যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ১৫ মাস আগে। এতে ব্যয় হয়েছে ৩৮ কোটি টাকা। কিন্তু প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় ১০০ শয্যার কার্যক্রম আজও শুরু করা যায়নি। এতে নতুন ভবন থাকতেও রোগীদের বারান্দা ও ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। উপরন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে তিনটি গুচ্ছে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালের এ অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে ছয়তলাবিশিষ্ট হাসপাতালের মূল ভবন ২১ কোটি ৪৬ লাখ ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালের ২৯ এপ্রিল এই ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এই কাজ শেষ হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের পাঁচটি আবাসিক ভবন ১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। গত ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর শুরু হয়ে ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট এসব ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়। এ ছাড়া অক্সিজেন প্ল্যান্টসহ সরবরাহ লাইন স্থাপনে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কক্ষসংকটের কারণে ডায়রিয়া ওয়ার্ড খোলা হয়েছে শিশু ওয়ার্ড কার্যক্রম চলছে খোলা বারান্দায়। হিম বাতাস হু হু করে জানালার গ্রিল দিয়ে ভেতরে ঢুকছে। এতে রোগী ও স্বজনদের জবুথবু অবস্থা।

সম্প্রতি দেখা গেছে, শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় কয়েকটি শয্যা ফেলে রোগী রাখা হয়েছে। পাঁচ রোগীকে শয্যায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চারজনই শিশু। জানালার গ্রিল দিয়ে হিম বাতাস ঢুকছে। রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা কম্বল গায়ে জড়িয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৪ বছর বয়সী সাদিয়া খাতুনকে চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন তাঁর বাবা-মা। বাবা-মা তাকে কোলে নিয়ে বসে আছেন। সাদিয়ার বাবা শান্তি মিয়া বলেন, ‘শীতের মধ্যে বারান্দায় থাকা খুব কষ্টকর। ওয়ার্ডের ভিতরে বিছানা দিলে ভালো হতো। জানালা দিয়ে রাতে খুব ঠান্ডা বাতাস আসে। খাতা (কাঁথা), কাপড় গরম হতেই চায় না।’

শয্যাসংকটের কারণে ওয়ার্ডগুলোয় শয্যাসংকটের কারণে রোগীদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আছে চিকিৎসা ও কর্মচারীর সংকট। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার হলেও অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকে। বহির্বিভাগেও রোগীদের চাপ থাকে।

হাসপাতালে জায়গা সংকটের কারণে ডায়রিয়া ওয়ার্ড খোলা বারান্দায় স্থাপন করতে হচ্ছে। অথচ পাশেই ছয়তলা নতুন ভবন পড়ে রয়েছে। কিন্তু ১০০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন না মেলায় ওই ভবন ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

সম্প্রতি দেখা গেছে, চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ছয়তলা ভবনের সামনে অ্যাম্বুলেন্সসহ কয়েকটি গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা আছে। গরু-ছাগল চরে বেড়াচ্ছে। হাসপাতালে ভবনের রং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভবনে স্থাপিত লিফট, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র ও অক্সিজেন সরবরাহ লাইনও নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর নাজমুল হক বলেন, ‘স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর হচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান। আমরা প্রকল্পের কাজ শেষ করে ভবনগুলো স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছি। এখন সব দায়দায়িত্ব স্বাস্থ্য বিভাগের।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আহসানুল মিজান রুমী বলেন, ‘প্রশাসনিক অনুমোদন না পেলে হাসপাতালটি ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা যাচ্ছে না। প্রয়োজনীয় আসবাব, জনবল, রোগীদের জন্য বরাদ্দ—এসব প্রশাসনিক অনুমোদনের বিষয়। প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দুই দফায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে অগ্রগতির কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই।’

চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য যশোর সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকেও ২০২৪ সালের ২১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আরেকটি চিঠি পাঠানো হয়। এ বিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন মাসুদ রানা বলেন, ‘চিঠি পাঠানোর পরেই তো দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হলো। এরপর সরকার পরিবর্তন হয়ে গেল। এ জন্যে প্রশাসনিক অনুমোদন পেতে বিলম্ব হচ্ছে। আমরা আবার নতুন করে চেষ্টা করব।’

চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১০০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদনের অগ্রগতি জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) আফরিনা মাহমুদ বলেন, চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১০০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য পাঠানো চিঠি পাওয়া গেছে। জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানসহ নানা কারণে অনুমোদনের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয়নি। শিগগিরই লাইন ডিরেক্টরের মাধ্যমে বিষয়টি অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হবে।

চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চিকিৎসক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শয্যাসংকটের কারণে ওয়ার্ডগুলোয় শয্যাসংকটের কারণে রোগীদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আছে চিকিৎসা ও কর্মচারীর সংকট। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার হলেও অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকে। বহির্বিভাগেও রোগীদের চাপ থাকে।

তিনজন চিকিৎসক দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এ ছাড়া জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদে তিনজন চিকিৎসক আবার সপ্তাহে চার দিন করে প্রেষণে যশোর জেনারেল হাসপাতালে থাকেন। তাঁরা সপ্তাহে দুই দিন করে এই হাসপাতালে থাকেন।মুহাম্মদ আহসানুল মিজান রুমী, চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা

চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১০০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন পেলে এখানে ৭৪ জন চিকিৎসক নিয়োগে পেতেন। কিন্তু এখানে ৫০ শয্যার জনবলকাঠামো অনুযায়ী ৩২টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র আটজন। এতে এখানে এসে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না।

চিকিৎসক-সংকট থাকার কথা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আহসানুল মিজান রুমী বলেন, ‘তিনজন চিকিৎসক দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এ ছাড়া জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদে তিনজন চিকিৎসক আবার সপ্তাহে চার দিন করে প্রেষণে যশোর জেনারেল হাসপাতালে থাকেন। তাঁরা সপ্তাহে দুই দিন করে এই হাসপাতালে থাকেন। ফলে চিকিৎসাসেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স স ব স থ য ও পর ব র ন চ ক ৎসক দ ন কর ভবন র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদাবাজ রিয়াদের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ মিশনপাড়া

নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশনপাড়ায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি, হুমকি ও হয়রানিমূলক মামলার ভয়ঙ্কর এক চক্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন সাধারণ মানুষ।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, রিয়াদ  দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার বাসিন্দাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্মাণকাজ থেকে শুরু করে দোকান বসানো পর্যন্ত সবকিছুতেই চাঁদা দাবি করেন তিনি ও তাঁর অনুসারীরা।

চাঁদা না দিলে থেমে যায় কাজ, চলে হামলা, পরে দেওয়া হয় সাজানো মামলা। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন রয়েছে রহস্যজনকভাবে নীরব।

স্থানীয়রা বলছেন, রিয়াদ নিজে কোনো রাজনৈতিক আদর্শের লোক না হলেও, একাধিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে এবং মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে তাঁদের ব্যবহার করেন নিজের স্বার্থে।

রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় রিয়াদ এতটাই দাপটের সঙ্গে চলাফেরা করেন যে, থানায় একাধিক অভিযোগের পরও তাঁর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার অন্যতম আসামিও এই রিয়াদ। সেইসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় তাঁর নামে একাধিক চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মামলা রয়েছে।

এমনকি তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু তারপরও তিনি দিব্যি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আদায় করে চলেছেন চাঁদা, দখল করে নিচ্ছেন জমি, দোকান।

মিশনপাড়ায় বর্তমানে যেসব ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে, তার মধ্যে প্রায় প্রতিটির কাজেই বাধা দেওয়া হয়েছে রিয়াদের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাড়ির মালিক বলেন, “আমরা পরিবার নিয়ে এখানে থাকি।

নিজের পৈতৃক জমিতে ভবন নির্মাণ করছি। হঠাৎ একদিন ৪-৫ জন যুবক এসে জানায়, বসের অনুমতি ছাড়া কাজ হবে না। পরে রিয়াদ নিজেই ফোন করে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। না দিলে মালামাল ফেলে দেওয়া, শ্রমিকদের মারধরের হুমকি দেয়।”

এই অভিজ্ঞতা শুধু একজনের নয়। অন্তত ৮-১০ জন ভবন মালিক এবং কয়েকজন ঠিকাদার একই ধরনের ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। তাঁদের ভাষ্য, রিয়াদের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিয়মিতভাবে ১ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে। কেউ না মানলে থেমে যায় কাজ, চলে হামলা-মামলা আর হয়রানির স্বীকারে।

মিশনপাড়ার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, রিয়াদ এলাকায় একটি ভয়ঙ্কর ‘মিনি মাফিয়া নেটওয়ার্ক’ গড়ে তুলেছেন। ভবন নির্মাণ, দোকান বসানো, এমনকি ফুটপাতে ব্যবসা করতেও তাঁকে চাঁদা দিতে হয়। অন্যথায় চলতে থাকে ভয় দেখানো, ভাঙচুর, এমনকি জীবননাশের হুমকি। অনেকেই বলেন, তাঁরা যেন জিম্মি হয়ে পড়েছেন রিয়াদ ও তাঁর চক্রের হাতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, “আমার পৈতৃক জমিতে ভবন করতে গিয়ে বিপদে পড়েছি। ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। না দিলে শ্রমিকদের মারধর করবে বলে হুমকি দিয়েছে। থানায় গিয়ে অভিযোগ করলাম, কিন্তু কিছুই হয়নি। বরং রিয়াদ খবর পেয়ে হুমকি দিয়ে চাঁদার পরিমান বাড়িয়ে দিচ্ছে।”

একজন ঠিকাদার বলেন, “ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে আমাদের এখন বেশি খরচ হয় রিয়াদকে সামলাতে। কোনো আইন-শৃঙ্খলা নেই। যে যেখানে ইচ্ছা চাঁদা চাচ্ছে, না দিলে মামলা, মারধর। কোথাও নালিশ করতে পারি না, বরং নালিশ করলেই বিপদ আরও বাড়ে।”

আরেকজন ঠিকাদার বলেন, “রিয়াদ এখন এলাকাবাসীর গলার কাঁটা। কাজ শুরু করলেই তার লোকজন এসে বলে, বসের অনুমতি লাগবে। চাঁদা না দিলে মালামাল উধাও, শ্রমিক পালায়, পরে থানায় গিয়ে দেখি আমার নামে নাকি মারামারির মামলা!”

ভুক্তভোগীরা জানান, শুধু ভীতি ও চাঁদাবাজি নয়, রিয়াদ ও তাঁর সহযোগীরা একটি সংঘবদ্ধ আইনি হয়রানির চক্রও তৈরি করেছেন। কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে বা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে উল্টো তাঁদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। পরবর্তীতে সেই মামলা আপোষে নিষ্পত্তির জন্য আবারও দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, রিয়াদের এতোসব অপরাধ কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়ায় মানুষের মনে প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে, কেন এই নীরবতা? তাঁর নামে একাধিক মামলা ও ওয়ারেন্ট থাকার পরও কীভাবে তিনি খোলা হাওয়ায় ঘুরে বেড়ান? পুলিশ কি ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁকে আড়াল করছে?

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন। অপরাধী হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে এলাকাবাসীর দাবি ভিন্ন।

তাঁরা বলছেন, শুধু অভিযোগ নয়, ভিডিও প্রমাণ, অডিও ক্লিপস, এমনকি লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাননি তাঁরা। বরং অভিযোগ জানানোর পর হুমকির মাত্রা বেড়ে যায়। অনেকে ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন বা কাজ বন্ধ রেখেছেন।

রিয়াদের বিরুদ্ধে এইসব অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

স্থানীয় কাউন্সিলর ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছেও বহুবার গেছেন এলাকাবাসী। কিন্তু কেউই কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে আসেননি। বরং অনেকে অভিযোগ করেন, রিয়াদ একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক গ্রুপের ‘অঘোষিত কার্যকর্তা’ হিসেবে কাজ করেন, এবং সেই পরিচয়ের কারণেই তাঁকে ঘিরে রয়েছে এক ধরনের অদৃশ্য নিরাপত্তা।

মিশনপাড়ার এই অবস্থা এখন পুরো নারায়ণগঞ্জ শহরের নিরাপত্তা ও সুশাসনের জন্য ভয়ঙ্কর এক সংকেত হয়ে উঠেছে। নাগরিক সমাজের প্রশ্ন , যদি প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও একাধিক মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার না করা হয়, তবে আইনের শাসন কোথায়? 

সচেতন মহলের দাবি, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে রিয়াদ ও তাঁর চক্র আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তখন শুধু মিশনপাড়া নয়, নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রতিটি প্রান্তেই গড়ে উঠবে এমন চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট।

এখনই সময় রিয়াদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার, নয়তো ঘটতে পারে ভয়ংকর অপ্রীতিকর কোন ঘটনা। আক্রান্ত হতে পারে ভুক্তভোগীরা।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ