আয়োজক পাকিস্তানের শিকল ভাঙার গান
Published: 18th, February 2025 GMT
পাকিস্তানে শেষ যেবার আইসিসি ইভেন্ট হলো এরপর ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুরুষদের ২৭টি প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে পেরেছিল। ওয়ানডে বিশ্বকাপ তো বটেই, এরপর চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চালু করে আইসিসি। যুবাদের বিশ্বকাপ, বাছাইপর্বও আইসিসির তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয়।
নারীদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ওয়ানডে বিশ্বকাপ, যুব বিশ্বকাপ, বাছাইপর্বসহ টুর্নামেন্টের কমতি নেই। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, আইসিসির একটি আসরও সকল সুযোগ-সুবিধা থাকার পর আয়োজন করতে পারেনি পাকিস্তান।
যৌথ আয়োজনে একাধিক ইভেন্ট আয়োজনের চেষ্টা চালিয়েছিল। আইসিসিও রাজী হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে, বাধায়, অংশগ্রহণকারী দলগুলোর অনিচ্ছায় আইসিসি সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। কিন্তু ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পর পাকিস্তান ‘মিনি বিশ্বকাপ’ খ্যাত এই আসরটি আয়োজন করবে তা লিখিত হয়ে দাঁড়ায়।
আরো পড়ুন:
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে ছিটকে গেলেন লোকি ফার্গুসন
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আলো ছড়াবেন যেসব ব্যাটসম্যান
কিন্তু এবারও বাধা আসে প্রতিবেশী ও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত থেকে। টিম ইন্ডিয়া পাকিস্তানে গিয়ে কোনোভাবেই খেলবে না। রাজনৈতিক কারণে দুই দেশের মধ্যে পুরোনো সম্পর্ক আর নেই। পাকিস্তান ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ভারতে গিয়ে খেলে আসলেও ভারত সরকার কোনোভাবেই পাকিস্তানে দল পাঠাতে রাজী নয়। এজন্য মিনি বিশ্বকাপ খ্যাত আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হচ্ছে হাইব্রিড মডেলে।
১৯৯৬ সালের পর পাকিস্তানে আবার বসছে আইসিসি ইভেন্ট। ২৯ বছর পর ঘরের মাঠে পাকিস্তান খেলবে আইসিসির শীর্ষ প্রতিযোগিতা। আয়োজক পাকিস্তানে সেজন্য চলছে শিকল ভাঙার গান। ভারত অংশগ্রহণ না করলেও অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউ জিল্যান্ড, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ পাকিস্তান সফর করছে। ভারতের গ্রুপের ম্যাচগুলো হবে দুবাইয়ে। বাকি সবগুলো ম্যাচই হবে পাকিস্তানের রাওয়ালপিণ্ডি, লাহোর ও করাচিতে। ভারত টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল ও ফাইনাল খেললেও ম্যাচগুলো পাকিস্তান থেকে সরে আসবে।
আয়োজক হিসেবে পাকিস্তানের জন্য এই প্রতিযোগিতা অনেক বড় পরীক্ষা। নিরাপত্তা কারণে একটা সময়ে পাকিস্তান সফর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল সবদেশ। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের ওপর হামলার পর সব ধরণের আন্তর্জাতিক সিরিজ লম্বা সময়ের জন্য পাকিস্তানে বন্ধ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে সেই অচলায়নতন ভেঙে পাকিস্তান আবারও বিশ্বাস স্থাপন করা শুরু করে। কিন্তু বড় কোনো ইভেন্ট আয়োজন করতে পারছিল না।
২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপ আয়োজন করেছিল তারা। তাতে কিছুটা মুখরক্ষা হয়। এবার সাত দলকে আতিথেয়তা দিয়ে তাদেরকে দিতে হবে রুদ্ধশ্বাস পরীক্ষা। প্রথমত, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। এরপর মাঠের ক্রিকেট, আয়োজক হিসেবে ব্যতিক্রমী ও উদ্ভাবনী ভাবনা, দর্শকদের প্রত্যাশাসহ আরো কতো কিছু। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান মোহসীন নাকভী সেসব দিকে নিজের বাড়তি নজর রেখেছেন বলেই মনে হচ্ছে, ‘‘আয়োজক হিসেবে পাকিস্তান কতোটা গোছানো, কতটো উচুঁ পর্যায়ে আমরা সেটাই বিশ্বকে দেখাব।’’
১৯৯৬ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর আয়োজক হিসেবে পাকিস্তান সাতটি বিশ্বকাপ, নয়টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, -আটটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও তিনটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নসশিপের (ফাইনাল) আসরের ম্যাচ মিস করে। ২৯ বছরের অপেক্ষার পর শিকল ভেঙে নতুন পথচলা শুরু করতে যাচ্ছে এশিয়ার অন্যতম সফল ক্রিকেট দলটি। মাঠের ক্রিকেটের সৌন্দর্যের জন্য আয়োজক হিসেবে কত মার্ক পায় সেটাই দেখার।
ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের কিস্তির প্রস্তাব উঠছে আইএমএফ পর্ষদে
আগামী ২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের সভায় বাংলাদেশের সঙ্গে চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের প্রস্তাব উঠছে। সভায় অনুমোদন হলে একসঙ্গে দুই কিস্তির ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ শুক্রবার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের সভার এ তারিখ নির্ধারণের তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফ পর্ষদের বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির পর্যালোচনা প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে।
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা দিতে আইএমএফ ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করে। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও শর্ত পরিপালন নিয়ে বিশেষত টাকা–ডলার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল শর্ত পালনের অগ্রগতি পর্যালোচনায় ঢাকায় আসে। তবে সমঝোতা না হওয়ায় চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হয়।
সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতা হয় এবং বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং পর্ষদ সভার অনুমোদন সাপেক্ষে ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৭৬ কোটি ডলার বাড়তি ঋণ চেয়েছে। বাড়তি ঋণ যোগ হলে মোট দাঁড়াবে ৫৪০ কোটি ডলার। বিবৃতিতে বিনিময় হার, রাজস্ব আদায়, ব্যাংক খাতসহ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়।