সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, তাঁর স্ত্রী শিরিন আখতার ও ছেলে রেজওয়ান শাহনেওয়াজের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খানসহ চারজনের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পৃথক পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো.

জাকির হোসেন আজ রোববার এ আদেশ দেন।

এর আগে সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করে দুদক।

দুদক আদালতকে লিখিতভাবে জানায়, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এবং তাঁর অন্য আত্মীয়-স্বজনদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডার–বাণিজ্য, দলীয় পদ ও মনোনয়ন–বাণিজ্য, নিয়োগ–বাণিজ্য, সরকারি জমি আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। এ অবস্থায় আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী ও ছেলে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। শুনানি নিয়ে আদালত আব্দুর রাজ্জাক ও তাঁর স্ত্রী এবং সন্তানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।

এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

এর বাইরে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমালের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত। দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এস এম পারভেজ তমালের বিরুদ্ধে শেয়ার কারসাজিসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে।  এস এম পারভেজ বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও দুদক জানতে পেরেছেন। আদালত শুনানি নিয়ে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।

জাহিদ মালেক ও তাঁর ছেলের আয়কর নথি জব্দের আদেশ

এদিকে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও তাঁর ছেলে রাহাত মালেকের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত আজ এ আদেশ দেন।

এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি জাহিদ মালেক ও তাঁর ছেলে রাহাত মালেকের ২৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ১২ ডিসেম্বর  জাহিদ মালেক ও রাহাত মালেকের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

দুদক সূত্র জানায়, মামলায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে ৬১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ও তাঁর ছেলে রাহাত মালেকের বিরুদ্ধে ১১ কোটি ৮৪ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

নাঈমুল ও তাঁর স্ত্রীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান ও তাঁর স্ত্রী নাসিমা খান মন্টির আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত রোববার এ আদেশ দেন।

এর আগে গত ২৫ আগস্ট সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে তাঁদের স্ত্রী ও ছেলে–মেয়েদর ব্যাংক হিসাবও স্থগিত করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তাঁদের ব্যাংক হিসাব স্থগিতের এ নির্দেশনা দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠিয়ে দেয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

সঞ্চয়পত্র কেনার পর যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন

পাসওয়ার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে একজনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা টাকা আরেকজন তুলে নিয়ে গেছে। এ ঘটনা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে সঞ্চয়পত্র খাতে। তাই সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের আরও সতর্ক থাকার বিষয়টি সামনে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় থেকে গত ২৩ অক্টোবর ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনেন এক ব্যক্তি। তাঁর ব্যাংক হিসাব অগ্রণী ব্যাংকের জাতীয় প্রেসক্লাব শাখায়। ২৭ অক্টোবর এই সঞ্চয়পত্র ভাঙানো হয় এবং টাকা নেওয়া হয় এনআরবিসি ব্যাংকের দিনাজপুর উপশাখার অন্য এক ব্যক্তির হিসাবে। ওই টাকা জমা হওয়ার কিছু সময়ের মধ্যে ব্যাংকটির রাজধানীর শ্যামলী শাখা থেকে তুলে নেওয়া হয়।

একই প্রক্রিয়ায় একই দিনে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ৩০ লাখ ও এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এলে তা আটকে দেওয়া হয়।

কথা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র কেনার পরই আপনার দায়িত্ব শেষ হয়ে গেল? উত্তর হচ্ছে ‘না’। সঞ্চয়পত্র কিনলেন মানে আপনি বিনিয়োগ করলেন। বিনিয়োগ যেহেতু করলেন, তা সুরক্ষিত ও ঝামেলামুক্ত রাখার দায়িত্বও আপনার ওপর বর্তায়। এ জন্য কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। কী করতে হবে, সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো।

১. নথিপত্র যত্নে রাখুন

সঞ্চয়পত্র কেনার পর ব্যাংক বা সঞ্চয় অফিস থেকে যে মূল নথি বা ডকুমেন্ট দেওয়া হয়, এতে একটি কিউআর কোড থাকে। কিউআর কোড আছে কি না, তা দেখতে হবে। এ নথি যত্নসহকারে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ, যেকোনো প্রয়োজনে তা লাগবে। সম্প্রতি সঞ্চয়পত্রের অর্থ চুরির মতো ঘটনা ঘটলে ওই সব নথি প্রয়োজন হবে।

২. ব্যাংক হিসাব সক্রিয় রাখুন

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ও আসল টাকা ব্যাংক হিসাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হয়। তাই নিশ্চিত করুন যে আপনার দেওয়া ব্যাংক হিসাবটি সব সময় সক্রিয় আছে। যদি ব্যাংক হিসাব বন্ধ বা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে যোগাযোগ করে তা আবার চালু করুন। না হলে মুনাফার টাকা পেতে ভোগান্তি বাড়বে। এমনকি আসল টাকা পেতেও ভোগান্তি হতে পারে। কোনো কারণে ব্যাংক হিসাব বদলাতে হলে আবেদন করে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে নতুন হিসাব করতে হবে।

৩. মুঠোফোন নম্বর পরিবর্তন

বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের সঙ্গে সংযুক্ত মুঠোফোন নম্বর বা ব্যাংক হিসাব নম্বর তাৎক্ষণিকভাবে পরিবর্তনের সুযোগ নেই। কোনো কারণে মুঠোফোন নম্বর বদলাতে হলেও আবেদন করে জানাতে হবে সঞ্চয় অধিদপ্তরকে। মুঠোফোনেই সঞ্চয়পত্র যে হিসাবে আছে, সেই হিসাবের লেনদেনের বার্তা আসে।

৪. প্রতারণা এড়ানো

যেকোনো তথ্য পরিবর্তন, সুদ বা আসল টাকা তোলার জন্য আপনাকে অবশ্যই যে অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কিনেছেন, সেখানেই আবেদন করতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার মুঠোফোন নম্বরে আসা কোনো ওয়ানটাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) বা গোপন তথ্য কাউকে জানাবেন না। যতটা পারা যায় গোপন রাখতে হবে। পাসওয়ার্ড জালিয়াতি করেই সম্প্রতি অর্থ উত্তোলনের ঘটনা ঘটেছে।

৫. নমিনির তথ্য সঠিক হতে হবে

নিশ্চিত করুন যে নমিনির নাম ও অন্যান্য তথ্য সঠিকভাবে নথিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গ্রাহক মারা গেলে নমিনি যাতে সহজেই সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করতে পারে বা মুনাফা উত্তোলন করতে পারে, সে জন্য সঠিক তথ্য থাকা জরুরি।

৬. মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়ন

জরুরি প্রয়োজনে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সঞ্চয়পত্র ভাঙানো বা নগদায়ন করা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে মুনাফার হার কিছুটা কম হতে পারে বা জরিমানা কাটা হতে পারে। এ বিষয়ে নিয়মকানুন জেনে রাখা গ্রাহকেরই দায়িত্ব। না জানা থাকলে অফিসে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়বেন এবং প্রত্যাশা অনুসারে কম টাকা পেলে হতাশা হতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সঞ্চয়পত্র কেনার পর যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন
  • ৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের ই-রিটার্ন জমা দিতে বলেছে এনবিআর