রাষ্ট্রভাষার উন্নয়নে নবজাগরণ দরকার
Published: 21st, February 2025 GMT
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলে তার রাষ্ট্রভাষা কী হবে, এ বিতর্ক উঠেছিল দেশভাগের আগেই। সে সময়ে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী মোতাহের হোসেন, আবদুল হক প্রমুখ বাংলা ভাষার পক্ষে শক্ত অবস্থান নেন। ১৯৪৭ সালের পয়লা সেপ্টেম্বরেই তমদ্দুন মজলিস গঠনের প্রচেষ্টা শুরু হয়। তারা পাকিস্তানবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার প্রশ্নটি সামনে আনে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা এ সংগঠনের মধ্যে ছিল না।
এর পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আবদুল মতিন বাংলা ভাষাকে উর্দুর পাশাপাশি পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলেন, আন্দোলনের জন্য সাংগঠনিক প্রক্রিয়ারও সূচনা করেন। পরে তিনি পরিচিত হন ‘ভাষা মতিন’ নামে। তিনি ছিলেন গোপন কমিউনিস্ট পার্টির অনুসারী। তখন গড়ে ওঠে গণতান্ত্রিক যুবলীগ। এ সংগঠনও অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলনে অগ্রসর হয়।
সংগঠনটির পেছনে সক্রিয় ছিল গোপন কমিউনিস্ট পার্টি। ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পর্যায়ে বাংলা ভাষার, বাংলা সাহিত্যের এবং বাংলায় জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই এ দেশে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটে এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর সরকারি অফিসে বাংলা ভাষা চালু হয়েছে এবং সে ধারা চলমান আছে। নিম্ন আদালতে বাংলা ভাষা চালু থাকলেও উচ্চ আদালতে অবহেলিত। উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের জন্য অনেক বই ইংরেজি থেকে, আরও কোনো কোনো ভাষা থেকে বাংলায় অনূদিত হয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি প্রভৃতি বিষয়েও বাংলা প্রচলনের আয়োজন দেখা গেছে। কিন্তু আমরা বাংলা ভাষাকে উচ্চশিক্ষার মাধ্যম করতে পারিনি। স্বীকার করতে হবে, শিক্ষাব্যবস্থায় বাংলা ভাষার গুরুত্ব আগের থেকে কমে গেছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক পর্যায়ে ইংলিশ ভার্সন চালু করা হয়েছে এবং তার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এতে মূলধারার শিক্ষা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রেও বাংলা ভাষার ব্যবহার কমেছে।
আমরা যদি প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার উন্নয়ন চাই বাংলা ভাষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে সর্বস্তরে বাংলা ভাষাকেই অবলম্বন করা জরুরি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইংরেজির অপরিহার্যতা আছে। ভালোভাবে ইংরেজি শেখানোর জন্য চাহিদা অনুযায়ী কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দরকার। সুষ্ঠু জাতীয় ভাষানীতি প্রণয়ন করে, জনসমর্থন নিয়ে তার বাস্তবায়ন দরকার।
বাংলাদেশে বর্তমানে যে শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষানীতি আছে, তা বাংলা ভাষার উন্নতির পথে অন্তরায়। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে নানা ধারায় বিভক্ত রাখার ফলে এটি জাতি গঠন ও রাষ্ট্র গঠনের সহায়ক হয়নি।
জাতি ও রাষ্ট্রের উন্নতির সঙ্গে ভাষার উন্নতি এবং ভাষার উন্নতির সঙ্গে জাতি ও রাষ্ট্রের উন্নতি অবিচ্ছেদ্য। কোনো জাতির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উন্নতি আর ভাষার উন্নতিও অবিচ্ছেদ্য। ভাষাকে উন্নত না করে আত্মনির্ভর স্বাধীন আর্থসামাজিক-রাষ্ট্রিক উন্নতি সম্ভব হয় না। মানুষের জীবন ও পরিবেশ বিকাশশীল, ভাষাও বিকাশশীল। প্রাত্যহিক জীবনে বাংলা ভাষাকে আমরা যতটা গুরুত্ব দিই, তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া আমাদের কর্তব্য।
পৃথিবীতে প্রায় ২০০ ভাষায় দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এসব ভাষা বিকাশমান। এগুলোর মধ্যে জ্ঞানবিজ্ঞান ও শিল্প-সাহিত্যের দিক দিয়ে বাংলা ভাষার স্থান এখনো ওপরের দিকেই আছে। এ ছাড়া বিশ্বে আরও কয়েক হাজার জনগোষ্ঠী আছে, যাদের আলাদা ভাষা আছে। বাংলা ছাড়াও বাংলাদেশে ৪৫টি নৃগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র মাতৃভাষা আছে, সেগুলোও বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
আমাদের উচিত একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করা এবং রাষ্ট্রভাষা ও রাষ্ট্র দুটোকেই যথাসম্ভব উন্নতিশীল রাখা। তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব আর নতুন রাজনীতি ও সভ্যতা-সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের নতুন উপলব্ধি দরকার।
মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রভাষা বলতে কেবল অফিসের ভাষা বোঝায় না, বোঝায় তার সঙ্গে আরও অনেক কিছু। রাষ্ট্রভাষার মধ্যে অফিস চালানোর ভাষা আছে, সেই সঙ্গে আছে জাতীয় জীবনে জ্ঞানবিজ্ঞান ও শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টির ভাষা; আছে আর্থসামাজিক-রাষ্ট্রিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ভাষা। সেখানে বাংলা ভাষা আরও গুরুত্ব ও মনোযোগ দাবি করে।
আমাদের উপলব্ধি করা দরকার যে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও উন্নতির জন্য রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার অস্তিত্ব ও উন্নতি অপরিহার্য। মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা না টিকলে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও টিকবে না। দেশ থাকবে; মাটি, মানুষ, গাছপালা, পশুপাখি, নদীনালা ও আকাশ-বাতাস থাকবে, কিন্তু রাষ্ট্র থাকবে না। যাঁরা বাংলাদেশে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার বদলে ইংরেজির প্রচলন চান, তাঁরা বাংলাদেশের কল্যাণ চান না।
বাংলা ভাষার উন্নতি ছাড়া বাংলাদেশের উন্নতি হবে না। বাংলাদেশের উন্নতি ছাড়া বাংলা ভাষার উন্নতি সম্ভব হবে না। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রভাষা দুটো সম্পর্কেই নতুন চিন্তা ও নতুন জাগরণ দরকার।
# আবুল কাসেম ফজলুল হক: শিক্ষাবিদ ও বাংলা একাডেমির সভাপতি
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র র জন য পর য য় স গঠন দরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বাগ্দানে হীরার আংটির প্রচলন কীভাবে হলো, এটি কেন এত দামি
ছেলেরা বাগ্দানের জন্য একটি হীরার আংটি কিনতে দশকের পর দশক ধরে বেশ অর্থ ব্যয় করেন। সামাজিক এ মানদণ্ড বা হীরার এই বিশেষ মর্যাদা, এটা কিন্তু হঠাৎ করেই হয়নি।
বরং এ গল্পের শুরু সেই ১৮৭০ সালে। ওই বছর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে নিজের ভাগ্য পরীক্ষার জন্য সিসিল রোডস রওনা দেন কেপ কলোনিতে। ব্রিটিশ উপনিবেশ থাকার সময় বর্তমান দক্ষিণ আফ্রিকার নাম ছিল কেপ কলোনি।
কেপ কলোনিতে তখন খনি থেকে হীরা উত্তোলন ব্যবসা সবে ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করেছে। রোডস সেখানে গিয়ে হীরার খনির মালিকদের কাছে পানি সেচার পাম্প ভাড়া দেওয়া শুরু করেন। হীরা অনুসন্ধানের সময় খনি যাতে প্লাবিত না হয়, সে জন্য খনির ভেতর থেকে পাম্প দিয়ে পানি সেচা হয়।
পরবর্তী ২০ বছরে রোডস ও তাঁর সহযোগী চার্লস রাড শত শত, পরে হাজার হাজার ছোট ছোট খনি ও ‘ক্লেইম’ কেনা বা অধিগ্রহণ করতে শুরু করেন। ‘ক্লেইম’ বলতে ওই জমিকে বোঝানো হয়, যেখানে হীরা পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা করা হয়। খনির মালিকেরা যখন দেউলিয়া হওয়ার মুখে পড়তেন, তখন অনেকটা নামমাত্র মূল্যে খনি বিক্রি করে দিতেন।
সেখানে অধিকাংশ খনি ছোট ছোট মালিকানায় ছিল। তাঁদের হাতে তেমন অর্থ থাকত না। অন্যদিকে রোডস ও রাডের হাতে বড় অঙ্কের পুঁজির জোগান ছিল। বিশেষ করে লন্ডনে তাঁদের যোগাযোগ থাকার সুবাদে রথসচাইল্ড ব্যাংকিং সাম্রাজ্যের সহায়তা তাঁরা পেতেন।
রোডস ও রাড তাঁদের কেনা জমিগুলো একত্র করে বড় খনিতে রূপান্তর করতে থাকেন। এতে খরচ কমে যায় এবং হীরা উত্তোলন কার্যক্রম আরও লাভজনক হয়ে ওঠে।
রোডস ও রাড তাঁদের কেনা জমিগুলো একত্র করে বড় খনিতে রূপান্তর করতে থাকেন। এতে খরচ কমে যায় এবং হীরা উত্তোলন কার্যক্রম আরও লাভজনক হয়ে ওঠে।দুজন ‘ডি বিয়ার্স কনসোলিডেটেড মাইনস’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করেন। ডি বিয়ার্স নামটি এসেছিল তাঁদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া একটি খনির নাম থেকে।
১৮৮৮ সালের মধ্যে কোম্পানিটি দক্ষিণ আফ্রিকার হীরার খনি ও ক্লেইমগুলোতে প্রায় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ নেয়।
১৯০০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মোট রপ্তানি আয়ের ২৫ শতাংশের বেশি আসত হীরা রপ্তানি থেকে। সে সময় ডি বিয়ার্স দেশটির অর্থনীতির অন্যতম মূল চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়। কোম্পানিটি তখন বিশ্বে হীরার মোট সরবরাহের প্রায় ৯০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ করত।
রোডস নিজেই সে সময় একজন উল্লেখযোগ্য সাম্রাজ্যবাদী নেতায় পরিণত হন। ১৮৯০ সাল থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি কেপ কলোনির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ডি বিয়ার্স প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী নীতির ওপর ভর করে। দেশটিতে সে সময়ে শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের শাসন জারি ছিল।
নামমাত্র মজুরিতে হীরার খনিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন কৃষ্ণাঙ্গরা। আর ডি বিয়ার্সের শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় বিনিয়োগকারীরা মুনাফা ভোগ করতেন।
১৯০২ সালে রোডসের মৃত্যুর পর ডি বিয়ার্সের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় জার্মান বংশোদ্ভূত উদ্যোক্তা আর্নেস্ট ওপেনহেইমারের হাতে।
ওপেনহেইমার আর্থিক প্রণোদনা, কৌশলগত চাপ ও কূটনীতির সমন্বয় ব্যবহার করে অন্যান্য দেশের হীরা সরবরাহকারীদের শুধু লন্ডনভিত্তিক ডি বিয়ার্সের মালিকানাধীন সেন্ট্রাল সেলিং অর্গানাইজেশনের (সিএসও) মাধ্যমে হীরা বিক্রয় করতে রাজি করান।
ডি বিয়ার্সের প্রচারণার জোরে যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ের কনেদের হীরার আংটি পরার প্রবণতা ১৯৪০ সালে ১০ শতাংশ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশে পৌঁছে যায়। জাপানে এই সংখ্যা ১৯৬০ সালে ৫ শতাংশের কম ছিল, ১৯৮১ সালে তা বেড়ে ৬০ শতাংশে পৌঁছে।১৯৩০–এর দশকে সিএসও কাটা হয়নি, এমন হীরা বিক্রির একক চ্যানেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
ফলে ডি বিয়ার্স হীরার বিশাল মজুত গড়ে তুলতে সক্ষম হয় এবং বিশ্ব বাজারে হীরা সরবরাহের ওপর প্রায় একক ও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে প্রতিষ্ঠানটি। এই নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তারা বিশ্বব্যাপী হীরার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে।
হীরার ঘাটতি নিয়ে বিভ্রম তৈরির পাশাপাশি ডি বিয়ার্স এই রত্নের প্রতি বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির চেষ্টা করে যেতে থাকে। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি ফিলাডেলফিয়াভিত্তিক বিজ্ঞাপন সংস্থা এনডব্লিউ আয়ারকে এ কাজে নিয়োগ দেয়।
এক বছর পর হীরা নিয়ে প্রায় কিংবদন্তি হয়ে যাওয়া স্লোগানটি চালু হয়। সেটি হলো, ‘আ ডায়মন্ড ইজ ফরএভার’ (হীরা চিরস্থায়ী)।
ব্যাপক বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্রে প্রদর্শন ও তারকাদের ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি হীরাকে বিশেষ করে হিরার বাগ্দানের আংটিকে ‘চিরস্থায়ী ভালোবাসার’ প্রতীক হিসেবে নতুনভাবে উপস্থাপন করে। যেমন তারা বড় অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য তারকাদের হীরার গয়না ধার দিত। এই প্রচার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাপানের হীরার বাজারকে পুরোপুরি পাল্টে দেয়।
১৯৯০–এর দশকের শেষ দিকে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আরও বড় অভিযোগ ওঠে। ওইসব অভিযোগে বলা হয়, হীরা বাণিজ্যের মাধ্যমে অ্যাঙ্গোলা, সিয়েরা লিওন ও কঙ্গোয় রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের অর্থায়ন হচ্ছে, যা হীরার ওপর ভোক্তাদের মনোভাব আরও খারাপ করে তোলে।২০১১ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬৪ বছর ধরে চলা এই বিজ্ঞাপন বিশ্বব্যাপী অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। ‘অ্যাড এজ’ সাময়িকী ‘আ ডায়মন্ড ইজ ফরএভার’–কে ২০ শতকের সেরা বিজ্ঞাপনী স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
ডি বিয়ার্স এমন একটি সামাজিক মানদণ্ড তৈরি করেছিল, যেখানে বিয়ে বা বাগ্দানে হীরার আংটি প্রতিটি আধুনিক সমাজব্যবস্থায় প্রায় অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠে।
অথচ ডি বিয়ার্সের এই প্রচারের আগে, একজন প্রেমিক তাঁর ভবিষ্যৎ কনের জন্য লকেট, মুক্তার মালা বা পারিবারিক ঐতিহ্যবাহী গয়না দিতেন।
ডি বিয়ার্সের প্রচারের জোরে যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ের কনেদের হীরার আংটি পরার প্রবণতা ১৯৪০ সালে ১০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৮০ সালের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশে পৌঁছে যায়। জাপানে এই সংখ্যা ১৯৬০ সালে ৫ শতাংশের কম ছিল, ১৯৮১ সালে তা বেড়ে ৬০ শতাংশে পৌঁছে।
১৯৫০–এর দশকের শুরুতে একটি হীরার আংটির দাম সাধারণত ১৭০ ডলারের মতো ছিল। ডলারের বর্তমান মূল্য হিসাবে যা প্রায় ২ হাজার ৩০০ ডলারের মতো।
গবেষণাগারে উৎপাদিত হীরা ও হীরার মতো দেখতে অন্যান্য অনেক সস্তা পাথরে এখন বাজার সয়লাব। সেসব পাথর দেখতে এতটাই হীরার মতো যে জহুরির চোখ দিয়ে বিশেষ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কেবল সেগুলোর পার্থক্য ধরা সম্ভব।শুরুতে ডি বিয়ার্সের বিজ্ঞাপনগুলোতে বাগ্দানের আংটির জন্য এক মাসের বেতন খরচ করার পরামর্শ দিত। কিন্তু ১৯৮০–এর দশকে তারা নতুন স্লোগান তোলে। বিজ্ঞাপনে ভোক্তাদের দিকেই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলা হতে থাকে, কীভাবে আপনি দুই মাসের বেতন চিরকাল স্থায়ী করতে পারেন।
অথচ হীরা আবার বিক্রি করতে গেলে তার দাম অর্ধেক হয়ে যায়। সেখানে সোনার বেলায় পুরো উল্টো ঘটনা ঘটে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ডি বিয়ার্সের একটি হীরার খনি। ৩ মে, ২০১৭