ডোনাল্ড লু’র স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এস পল কাপুর
Published: 13th, February 2025 GMT
মার্কিন কূটনৈতিক পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়ার সহকারী সচিবের দায়িত্ব পেলেন এস পল কাপুর। এই ভারতীয় ডোনাল্ড লু’র স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পল কাপুর ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা এবং ভারত ও পাকিস্তান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। তিনি পাকিস্তানের কঠোর সমালোচক বলেও বিভিন্ন মহলে পরিচিত।
প্রসঙ্গত, ডোনাল্ড লু’র বিরুদ্ধে পাকিস্তানে ইমরান খান সরকারের পতনের পেছনে কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ ছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়েছিলেন। ট্রাম্প দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বাইডেন প্রশাসনে নিয়োগ পাওয়া লু দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন পল কাপুর।
কূটনৈতিক মহলের মতে, পল কাপুরের নিয়োগের ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় জঙ্গি তৎপরতা দমনে পাকিস্তান ও তাদের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই সহজ হতে পারে।
নতুন দায়িত্ব নেওয়ার আগে পল কাপুর মার্কিন নৌবাহিনীর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্কুলে অধ্যাপনা করতেন। এছাড়া, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি হোয়াইট হাউসের পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পলিসি প্ল্যানিং বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে বেশ কয়েকজন ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করতে ভূমিকা রাখবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আইসিজের শুনানিতে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া
গাজায় দখলদার ইসরায়েলের ঘোষিত অবরোধ তিন মাসে গড়িয়েছে, যা ইতিহাসের দীর্ঘতম অমানবিক পদক্ষেপ হতে চলেছে। খাদ্যাভাবে বাসিন্দারা এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। গাজার উত্তরে ভারী কামান ও বিমান হামলার কারণে আরও ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
হামলায় বেঁচে যাওয়া নাগরিকরা পরিস্থিতি ভূমিকম্পের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান শুনানিতে যুক্তরাষ্ট্র ও হাঙ্গেরি ইসরায়েলের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেছে। তবে রাশিয়া ইসরায়েলের তীব্র নিন্দা করেছে।
আলজাজিরা জানায়, গাজাজুড়ে বিমান হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। বাসিন্দারা আশ্রয়ের জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন। তারা বর্ণনা করেছেন, ইসরায়েলি বোমায় আবাসিক ভবন কেঁপে কেঁপে উঠছে। মনে হচ্ছে, ভূমিকম্প সংঘটিত হচ্ছে।
আইসিজের শুনানির তৃতীয় দিন বুধবার যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে রক্ষা করে যুক্তি উপস্থাপন করেছে। হাঙ্গেরিও ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে। দু’দেশই ২০২৩ সালে ফিলিস্তিন রক্ষায় জাতিসংঘের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল। তবে মঙ্গলবার শুনানির দ্বিতীয় দিন দক্ষিণ আফ্রিকা শুনানিতে ইসরায়েলের কড়া নিন্দা করে। আন্তর্জাতিক আদালতে ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সহায়তা সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আইনি দলের জশ সিমন্স। তিনি বলেন, হামাস জাতিসংঘের সংস্থাটিকে তাদের সুবিধার্থে ব্যবহার করছে। হাঙ্গেরির কূটনীতিক গের্গো কোকসিস আইসিজের বিরুদ্ধে রাজনীতিকরণ ও ইহুদিবিদ্বেষ সৃষ্টির অভিযোগ তোলেন। শুনানিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন বিভাগের পরিচালক মাকসিম মুসিখিন বলেন, অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড মানবতার জন্য ভয়াবহ সংকট ডেকে আনছে। দখলদার শক্তি আন্তর্জাতিক আইনকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে।
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দির বিচারে মৃত্যুদণ্ডের আইন প্রণয়নের জন্য সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এসব বন্দিকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স সোসাইটির মতে, ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দির সংখ্যা ৯ হাজার ৯০০ জনের বেশি। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৪৯৮ জনকে বিনা বিচারে আটক রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, আগামী ১৫ মে থেকে সুইজারল্যান্ডে হামাস নিষিদ্ধ হচ্ছে। গতকাল দেশটির সরকার জানিয়েছে, সুইজারল্যান্ডকে হামাস যাতে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য এই ব্যবস্থা। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৯ জন। ১৮ মাসে এ পর্যন্ত ৫২ হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে গত রাতে তিনটি পৃথক হামলা হয়। একটি ভবনে আটজন নিহত হন। আশপাশের ভবনগুলোতে ভূমিকম্পের দশা সৃষ্টি হয়। অনেকে নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের খুঁজে ফিরছেন স্বজন। অন্য দুটি হামলায় ছয়জন নিহত হন। তাদের সবাই একই পরিবারের। জাবালিয়া শহরেও এক পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন।
গাজার হাসপাতালগুলো রোগী ও আহতদের ভিড়ে উপচে পড়ছে। চিকিৎসাকর্মীরা সতর্ক করেছেন, সরঞ্জামের অভাবে আহতরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। নীরবে তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। সহজলভ্য ব্যথানাশক ওষুধও পাওয়া যাচ্ছে না। জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পরিবারগুলো অপর্যাপ্ত আটা-ময়দার সঙ্গে গুঁড়ো পাস্তা মিশিয়ে খেতে বাধ্য হচ্ছে।