শেখ হাসিনা পালানোর পরপরই অর্ধেক সংস্কার হয়ে গেছে। বাকি সংস্কার নির্বাচিত সরকারের করা উচিত বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা। তারা সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ না করে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করেছেন।

গতকাল বুধবার কেন্দ্র ঘোষিত চার জেলায় পৃথক সমাবেশে এসব কথা বলেন বিএনপি নেতারা। নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা, পতিত ফ্যাসিবাদের চক্রান্ত মোকাবিলাসহ বিভিন্ন দাবিতে সমাবেশ করে বিএনপি।

খুলনা ব্যুরো জানায়, গতকাল নগরীর শহীদ হাদিস পার্কে জেলা বিএনপির সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যর্থ। তাদের অনেকেই পতিত শেখ হাসিনা সরকারের সহযোগী ও রাষ্ট্র পরিচালনায় অদক্ষ। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া কেউ সংবিধান সংশোধন করতে পারে না। এ জন্য সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ না করে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টুর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এস এম শফিকুল আলম মনা প্রমুখ।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শহরের ইসলামিয়া সরকারি কলেজ মাঠে জেলা বিএনপির সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ফ্যাসিবাদের বিচারসহ সংস্কারের যেসব দাবি উঠছে, এগুলোর আগে দরকার সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক সরকার। জেলা বিএনপির সভাপতি রোমানা মাহমুদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগ) আমিরুল ইসলাম খান আলিম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, সাবেক এমপি আব্দুল মান্নান তালুকদার, এম আকবর আলী,  কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা প্রমুখ।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, শহরের রেলওয়ে মুক্তমঞ্চ মাঠে জেলা বিএনপির সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, রাজনীতি করার অধিকার সবারই রয়েছে। আপনারা (উপদেষ্টারা) রাজনীতি করতে চাইলে পতাকা খুলে বাড়িতে আসেন। 

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে সমাবেশে সহসাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, আব্দুল খালেক প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে জেলা বিএনপির সমাবেশে দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাই। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) মিফতাহ্‌ সিদ্দিকী, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, আকবর আলী প্রমুখ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ র জন ত ব এনপ র স ল ইসল ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জাফলংয়ের পাথর কোয়ারিতে এখনও রাজনৈতিক ছায়া

ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের আগে সিলেটের জাফলংয়ের পাথর কোয়ারির নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কবজায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর পর রাজত্ব বদলেছে। বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিক দলের নেতাকর্মীর হাতে এখন পাথর কোয়ারির চাবি। ইজারা স্থগিত থাকলেও রাতদিন বোমা মেশিন ও এক্সক্যাভেটর দিয়ে পাথর তোলা থেমে নেই। গত ৫ আগস্টের পর ৯ মাসে অন্তত ৪০০ কোটি টাকার বালু পাথর লুট হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো জানিয়েছে।

লুটের অভিযোগে একাধিক নেতাকর্মী দলের পদ পদবি হারালেও এ পথ থেকে তারা ফিরছেন না। থানায় মামলা করেও দমানো যাচ্ছে না তাদের। সর্বশেষ শনিবার সরকারের দুই উপদেষ্টা জাফলংয়ে পরিদর্শনে গেলে তাদের গাড়িবহরে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ভিডিও ফুটেজে যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিক দলের একাধিক নেতাকেই ঘটনাস্থলে দেখা যায়।

শনিবার দুপুরে জাফলংয়ের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) পরিদর্শনে যান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা শেষে ফেরার পথে স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে একদল মানুষ পাথর কোয়ারি চালুর দাবিতে উপদেষ্টাদের গাড়িবহরের সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন, যুবদল নেতা সুমন আহমদ ও শ্রমিক দলের দেলওয়ার হোসেনকে দেখা যায়। এ ছাড়া জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমেদসহ আরও কয়েক নেতাকর্মীকে সেখানে দেখা গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

পরিদর্শন শেষে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সিলেটের নান্দনিক ও নৈসর্গিক আবেদন আছে। এ রকম জায়গায় আমরা আর পাথর তোলার অনুমতি দেব না। এখানকার শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করছি। পরে বিকেলে সিলেট সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের উপদেষ্টা বলেন, অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, অবৈধভাবে বালু-পাথর তোলার কারণে পরিবেশের ধ্বংস হচ্ছে। আপাতত পাথর তুলতে দেওয়া হবে না।

গাড়িবহরে বাধার বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ জানান, হঠাৎ কিছু লোক উপদেষ্টাদের গাড়ি আটকে দেয়। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়ে রাস্তা চলাচলের উপযোগী করে।

শুরুতে জাফলং নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ওঠে সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত গোয়াইনঘাটের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপনসহ যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে গত ১৬ অক্টোবর রফিকুল ইসলামের দলীয় পদ স্থগিত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। সর্বশেষ ৯ জুন জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেমকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় যুবদল। বালু ও পাথর তোলার দায়ে গত ২৫ মার্চ ৩১ জনের বিরুদ্ধে গোয়াইনঘাট থানায় মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদ এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, দলের কেউ জড়িত থাকলে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। অনেকে দলের নাম ভাঙিয়েও অপরাধ করছে।

আজিরের নেতৃত্বে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহরে বাধা প্রসঙ্গে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনার বলেন, বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দ্রুত ইসিকে জানান, সরকারকে সালাহউদ্দিন আহমদ
  • গাজীপুরে এখনো করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়নি
  • সিলেটে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভের ঘটনায় মামলা, আসামি ১৫৯
  • জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহরে বাধা: ১৭ বিশিষ্ট নাগরিক ও ১৯ সংগঠনের নিন্দা
  • আপেল মাহমুদ অথবা রবিঠাকুরের কাদম্বিনীর গল্প
  • বালু ব্যবসার নামে প্রতারণা কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা
  • জাফলংয়ের পাথর কোয়ারিতে এখনও রাজনৈতিক ছায়া
  • ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন জামায়াতের আমিরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ: সালাহউদ্দিন আহমদ