নারীদের জন্য ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ চালু করতে যাচ্ছে ভারতের দক্ষিণের একটি রাজ্য। রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কোভিডের পর থেকে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’, ‘কো-ওয়ার্কিং স্পেস’, ‘নাইবারহুড ওয়ার্কস্পেস’-র মতো বিষয়ে ধারণা চালু হয়েছে, যা কার্যকর হয়েছে।

ইকোনমিকস টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, নারীদের জন্য ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-র পরিকল্পনা করছে অন্ধ্র প্রদেশ সরকার। গতকাল মঙ্গলবার ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ উইমেন অ্যান্ড গার্লস ইন সায়েন্সেস’-র (বিজ্ঞান ক্ষেত্রে নারীদের দিবস) শুভেচ্ছা জানিয়ে ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু জানিয়েছেন, ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-কেই স্থায়ীভাবে ‘নিউ নরমাল’ করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এ ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে কবে থেকে এ ব্যবস্থা চালু হবে এবং কবে থেকে নতুন নীতি চালু হবে, তার বিস্তারিত জানাননি। তিনি শুধু জানিয়েছেন, তাঁর সরকার যে পদক্ষেপ করেছে, তাতে কর্মক্ষেত্রে আরও মানুষকে যোগ দিতে উৎসাহ প্রদান করবে। বিশেষত নারীরা উপকৃত হবেন বলে দাবি মুখ্যমন্ত্রীর।

আরও পড়ুনডাক অধিদপ্তরে আবারও বড় নিয়োগ, পদ ২৫৫৪ ঘণ্টা আগে

কেন এমন চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে, তারও ব্যাখা দিয়েছেন অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, কোভিড মহামারীর পর থেকে কর্মজীবনের ক্ষেত্রে একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। বাড়ি থেকে কাজের সুবিধা বা ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’, ‘কো-ওয়ার্কিং স্পেস’ (এমন অফিস, যেখানে বিভিন্ন সংস্থার কর্মচারীরা একসঙ্গে কাজ করেন) এবং ‘নাইবারহুড ওয়ার্কস্পেস’-র (ছোট-ছোট জায়গায় বিভক্ত অফিসের জায়গা) মতো বিষয় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেগুলোর ফলে কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভালো পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, এসব নতুন পদক্ষেপের ফলে কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখছে। আর সেসব পদ্ধতির মাধ্যমে ইতিবাচক পথে হাঁটতে চাইছে অন্ধ্র প্রদেশ সরকার।

আরও পড়ুনপ্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন গ্রেড বৃদ্ধি, বিদ্যালয়কে লাল–হলুদ ও সবুজ শ্রেণিতে ভাগ করার সুপারিশ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপাতত ভারতে কোনো নির্দিষ্ট ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ নীতি নেই, যা সারা দেশে চালু আছে। তবে কয়েকটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কোম্পানিতে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ নীতি চালু আছে। কর্মচারীরা বাড়ি থেকে কাজ করতেন পারেন। ২০০৬ সালের ‘স্পেশাল ইকোনমিক জোন’ নিয়মের আওতায় কর্মচারীরা ‘অফসাইটে’ কাজ করতেন, তাঁরা বাড়ি থেকে কাজ করতে পারবেন বা ‘স্পেশাল ইকোনমিক জোন’-র বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারবেন। তবে সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কয়েকটি শর্ত অনুসরণ করতে হয়।

আরও পড়ুনবিসিএস লিখিত পরীক্ষায় গণিত বাদ দেওয়ার সুপারিশ৬ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম খ যমন ত র ক জ করত ক জ কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার

২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।

মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।

ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।

স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত‌্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।

শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’

তার জন‌্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম‌্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”

"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন‌্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।

প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ