রানি বিলকিস ও হজরত সোলায়মানের (আ.) ঘটনা
Published: 10th, February 2025 GMT
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বিলকিস নামে ইয়েমেনের এক নারীর গল্প বলেছেন। বিলকিস হজরত সোলায়মান (আ.)-এর যুগে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের সম্রাজ্ঞী ছিলেন। সোলায়মান (আ.) বিলকিসের সাম্রাজ্যের কথা জানতেন না। তিনি তাঁর গোয়েন্দা পাখি হুদহুদের মাধ্যমে জানতে পারেন, কারো আনুগত্য স্বীকার না করেই বিলকিস বিস্তীর্ণ একটি অঞ্চল শাসন করছেন। তিনি তাঁকে আত্মসমর্পণের আহ্বান করলেন। কোরআনের সুরা নমলের ২৪টি আয়াতে আল্লাহ ঘটনাটি তুলে ধরেছেন। কোরআনের ভাষ্যে ঘটনাটি বর্ণনা করা যাক।
কোরআনে আছে, সে (হুদহুদ) দেরি না করে এসে পড়ল এবং বলল, ‘আমি এমন সব তথ্য লাভ করেছি, যা আপনার জানা নেই আর সাবা থেকে সঠিক খবর নিয়ে এসেছি। আমি এক নারীকে দেখলাম সে জাতির ওপর রাজত্ব করছে। তাকে সবই দেওয়া হয়েছে ও তার আছে এক বিরাট সিংহাসন। আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম, তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করছে। শয়তান ওদের কাছে ওদের কাজকর্ম শোভন করেছে ও ওদের সৎ পথ থেকে দূরে রেখেছে যেন ওরা সৎ পথ না পায় এবং যিনি আকাশ ও পৃথিবীর গোপন বিষয়কে প্রকাশ করেন, যিনি জানেন যা তোমরা গোপন কর ও যা তোমরা প্রকাশ কর, সেই আল্লাহকে যেন ওরা সিজদা না করে।
আরও পড়ুনঅন্যের গোপন দোষ সন্ধান করতে নিষেধ করেছে ইসলাম০১ নভেম্বর ২০২৩আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনিই মহা আরশের অধিপতি।’ (সোলায়মান) বলল, ‘আমি দেখব, তুমি সত্য বলছ না মিথ্যা বলছ? তুমি আমার এ চিঠি নিয়ে যাও। এ তাদের কাছে দিয়ে এসো। তারপর তাদের কাছ থেকে সরে পড়ো ও দেখো তারা কী উত্তর দেয়।’ (সাবা রানি বিলকিস) বলল, ‘পারিষদবর্গ! আমাকে এক সম্মানিত পত্র দেওয়া হয়েছে। এ সোলায়মানের কাছ থেকে। আর তা এই: করুণাময়, পরম দয়াময় আল্লাহর নামে। অহংকার করে আমাকে অমান্য করো না, আনুগত্য স্বীকার করে আমার কাছে উপস্থিত হও।’ (বিলকিস) বলল, ‘পারিষদবর্গ! আমার এ সমস্যায় তোমাদের পরামর্শ দাও, আমি যা করি তা তো তোমাদের উপস্থিতিতেই করি।’ ওরা বলল, ‘আমরা তো শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা; তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আপনার, কী নির্দেশ দেবেন, তা আপনিই দেখুন।’ (বিলকিস) বলল, ‘রাজা-বাদশাহরা যখন কোনো জনপদে প্রবেশ করে, তখন তাকে বিপর্যস্ত করে দেয় ও সেখানকার মর্যাদাবান ব্যক্তিদের অপদস্থ করে; এরাও তা-ই করবে। আমি তাঁর কাছে উপঢৌকন পাঠাচ্ছি। দেখি, দূতেরা কী উত্তর আনে।’
দূত সোলায়মানের কাছে এলে সোলায়মান বলল, ‘তোমরা কি আমাকে ধনসম্পদ দিয়ে সাহায্য করতে চাও? আল্লাহ তোমাদের যা দিয়েছেন তার চেয়ে উত্তম জিনিস দিয়েছেন আমাকে, অথচ তোমরা তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে উৎফুল্ল বোধ করছ।.
সোলায়মান যখন তা সামনে রাখা দেখল, তখন বলল, এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন, আমি কৃতজ্ঞ না অকৃতজ্ঞ। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তা নিজের জন্য করে, আর যে অকৃতজ্ঞ সে জেনে রাখুক যে আমার প্রতিপালকের অভাব নেই, তিনি মহানুভব।’ সোলায়মান বলল, ‘তার সিংহাসনের আকৃতি বদলে দাও; দেখি সে ঠিক ধরতে পারে, নাকি ভুল করে।’ বিলকিস যখন পৌঁছাল, তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘তোমার সিংহাসন কি এ রকম?’ সে বলল, ‘এ তো এ রকমই। আমরা আগেই সবকিছু জেনেছি ও আত্মসমর্পণও করেছি।’ আল্লাহর পরিবর্তে সে যার পূজা করত, তা-ই তাকে সত্য থেকে সরিয়ে রেখেছিল, সে (বিলকিস) ছিল অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের একজন। তাকে বলা হলো, ‘এই প্রাসাদে প্রবেশ করো।’ যখন সে ওটার দিকে তাকাল, তখন তার মনে হলো এ এক স্বচ্ছ জলাশয় এবং সে তার কাপড় হাঁটু পর্যন্ত টেনে তুলল। সোলায়মান বলল, ‘এ তো স্বচ্ছ স্ফটিকের প্রাসাদ।’ (বিলকিস) বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক। আমি তো নিজের ওপর জুলুম করেছিলাম। আমি সোলায়মানের সঙ্গে বিশ্বজগতের প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পণ করছি।’ (সুরা নমল, আয়াত: ২২-৪৪)
নিজের সিংহাসন সোলায়মান (আ.)-এর দরবারে দেখে বিলকিস অবাক হবেন এবং ক্ষমতা দেখে তাঁকে নবী হিসেবে মেনে নিয়ে আনুগত্য করবেন। তাই তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য সোলায়মান (আ.) কিছু নির্দেশনা দিলেন। বললেন, তাঁর সিংহাসনের ধরন পাল্টে দাও। এরপর দেখি, সে সত্য পথের দিশা পায়, নাকি যারা পথের দিশা পায় না তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়।
রানি বিলকিস আত্মসমর্পণের জন্যই এলেন। তাঁকে সিংহাসনটি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘এটা কি আপনার সিংহাসন?’ তিনি বললেন, ‘তাই তো মনে হয়। আমরা আত্মসমর্পণ করতেই এসেছি।’ রানি বিলকিসকে প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানিয়ে সোলায়মান (আ.) বললেন, ‘প্রাসাদে প্রবেশ করুন।’
প্রাসাদের মেঝে দেখে তিনি ভাবলেন সেটি স্বচ্ছ পানির হ্রদ। বিভ্রান্ত হয়ে পানি থেকে বাঁচানোর জন্য তিনি পায়ের গোছা থেকে কাপড় উঁচু করেন।
সোলায়মান (আ.) বললেন, ‘এটা স্বচ্ছ কাচের প্রাসাদ।’
রানি বিলকিস এসব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গিয়ে সোলায়মান (আ.)-এর অলৌকিক ক্ষমতা উপলব্ধি করলেন। তিনি আত্মসমর্পণ করলেন। বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমি অবশ্যই নিজের প্রতি জুলুম করেছি। আমি সোলায়মানের সঙ্গে বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করছি।’
আরও পড়ুনসুরা আরাফে আছে ইবলিসের কাহিনি ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম র প র আল ল হ র জন য বলল ন ক রআন আপন র ন বলল
এছাড়াও পড়ুন:
তাজউদ্দীন আহমদ দলমতের ঊর্ধ্বে একজন রাষ্ট্রনায়ক: শারমিন আহমদ
স্বাধীনতাযুদ্ধকে যখন শুধু আওয়ামী লীগিকরণ করা হচ্ছিল, তখন তাজউদ্দীন আহমদ সেটার বিরোধিতা করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন তাঁর কন্যা শারমিন আহমদ। তিনি বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ শুধু আওয়ামী লীগের নয়। উনি পুরো জাতির। তাজউদ্দীন আহমদ দলমতের ঊর্ধ্বে একজন রাষ্ট্রনায়ক।
আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘তাজউদ্দীন আহমদ স্মারক বক্তৃতা-২০২৫’ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শারমিন আহমদ। সেখানেই তিনি এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি নিয়ে কথা বলেন শারমিন আহমদ। তিনটি শর্তের ওপর ভিত্তি করে এই চুক্তি হয় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, সে সময় তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছিলেন, স্বীকৃতি বাদে বন্ধুত্ব হয় না। সেই স্বীকৃতি হতে হবে সমতার ভিত্তিতে। সে সময় তাজউদ্দীন আহমদ ভারতীয় সেনাবহিনীর একক কমান্ডে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চাওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘না, এটি যৌথ কমান্ডের ভিত্তিতে হবে। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ।’
আরও পড়ুনজন্মদিনে ডায়েরিতে যা লিখেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ২৩ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনতাজউদ্দীন আহমদ দেশের স্বাধীনতার প্রধান পুরুষ২৮ জুলাই ২০২৫শারমিন আহমদ বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ প্রতিরোধ না করলে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের চুক্তিপত্রে লেখা থাকত ভারতের কাছে পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার যখনই মনে করবে, তখনই ভারতীয় বাহিনীকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে, এটিই ছিল তৃতীয় শর্ত বলে জানান শারমিন আহমদ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ওই শর্তের ভিত্তিতেই ভারতীয় বাহিনীকে প্রত্যাবর্তনের জন্য বলেন।
আরও পড়ুনতাজউদ্দীন আহমদ: রোজনামচার মানুষটিকে বোঝা২৩ জুলাই ২০২৫অনুষ্ঠানে হতাশা প্রকাশ করে শারমিন আহমদ বলেন, এসব ইতিহাস পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এসব ইতিহাস সংরক্ষণ করা হয়নি বলেই ভারতীয়রা এ দেশ স্বাধীন করেছে, এমন বয়ান তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, এটা খুব লজ্জার ব্যাপার। এই তথ্যগুলো নিয়ে ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করতে হবে। কেননা, গৌরবমণ্ডিত ইতিহাস সংরক্ষণ না করা হলে জাতি আরও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। স্মারক বক্তা ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। তাঁর বর্ক্তৃতার শিরোণাম ছিল ‘তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরি : ঐতিহাসিকতা ও রাজনৈতিকতা।’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান।