উপাচার্যের বাসভবনের ফটক ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় অভিযোগ, ৫ দাবিতে শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম
Published: 16th, February 2025 GMT
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিনের বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ করার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) সানোয়ার পারভেজ বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় অভিযোগটি করেন।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে রোববার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটি এজাহার হিসেবে এখনো নথিভুক্ত হয়নি। তবে প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেওয়ার ঘটনায় আজ সকাল থেকে ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে তাঁরা প্রতিবাদ জানান। দুপুরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ বা মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি নতুন করে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেন। এ সময় অভিযোগ প্রত্যাহারে ছয় ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা। তবে সন্ধ্যা ছয়টা আলটিমেটামের সময় শেষ হলেও কর্তৃপক্ষ অভিযোগ প্রত্যাহার করেনি।
উপাচার্য শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট থেকে দুজন শিক্ষক প্রতিনিধিকে বিধিবহির্ভূতভাবে বাদ দেওয়া ও ফ্যাসিবাদীদের পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলে গত বৃহস্পতিবার আকস্মিক ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। তাঁরা উপাচার্যের কার্যালয়ের কলাপসিবল গেট ও বাসভবনের মূল ফটকে তালা দেন। পরদিন শুক্রবার বিকেলে উপাচার্যের বাসভবনে পূর্বনির্ধারিত সিন্ডিকেটের জরুরি সভা ডাকলে বাতিলের দাবিতে তাঁর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তাঁরা বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ করেন। উপাচার্যের অভিযোগ, তাঁর বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী বুলডোজার দিয়ে বাসভবন গুঁড়িয়ে ফেলা ও আগুন দেওয়ার হুমকি দেন।
আজ শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে; সিন্ডিকেট সদস্যদের নাম প্রকাশ ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের বাদ দিয়ে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; রেজিস্ট্রারসহ উপাচার্য দপ্তরের সব ফ্যাসিবাদী সদস্যকে অপসারণ করতে হবে; ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ঘোষণা ও আন্দোলনে হামলাকারী ছাত্রলীগের কর্মীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন, আবাসনসংকট নিরসনসহ আগের দাবিগুলোর অগ্রগতি ১২ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোকাব্বেল শেখ বলেন, ‘আমরা দাবি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছি। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে বসেননি। বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টদের বাদ দিতে বললে তিনি করেননি। সিন্ডিকেটের এজেন্ডা না জানিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের জন্য গোপন সিন্ডিকেট ডাকেন। তিনি আমাদের দাবি না মেনে বাইরের আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টদের যুক্তি ও পরামর্শে তিনি এসব কাজ করছেন।’
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল উন্নয়নকাজের প্রতিফলন ঘটুক। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করবেন। অথচ তিনি ফ্যাসিবাদীদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছেন। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে ভুলত্রুটি হতে পারে। একজন অভিভাবকতুল্য উপাচার্য কীভাবে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, তিনি ফ্যাসিবাদীদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে দুপুরে নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন উপাচার্য শুচিতা শরমিন। তিনি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পেছনে সহ–উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও ইংরেজি বিভাগের এক অধ্যাপককে দায়ী করেছেন। উপাচার্য শুচিতা শরমিন বলেন, ‘আমি ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করছি, এমন গুজব উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়ানো হয়েছে। এর পেছনে কয়েকজন স্বার্থান্বেষী শিক্ষকসহ তিনজন ব্যক্তি জড়িত। যাঁরা চিঠি দিয়ে সিন্ডিকেট সভায় যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। অথচ সিন্ডিকেট সদস্যরা সবাই বর্তমান সরকার ও জুলাই চেতনা ধারণ করা ব্যক্তি।’
উপাচার্য বলেন, ‘শনিবার আমাদের সিন্ডিকেটের জরুরি সভা ছিল। ১০ জন সদস্য নিয়ে আমরা সফলভাবে সভাটি করেছি। কয়েকজন ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেয়। এ সময় ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী আমার বাসভবনের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে নানা কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেয়। বুলডোজার দিয়ে বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া, আগুন দেওয়ার হুমকি দেয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পরই একাডেমিক ও প্রশাসনিক মানোন্নয়নের চেষ্টা করছি। মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি, দেখা করেছি। ইউজিসির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি।’
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে নিজের দপ্তরে কথা বলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিন। রোববার দুপুরে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপ চ র য শ চ ত র ব সভবন র উপ চ র য র র ঘটন য় ফটক ভ ঙ সদস য আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীরে হামলার জবাব দিতে সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিলেন মোদি
কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জবাব দিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কখন, কোথায়, কীভাবে হামলা চালানো হবে তা ঠিক করতে সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজ বাসভবনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান-সহ তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। সেখানেই মোদি স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যখন খুশি, যেখানে খুশি পেহেলগামে হামলার বদলা নিতে পারে ভারতীয় সেনা, বিমান ও নৌ-বাহিনী। কীভাবে হামলা চালানো হবে, কীভাবে পরিকল্পনা করা হবে- সে সব সিদ্ধান্তও স্বাধীনভাবেই নেবে এই তিন বাহিনী।
যেমনভাবে মনে হবে, সেরকমভাবেই অভিযান চালানোর জন্য তাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আর সেই ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে তিন বাহিনীর ওপরই পূর্ণ আস্থা রেখেছেন তিনি।
ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিং এবং নৌ বাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশকুমার ত্রিপাঠীর সামনেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে, কীভাবে সেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে, লক্ষ্যবস্তু কী হবে এবং কখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে।
বৈঠক চলে মোট ৯০ মিনিট। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং গত সপ্তাহেই পাকিস্তানকে ‘কঠোর জবাব’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। একই সুর ছিল প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কণ্ঠেও।
সেই আবহেই ভারতে একের পর এক জরুরি বৈঠক চলছে। যার ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে উচ্চপর্যায়ের ওই বৈঠক হয়।
এর ঠিক এক সপ্তাহ আগের মঙ্গলবারেই জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে বৈসরন উপত্যকায় সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। তাদের অধিকাংশই পর্যটক ছিলেন।
পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজিট্যান্স ফ্রন্ট’ এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারপর থেকেই কূটনৈতিক দিক থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত।
বন্ধ করা হয়েছে সিন্ধু পানিচুক্তি। নেওয়া হয়েছে আরও একাধিক পদক্ষেপ। জঙ্গি-নিধন অভিযানও চালাচ্ছে ভারত। পেহেলগামে হামলায় যে জঙ্গিরা জড়িত আছে বলে ধারনা করা হচ্ছে, তাদেরকে এখনও ধরা না গেলেও সন্ত্রাসবাদী নিধন অভিযান চলছে। খুঁজে-খুঁজে বের করা হচ্ছে জঙ্গিদের। খবর এনডিটিভি