গণঅভ্যুত্থানের পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বৈধ নেতৃত্বদানের প্ল্যাটফর্ম ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জোরালো হয়। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে তা স্তিমিত হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর গ্রিন সিগন্যাল না থাকায় ছাত্র সংগঠন এখনই নির্বাচন চাচ্ছে না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংসদের আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চাইলেও প্রশাসন নির্বিকার।

বিএনপি দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার। তাদের সংগঠন ছাত্রদলের ভাষ্য, গত বছর ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিবাদী কাঠামো রয়ে গেছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তারাও ছাত্রদলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। ফলে সংস্কার ছাড়া তাদের পক্ষে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার আগে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত ছাত্রলীগের বিচার, প্রশাসন থেকে আওয়ামীপন্থিদের অপসারণ ও গঠনতন্ত্র সংস্কার করতে হবে।

গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরুতে এ নির্বাচনের ব্যাপারে সরব হলেও এখন নীরব। এর পেছনে ওপর মহলের ইশারা, সঙ্গে রয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ব্যস্ততা। একই অবস্থা ছাত্রশিবিরের; মুখে নির্বাচন চাইলেও অদৃশ্য কারণে পিছু হটেছে। এ ইস্যুতে ক্যাম্পাসে তৎপরতা নেই বাম সংগঠনগুলোরও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় নির্বাচনেও পড়ে। এ জন্য সংসদের আগে নির্বাচন না করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দল থেকেই চাপ রয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আইনুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। ছাত্র সংসদে পরাজয় জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলে। জাতীয় নির্বাচন চলতি বছরের মধ্যে হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্র সংসদ নির্বাচনের গ্রিন সিগন্যাল পাবে না। নির্বাচন দেরিতে হলে ভিন্ন হিসাব আসবে।’ তিনি বলেন, ‘ছাত্র সংসদ বড় কর্মযজ্ঞ। একটিতে শুরু হলে অন্যদের ওপর চাপ বাড়ে। আমার মনে হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অপেক্ষা করছে জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখার জন্য। সরকার সেটি দিলে ছাত্র সংসদ নির্বাচনও একটি পথ পাবে।’

ডাকসু নিয়ে তথৈবচ প্রশাসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) আচরণবিধি, গঠনতন্ত্র সংস্কার ও ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে তিনটি কমিটি হয়েছে। প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ ফেব্রুয়ারির শুরুতে রূপরেখার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনও পারেননি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সংস্কার ও নির্বাচন– দুটির অগ্রগতি আমরা চাই। কিন্তু প্রশাসন কিছুই করছে না। ডাকসু হলে ছাত্রলীগের বিচার প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হতো।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, ‘প্রশাসন কিছু সংস্কার কাজ করছে। দ্রুত সংস্কার কাজ শেষে তারা নির্বাচন দেবে– এটাই প্রত্যাশা।’
এ ব্যাপারে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘দেশের সব খাত সংস্কার হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন ফ্যাসিবাদী কাঠামো থাকবে?
 সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ করে আমরাও দ্রুত ডাকসু নির্বাচন চাই। কিন্তু প্রশাসনের সংস্কার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান না হলে আমরা কোনো টাইমফ্রেম বলব না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘ডাকসু আমাদের অন্যতম প্রতিশ্রুতি। প্রতিনিয়ত এ নিয়ে কাজ হচ্ছে। আমরা চাই, ডাকসু নিয়ে পুরোপুরি ঐক্য না হলেও, যেন বৃহত্তর ঐক্য হয়।’

রাকসু ঝুলে আছে ‘পক্ষপাতিত্বে’
রাবি প্রতিনিধি অর্পণ ধর জানিয়েছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের পক্ষে শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, শিবিরসহ বামপন্থি ছাত্র সংগঠনও নির্বাচন চায়। তবে প্রশাসনের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছে ছাত্রদল। তাদের ভাষ্য, প্রশাসন জামায়াত-শিবিরঘেঁষা, তাদের পক্ষে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আবার ছাত্রলীগের কারণে দীর্ঘদিন তারা শিক্ষার্থী-ঘনিষ্ঠ কার্যক্রম করতে পারেননি। ফলে এখনই নির্বাচন চাচ্ছেন না তারা।
গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর রাকসুর কোষাধ্যক্ষ হিসেবে আরবি বিভাগের অধ্যাপক সেতাউর রহমানকে নিয়োগ দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পর আর কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। যদিও প্রশাসন বলছে, ঈদের পর নির্বাচন হতে পারে।
রাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহীর প্রশ্ন– প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। এ অবস্থায় কীভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব? সব সংগঠনের সহাবস্থান ও গঠনতন্ত্র সংস্কারের দাবি জানান তিনি।

শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘ক্যাম্পাসের অবস্থা এখন ভালো। সংসদের আগে রাকসু নির্বাচন হলে ভালো হবে।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মোহাম্মদ মেশকাতও একই দাবি জানান।
বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট নিজেদের গোছাতে আরেকটু সময় চায়। জোটের সদস্য বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী রাবি শাখার সভাপতি শাকিল হোসেন বলেন, ‘রাকসু নির্বাচনে প্রস্তুতির জন্য অবশ্যই সময় দরকার আছে।’
উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা আলোচনা করেছেন। মোটা দাগে সবাই নির্বাচনের পক্ষে। কেউ দ্রুত, কেউ দেরিতে। প্রশাসনও ঈদের পরে নির্বাচন দিতে চায়।

অনিশ্চিত গন্তব্যে জাকসু
জাবি প্রতিনিধি তারেক হোসেন জানিয়েছেন, আন্দোলনের মুখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা দিয়ে সাড়া ফেলে কর্তৃপক্ষ। তবে  ছাত্র সংগঠনগুলোর দুই মেরুতে অবস্থান, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, প্রশাসনকে অসহযোগিতা ও নির্বাচন-সংক্রান্ত সভা বর্জনের পর ঝুলে গেছে জাকসুর ভাগ্য।
নির্বাচনের আগে গঠনতন্ত্র সংস্কারসহ তাদের দাবিগুলোর বাস্তবায়ন চায় ছাত্রদল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবির বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। তারা মনে করে, সংস্কার নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। যদিও এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে তপশিল এবং ২১ মের মধ্যে নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন (অমর্ত্য-ঋদ্ধ), ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) এবং সাংস্কৃতিক জোটভুক্ত ৯ সংগঠনের দাবি, গঠনতন্ত্র সংস্কার, জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার, সিনেট-সিন্ডিকেট ও প্রশাসন থেকে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের অপসারণের পর নির্বাচন হতে হবে। জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, ‘নির্বাচনের আগে অবশ্যই প্রশাসনকে আমাদের দাবির বিষয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সদস্য সচিব তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, ‘জাকসুর গঠনতন্ত্রে ন্যূনতম সংস্কার হওয়া উচিত। তবে সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন পেছানো ঠিক হবে না।’ শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুর রহমান বলেন, ‘সঠিক পথ হচ্ছে, নির্বাচনের পর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সংস্কার করা।’ ছাত্র ইউনিয়নের জাবি সংসদের সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, ‘সংস্কার ও নির্বাচন একই সময়ে চলতে পারে।’
উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘মতবিরোধ থাকলে কোনো কিছু শুরু করা যায় না। আশা করি, যেসব বিষয়ে মতভিন্নতা রয়েছে, তা দূর করে দ্রুত আমরা সমাধানে পৌঁছাতে পারব।’

সংসদের পরে চাকসু নির্বাচন চায় ছাত্রদল
চবি প্রতিনিধি মারজান আক্তার জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন জুনে হতে পারে বলে জানায় প্রশাসন। তবে ছাত্রদল সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের পরে হলেই কেবল তারা চাকসু নির্বাচনে সম্মতি দেবেন। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত চবি প্রশাসন চাকসু নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি।
ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। সেটি দূর করতে দ্রুত চাকসু নির্বাচন দরকার।’ চবি ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক আজাদ হোসেন বলেন, ‘প্রশাসন মে বা জুনে নির্বাচন দিতে পারে। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
উপ-উপাচার্য ও চাকসু নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক কামাল উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘এপ্রিলে সমাবর্তন। সমাবর্তন ও চাকসুর কাজ একসঙ্গে চলছে। নীতিমালা কমিটির কাজ শেষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসা হবে। ঐকমত্য হলে মে বা জুনে নির্বাচন হতে পারে।’

রাজনীতি নিষিদ্ধ শাকসু নিয়ে নেই তোড়জোড়
শাবি প্রতিনিধি রাজীব হোসেন জানিয়েছেন, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা শাকসু সচলের পক্ষে। তবে প্রশাসনের এ নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই। ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকায় ছাত্র সংগঠনগুলো কোনো কর্মসূচি করে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। আবারও বসব। সংসদ নির্বাচনের আগেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন চাই।’ ছাত্রশিবিরের সভাপতি তারেক মনোয়ার বলেন, ‘দলীয় ব্যানারে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় আমরা দাবি তুলতে পারছি না। তবে আমরা দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে।
শাবিতে ছাত্রদলের সক্রিয় কমিটি নেই। ২০১৬ সালের কমিটির দপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন ক্যাম্পাসে সক্রিয়। তিনি সমকালকে বলেন, ‘প্রশাসন উদ্যোগ নিলে আমরা সহায়তা করব। তবে আমরা মনে করি, জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করা ঠিক হবে না।’
উপাচার্য অধ্যাপক এ এম সরোয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সামনে আমাদের ভর্তি পরীক্ষা। এটি শেষে শাকসুসহ অন্য বিষয়গুলো দেখা হবে।’

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত গঠনতন ত র স স ক র ছ ত র স গঠন ছ ত রদল র র রহম ন র বল ন স ন বল আম দ র ন বল ন ন র পর অবস থ গঠন র

এছাড়াও পড়ুন:

জিএম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা

জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও তার যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে সাম্প্রতিক বহিস্কৃত দশ নেতাকে সপদে বহালের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক বহিস্কারাদেশ চ্যালেঞ্জ করে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন দলের অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতারা। মামলার শুনানি শেষে গত বুধবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মো. নুরুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।

এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী আব্দুল বারী বলেন, “পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জিএম কাদের ও দলের যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক সব কার্যক্রম পরিচালনায় অস্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জিএম কাদের যে ১০ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছেন তাদের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ-পদবি ফিরিয়ে দিতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।”

আরো পড়ুন:

‘নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না বলে জিএম কা‌দেরবিহীন জাপা গঠনের চেষ্টা চলছে’

এই সরকারের সংস্কার কেউ গ্রহণ করছে না: জিএম কাদের

আদালতের আদেশে এখন থেকে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, দপ্তর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান, প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ (চট্টগ্রাম), নাজমা আকতার (ফেনী), মো. জহিরুল ইসলাম জহির (টাঙ্গাইল), মোস্তফা আল মাহমুদ (জামালপুর), জসীম উদ্দিন (নেত্রকোনা) ও আরিফুর রহমান খান (গাজীপুর) সপদে বহাল থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন বলেও জানান তিনি।

মামলার আদেশে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। এ রায় প্রমাণ করে দিয়েছে, আইন ও ন্যায়বিচার এখনো জীবিত। সত্যকে নিশ্চিহ্ন করা যায় না এবং দলীয় গঠনতন্ত্রকে পায়ের নিচে ফেলা যায় না। স্বৈরতন্ত্র, দলীয় কর্তৃত্ববাদ এবং অবৈধ ক্ষমতা দখলের রাজনীতির বিরুদ্ধে এটি একটি কঠোর বার্তা।”

তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টি কখনোই একক ব্যক্তির মালিকানাধীন সংগঠন নয়। এটি দেশের লাখো মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম।আজ আদালতের রায়ে সেই প্ল্যাটফর্ম আবারও গণতন্ত্রের পথে ফিরেছে।”

“আমরা মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি এবং দেশবাসী ও জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।”

এ রায়ে সত্যের জয় ও অসত্য-অহঙ্কারের পরাজয় হয়েছে মন্তব্য করে হাওলাদার বলেন, “এখন পার্টির সকল স্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে পল্লীবন্ধু এরশাদের স্বপ্নের জাতীয় পার্টি গড়ে তুলব। আমাদের মধ্যে আর কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। আমরা সবাই প্রয়াত এরশাদের সৈনিক হিসেবে জাতীয় পার্টির জন্য নিবেদিত হয়ে একটি সাম্য প্রগতি ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করব।”

মামলার আদেশের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির বর্তমান মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “আমরা আদালতের আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত আদালত পার্টির চেয়ারম্যান ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদকের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, আশা করি তারা সেটা মান্য করবেন। আমাদের বিশ্বাস, আমরা ন্যায়বিচার পাব। আমরা এ বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলা করব।”

অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দলটির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম বলেন, “আমাকেও তারা আসামি করেছেন। আমি তো পার্টির চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত প্রস্তুত করে পাঠিয়ে থাকি। মাত্র কয়েকদিনের জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আশা করি আমরা আবারো সাংগঠনিক কার্যক্রমে ফিরতে পারব।”

কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব নিয়ে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের। একপর্যায়ে তারা দলের চেয়ারম্যানের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে গত ২৮ জুন দলের জাতীয় কাউন্সিলে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে পৃথক প্যানেল দেওয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে দলীয় কাউন্সিল বাতিল করে দেন জিএম কাদের। এতে আনিস, হাওলাদারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়ে জিএম কাদেরের। জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে ঘোষিত সময়ে কাউন্সিল ডাকার আহ্বান জানিয়ে একাধিক বিবৃতি দেন নেতারা। পাল্টা বিবৃতি ও জেলা নেতাদের ডেকে মতামত নিয়ে এমনকি তড়িঘড়ি করে প্রেসিডিয়ামের সভা ডেকে জিএম কাদের দল থেকে অব্যাহতি দেন এসব নেতাদের। দল থেকে অব্যাহতির ঘটনা মেনে নেননি সিনিয়র নেতারা। বরং তারা জিএম কাদেরের এমন সিদ্ধান্তকে অবৈধ আখ্যায়িত করে আলাদা দলীয় কার্যাক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে দল ছেড়ে যাওয়া সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে একমঞ্চে হাজিরও করেন তারা। পাশাপাশি জিএম কাদেরের বহিস্কারাদেশ চ্যালেঞ্জ এবং তার দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেন। অবশেষে সেই মামলায় আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নেতাদের সপদে ফিরিয়ে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।

এর আগে ২৮ জুন জিএম কাদের দলের গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ ১০ নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং জাতীয় পার্টির নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকেও তাদের নাম মুছে ফেলা হয়।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জিএম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা