এক টাকায় পাঁচ লিটার বিশুদ্ধ পানি, বর্জ্য থেকে হবে বিদ্যুৎ-সার
Published: 23rd, February 2025 GMT
বঙ্গোপসাগরের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে প্লাস্টিকের বোতলের পরিবর্তে বিকল্প উপায়ে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। আগামী জুলাই মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এটি শেষ হলে সহজেই সুপেয় পানি পাবেন দ্বীপের বাসিন্দারা। প্রকল্পের আওতায় এ ছাড়া দ্বীপের বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও জৈব সার উৎপাদন করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বিশেষ এই প্রকল্প নিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এতে বরাদ্দের পরিমাণ ৩৫ কোটি টাকার বেশি। প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান—গ্রিন ডট লিমিটেড ও টার্ন বিল্ডার্স।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী ইবনে মায়েজ প্রমাণিক বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে একদিকে সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ-প্রতিবেশের যেমন সুরক্ষা হবে, তেমনি স্থানীয় বাসিন্দাদের সুপেয় পানির সংকট দূর হবে। তিনি বলেন, এপ্রিল-মে মাসে সমুদ্র উত্তাল থাকায় ট্রলারে করে দ্বীপে মালামাল পরিবহন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অস্থিতিশীলতার প্রভাবও দ্বীপে যাতায়াতের নৌপথে রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেও ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার প্রচেষ্টা চলছে।
স্মার্ট কার্ডে পানি বিতরণ
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং লবণাক্ততার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সুপেয়ে পানির সংকট রয়েছে সেন্ট মার্টিনে। দ্বীপের কোথাও জলাধার, খাল-নদী না থাকায় বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণই একমাত্র বিকল্প হয়ে ওঠে। শুষ্ক মৌসুমে সেই পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটকেরা পানির জন্য চরম ভোগান্তিতে পড়েন। বিপুলসংখ্যক পর্যটকের চাহিদা পূরণে টেকনাফ থেকে বিশুদ্ধ বোতলজাত পানি কিনে আনতে হয়, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী আবুল মনজুর বলেন, এই প্রকল্পের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তা সর্বাধুনিক মেমব্রেন-ভিত্তিক রিভার্স অসমোসিস (RO) প্রযুক্তির, যা লবণাক্ত পানি পরিশোধন করে বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানিতে রূপান্তর করতে সক্ষম। এটি দীর্ঘমেয়াদি, পরিবেশবান্ধব ও খরচ সাশ্রয়ী সমাধান।
এই প্রকল্পের আওতায় দ্বীপজুড়ে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনের মাধ্যমে ১০টি স্মার্ট ওয়াটার বুথ স্থাপন করা হবে। স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে এসব বুথ। প্রতিটি পরিবার ও অন্য ব্যবহারকারীরা বুথ থেকে পানি নিতে পারবেন এই স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে গ্রিন ডট লিমিটেড।
সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের লোকজন দ্বীপের সমুদ্র কানন রিসোর্টের কাছে ১৫ ফুট ব্যাসের আরসিসি রিং ওয়েল (কুয়া) খননকাজ শুরু করেন, যার গভীরতা ২০-২৫ ফুট। দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে আরও চারটি আরসিসি রিং ওয়াল তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে চারতলা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ভবন—যেখানে থাকবে ল্যাবরেটরি, গবেষণাগার, কার্যালয়, সম্মেলনকক্ষ ও ডরমিটরি। এতে খরচ হবে ২০ কোটি টাকা।
গ্রিন ডট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রিং ওয়েলের সঙ্গে পানি সরবরাহের পাইপলাইন টানানোর কাজও চলমান। সাগরের অবস্থা ঠিক থাকলে আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। জুলাই মাসে প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে। তিনি বলেন, এই পরিশোধন প্রযুক্তি প্রকল্পে দৈনিক ২ লাখ ৪০ হাজার লিটার সুপেয় পানি উৎপাদন করা সম্ভব হবে। পানির উৎস হবে ভূগর্ভস্থ ও বৃষ্টির পানি। পাঁচটি আরআরসি রিং ওয়েল এবং সাবমারসিবল সোলার পাওয়ার পাম্প ব্যবহার করে পানি সংগ্রহ করা হবে। সংগৃহীত পানি সংরক্ষণের জন্য ১ লাখ লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এইচডিপিই ট্যাংক বসানো হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পানি সরবরাহ যেন বন্ধ না হয়, এ লক্ষ্যে সোলার সিস্টেম ও ৭০ কেভিএ ডিজেল জেনারেটর বসানো হবে।
প্রতি পাঁচ লিটার পানির বিপরীতে গ্রাহকদের ১ টাকা করে পরিশোধ করতে হবে বলে জানান এ বি এম জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিনের লোকসংখ্যা প্রায় ১১ হাজার । প্রতিজনের জন্য দৈনিক গড়ে ৪ লিটার পানি ধরা হলে দিনে প্রয়োজন হবে ৪৪ হাজার লিটার পানি। প্রকল্পের ধারণক্ষমতা ১ লাখ লিটার। খাবারের পাশাপাশি উৎপাদিত পানি দিয়ে রান্নাবান্না-গোসলসহ আনুষঙ্গিক কাজও সামলানো যাবে। প্রাথমিকভাবে ১ হাজার পরিবারকে স্মার্ট কার্ড প্রদান করা হবে। কার্ড রিচার্জ করে বুথ থেকে যত খুশি পানি সংগ্রহ করা যাবে।
বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও জৈবসার উৎপাদনের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে শোধনাগার। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প র ক জ র জন য উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
পায়রা বন্দরের জন্য সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রস্তাব দুটিতে ব্যয় হবে ৪৫০ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার ২৫৪ টাকা।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা যায়, পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং স্থাপন কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) এইচপি এবং (২) এনজে, চায়না প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৬২ কোটি ২ লাখ ১১ হাজার ৫৬৮ টাকা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর দুইয়ের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং (২) এসএস রহমান ইন্টারন্যানাল লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৮৮ কোটি ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮৬ টাকা।
ঢাকা/হাসনাত//