রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ বহাল চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীদের একাংশ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির সদস্যসচিব রহমত আলী ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক শামসুর রহমান। বক্তব্যে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভাগীয় শহরে হওয়ায় ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামটি যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামটি পরিবর্তন করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বেগম রোকেয়ার নামে বিশেষায়িত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যেত। কেননা রংপুর শহরে (৫ কিলোমিটারের মধ্যে) আরেকটি বেগম রোকেয়া সরকারি মহিলা কলেজ আছে। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে নারীদের উচ্চশিক্ষায় অবদান রেখে চলছে। একই নামে পাশাপাশি দুটি সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিচয় দিতে অস্বস্তিতে ভোগেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে রংপুরে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। তখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও সরকার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।

বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘বেগম রোকেয়া সর্বজন স্বীকৃত জাতীয় ও বৈশ্বিক ব্যক্তিত্ব। তাঁকে আমরা শ্রদ্ধা করি। কিন্তু যার নির্দেশে (শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আমাদের ভাই আবু সাঈদের বুকের তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, তাঁর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রতিষ্ঠাচিহ্ন থাকতে পারে না। এই ফ্যাসিস্টের প্রতিষ্ঠাচিহ্ন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা আমাদের রক্তক্ষরণের কারণ।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শওকাত আলী প্রথম আলোকে বলেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারের বাইরে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার কর্তৃপক্ষ। তিনি শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের রংপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রুম্মান জামান প্রথম আলোকে বলেন, বেগম রোকেয়া নারী হওয়ার কারণে তাঁর নাম পরিবর্তনের বিষয়টি আসছে কি না, তা দেখতে হবে। সারা বিশ্বে বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আছে। বেগম রোকেয়া একজন বিখ্যাত ব্যক্তি। তাঁর নাম নিয়ে এত কাটাছেঁড়া কেন?

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব গম র ক য় সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হচ্ছে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে

জালিয়াতির মাধ্যমে এলসির বিপরীতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে পাঁচটি মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন, তাতে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানও আসামি হতে যাচ্ছেন।

আজ সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় মামলাগুলোর অনুমোদন দেয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি, শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান রহমানের পাশাপাশি তাঁর ছেলে, ভাই, ভাতিজা, জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে এই মামলাগুলো হবে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অনুমোদিত পাঁচ মামলায় ৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে মোট ২১ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৮০১ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৯৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় সালমান এফ রহমান ছাড়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর ছেলে শায়ান এফ রহমান, ভাই বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান, সোহেল রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমান, বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক ইকবাল আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী, পরিচালক এ বি সিদ্দিকুর রহমান, মাসুদ ইকরামুল্লাহ খান, শাহ মঞ্জুরুল হক ও রীম এইচ শামসুদ্দোহা।

এ ছাড়া স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল বাশার ও পরিচালক নাসরিন আহমেদ, ক্রিসেন্ট অ্যাকসেসরিজের এমডি আবু নাঈম মাহমুদ সালেহিন ও পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তানভীর, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ আলিফ ইবনে জুলফিকার ও পরিচালক নুসরাত হায়দার, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি ওয়াসীউর রহমান ও পরিচালক রিজিয়া আক্তার, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি সালাউদ্দিন খান মজলিস ও পরিচালক আবদুর রউফ, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের এমডি মাহফুজুর রহমান খান ও পরিচালক সৈয়দ তানবির এলাহী আফেন্দী সম্ভাব্য আসামির তালিকায় রয়েছেন।

জনতা ব্যাংকের মধ্য থেকে আসামি করা হচ্ছে ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ ও আবদুল জব্বার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক আবদুর রহিম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক শহিদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম (রপ্তানি বিভাগ) মমতাজুল ইসলাম, সিনিয়র অফিসার রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক সালেহ আহম্মেদ, অবসরপ্রাপ্ত এজিএম মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) মোহাম্মদ শাজাহান, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) হুমায়ুন কবির ঢালী ও প্রিন্সিপাল অফিসার শ ম মাহাতাব হোসাইন বাদশাকে।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের যোগসাজশে জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করা হয়। এর মধ্যে পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ দশমিক ২৫ ডলার, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৩ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৯১ ডলার, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ৮ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৭ দশমিক ৪৫ ডলার, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ ডলার এবং ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৮২ দশমিক ৪৬ ডলার আত্মসাৎ হয়।

সব মিলিয়ে আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

সাবেক সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ