ঝিনাইদহে ট্রিপল মার্ডার: কে এই ‘চরমপন্থি’ নেতা হানিফ?
Published: 22nd, February 2025 GMT
ঝিনাইদহের শৈলকূপায় নিষিদ্ধ ‘চরমপন্থি’ সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) আঞ্চলিক কমান্ডার মো. হানিফসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। একসঙ্গে এতো জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। গতকাল শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে জেলার উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকা থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতরা হলেন- ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের আহাদনগর গ্রামের রাহাজউদ্দিনের ছেলে মো.
নিহত হানিফের ভাই সাজেদুল ইসলাম ইশা বলেন, “আমার মেজো ভাই হানিফ। গতকাল আমি চুয়াডাঙ্গা পার্কে গিয়েছিলাম। বাসায় আসার পর ভাবি বলেন, তোমার ভাইয়ের নম্বরে কল যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না। ভাইয়ের শ্যালকের নম্বরে কল দিলেও কেউ কল রিসিভ করেনি। পরে আমিও অনেকবার কল দিয়েছি রিসিভ হয়নি।”
আরো পড়ুন:
জামায়াত নেতার স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামী-সতিন গ্রেপ্তার
তিনি আরো বলেন, “এরপর ভাবির কাছে জিজ্ঞাসা করি, ভাই কখন বাসা থেকে বের হয়েছে। ভাবি জানান, একটা ফোন এলো তারপর বাজার থেকে আসার কথা বলে বের হয়েছে। আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ভাই বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর প্রশাসনের মাধ্যমে খবর পেয়ে এসে দেখি, তার গুলিবিদ্ধ মরদেহ পড়ে আছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তার ভাই কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কিনা তা তিনি জানেন না।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া বলেন, “হানিফ নিষিদ্ধ পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার ছিলেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, অপহরণ, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির মোট ১৫টি মামলা ছিল। হানিফ হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমান হত্যা মামলা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন।”
তিনি আরো বলেন, “ওই হত্যা মামলায় হানিফের ফাঁসির আদেশ হয়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতেও ফাঁসির রায় বহাল থাকে। শেখ হাসিনা সরকারের সময় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বিশেষ ক্ষমা নিয়ে জামিনে মুক্ত হন হানিফ। তিন হত্যার প্রকৃত কারণ বের করতে পুলিশ কাজ করছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “হানিফকে হত্যার দায় স্বীকার করা জাসদ গণবাহিনীর কালু পরিচয়দানকারীদের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল এটা প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। আমরা এটা নিয়েও তদন্ত করছি। তদন্তের পর বিস্তারিত জানাতে পারব।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, বিগত সরকারের সময় হানিফ আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। তিনি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মৎস্যজীবী লীগের উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলে হানিফ রাজনৈতিক দল পরিবর্তনের চেষ্টা শুরু করেন। হানিফ কুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমান, তিওরবিলা গ্রামের লুৎফর রহমান, তাহেরহুদার আব্দুল কাদের ও পোলতাডাঙ্গার ইজাল মাষ্টারসহ অনেককেই গুলি ও গলাকেটে হত্যা করেন।
তারা জানান, পূর্ব বাংলার কমিনিস্ট পার্টির একটি শাখা জনযুদ্ধ। এই শাখার সামরিক কমান্ডার ছিলেন হানিফ। ৯০-এর দশকে হরিণাকুন্ডু, ঝিনাইদহ সদর, চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন তিনি। গত ৭ থেকে ৮ বছর ধরে হড়িনাকুণ্ডুর নারানকান্দি এলাকায় বাওড় দখল করে মাছ চাষ করছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে তিনি জেল থেকে বের হন। ২০১৭ সালে ওই বাওড়ের মৎসজীবী সমিতির সভাপতি জিয়াউল হককে গুলি করে হত্যা করে বাওড়ের দখল নেন হানিফ।
নিহত হানিফের এক ভাই হরিণাকুন্ডু উপজেলার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। অপর ভাই উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি বলেও জানান এলাকাবাসী।
ঢাকা/শাহরিয়ার/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র ঝ ন ইদহ
এছাড়াও পড়ুন:
নাইজেরিয়ায় কেন হামলা চালানোর হুমকি দিলেন ট্রাম্প
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া যদি সেখানে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজনকে হত্যা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তবে দেশটির বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এ প্রসঙ্গে গতকাল শনিবার ট্রাম্প বলেন, তিনি তাঁর প্রতিরক্ষা বিভাগকে দ্রুত সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল ও প্রধান তেল উত্তোলনকারী দেশ নাইজেরিয়া। ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে নাইজেরিয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সহায়তাও অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেন।
ট্রাম্প লেখেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনী পাঠায়, তবে তারা পূর্ণ সামরিক শক্তি নিয়ে অভিযান চালাবে এবং যারা এ নৃশংস ঘটনা ঘটাচ্ছে, সেই “ইসলামপন্থী” সশস্ত্র দলকে সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলবে।
তবে নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের সঙ্গে কোন ধরনের নৃশংস আচরণ করা হচ্ছে, সে বিষয়ে ট্রাম্প নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ বা বিবরণ দেননি। নাইজেরিয়াকে তিনি ‘নিন্দিত রাষ্ট্র’ বলে বর্ণনা করেন এবং দেশটির সরকারকে হুঁশিয়ার করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেন।
নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে এবং আশা করছে, এ লড়াইয়ে ওয়াশিংটন তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে থাকবে।ট্রাম্প লেখেন, ‘যদি আমরা আক্রমণ করি, তা হবে দ্রুত ও ভয়ানক; ঠিক যেমন অস্ত্রধারীরা আমাদের প্রিয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর আক্রমণ করছে।’
ট্রাম্পের সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকির বিষয়ে আবুজা থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে হোয়াইট হাউসও কিছু জানায়নি।
যদি আমরা আক্রমণ করি, তা হবে দ্রুত, ভয়ানক; ঠিক যেমন অস্ত্রধারীরা আমাদের প্রিয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করছে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টট্রাম্পের এ হুঁশিয়ারি দেওয়া বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য বার্তা সংস্থা রয়টার্স থেকে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তারা এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে কথা বলতে বলেছে।
তবে রয়টার্সের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা না বললেও মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘মার্কিন ওয়ার ডিপার্টমেন্ট (পেন্টাগন) সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। হয় নাইজেরিয়া সরকার খ্রিষ্টানদের রক্ষা করবে, না হয় আমরা ওই সব অস্ত্রধারীকে হত্যা করব, যারা ভয়াবহ নির্যাতন চলাচ্ছে।’
ট্রাম্পের ওই পোস্টের এক দিন আগে তাঁর প্রশাসন নাইজেরিয়াকে আবারও ‘কান্ট্রিজ অব পার্টিকুলার কনসার্ন’ (বিশেষ উদ্বেগের দেশ)–এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র এ তালিকায় এমন দেশগুলোকে রাখে, যেখানে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নেই বলে তারা মনে করে। তালিকায় অন্য দেশগুলোর মধ্যে আছে চীন, মিয়ানমার, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া ও পাকিস্তান।
আরও পড়ুননাইজেরিয়ায় সম্প্রদায়গত দ্বন্দ্ব নিরসনে গিয়ে ১৬ সেনা নিহত ১৭ মার্চ ২০২৪সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দিয়ে ট্রাম্পের ওই পোস্টের আগে গতকাল শনিবার ভোরে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু তাঁর দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা–সংক্রান্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি ধর্ম পালনের স্বাধীনতার সুরক্ষায় তাঁর দেশের প্রচেষ্টার পক্ষেও কথা বলেন।
তিনুবু বলেন, ‘নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা আমাদের জাতীয় বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না এবং এটি সরকারের সব নাইজেরীয়র ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রক্ষা করার ধারাবাহিক ও আন্তরিক প্রচেষ্টাকেও বিবেচনায় আনে না।’
গত বছর নাইজার থেকে প্রায় এক হাজার সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় পশ্চিম আফ্রিকায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এ নিয়ে আলাদা বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়, তারা সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে এবং আশা করছে, এ লড়াইয়ে ওয়াশিংটন তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে থাকবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা জাতি, ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সব নাগরিককে রক্ষা করব। যুক্তরাষ্ট্রের মতো নাইজেরিয়াতেও (নানা ধর্মের মানুষের) বৈচিত্র্য উদ্যাপন করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কারণ, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।’
গত বছর নাইজার থেকে প্রায় এক হাজার সেনা প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। ফলে পশ্চিম আফ্রিকায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র মাঝেমধ্যে প্রশিক্ষণ ও মহড়ায় অংশ নিতে আফ্রিকায় ছোট ছোট সেনা দল পাঠায়। বর্তমানে আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটি পূর্ব আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে। সেখানে পাঁচ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা অবস্থান করছেন। ওই অঞ্চলে সামরিক অভিযান চালাতে এ সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুননাইজেরিয়ায় বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত ৬০৭ মে ২০২৫নাইজেরিয়াকে ‘উদ্বেগের তালিকা’য় অন্তর্ভুক্ত করাট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে নাইজেরিয়াকে ‘উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। পরে জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে ২০২১ সালে নাইজেরিয়াকে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের এ তালিকা থেকে সরিয়ে নেন।
তবে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুসলমানরাই বোকো হারামের নৃশংসতার শিকার হন।নাইজেরিয়ায় প্রায় ২০০ জাতিগত গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন। তাঁরা ইসলাম, খ্রিষ্টান ও স্থানীয় প্রথাগত ধর্ম পালন করেন। দেশটিতে সব ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তবে কখনো কখনো বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সহিংসতা বেড়ে যায়।
চরমপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী বোকো হারাম উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়াতে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। গত ১৫ বছরে এ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বহু মানুষকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
তবে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুসলমানরাই বোকো হারামের নৃশংসতার শিকার হন।
আরও পড়ুননাইজেরিয়ায় পশুপালক ও কৃষকদের সংঘর্ষে নিহত ৮৫১৮ মে ২০২৩