সরকার পতনের পরপরই দুটি বিষয়ে কঠোর হতে হয়– একটি আইনশৃঙ্খলা, অন্যটি অর্থনীতির লাগাম টেনে ধরা। কেউ আবার অংশগ্রহণমূলক সরকার, পরামর্শ এবং স্বচ্ছতা আজকের জননীতির কথাও বলেন। এখন সময় এসেছে সেগুলো আরও বিকশিত করার।

গণতন্ত্রের জন্য সরকার এবং তার নাগরিকদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা এতটাই স্পষ্ট অগ্রাধিকার বলে মনে হতে পারে, এটি আরও বিশদ ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। তবুও সব জায়গায় সরকারকে তাদের নাগরিকদের থেকে দূরে থাকা, যথেষ্ট মনোযোগ না দেওয়া এবং অংশগ্রহণ না করার জন্য সমালোচনা করা হয়েছে।

নীতি নির্ধারণে নাগরিকদের সম্পৃক্ত করার ফলে সরকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ধারণা, তথ্য এবং সম্পদের নতুন উৎস ব্যবহার করতে পারে। তত্ত্বগতভাবে সবকিছু ঠিকঠাক, কিন্তু বাস্তবে আপনি কোথা থেকে শুরু করবেন? 

সূচনাবিন্দু স্পষ্ট। নীতি নির্ধারণে নাগরিকদের কার্যকরভাবে যুক্ত করার জন্য সরকারকে শক্তিশালী আইনি, নীতিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরিতে পর্যাপ্ত সময় ও সম্পদ বিনিয়োগ করতে হবে। তাদের সঠিক হাতিয়ার তৈরি এবং ব্যবহার করতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী মতামত জরিপ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের ছোট ছোট গোষ্ঠীর সঙ্গে ঐকমত্য সম্মেলন। কিন্তু অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, জনপ্রশাসনে নেতৃত্ব এবং প্রতিশ্রুতি ছাড়া এমনকি সেরা নীতিগুলোও খুব কম বাস্তব প্রভাব ফেলবে।

নীতি নির্ধারণে নাগরিকদের যুক্ত করার মূল উপাদানগুলো হাতের কাছেই রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে তথ্য, পরামর্শ এবং জনসাধারণের অংশগ্রহণ। প্রদত্ত তথ্য অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ, সম্পূর্ণ, প্রাসঙ্গিক, সহজে পাওয়া এবং বোধগম্য হতে হবে।

পরামর্শ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের আইনি অধিকার কম দৃশ্যমান। কানাডা, ফিনল্যান্ড ও জাপানের মতো কিছু দেশে সরকারকে নতুন নিয়মের প্রভাব মূল্যায়নের জন্য নাগরিকদের সঙ্গে পরামর্শ করতে হয়। কিন্তু আগে থেকে অবহিত থাকা যথেষ্ট নয়; যদি সরকার চায় যে লোকেরা পরামর্শের জন্য তাদের সময় ব্যয় করুক, তাহলে নীতি নির্ধারণে সেই ইনপুট ব্যবহারের জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে এবং পরে তাদের সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করতে হবে।

এসব অধিকার কার্যকর হয়ে গেলে কী হবে? জনসাধারণের পরামর্শের সময়সূচি নির্ধারণ করা অপরিহার্য। প্রকৃতপক্ষে নীতি প্রক্রিয়ায় এটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করা উচিত। সর্বোপরি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে তাদের মতামত চাওয়া হলে লোকদের রাগান্বিত এবং হতাশ হওয়ার আশঙ্কা বেশি, যদি তাদের সঙ্গে পরামর্শ না করা হয়।

বর্তমান কঠিন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশে সরকারকে কেবল নিয়ন্ত্রক এবং মধ্যস্থতাকারী হিসেবেই নয়, বরং মুক্তবাজার অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে নিরাপত্তা, জরুরি পরিষেবা এবং প্রতিরক্ষা প্রদানকারী হিসেবেও ভূমিকা রাখতে হবে। কিন্তু আমাদের সভ্যতায় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংহতি বৃদ্ধিতে এর ভূমিকায় পর্যাপ্তভাবে জোর দেওয়া হয়নি। বর্তমান অস্থিরতার মধ্যে এটি ভুলে যাওয়া উচিত নয়, গণতন্ত্রের শক্তি নাগরিকদের সক্রিয় ও সচেতনতার মধ্যে নিহিত। সরকার আর অসম্পূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতে পারে না বা শুধু জনগণের মতামত জানতে চাইতে পারে না, যা বাস্তবসম্মত।

সরকারের ভূমিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা স্বাগত জানানো হলেও বৃহৎ, অস্বচ্ছ, গোপনীয় পাবলিক প্রতিষ্ঠানের পুরোনো মডেলগুলোতে ফিরে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। নীতিমালা উন্নত করতে এবং গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা জোরদার করতে স্বচ্ছতা, জনসাধারণের পরামর্শ ও অংশগ্রহণ আগের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা, গোপনীয়তা এবং নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করে উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ সরকার প্রতিষ্ঠা করা আমাদের সময়ের একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

নরেশ মধু: সাংবাদিক
pabna.

obsrver@gmail.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র র জন য ত কর র র সময সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

দ্রুত নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করুন: আকবর খান

ঢাকা-৮ আসনে দ্রুত নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান। তিনি বলেন, “ভোটের অধিকার জনগণের পবিত্র আমানত, এটি সচেতনভাবে প্রয়োগ করতে হবে।”

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা জননেতা সাইফুল হক-এর ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচনী গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণ কর্মসূচিতে তিনি একথা বলেন।

গণসংযোগের শুরুতে ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাকের সভাপতিত্বে এক সংক্ষিপ্ত পথসভা হয়। 

সেখানে আকবর খান বলেন, “নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে অবিলম্বে ভোটের গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে—২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে—ঢাকা-৮ আসনের বহু নাগরিক ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। যে তরুণের এখন বয়স ২৫ বা ২৬, তারা কখনো ভোট দিতে পারেনি, ভোট কী তা জানে না- এটি গণতন্ত্রের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।”

তিনি আরো বলেন, “গত ১৬-১৭ বছর ধরে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং আমাদের নেতা সাইফুল হক জনগণের ভোটাধিকারের আন্দোলনে রাজপথে সংগ্রাম করে আসছেন। এর জন্য জেল-জুলুম, নির্যাতন সহ্য করেও তিনি থেমে থাকেননি। ভোটাধিকার গণমানুষের দীর্ঘ লড়াই ও ত্যাগের ফসল। এই অধিকার ভুল ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।”

আকবর খান বলেন, “জননেতা সাইফুল হক গণমানুষের পরীক্ষিত নেতা। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের জনগণ যেন তাকে ভোট দিয়ে নিজেদের সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়ার কথা ও দীর্ঘ বঞ্চনার ইতিহাস সংসদে তুলে ধরার সুযোগ করে দেন- এটাই আমাদের আহ্বান।”

গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণ কর্মসূচি বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকা থেকে শুরু হয়ে মতিঝিল, কমলাপুর, ফকিরাপুল, কালভার্ট রোড হয়ে বিজয়নগরে এসে শেষ হয়। এতে শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।

কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সিকদার হারুন মাহমুদ, মীর রেজাউল আলম, কবি জামাল সিকদার, ফাইজুর রহমান মুনির, বাবর চৌধুরী, মহানগর নেতা যুবরান আলী জুয়েল, সালাউদ্দিন, রিয়েল মাতবর, আরিফুল ইসলাম, মুজিবুল হক চুন্নু, গোলাম রাজিব, মাহমুদুল হাসান খান, ফয়েজ ইবনে জাফর, নান্টু দাস, শিবু মহন্ত ও হুমায়ুন কবির প্রমুখ।

ঢাকা/এএএম/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
  • গণতন্ত্রের পথে সংকট দেখছেন তারেক
  • এমন তো হবার কথা ছিল না: তারেক রহমান
  • সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাই এখন জাতির দাবি
  • জনগণের বৃহত্তর ঐক্য ছাড়া এই ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার পতন হবে না: সাকি
  • দ্রুত নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করুন: আকবর খান