কক্সবাজার, যশোর, নীলফামারী ও সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপারদের (এসপি) প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ সোমবার পৃথক চিঠিতে তাঁদের প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়। চারজনকেই এক দিনের মধ্যে (মঙ্গলবার) পুলিশ সদর দপ্তরে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।

প্রত্যাহার করা চার এসপি হলেন কক্সবাজারের মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ, যশোরের মো.

জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ, নীলফামারীর মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ও সুনামগঞ্জের আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খান। এর মধ্যে রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে ইয়াবা কারবারে জড়ানো এবং আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খানের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনেদের অভিযোগ রয়েছে।

কক্সবাজার ও সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার ছাড়া অন্য দুজনের (যশোর ও নীলফামারী) বিরুদ্ধে কী অভিযোগ, তা জানা যায়নি। তবে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, যেহেতু এক দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করে সদর দপ্তরে নেওয়া হচ্ছে, এর মানে হলো এটা স্বাভাবিক বদলি নয়। নৈতিক স্খলন ও দুর্নীতির কারণেই এই কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (প্রশাসন) কাজী মো. ফজলুল করিম স্বাক্ষরিত চার এসপি দেওয়া পৃথক চারটি চিঠির ভাষা একই। ওই চিঠিগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে রিপোর্টের নির্দেশ।’ এ ছাড়া উল্লেখ রয়েছে, ‘পরবর্তী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে দায়িত্বভার অর্পণ করে আপনি আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকায় রিপোর্ট করবেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে এই স্মারক জারি করা হলো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, চার এসপিকে দায়িত্বভার হস্তান্তর করে আগামীকালই (মঙ্গলবার) পুলিশ সদর দপ্তরে রিপোর্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র এসপ

এছাড়াও পড়ুন:

ফেলনা জিনিসের পণ্য রপ্তানি করে সাফল্য রহমতুল ইসলামের

কয়েক বছর আগেও পেঁপেগাছের ডালপালা বা নল ছিল ফেলনা। কাঁচা বা পাকা পেঁপে সংগ্রহের পর ছেঁটে দেওয়া ডালপালা পড়ে থাকত বাগানে। ফেলে দেওয়া এই ডাল এখন মূল্যবান রপ্তানি পণ্য। শুধু পেঁপের নলই নয়, আমগাছ ও নিমগাছের ফেলে দেওয়া চিকন ডাল, পাটচুন ঘাস, নীলকণ্ঠ ফুলের মতো ফেলনা জিনিস দিয়ে তৈরি হচ্ছে পোষা প্রাণীর খাবার ও খেলনা। এসব বিশেষায়িত পণ্য রপ্তানির বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রাও।

ফেলনা জিনিসকে রপ্তানি পণ্য বানানোর পথ দেখিয়েছেন দেশেরই একজন উদ্যোক্তা। এই উদ্যোক্তা হলেন রহমতুল ইসলাম। পোষা প্রাণীর খাবার ও খেলনা তৈরির জন্য মাগুরার প্রত্যন্ত গ্রাম জাগলায় কারখানা গড়ে তুলেছেন তিনি। সেখানে এসব পণ্য তৈরি করছেন গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত নারীরা। বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড নামের এই কারখানায় প্রত্যক্ষ–পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০০ জনের।

গ্রামের এই ব্যতিক্রমী কারখানা দেখতে নিয়মিতই আসছেন বিদেশি ক্রেতারা। সংখ্যা কত হবে? রহমতুল ইসলাম জানালেন, গত আট বছরে কারখানা দেখতে আসা বিদেশি প্রতিনিধিদলের সংখ্যা চার শ জনের কম হবে না। মুঠোফোনে কথা বলার সময় তিনি জানালেন, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে একটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদল এখন তাঁর কারখানা ঘুরে দেখছে।

যেভাবে শুরু

মাগুরার সন্তান রহমতুল ইসলাম উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসা শুরু করেন। একসময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাপানে থিতু হন। তবে নিজের এলাকায় ব্যতিক্রমী কিছু করার তাড়না থেকে যায়। শুরুতে পোষা প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা থেকে প্রাণীর খাবার ও খেলনা তৈরির চিন্তা মাথায় আসে। এরপর দেশে ফিরে ২০১৮ সালে মাগুরার জাগলা গ্রামে চার–পাঁচজন কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করেন। পোষা প্রাণীর দুই ধরনের খেলনা তৈরির মাধ্যমে শুরু হয় কারখানার কর্মযজ্ঞ। ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে জাপানে প্রথমবারের মতো তিন হাজার মার্কিন ডলারের পোষা প্রাণীর খেলনা রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি।

চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ধীরে ধীরে রপ্তানিও বাড়তে থাকে। প্রয়োজন পড়ে নতুন কর্মীর। কিন্ত তাঁদের দক্ষ করে তোলার জন্য দরকার প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয় কারখানায়। কর্মী হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হয় সুবিধাবঞ্চিত নারীদের। কর্মযজ্ঞ বৃদ্ধির পর জাপান ও সিঙ্গাপুরের দুটি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করে এই কারখানায়। প্রায় ২০ একর জমিতে কারখানার পাশাপাশি খাবার ও খেলনা তৈরির কাঁচামালের জন্য ঘাস ও গাছ রোপণ করেন তিনি। চাহিদা পূরণ না হওয়ায় এখন কাঁচামাল সরবরাহের জন্য প্রচারণাও শুরু করেছেন। ফেলনা জিনিস এনে বিক্রি করলেই নগদ টাকা দেওয়া হয়। এমন উদ্যোগে গ্রামের লোকজন ফেলনা জিনিস কুড়িয়ে বিক্রি করতে শুরু করেন কারখানায়। এমন সরবরাহকারীর সংখ্যাও এখন প্রায় ১০০।

পেঁপের নল, গাছের চিকন ডাল ও নানা রকমের ঘাস থেকে পোষা প্রাণির খাবার ও খেলনা তৈরি করছে মাগুরার বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফেলনা জিনিসের পণ্য রপ্তানি করে সাফল্য রহমতুল ইসলামের