প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হলে অক্টোবরের মধ্যেই তপশিল ঘোষণা করতে হবে। তপশিল ঘোষণার কমপক্ষে দুই মাস সময় হাতে রেখে কাজ শুরু করতে হবে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী জুনে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করে জুলাইয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

গতকাল সোমবার আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। নির্বাচন কমিশন বিটে কর্মরত রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) কার্যনির্বাহী কমিটি এ অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ সময় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য দুটি সময়সীমা ঘোষণা করেছেন। প্রথমটা আগামী ডিসেম্বরে, অপরটি ২০২৬ সালের জুনে। 

এদিকে ছয়টি সংস্কার কমিশন মিলে সরকারের পক্ষ থেকে একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন করে দেওয়া হয়েছে, যার মেয়াদ আগামী ছয় মাস। তিনি বলেন, এসব বিষয় মাথায় রেখে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। আমরা খুব জোরেশোরে কাজ শুরু করেছি; সেটি সংসদ নির্বাচনই হোক আর স্থানীয় সরকার নির্বাচন। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। 
নাসির উদ্দীন বলেন, এখনও ১৭ লাখ মৃত ভোটার তালিকায় আছে। এসব কাজ সম্পন্ন করা সময়ের ব্যাপার। ভোটার তালিকা যদি সুষ্ঠুভাবে না হয়, তাহলে তো আগের মতো কবর থেকেই এসে ভোট দিয়ে যাবে। জুনে হালনাগাদ ভোটার তালিকা পাওয়া যাবে।

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী জুনে ভোটার চূড়ান্ত তালিকা দিয়ে জুলাইয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে একটি রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে। নির্বাচন কমিশন এতে জড়াতে চায় না। আমাদের টার্গেট ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন। তারপরও সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে ৫০টির বেশি আবেদন ঝুলে আছে। আইনি জটিলতার কারণে এসব সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে আমরা সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আরও কিছু বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।
সিইসি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে ন্যূনতম সংস্কারের প্রয়োজন। কমিশন সে উদ্যোগ নিয়েছে। কমিশনের আইন ও বিধিমালা পরিবর্তন করতে হবে।
দেশের বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন যারা বোমা মারছে, আগামী ডিসেম্বর আসতে আসতে তারা একটা বার্তা পেয়ে যাবে। এ পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে যাবে। 

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড স ম বর সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রধান উপ‌দেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন: জামায়া‌তে ইসলামী

প্রধান উপ‌দেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূ‌সের স‌ঙ্গে বিএন‌পির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তা‌রেক রহমা‌নের বৈঠ‌ককে স্বাভা‌বিক বল‌লেও, দুইজ‌নের যৌথ বিবৃতি‌ নি‌য়ে প্রশ্ন তু‌লে‌ছে জামায়া‌তে ইসলামী। 

শ‌নিবার জামায়া‌তের নির্বাহী প‌রিষ‌দের বৈঠ‌কের পর বিবৃ‌তি‌তে দল‌টি ব‌লে‌ছে, ‘যৌথ বিবৃ‌তি প্রদান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে আমরা মনে করি। এর মাধ্যমে প্রধান উপ‌দেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে।’

দ‌লের আ‌মির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হ‌য়ে‌ছে ব‌লে বিবৃ‌তি‌তে বলা হ‌য়ে‌ছে। এ‌তে আরও বলা হয়, ‘১৩ জুন লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের স‌ঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা‌কে জামায়াত খুবই স্বাভাবিক মনে করে। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে এবং যৌথভাবে বৈঠক করেছেন।’

লন্ডন বৈঠ‌কের যৌথ বিবৃ‌তি নি‌য়ে প্রশ্ন তু‌লে জামায়াত ব‌লে‌ছে, ‘গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন প্রধান উপ‌দেষ্টা। তার এই ঘোষণার পর লন্ড‌ন সফরে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিদেশে যৌথ প্রেস ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে জামায়াত ম‌নে ক‌রে। এর মাধ্যমে প্রধান উপ‌দেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন ক‌রে।’

‌লন্ডন বৈঠ‌কের যৌথ বিবৃ‌তিতে মধ্য ফেব্রুয়া‌রি‌তে নির্বাচ‌নের সম্ভাবনার কথা বলা হ‌য়ে‌ছে। জামায়াত এ প্রস‌ঙ্গে বিবৃ‌তি‌তে ব‌লে‌ছে, ‘আমরা মনে করি দেশে ফিরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে প্রধান উপ‌দেষ্টার অভিমত প্রকাশ করাই সমীচীন ছিল।’

জামায়াত ফেব্রুয়া‌রি‌তে নির্বাচ‌নের বি‌রোধী নয় বিবৃ‌তি‌তে স্পষ্ট করা হয়। এ‌তে বলা হ‌য়েছে, ‘গত ১৬ এপ্রিল জামায়াত আ‌মির দলীয় দৃ‌ষ্টিভঙ্গী তু‌লে ধ‌রে জা‌নি‌য়ে‌ছি‌লেন ২০২৬ সালের রসজা‌নের পূর্বে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারে।’ 

বিবৃ‌তিতে বলা হ‌য়ে‌ছে, ‘জামায়াত মনে করে সরকার প্রধান হিসেবে কোনো একটি দলের সঙ্গে যৌথ প্রেস ব্রিফিং নৈতিকভাবে কিছুতেই যথার্থ নয়। প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ ‌বিবৃ‌তি দেওয়ায় আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল সক্রিয়ভাবে বিদ্যমান, সেখানে শুধু একটি দলের সঙ্গে আলাপে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সঠিক বলে বিবেচিত হতে পারে না। জামায়াত আশা ক‌রে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার নিরপেক্ষ থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে এবং বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে। সরকারের নিরপেক্ষতা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য  নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় দেখা দিয়েছে তা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা জাতির সামনে স্পষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’

এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠ‌কের দিন জামায়াত আনুষ্ঠা‌নিক প্রতি‌ক্রিয়া না জানা‌লেও দল‌টির শীর্ষস্থানীয় নেতারা সমকালকে বলেছি‌লেন, ‘জামায়াতই প্রথম বলেছে, রমজানের আগে নির্বাচন হওয়া উচিত। তাই নির্বাচনের যে নতুন সময়সীমা বলা হচ্ছে, এ নিয়ে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু সরকার যেভাবে শুধু বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে সময়সীমা নির্ধারণ করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য।’

জামায়াত নেতারা শুক্রবার রা‌তেই সমকাল‌কে ব‌লে‌ছি‌লেন, যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে– সরকার এবং বিএনপি সমশক্তি। এর পর আর সরকারের নিরপেক্ষতা থাকে না। এ বক্তব্য ড. ইউনূসকে জানাবে জামায়াত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে ট্রাম্প-পুতিনের মধ্যে কী আলোচনা হলো
  • প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয়েছে
  • একটি দলের নেতার সঙ্গে যৌথ বিবৃতি প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
  • প্রধান উপ‌দেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন: জামায়া‌তে ইসলামী
  • একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে: জামায়াত
  • লন্ডন বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সম্পর্কিত বক্তব্যে দ্বিমত প্রিন্সের