ঢাকার ধামরাইয়ে ‘আলাদীন্’স পার্ক’ নামে একটি বিনোদন কেন্দ্রে ঢাকার মিরপুরের বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে গ্রেপ্তারদের আদালতে পাঠানো হয়। এর আগে গতকাল রাতে উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের সীতি এলাকার আলাদীন্’স পার্কে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রাতে কলেজের শিক্ষক মো.

আব্দুল হাই বাদী হয়ে ধামরাই থানায় মামলা করেন।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. রাকিব (২৩), অন্তর (১৮), মো. সুমন (৩১), মো. রানা (২৩)। তারা সবাই ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের সীতি এলাকার বাসিন্দা।

এছাড়া মামলার আসামিরা হলেন, আলাদীন্’স পার্কের মালিকের ছেলে রিফাত মাহমুদ (৩৫), পার্কের ব্যবস্থাপক নকিবুল রনি (৪৮), মালিক আলাউদ্দিন (৫৭), পার্কে কর্মরত আবুল কালাম আজাদ (৩৫)। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজের শিক্ষক মো. আব্দুল হাই বলেন, “আলাদীন্’স পার্কের লোকজন আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। তারা কাঠের লাঠি ও লোহার রড এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে তারা হামলা চালালে কয়েকজন শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে আহত হয়।”

তিনি আরো বলেন, “আহতদের ধামরাই ও সাভারের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। এইচ এসসি পরীক্ষার্থী জাকারিয়া সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেলে এখনো ভর্তি রয়েছে। সে হাতে মারাত্মক আঘাত পেয়েছে। একই শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফাতকে আজকে এনাম মেডিকেল থেকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। সে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছে।”

ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, “গতকাল রাতেই এক শিক্ষক চার জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে আরো ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।”

প্রসঙ্গত, গতকাল বুধবার বিকেল ৫টার দিকে ধামরাইয়ের উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের সিতী পাল্লী এলাকায় আলাদীন্’স পার্কে কয়েকজন শিক্ষার্থীর মুঠোফোন হারানোর বিষয়কে কেন্দ্র করে পার্কের লোকজন ও ঢাকার মিরপুরের বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

শিক্ষক, আলাদীন্’স পার্ক কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টার দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৬৫০ জন ১২টি বাসে করে বিনোদন কেন্দ্রটিতে যান। দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মোবাইল ফোনসহ মালামাল লকারে রেখে ওয়াটার পার্কে নামেন। তবে পানি থেকে উঠে কয়েকজন শিক্ষার্থী লকার খোলা দেখতে পান। সেখানে রাখা মোবাইল ফোনও খুঁজে পাননি। শিক্ষার্থীরা এজন্য পার্ক কর্মচারীদের দায়ী করলে উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। 

বিষয়টি কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের মধ্যস্থতায় মীমাংসা হয়। তবে মোবাইল ফোন খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে বিকেল ৫টার দিকে বিনোদন কেন্দ্র ছেড়ে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন না পাওয়া পর্যন্ত বিনোদন কেন্দ্র ছেড়ে যেতে আপত্তি জানান। এক পর্যায়ে তারা বিনোদন কেন্দ্রের স্থাপনায় ভাঙচুর করেন। এসময় বিনোদন কেন্দ্রের কর্মচারীরা তাদের ওপর চড়াও হন। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পার্ক কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের পরিবহনের আটটি বাসে ভাঙচুর করে। সংঘর্ষে অন্তত ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী ও ১০-১৫ জন পার্ক কর্মচারী রক্তাক্ত জখমসহ আহত হন। 

পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের উদ্ধার করে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে শিক্ষক নাসির আফজাল বলেন, “সকাল ১০টার দিকে আমরা ৬৫০ জন এসেছিলাম ১২টি বাসে করে। বিকেল ৫টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। ছোট থেকে শুরু। কয়েকটি মোবাইল খোয়া যায়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি। তখন শিক্ষার্থীরা বলেছে, মোবাইল ছাড়া বাসায় গেলে সমস্যা, যেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। তখন আমরা বললাম, তারা যদি না দেয় আমরা দেখব। এরইমধ্যে তারা (শিক্ষার্থীরা) ভাঙচুর করেছে। এটি দেখে হয়তো আশপাশের লোকজন ডেকেছে। তারাও ভাঙচুর করেছে। এতে আহত ৬ জনকে এনাম মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে। অনেকে সাধারণ চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। সবমিলিয়ে অন্তত ২০-২৫ জন আহত হয়েছে। আমরা মামলা করেছি। বাকিরা থানায় গিয়েছে। এটার ক্ষতিপূরণের বিষয় রয়েছে।”

এ বিষয়ে আলাদীন্’স পার্কের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা নকিবুল হাসান রনি বলেন, “স্কুল থেকে সকালে পিকনিকে এসেছিল। ঘটনা দুইবার ঘটেছে, দুপুরে একবার, বিকেলে একবার। দুপুরে মীমাংসা হওয়ার পরে বিকেলে যাওয়ার সময় সব কিছু ভাঙচুর করে গেছে। মোবাইল হারানোর মতো কিছুই হয়নি। এইখানে লকার রাখছিল, লকার থেকে বের হওয়ার সময়, হয়তো বা আর একটা লকারে চাবি দিয়ে খুলেছে, সেখানে ১০০টি লকার আছে। এটা নিয়ে আমাদের স্টাফকে প্রথমে মারধর করছে, পরে ওনাদের শিক্ষকদের ডেকে এনে বিষয়টা মীমাংসা করেছি।” 

তিনি আরো বলেন, “শিক্ষকরা বলছেন, যে ছেলেকে মারছে তাকে শান্তনা দিয়ে চলে গেছে। পরে বের হওয়ার সময় ওরা বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর করছে এবং স্টাফদের মারধর করেছে। মারধরে স্টাফরা নিরুপায় হয়ে যায়। তখন এলাকার মানুষজনও ছিল, তারাও এসেছে। পরে ধাওয়া পাল্টা দেওয়া হয়েছে। আমাদের ১৫-১৬ জন আহত হয়েছে, এর মধ্যে সবাই রক্তাক্ত জখম হয়েছে। আহত সবাই সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে।”

ঢাকা/সাব্বির/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ র ঘটন জন শ ক ষ র থ কল জ র শ ক ষ প র ক কর র কর ছ আল দ ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘দাগি’ সিনেমা দেখতে টাঙ্গাইলে অস্থায়ী হল তৈরি করছেন নিশো ভক্তরা

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে নেই কোনো সিনেমা হল। তাই প্রিয় অভিনেতা আফরান নিশো অভিনীত সিনেমা দেখার তীব্র আগ্রহ ও ভালোবাসায় আবারো অস্থায়ী সিনেমা হল তৈরি করছেন তার স্থানীয় ভক্তরা। সেখানে এবার প্রদর্শিত হবে নিশো অভিনীত বহুল আলোচিত সিনেমা ‘দাগি’। ভক্তদের ভালোবাসার টানে নিজ এলাকায় যাবেন আফরান নিশো।

শুক্রবার (২ মে) থেকে ভূঞাপুর স্বাধীনতা কমপ্লেক্সের দোতলায় ৭ দিনব্যাপী প্রদর্শিত হবে আফরান নিশো অভিনীত ‘দাগি’ সিনেমা। প্রতি টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে ১০০ টাকা। প্রতিদিন ৪টি করে শো চলবে। প্রথম শো শুরু হবে বিকেল ৪টা থেকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার স্বাধীনতা কমপ্লেক্সে অস্থায়ী সিনেমা হল নির্মাণে কাজ করছেন একদল যুবক। জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশোকে ভালোবেসে গত বছর ‘সুরঙ্গ’ সিনেমার জন্য অস্থায়ী হল নির্মাণ করেছিলেন তারা। এবারো সেই ভালোবাসা থেকেই ‘দাগি’ সিনেমা প্রদর্শনের জন্য নির্মাণ করছেন প্রেক্ষাগৃহ।

আরো পড়ুন:

প্রযোজক তার সঙ্গে রাত কাটাতে বলেন: অঞ্জনা

নায়ক রুবেলের মৃত্যু গুজব: সোহেল রানার হুঁশিয়ারি

নিশো ভক্ত তন্ময় বলেন, “আফরান নিশো আমাদের এলাকার সন্তান। তার জন্য আমাদের অগাধ ভালোবাসা। তার অভিনীত সিনেমা ‘দাগি’ দেখার জন্য এখানে যে কর্মযজ্ঞ চলছে, সেটা সেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। ভূঞাপুরের মানুষ যেন নিশো ভাইয়ের সিনেমা দেখতে পারেন, তার জন্যই এই আয়োজন। আমরা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি সিনেমাটি দেখার জন্য।”

বিশেষ চমক হলো— এই আয়োজনে অংশ নিতে নিজ এলাকাতেই যাবেন আফরান নিশো। প্রিয় নায়কের আগমন আর সিনেমা প্রদর্শনকে ঘিরে ইতোমধ্যে উৎসাহের জোয়ার বইছে ভূঞাপুরে।

ভক্তদের আয়োজনে নির্মিত অস্থায়ী এই সিনেমা হলটি তৈরি হচ্ছে ভূঞাপুর স্বাধীনতা কমপ্লেক্স মিলনায়তনে। বিশাল স্ক্রিন ও উন্নত সাউন্ড সিস্টেমসহ আধুনিক সুবিধার এই আয়োজন স্থানীয়দের মাঝে এক ভিন্ন আবেগ সৃষ্টি করেছে।

আয়োজক কমিটির সদস্য হাদী চকদার বলেন, “ভূঞাপুরে স্থায়ী হল না থাকলেও আমরা চেয়েছি নিশো ভাইয়ের ‘দাগি’ সিনেমাটি সবাই মিলে একসঙ্গে দেখতে। তিনি আমাদের গর্ব, আমাদের এলাকার সন্তান। তাই এবারো আমরা তাকে দাওয়াত দিয়েছি এবং তিনি আসছেন। এটা আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি।”

ভক্তদের আয়োজনে একজন অভিনয়শিল্পীর সরাসরি অংশগ্রহণ, অস্থায়ী হলেও একটি হল নির্মাণ এবং সিনেমা দেখার এই উৎসব— ভূঞাপুরে যেন নতুন করে সিনেমাপ্রেমের আলো জ্বেলে দিচ্ছে।

গত কয়েক বছর ধরে ঈদকে কেন্দ্র করে নির্মিত সিনেমাগুলো নিয়েই অধিক আলোচনা ও সমালোচনা দেখা যাচ্ছে। ঈদুল ফিতরে বেশ কটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম আফরান নিশো অভিনীত ‘দাগি’ সিনেমা। শিহাব শাহীন পরিচালিত এ সিনেমায় নিশোর বিপরীতে অভিনয় করেছেন তমা মির্জা।

ঢাকা/কাওছার/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ