ঝিনাইদহের শৈলকূপায় নিষিদ্ধ ‘চরমপন্থি’ সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) আঞ্চলিক কমান্ডার মো. হানিফসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। একসঙ্গে এতো জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। গতকাল শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে জেলার উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকা থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। 

নিহতরা হলেন- ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের আহাদনগর গ্রামের রাহাজউদ্দিনের ছেলে মো.

হানিফ, তার শ্যালক ও শ্রীরামপুর গ্রামের উম্বাদ আলীর ছেলে লিটন এবং কুষ্টিয়া ইবি থানার পিয়ারপুর গ্রামের রাইসুল ইসলাম। তারা সবাই জনযুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে।

নিহত হানিফের ভাই সাজেদুল ইসলাম ইশা বলেন, “আমার মেজো ভাই হানিফ। গতকাল আমি চুয়াডাঙ্গা পার্কে গিয়েছিলাম। বাসায় আসার পর ভাবি বলেন, তোমার ভাইয়ের নম্বরে কল যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না। ভাইয়ের শ্যালকের নম্বরে কল দিলেও কেউ কল রিসিভ করেনি। পরে আমিও অনেকবার কল দিয়েছি রিসিভ হয়নি।” 

আরো পড়ুন:

জামায়াত নেতার স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামী-সতিন গ্রেপ্তার

তিনি আরো বলেন, “এরপর ভাবির কাছে জিজ্ঞাসা করি, ভাই কখন বাসা থেকে বের হয়েছে। ভাবি জানান, একটা ফোন এলো তারপর বাজার থেকে আসার কথা বলে বের হয়েছে। আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ভাই বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর প্রশাসনের মাধ্যমে খবর পেয়ে এসে দেখি, তার গুলিবিদ্ধ মরদেহ পড়ে আছে।” 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তার ভাই কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কিনা তা তিনি জানেন না।    

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া বলেন, “হানিফ নিষিদ্ধ পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার ছিলেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, অপহরণ, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির মোট ১৫টি মামলা ছিল। হানিফ হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমান হত্যা মামলা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন।”

তিনি আরো বলেন, “ওই হত্যা মামলায় হানিফের ফাঁসির আদেশ হয়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতেও ফাঁসির রায় বহাল থাকে। শেখ হাসিনা সরকারের সময় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বিশেষ ক্ষমা নিয়ে জামিনে মুক্ত হন হানিফ। তিন হত্যার প্রকৃত কারণ বের করতে পুলিশ কাজ করছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “হানিফকে হত্যার দায় স্বীকার করা জাসদ গণবাহিনীর কালু পরিচয়দানকারীদের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল এটা প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। আমরা এটা নিয়েও তদন্ত করছি। তদন্তের পর বিস্তারিত জানাতে পারব।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, বিগত সরকারের সময় হানিফ আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। তিনি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মৎস্যজীবী লীগের উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলে হানিফ রাজনৈতিক দল পরিবর্তনের চেষ্টা শুরু করেন। হানিফ কুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমান, তিওরবিলা গ্রামের লুৎফর রহমান, তাহেরহুদার আব্দুল কাদের ও পোলতাডাঙ্গার ইজাল মাষ্টারসহ অনেককেই গুলি ও গলাকেটে হত্যা করেন।

তারা জানান, পূর্ব বাংলার কমিনিস্ট পার্টির একটি শাখা জনযুদ্ধ। এই শাখার সামরিক কমান্ডার ছিলেন হানিফ। ৯০-এর দশকে হরিণাকুন্ডু, ঝিনাইদহ সদর, চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন তিনি। গত ৭ থেকে ৮ বছর ধরে হড়িনাকুণ্ডুর নারানকান্দি এলাকায় বাওড় দখল করে মাছ চাষ করছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে তিনি জেল থেকে বের হন। ২০১৭ সালে ওই বাওড়ের মৎসজীবী সমিতির সভাপতি জিয়াউল হককে গুলি করে হত্যা করে বাওড়ের দখল নেন হানিফ। 

নিহত হানিফের এক ভাই হরিণাকুন্ডু উপজেলার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। অপর ভাই উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি বলেও জানান এলাকাবাসী। 

ঢাকা/শাহরিয়ার/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র ঝ ন ইদহ

এছাড়াও পড়ুন:

সচিবালয়মুখী শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের মিছিলে পুলিশের বাধা, সাউন্ড গ্রেনেড, লাঠিচার্জ

নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও সচিবালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হন ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীরা। মিছিলটি প্রেসক্লাবের সামনে পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ। মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে ও লাঠিচার্জ করে। এতে রাজধানীর প্রেস ক্লাব এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

আজ রোববার দুপুর সোয়া ১টার দিকে প্রেস ক্লাব সংলগ্ন সচিবালয়ের ৫ নম্বর ফটকের কাছে এ ঘটনা ঘটে। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীরা এনটিআরসিএর (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) আওতায় দ্রুত নিয়োগের দাবিতে প্রেস ক্লাব থেকে সচিবালয়ের দিকে পদযাত্রা শুরু করেন। তবে সচিবালয় এলাকায় আগে থেকে সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ ছিল বলে জানায় পুলিশ।

সরেজমিনে দেখা যায়, মিছিলকারীরা ব্যারিকেড অতিক্রম করে সচিবালয়ের ফটকের কাছাকাছি চলে গেলে পুলিশ তাদের থামার অনুরোধ করে। আন্দোলনকারীরা সেই অনুরোধ না মানলে পুলিশ প্রথমে পাঁচটি ও পরে আরও দুটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে এবং লাঠিচার্জ করে। এরপর বিক্ষোভকারীরা প্রেস ক্লাব মোড়ে ফিরে অবস্থান নেন।

শাহবাগ থানার পেট্রোল অফিসার জয়নাল আবেদিন সমকালকে বলেন, সচিবালয় এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ। সচিবালয়ের দিকে এগোতে চাইলে মিছিলকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় তাদের ওপর লাঠিচার্জ কর হয়। এছাড়াও পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়।

মিছিলে অংশ নেওয়া এক নিবন্ধনধারী জানান, আমরা বারবার শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানাচ্ছি। অথচ সরকার বারবার তা উপেক্ষা করছে। এনটিআরসিএ ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে যাচ্ছে অথচ আমাদের ১৭তম ব্যাচের সমস্যার সমাধান করছে না। তাই বাধ্য হয়েই আমরা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিতে চাই।

তাদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—

১. ১৭তম ব্যাচের নিবন্ধিত প্রার্থীদের জন্য আপিল বিভাগের রায় অনুসারে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অন্তত একবার আবেদন করার সুযোগ দিতে হবে।

২. ১৭তম ব্যাচের বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত রাখতে হবে।

৩. আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় এবং এনটিআরসিএর সুপারিশ অনুযায়ী দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এখনও আন্দোলনকারীরা প্রেস ক্লাব মোড়ে অবস্থান করছেন। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ