কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত আইনজীবীরা এ বছর অংশ নিচ্ছেন না। তাঁদের দাবি, যাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন, তাঁদের সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মামলায় হয়রানিমূলকভাবে আসামি করা হয়েছে। এ কারণে গতকাল মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিনেও আওয়ামীপন্থী কোনো আইনজীবী মনোনয়ন ফরম কিনতে পারেননি।

জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির ২০২৫-২৬ সেশনের নির্বাচনের তফসিল গত সোমবার ঘোষণা করা হয়। গতকাল মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের শেষ দিন ছিল। আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের দাবি, সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম কেনা ও জমা দেওয়ার জন্য তিন দিনের সময়ের বিধান থাকলেও এবার তা মাত্র এক দিন রাখা হয়েছে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আজ বুধবার মনোনয়ন ফরম জমা যাচাই-বাছাই চলবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রার্থীদের খসড়া তালিকা প্রকাশ, ২৩ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ২৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও ৬ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর ভোটার আছেন ১ হাজার ২১০ জন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাঁচ আইনজীবী বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা গত ৬ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা আদালত চত্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। একই দিন তাঁরা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়ার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ২০ আইনজীবীকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বহিষ্কার দাবি করে ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কুমিল্লা মহানগরের সংগঠক ইনজামুল হক বাদী হয়ে কুমিল্লার সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারসহ ২৬১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৩০ জনের বেশি আইনজীবীকে আসামি করা হয়।

আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখতেই আগাম মামলা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে লিটন। আজ সকালে তিনি বলেন, ‘গত ৩ আগস্ট পুলিশ লাইনসে হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনটি মামলা হয়েছে। সেই একই ঘটনার ৬ মাস পর আবারও আরেকটি মামলায় হয়রানিমূলকভাবে আইনজীবীদের আসামি করা হয়েছে। আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারিসহ একসঙ্গে ৩২ জন আইনজীবীকে আসামি করা হয়। গঠনতন্ত্র অমান্য করে মনোনয়ন ফরম কেনা ও জমার তিন দিনের সময় বেঁধে দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে মাত্র এক দিন। আমরা যেন মামলার কারণে আসতে না পারি, এ জন্য নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়ম করা হয়েছে—সশরীরে হাজির হয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ করতে হবে।’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘এ মামলার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। যাঁরা টাকা জমা দিয়েছেন এবং বৈধ ভোটার, তাঁরাই মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ–সমর্থিতরা এলে অবশ্যই মনোনয়ন দেওয়া হতো। মামলার ভয়ে হয়তো আসেননি, এখানে আমাদের কী করার আছে। নির্বাচনে গঠনতন্ত্রের কোনো লঙ্ঘন করা হয়নি।’

সর্বশেষ গত বছরের ৭ মার্চ জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে ২০২৪-২৫ সেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোট ১৫টি পদের মধ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১০টিতে আওয়ামী লীগপন্থীরা জয়লাভ করেন। বাকি পাঁচটিতে বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা বিজয়ী হন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইনজ ব আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ পঞ্চম পর্বে থাকছে বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ মূলত আইনজীবীদের পেশাজীবনের অনুসরণীয় বিধিমালা। এ আইন থেকে আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষায় দুটি প্রশ্ন আসবে। উত্তর দিতে হবে একটি। নম্বর থাকবে ১০।

প্রশ্নপত্রের মানবণ্টন দেখেই বোঝা যাচ্ছে আইনটি কেমন হতে পারে। মূলত বার কাউন্সিলের গঠন, আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা এবং একজন আইনজীবী হিসেবে সমাজের প্রতি, মক্কেলের প্রতি, সহকর্মীদের প্রতি যেসব দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা এ আইনে বলা হয়েছে। বাস্তবধর্মী ও পেশাজীবনে অতি চর্চিত একটি আইন হলো বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২। এ আইন থেকে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।

যেমন বার কাউন্সিল কীভাবে গঠিত হয়, বার কাউন্সিলের কার্যবালি কী, সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হন, কতগুলো কমিটি রয়েছে, কমিটির কাজ কী কী—এগুলো পড়তে হবে। অনেকেই আছে বার কাউন্সিল ও বার অ্যাসোশিয়েশনের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না। এটি ভালো করে রপ্ত করতে হবে। এমন প্রশ্ন হরহামেশা পরীক্ষায় আসে।

এ ছাড়া বার ট্রাইব্যুনালের গঠন ও কার্যাবলি, আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণের জন্য কী কী ধরনের শাস্তি রয়েছে, বার কাউন্সিল কি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে—বিষয়গুলো কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। অনুচ্ছেদ ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩২ এবং বিধি ৪১, ৪১ক ও ৫০–এ এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। সেগুলো ভালো করে পড়তে হবে। অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা, একজন আইনজীবী হিসেবে আরেক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তর জানতে হবে। এসব বিষয় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে।

পেশাগত বিধি অংশে রচনামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন পেশাগত বিধি এবং নীতিমালার আলোকে আদালতের প্রতি, মক্কেলের প্রতিসহ আইনজীবীদের প্রতি ও জনসাধারণের প্রতি একজন আইনজীবীর দায়িত্ব ও কর্তব্য পর্যালোচনা করতে বলা হয়। বর্তমান ঢাকা বারসহ বেশ কয়েকটি বার অ্যাসোশিয়েশনে এডহক কমিটি রয়েছে। এডহক বার কাউন্সিলের গঠন ও ফাংশনস সম্পর্কে প্রশ্ন আসতে পারে। এগুলো ভালো করে পড়তে হবে।

অনেক সময়ে আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরসংক্রান্ত মুসাবিদা করতে দেওয়া হয়। তাই এই মুসাবিদা নিয়মিত অনুশীলন করবেন। মনে রাখবেন, মামলার মুসাবিদা ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মুসাবিদার ধরন কিন্তু এক নয়। তাই যেকোনো ভালো একটি বই থেকে ফরমেটটি দেখে নেবেন এবং অনুশীলন করবেন। একই সঙ্গে বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন সমাধান করবেন। এ আইন থেকে বিগত বছরের প্রশ্ন রিপিটও হয়।

একটি বিষয় মনে রাখবেন, আইনটি সহজ বলে অবহেলা করার সুযোগ নেই। কারণ, কৃতকার্য হওয়ার জন্য এই ১০ নম্বর অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অস্ত্র ও মাদকসহ সাবেক এমপির ছেলে আটক
  • বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন
  • দণ্ডাদেশ বহালের রায়ের বিরুদ্ধে ১০ আসামির আপিল ও লিভ টু আপিল
  • যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
  • দক্ষিণ ভারতের নিষ্পেষিত মুসলিম নারীদের কণ্ঠস্বর