কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে এবার লড়ছেন না আওয়ামী লীগপন্থীরা
Published: 19th, February 2025 GMT
কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত আইনজীবীরা এ বছর অংশ নিচ্ছেন না। তাঁদের দাবি, যাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন, তাঁদের সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মামলায় হয়রানিমূলকভাবে আসামি করা হয়েছে। এ কারণে গতকাল মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিনেও আওয়ামীপন্থী কোনো আইনজীবী মনোনয়ন ফরম কিনতে পারেননি।
জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির ২০২৫-২৬ সেশনের নির্বাচনের তফসিল গত সোমবার ঘোষণা করা হয়। গতকাল মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের শেষ দিন ছিল। আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের দাবি, সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম কেনা ও জমা দেওয়ার জন্য তিন দিনের সময়ের বিধান থাকলেও এবার তা মাত্র এক দিন রাখা হয়েছে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আজ বুধবার মনোনয়ন ফরম জমা যাচাই-বাছাই চলবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রার্থীদের খসড়া তালিকা প্রকাশ, ২৩ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ২৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও ৬ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর ভোটার আছেন ১ হাজার ২১০ জন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাঁচ আইনজীবী বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা গত ৬ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা আদালত চত্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। একই দিন তাঁরা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়ার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ২০ আইনজীবীকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বহিষ্কার দাবি করে ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কুমিল্লা মহানগরের সংগঠক ইনজামুল হক বাদী হয়ে কুমিল্লার সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারসহ ২৬১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৩০ জনের বেশি আইনজীবীকে আসামি করা হয়।
আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখতেই আগাম মামলা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে লিটন। আজ সকালে তিনি বলেন, ‘গত ৩ আগস্ট পুলিশ লাইনসে হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনটি মামলা হয়েছে। সেই একই ঘটনার ৬ মাস পর আবারও আরেকটি মামলায় হয়রানিমূলকভাবে আইনজীবীদের আসামি করা হয়েছে। আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারিসহ একসঙ্গে ৩২ জন আইনজীবীকে আসামি করা হয়। গঠনতন্ত্র অমান্য করে মনোনয়ন ফরম কেনা ও জমার তিন দিনের সময় বেঁধে দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে মাত্র এক দিন। আমরা যেন মামলার কারণে আসতে না পারি, এ জন্য নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়ম করা হয়েছে—সশরীরে হাজির হয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ করতে হবে।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘এ মামলার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। যাঁরা টাকা জমা দিয়েছেন এবং বৈধ ভোটার, তাঁরাই মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ–সমর্থিতরা এলে অবশ্যই মনোনয়ন দেওয়া হতো। মামলার ভয়ে হয়তো আসেননি, এখানে আমাদের কী করার আছে। নির্বাচনে গঠনতন্ত্রের কোনো লঙ্ঘন করা হয়নি।’
সর্বশেষ গত বছরের ৭ মার্চ জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে ২০২৪-২৫ সেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোট ১৫টি পদের মধ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১০টিতে আওয়ামী লীগপন্থীরা জয়লাভ করেন। বাকি পাঁচটিতে বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা বিজয়ী হন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পরবর্তী সরকারের পক্ষে এত সহজে সংস্কার আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না: আসিফ নজরুল
বাংলাদেশে পরবর্তী সরকারের পক্ষে এত সহজে সংস্কার আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। নিজের এই ধারণার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘কারণ, এত কষ্ট, এত ত্যাগ কখনোই বাংলাদেশের মানুষ কোনো সংস্কারের জন্য বা রাষ্ট্র মেরামতের জন্য করে নাই।’
আজ বুধবার বিকেলে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আইন উপদেষ্টা। সহকারী অ্যাটর্নি সার্ভিস অধ্যাদেশের প্রাথমিক খসড়ার ওপর মতবিনিময় সভার আয়োজন করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
‘আমরা অনেক ধরনের সুযোগ পেয়েছি, কোনো সুযোগেরই আমরা সদ্ব্যবহার করতে পারি নাই’ মন্তব্য করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘এইবার আমার মনে হয় এত ত্যাগ, এত রক্তক্ষয়ের পর এবার যে আমাদের রাষ্ট্র মেরামতের সুযোগ এসেছে, আমাদের যে একটু সুশাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার যে সুযোগ এসেছে, এবার যদি আমরা সেই সুযোগটা মিস করি...আমার মনে হয় আগামী কয়েক দশকে আমরা এই সুযোগ পাব না। কাজেই এই সুযোগ আমাদের কোনোভাবেই মিস করা চলবে না।’
মতবিনিময় সভায় সহকারী অ্যাটর্নি সার্ভিস অধ্যাদেশের প্রাথমিক খসড়ার ওপর আলোচনায় অংশ নেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। এ সময় খসড়াটির নানা সংকট ও করণীয় বিষয়ে তুলে ধরা হয়। তার জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আরও কনসাল্টেশন (পরামর্শ) করব। আরও মতামত দেব। আমি খুবই খুশি হয়েছি আমাদের এই আইনটাকে একদম তুলাধোনা করে দেওয়া হয়েছে। এটা ভালো হয়েছে। আমাদের জন্য একটা ইনসেন্টিভ তৈরি হয়েছে। আমরা আরও ভালো করার চেষ্টা করব।’
খসড়াটি চূড়ান্ত করতে আরও পরামর্শ নেওয়া হবে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘একটা খুব ভালো সাজেশন আসছে পলিটিক্যাল পার্টির সঙ্গে কনসাল্টেশন। এটা পলিটিক্যাল পার্টির জন্য খুবই রেলেভান্ট (প্রাসঙ্গিক), অবশ্যই করব। আপনাদের সবার সহযোগিতায় ইনশা আল্লাহ আমরা একটা ভালো আইন করতে পারব এবং আমাদের প্রত্যাশা আছে এই সরকারের আমলে অন্তত কিছু নিয়োগ যদি আমরা অ্যাটর্নি সার্ভিসে দিয়ে দিতে পারি—সে চেষ্টা করব।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সব সময় শুনতাম যে নিম্ন আদালতে বা উচ্চ আদালতে যে দুর্নীতি হয় বা অনিয়ম হয় এখানে অনেক পক্ষ থাকে। শুধু যে আপনার সাপোর্ট স্টাফরা বা জাজরা করে, সেটা না। এক শ্রেণির আইনজীবীরা, সরকারি আইনজীবীদেরও ভূমিকা থাকে। আমি কিছু রিসার্চ করেও শুনেছি যে অল্প, অত্যন্ত অল্প টাকা পান উনারা। বিশেষ করে যাঁরা পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসে আসেন, তারপরও এটা হওয়ার প্রচণ্ড আগ্রহ থাকে সবার। কারণ, এমন অভিযোগ শুনেছি, এগেইন বলছি অভিযোগ অন্যভাবে নিয়েন না। সরকারি উকিল হয়ে উনারা দেখা যায়, প্রতিপক্ষের পক্ষে কাজ করে টাকা নেন এরকম কিছু উদাহরণ আছে। সবাই না। অনেকে তো আছেন, অনেক ভালো প্র্যাকটিস করেছেন বা করছেন।’
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল প্রসিকিউটোরিল অ্যাসিস্ট্যান্ট এহসানুল হক সমাজী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী তানিম হোসেন শাওন, আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া, বিজিবির পাবলিক প্রসিকিউটর মো. বোরহান উদ্দিন, জেলা ও দায়রা জজ আদালত ঢাকার পাবলিক প্রসিকিউটর মো. ইকবাল হোসেন, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের প্রমুখ।