময় কবির ফকিরের চাচাতো ভাই আমতলী উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত আহ্বায়ক জালাল ফকিরের দুই ছেলে রাহাত ফকির ও ফরহাদ ফকিরের নেতৃত্বে বাস কাউন্টার দখলে বাধা দেওয়া হয়। এ সময় দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, শনিবার সকালে বটতলা ঢাকা বাসস্ট্যান্ডের ইউনিক পরিবহন কাউন্টারের তালা সামসুল হক চৌকিদারের লোকজন ভেঙে ফেলেন। এ নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে ওই দিন দুপুরে বাঁধঘাট চৌরাস্তায় কবির ফকিরের লোকজন সামসুল হক চৌকিদারের ওপর হামলা চালান। পরে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সোয়েব ইসলাম হেলাল বলেন, ‘আমার ভাই বেল্লাল চৌকিদার কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে রাহাত ফকির ও ফরহাদ ফকিরসহ তার সহযোগীরা হামলা করে আট লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে আমার ভাইকে কুপিয়ে জখম করেছে।’

ইউনিক পরিবহন কর্তৃপক্ষ আমাকে লিখিত কাউন্টার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু কবির ফকির কাউন্টার জোরপূর্বক দখলে রেখেছেন। আমি এ বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি।সামসুল হক চৌকিদার, আমতলী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক

আমতলী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সামসুল হক চৌকিদার বলেন, ‘ইউনিক পরিবহন কর্তৃপক্ষ আমাকে লিখিত কাউন্টার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু কবির ফকির কাউন্টার জোরপূর্বক দখলে রেখেছেন। আমি এ বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। পুলিশ চেষ্টা করেও কবির ফকিরকে মানাতে পারেনি। শনিবার আমি কাউন্টারে গেলে কবির ফকিরের লোকমার কাউন্টার সামসুল হক চৌকিদার ও তার লোকজন দখলে করতে যায়। এতে আমার লোকজন বাধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সামসুল হক চৌকিদার ও তার লোকজন আমার দুই ভাইয়ের ছেলেসহ সাতজনকে কুপিয়ে জখম করেছে।জন আমাদের দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করেছে।’

আমার কাউন্টার সামসুল হক চৌকিদার ও তাঁর লোকজন দখলে করতে যায়। এতে আমার লোকজন বাধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সামসুল হক ও তাঁর লোকজন আমার দুই ভাইয়ের ছেলেসহ সাতজনকে কুপিয়ে জখম করেছে।কবির ফকির, আমতলী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক

তবে এ বিষয়ে আমতলী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কবির ফকির বলেন, ‘আমার কাউন্টার সামসুল হক চৌকিদার ও তাঁর লোকজন দখলে করতে যায়। এতে আমার লোকজন বাধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সামসুল হক ও তাঁর লোকজন আমার দুই ভাইয়ের ছেলেসহ সাতজনকে কুপিয়ে জখম করেছে।’

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা রাশেদ মাহমুদ বলেন, আহত সাতজনকে চিকিৎসা দিয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আমতলী থানার ওসি মো.

আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ল কজন ব ব এনপ র স ঘর ষ য বদল উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

আসামিকে আপ্যায়নের ঘটনায় আদালত পরিদর্শকসহ ৬ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার

সন্ত্রাস দমন, বিস্ফোরক নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলার আসামি এবং আমতলী পৌর যুবলীগ সভাপতিকে পুলিশের ব্যারাকে নিয়ে আপ্যায়নের অভিযোগে আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পরিদর্শক বশির আলমসহ ছয় পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

প্রত্যাহার হওয়া অন্য পুলিশ সদস্যরা হলেন এ টি এস আই মামুন, কনস্টেবল আশিস, মো. ফয়সাল, সোহরাব মিয়া ও শাহদাত হোসেন। তাঁদের পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার বিকেলে আদালত থেকে তাঁদের প্রত্যাহার করা হয়। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন বরগুনা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আল-মামুন শিকদার।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২ সেপ্টেম্বর আমতলীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পুলিশ ব্যারাকে মামলার আসামি আরিফ-উল হাসানকে ভাত খাওয়ান আদালত পরিদর্শক বশির আলম। এ সময় তাঁর সঙ্গে ব্যারাকের ভেতরে দুজন নারী, দুজন পুরুষ এবং একটি শিশু ছিল। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিও প্রকাশের পর আসামিকে আপ্যায়নের অভিযোগে আদালত পরিদর্শক বশির আলমসহ ছয় পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব থেকে গতকাল প্রত্যাহার করা হয়।

বরগুনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আল-মামুন শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, আমতলীতে আদালতের গারদখানার সংস্কারকাজ চলায় আসামিকে পুলিশ ব্যারাকে নেওয়া হয়েছিল। পরে সেখানে তাঁর খাবারের আয়োজন করা হয়। ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসে। তাঁদের নির্দেশে ছয় পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আসামিকে আপ্যায়নের ঘটনায় আদালত পরিদর্শকসহ ৬ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার