যদি রাষ্ট্র সংস্কার ব্যতিত নির্বাচন দেওয়া হয়, সেই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সেই নির্বাচন জনগণ গ্রহণ করবে না। তাড়াহুড়ের কিছু নেই, আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে তারপর নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাঙামাটি শহরের পৌরসভা চত্বরে অনুষ্ঠিত ‘সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণসমাবেশ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি করা ভুল ছিল। একইসঙ্গে পার্বত্য এলাকায় বিদ্যমান সকল কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সকল নিয়োগ করার দাবি করেন তিনি। 

পাহাড়ে সকলের ভূমি বসবাসের অধিকার দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘এখানে বাঙালি-পাহাড়ি কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। পাহাড়ের নিরাপত্তা বাড়াতে সীমান্তে সড়ক দ্রুত শেষ করতে হবে। আমাদের দেশের এক ইঞ্চি মাটিও কাউকে দখল করতে দিবো না। দখল করতে চাইলে রক্ত দিয়ে তা প্রতিহত করবো।’’ 

বক্তব্যে মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, ‘‘আমরা সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন চাই। যদি সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন হয়, তাহলে সংসদে জাতীয় সরকার গঠন হবে। যেখানে প্রতিটি মানুষের প্রতিনিধি সংসদে থাকবে। প্রত্যেকে সংসদে কথা বলতে পারবে। বিএনপিও জাতীয় সরকার চায়। আর জাতীয় সরকারের জন্য সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হলো সংখ্যানুপাতিক সিস্টেম নির্বাচন।’’ তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এ পদ্ধতিতে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান। 

তিনি আরো বলেন, ‘‘ইসলামী সরকার ক্ষমতায় আসলে সাম্যের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করা হবে। ইসলামী অর্থনীতি গরিবদের জন্য। যে পরিমাণ টাকা লুট করা হয়েছে, সেগুলো গরিবদের জন্য যদি দেওয়া হতো, দেশে কোনো গরিব থাকত না। প্রতিটি শিশু দেড় লাখ টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করছে।’’

গণসমাবেশ ইমলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রাঙামাটি শাখার সভাপতি আলহাজ্ব মুহাম্মাদ জসিম উদ্দীনের সভাপতিত্ব বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব মুহাম্মদ জান্নাতুল ইসলাম, মাওলানা আরিফ মেহের উদ্দিন, আলহাজ্ব শরিফুল আলম চৌধুরী। 
 

ঢাকা/শংকর/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

জামিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে আদালতে হাতাহাতি, স্টেনোগ্রাফার আহত

লক্ষ্মীপুরে আদালতে একটি জামিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন বিচারকের আদালত বর্জন করেছে আইনজীবীরা। এ সময় আইনজীবীদের সাথে আদালতের কর্মচারীদের হাতাহাতি ও এজলাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে আহত হন ওই এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। 

রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আদালত বর্জন করায় ভোগান্তিতে পড়েন বিচারপ্রার্থীরা। 

জানা গেছে, রায়পুর প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আহম্মেদ কাউসার উদ্দিন জামান (৩৫) এর বিরুদ্ধে গত ৬ জুন সদর থানায় চুরির মামলা দায়ের করেন তারই প্রতিবেশি জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু তৈয়ব। মামলায় আরও দুইজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় আসামি কাউসার ও রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এরপর গত ১০ জুন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক এম সাইফুল ইসলাম তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ আইনজীবীরা। 

মামলায় অভিযোগ আনা হয়, বাদী এবং আসামিদের মধ্যে পূর্ব বিরোধ রয়েছে। ৫ জুন দিবাগত গভীর রাতে আসামিরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাদীর ভবনের সামনে থাকা একটি লোহার গেট কেটে নিয়ে এবং গেটের পিলার ভেঙে একটি পিক-আপ গাড়িতে করে রায়পুরের দিকে নিয়ে যায়। রায়পুর বাসাবাড়ি এলাকায় গেলে পিকআপ গাড়িটি টহল পুলিশ আটক করে। পরে গাড়িটি জব্দ ও চালক রুবেলকে আটক করে পুলিশ। মামলায় বাদী আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

আদালত সূত্র জানায়, গত ৯ জুন আসামিদের জামিন প্রার্থণা করা হয়। এতে আসামিপক্ষ উল্লেখ করেন, মামলার বাদি আইনজীবী হওয়ায় আদালতে তাদের পক্ষে কোন আইনজীবী জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক নয়। আসামিরা তাদের পক্ষে আইনজীবী না পেয়ে জামিন শুনানির জন্য লক্ষ্মীপুর লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তা চান। সেখান থেকে দুইজন আইনজীবীকে শুনানি করতে বলা হলেও তারা অন্য আইজীবীদের দ্বারা হেনস্তার ভয়ে জামিন শুনানিতে অংশ নেননি। অন্যদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী আসামিদের বিরুদ্ধে জামিনের বিরোধিতা করেন। 

আদালত সূত্র আরও জানায়, আসামিরা ৯ জুন জামিনের জন্য আবেদন করলে পরদিন ১০ জুন নথি প্রাপ্ত সাপেক্ষে জামিন শুনানির জন্য রাখা হয় এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। 

বিষয়টি নিয়ে আদালতের পর্যালোচনায় উঠে আসে, ঈদুল আজহার বন্ধে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবং গ্রেপ্তারের পর থেকে আসামিরা জামিনের শুনানির সুযোগ পাননি। চারদিন তাদের হাজতবাস হয়েছে। ৬ জুন আসামি গ্রেপ্তার হলেও বাদী একজন আইনজীবী হওয়ায় আসামিরা জামিন শুনানির জন্য কোন আইনজীবী পাননি এবং লিগ্যাল এইড অফিসের আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নিতে অনীহার বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় ১৪ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটিতে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জামিন অযোগ্য ধারায় গুরুতর অভিযোগ না থাকায় উভয় পক্ষের শুনানি অন্তে উভয় দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হলো। 

আদালত আসামিদের রিমান্ড না মঞ্জুর করে চারদিনের হাজতবাস ও ঈদ বিবেচনা করে আসামি কাউসার ও রুবেলকে ১০০ টাকা বন্ডে একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করেন। তাদের জামিন হওয়ায় পর থেকেই আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। এ ঘটনায় তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বিচারকের অপসারণের দাবি জানান।

ঈদের বন্ধ শেষে রবিবার (১৫ জুন) আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। আইনজীবী সমিতি বৈঠক করে ওই আদালতের বিচারক এম সাইফুল ইসলামের আদালতের বর্জনের ঘোষণা দেন। এদিন সকাল থেকে ওই বিচারকের কক্ষে বিচারপ্রার্থীরা এসে উপস্থিত হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বিচারপ্রার্থী জানান, আদালতের বিচারক এজলাসে বসা ছিলেন। এ সময় ৭-৮ জন আইনজীবী কক্ষে ঢুকে আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এতে হট্টগোল দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিচারক আদালত কর্মচারীদের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। এ সময় আইনজীবী ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আহত হন এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। এতে বিচারকার্য সম্পন্ন না করেই এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক। 

আহত আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘‘আইনজীবীরা হট্টগোল করায় বিচারকের নির্দেশে আমি দরজা বন্ধ করতে গেলে আমার ওপর আইনজীবীরা হামলা করে। এতে আমার বাম চোখের পাশে রক্তাক্ত জখম হয়।’’  

উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান জানান, কয়েকজন আইনজীবী এজলাসে গিয়ে আদালত বর্জনের বিষয়টি জানিয়ে দিতে গিয়েছেন। আদালত কর্মচারীরা উল্টো তাদের ওপর হামলা করেছে। এতে তিনি নিজেও আহত হন।

ঢাকা/লিটন/টিপু 

সম্পর্কিত নিবন্ধ