কবি গালিব রিমান্ডে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি চান বিশিষ্টজনেরা
Published: 17th, February 2025 GMT
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার কবি সোহেল হাসান গালিবের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জুনাইদ শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।
এদিকে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কবি সোহেল হাসান গালিবের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন একদল লেখক, প্রকাশক ও সংস্কৃতিকর্মী।
সোমবার বিকেলে অমর একুশে বইমেলায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনের মাধ্যমে এই সময়সীমা বেঁধে দেন তারা।
আরো পড়ুন:
শনিবার বইমেলার সময় পরিবর্তন
বইমেলায় সাদিয়া সুলতানার সপ্তম উপন্যাস ‘উঠল্লু’
কর্মসূচিতে প্রকাশক মাহাবুবুর রহমান বলেন, “গালিবকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি না দিলে আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পিটিশন করব। কোথায় কোথায় পিটিশন করতে হয়, আমাদের জানা আছে। আমাদেরকে সংখ্যা দিয়ে বিচার করবেন না।”
ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার কবি সোহেল হাসান গালিবকে সোমবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
গ্রেপ্তারের পরের দিন ১৪ ফেব্রুয়ারিও গালিবকে আদালতে তোলা হয়। সেদিন তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
ওই সময় গালিবের আইনজীবী তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। আদালত রিমান্ড ও জামিনের আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
১৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার সানারপাড় থেকে গালিবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সোমবারের কর্মসূচিতে লেখক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস বলেন, “গালিবকে ধরে নিয়েছে পুলিশ, তাকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। এই কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে আমরা আজ এখানে জড়ো হয়েছি এবং প্রতিবাদ করছি। আমরা বলছি, গালিবকে যেন অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়া হয়।”
কবি-প্রাবন্ধিক রাজু আলাউদ্দিন বলেন, “গালিবের সঙ্গে রাষ্ট্র যে আচরণ করছে, তা নতুন কিছু নয়। সব সময় আমরা দেখেছি ধর্মকে ব্যবহার করে রাষ্ট্র। শুনেছি গালিবকে ২ দিনের রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে।”
“কিন্তু রাষ্ট্র জানে না, লেখককে গ্রেপ্তার করা যেতে পারে, কিন্তু লেখকের চিন্তাকে কখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব না। গালিবকে কবিতা লেখার জন্য গ্রেপ্তার করে রাষ্ট্র আত্মঘাতী কাজ করেছে।”
কবি চঞ্চল আশরাফ বলেন, “গালিব তো চুরি করে নাই, দুর্নীতি করেন নাই। তবে তাকে কেন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে? কত বড় বড় চোর, রাঘব বোয়ালেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, গালিবকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে?”
কবি ও সাংবাদিক জুয়েল মাজহার বলেন, “রাষ্ট্র যেন কবির ভাষাকে সরলীকরণ না করে।”
কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ বলেন, “প্রথমে শুনলাম গালিবকে আটক করা হয়েছে, পরে শুনলাম গ্রেপ্তার। আর আজ শুনলাম রিমান্ডে। এটা খুবই দুঃখজনক যে, কবিতা লেখার জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
‘আদর্শ’ প্রকাশনী সংস্থার প্রকাশক মাহাবুবুর রহমান বলেন, “এখানে দাঁড়ানোর আগে আমি ব্যক্তিগতভাবে তিন জন উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমার মনে হলো, তারা ব্যাপারটি সিরিয়াসলি নিচ্ছে না।”
“এই সরকার ব্যর্থ হলে আমরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব। যারা এখন সরকারে আছেন, তাদেরকে বলব, আপনারা দুই দিনের ক্ষমতা পেয়ে যদি বন্ধুদের ভুলে যান; দুদিন পর ক্ষমতা থেকে যখন সরে যাবেন, আমাদের পাশেই কিন্তু আপনাদের বসতে হবে।”
লেখক ও সাংবাদিক ধ্রুব সাদিক বলেন, “পুলিশ হুট করে এত উৎসাহী হয়ে গেল যে একজন কবিকে গ্রেপ্তার করতে হল। জুলাই আন্দোলনে সমর্থন দেওয়ার কারণে গালিবের চাকরি চলে যাচ্ছিল। সরকারের কাছে আমাদের আহ্বান, গালিবকে মুক্তি দিন এবং সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।”
২০২৪ সালে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান উজান থেকে প্রকাশিত বইয়ে গালিবের লেখা একটি কবিতা ঘিরে সমালোচনা শুরু হয়। কবিতাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ালে গালিবের বিরুদ্ধে মহানবীকে ‘কটাক্ষ’ করার অভিযোগ ওঠে।
ঢাকা/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ল এক ড ম গ র প ত র কর আম দ র স মব র
এছাড়াও পড়ুন:
নোয়াখালীতে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকে আশ্রয় দেওয়ায় তাঁতী দলের নেতা বহিষ্কার
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলাউদ্দিনকে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের এক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কৃত মোহাম্মদ সৈকত উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়ন তাঁতী দলের সভাপতি ছিলেন। আজ শুক্রবার বিকেলে জেলা তাঁতী দলের সদস্যসচিব মোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা তাঁতী দলের আহ্বায়ক ইকবাল করিম সোহেল ও সদস্যসচিব মোরশেদ আলমের যৌথ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বহিষ্কারের আদেশ দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাম্মদ সৈকতকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি মূল্যায়নে ব্যর্থ হওয়ায় হাতিয়া উপজেলা তাঁতী দলের দক্ষিণ কমিটিকে সতর্ক করা হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের জোড়খালী গ্রামে সৈকতের বাড়ি থেকে সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে হাতিয়া থানা–পুলিশ। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ১০টি ককটেল উদ্ধার করা হয়। আলাউদ্দিন ও মোহাম্মদ সৈকত সম্পর্কে ফুফা–ভাগনে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ সৈকত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে অনেকগুলো পরিবার থাকে। আমি ব্যবসার কাজে দিনের বেশির ভাগ সময় বাইরে থাকি। আলাউদ্দিন কখন বাড়িতে এসেছেন, তা আমার জানা নেই। আমাদের ঘর থেকে তাঁর শ্বশুরদের ঘর অনেক দূরে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে জড়ানো হয়েছে।’
নোয়াখালী জেলা তাঁতী দলের সদস্যসচিব মোরশেদ আলম বলেন, আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকে আত্মগোপনে থাকার সুযোগ করে দেওয়ায় মোহাম্মদ সৈকতকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের তাঁতী দল কমিটিকেও সতর্ক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনহাতিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে পালিয়ে থাকা সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গ্রেপ্তার৩১ জুলাই ২০২৫