বৈশ্বিক নিন্দা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের গাজা দখলে আবারও নিজের অনড় অবস্থানের কথা জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় গত রোববার ন্যাশনাল ফুটবল লিগের ‘সুপার বৌল চ্যাম্পিয়নশিপ’ দেখতে নিউ অরলিন্সে যাওয়ার পথে এয়ার ফোর্স ওয়ান উড়োজাহাজে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘গাজা কিনে নিতে এবং এর মালিকানা পেতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা যখন এটি পুনর্গঠন করব, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশকেও কিছু অংশ পুনর্গঠনের জন্য দিতে পারি। আমাদের তদারকিতে অন্যরাও এ কাজ করতে পারে। কিন্তু আমরা এটির মালিকানা নিতে এবং দখলে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে হামাস আর ফিরতে না পারে তা নিশ্চিত করা যায়।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, এই অবস্থান থেকে ফিরে আসার কিছু নেই। এটি (গাজা) এখন গুঁড়িয়ে দেওয়া একটি জায়গা। বাকিটাও গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। সবকিছুই মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কিছু ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি বিবেচনা করতে প্রস্তুত আছেন বলে জানান ট্রাম্প। তবে এ ক্ষেত্রে প্রত্যেকের আবেদন আলাদা আলাদাভাবে বিবেচনা করা হবে বলে জানান তিনি।

গাজা দখলে ট্রাম্পের ঘোষণার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সংগঠনটির গাজা প্রধান খলিল আল-হাইয়া আজ সোমবার বলেন, গাজা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব, যুক্তরাষ্ট্র ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে।

ইরানের রাজধানী তেহরানে দেশটির ইসলামি বিপ্লবের ৪৬তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সময় এই হামাস নেতা আরও বলেন, ‘এসব পরিকল্পনা আমরা পরাস্ত করব, যেভাবে আগের প্রকল্পগুলো পরাস্ত করেছি।’

ট্রাম্পের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য ইজ্জাত আল-রাশক বলেন, গাজা কেনা-বেচার জন্য আবাসন সম্পত্তি নয়। এটি দখল হয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাস্তুচ্যুত করার এই পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেবেন ফিলিস্তিনিরা।

গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়ন এবং সেখানে মার্কিন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে গতকাল রোববার রাতে ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, হাজার হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসা গাজার জনগণকে তাঁদের চিরন্তন মাতৃভূমি থেকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। এরদোয়ান আরও বলেন, গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের মালিক ফিলিস্তিনিরা।

এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল কাতারে পৌঁছেছে ইসরায়েলের একটি প্রতিনিধিদল। চলতি সপ্তাহে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এ পরোক্ষ আলোচনা শুরু হওয়ার কথা। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, গাজা কারা শাসন করবে, এমন বড় বিষয়ের চেয়ে বরং প্রতিনিধিদলটি কেবল যুদ্ধবিরতির কারিগরি দিক নিয়ে আলোচনা করবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ

কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই 

ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।

পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।

এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।

এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।

তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি 

সম্পর্কিত নিবন্ধ