নীতি নির্ধারণে নাগরিকের অংশগ্রহণ
Published: 19th, February 2025 GMT
সরকার পতনের পরপরই দুটি বিষয়ে কঠোর হতে হয়– একটি আইনশৃঙ্খলা, অন্যটি অর্থনীতির লাগাম টেনে ধরা। কেউ আবার অংশগ্রহণমূলক সরকার, পরামর্শ এবং স্বচ্ছতা আজকের জননীতির কথাও বলেন। এখন সময় এসেছে সেগুলো আরও বিকশিত করার।
গণতন্ত্রের জন্য সরকার এবং তার নাগরিকদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা এতটাই স্পষ্ট অগ্রাধিকার বলে মনে হতে পারে, এটি আরও বিশদ ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। তবুও সব জায়গায় সরকারকে তাদের নাগরিকদের থেকে দূরে থাকা, যথেষ্ট মনোযোগ না দেওয়া এবং অংশগ্রহণ না করার জন্য সমালোচনা করা হয়েছে।
নীতি নির্ধারণে নাগরিকদের সম্পৃক্ত করার ফলে সরকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ধারণা, তথ্য এবং সম্পদের নতুন উৎস ব্যবহার করতে পারে। তত্ত্বগতভাবে সবকিছু ঠিকঠাক, কিন্তু বাস্তবে আপনি কোথা থেকে শুরু করবেন?
সূচনাবিন্দু স্পষ্ট। নীতি নির্ধারণে নাগরিকদের কার্যকরভাবে যুক্ত করার জন্য সরকারকে শক্তিশালী আইনি, নীতিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরিতে পর্যাপ্ত সময় ও সম্পদ বিনিয়োগ করতে হবে। তাদের সঠিক হাতিয়ার তৈরি এবং ব্যবহার করতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী মতামত জরিপ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের ছোট ছোট গোষ্ঠীর সঙ্গে ঐকমত্য সম্মেলন। কিন্তু অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, জনপ্রশাসনে নেতৃত্ব এবং প্রতিশ্রুতি ছাড়া এমনকি সেরা নীতিগুলোও খুব কম বাস্তব প্রভাব ফেলবে।
নীতি নির্ধারণে নাগরিকদের যুক্ত করার মূল উপাদানগুলো হাতের কাছেই রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে তথ্য, পরামর্শ এবং জনসাধারণের অংশগ্রহণ। প্রদত্ত তথ্য অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ, সম্পূর্ণ, প্রাসঙ্গিক, সহজে পাওয়া এবং বোধগম্য হতে হবে।
পরামর্শ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের আইনি অধিকার কম দৃশ্যমান। কানাডা, ফিনল্যান্ড ও জাপানের মতো কিছু দেশে সরকারকে নতুন নিয়মের প্রভাব মূল্যায়নের জন্য নাগরিকদের সঙ্গে পরামর্শ করতে হয়। কিন্তু আগে থেকে অবহিত থাকা যথেষ্ট নয়; যদি সরকার চায় যে লোকেরা পরামর্শের জন্য তাদের সময় ব্যয় করুক, তাহলে নীতি নির্ধারণে সেই ইনপুট ব্যবহারের জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে এবং পরে তাদের সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করতে হবে।
এসব অধিকার কার্যকর হয়ে গেলে কী হবে? জনসাধারণের পরামর্শের সময়সূচি নির্ধারণ করা অপরিহার্য। প্রকৃতপক্ষে নীতি প্রক্রিয়ায় এটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করা উচিত। সর্বোপরি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে তাদের মতামত চাওয়া হলে লোকদের রাগান্বিত এবং হতাশ হওয়ার আশঙ্কা বেশি, যদি তাদের সঙ্গে পরামর্শ না করা হয়।
বর্তমান কঠিন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশে সরকারকে কেবল নিয়ন্ত্রক এবং মধ্যস্থতাকারী হিসেবেই নয়, বরং মুক্তবাজার অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে নিরাপত্তা, জরুরি পরিষেবা এবং প্রতিরক্ষা প্রদানকারী হিসেবেও ভূমিকা রাখতে হবে। কিন্তু আমাদের সভ্যতায় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংহতি বৃদ্ধিতে এর ভূমিকায় পর্যাপ্তভাবে জোর দেওয়া হয়নি। বর্তমান অস্থিরতার মধ্যে এটি ভুলে যাওয়া উচিত নয়, গণতন্ত্রের শক্তি নাগরিকদের সক্রিয় ও সচেতনতার মধ্যে নিহিত। সরকার আর অসম্পূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতে পারে না বা শুধু জনগণের মতামত জানতে চাইতে পারে না, যা বাস্তবসম্মত।
সরকারের ভূমিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা স্বাগত জানানো হলেও বৃহৎ, অস্বচ্ছ, গোপনীয় পাবলিক প্রতিষ্ঠানের পুরোনো মডেলগুলোতে ফিরে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। নীতিমালা উন্নত করতে এবং গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা জোরদার করতে স্বচ্ছতা, জনসাধারণের পরামর্শ ও অংশগ্রহণ আগের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা, গোপনীয়তা এবং নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করে উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ সরকার প্রতিষ্ঠা করা আমাদের সময়ের একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
নরেশ মধু: সাংবাদিক
pabna.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র র জন য ত কর র র সময সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কোনও মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমির খসরু
কোনও মহামানবকে বাংলাদেশের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য দেশের মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম করেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সোমবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, কোনও মহামানব কোনও দেশের গণতন্ত্রের সমাধান দেবে তার জন্য দেশের জনগণকে অপেক্ষা করতে হবে, এটা বিশ্বাস করার কারণ নেই।
এদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় ন্যাপ ভাসানীর সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক উপস্থিত উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে আমজনতার দলের সঙ্গে বৈঠকে করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। আমজনতার দলের আহ্বায়ক কর্নেল অব. মিয়া মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে বাংলাদেশ পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির নেতারা।
বিএনপির পক্ষে বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।
আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আমির খসরু বলেন, মানুষ বলতে কারা? আমার বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, যারা জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করছে। যারা রাজনৈতিক দল হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাস্তায় লড়াই করেছে, আমাদের সঙ্গে যারা রাস্তায় ছিল, ইতোমধ্যে প্রায় ৫০টি দল, পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করেছে ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচনের জন্য।
তিনি আরও বলেন, সংস্কারের জন্য যে কথাগুলো বলা হয়, সংস্কারের ব্যাপারে যেখানে ঐকমত্য হবে- সেই সংস্কারগুলো দ্রুত করে নির্বাচন কমিশনকে বলা হোক, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করে রোডম্যাপ দিয়ে ভোটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। তো জনগণ বলতে কারা?
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এখন জনগণ বলতে যদি কোনও একটি বিশেষ গোষ্ঠী, সুবিধাভোগী- যারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে, জনগণের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে গিয়ে গণতন্ত্রকে সংস্কারের মুখোমুখি করছে! এটা তো কারও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কারণ নেই। ১৬ বছরের যুদ্ধটা ছিল গণতন্ত্রের জন্য, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে আনার জন্য। যে সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। সেটা যে সরকারই হোক।