দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে এই ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে নতুন এক ভাষা আন্দোলন। কয়েক দিন ধরে বাড়তে বাড়তে এই ভাষা আন্দোলন এক চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। হিন্দিতে লেখা ট্রেন স্টেশনের নাম মুছে ফেলা হচ্ছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়ির দেয়ালে লেখা হচ্ছে হিন্দি ভাষাবিরোধী স্লোগান।

তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাইয়ের কাছে আয়াপক্কম অঞ্চলে কয়েক দিন ধরে নারীদের নিজ নিজ বাড়ির দেয়ালে হিন্দি ভাষাবিরোধী স্লোগান লিখতে দেখা গেছে। তামিল ভাষার পক্ষেও তাদের বাড়ির দেয়ালে ছবি আঁকতে ও স্লোগান লিখতে দেখা গেছে। দিনকয়েক আগে রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর ছেলে উদয়নিধি অধিবেশন করে বলেছেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ত্রিভাষা নীতি তামিলনাড়ু মেনে নেবে না। একই কথা বলেছেন তাঁর বাবা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন।

সম্প্রতি ভাষা নিয়ে এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বেনারসে এক ভাষণে খোলাখুলি বলেছিলেন, নতুন শিক্ষানীতি (ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি বা নেপ) বাস্তবায়ন না করলে তামিলনাড়ু কেন্দ্রের পুরো শিক্ষা অভিযানের অধীন অর্থ পাবে না। নেপে বলা হয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের তিনটি ভাষা (এ ক্ষেত্রে ইংরেজি, তামিল ও হিন্দি) শেখার ও শেখানোর সুযোগ বাধ্যতামূলকভাবে সব রাজ্যে থাকতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কেন্দ্রীয় সরবার ও তামিলনাড়ু রাজ্যের সরকারের মধ্যে মতবিরোধ চলছে। সম্প্রতি ধর্মেন্দ্র প্রধানের মন্তব্যের পর তামিলনাড়ু কার্যত হিন্দি ভাষার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান দাবি করেন, তামিলনাড়ু সংবিধানের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার পুরো শিক্ষা অভিযানের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করেছে, নেপ বাস্তবায়ন না করলে তামিলনাড়ুকে সেই বরাদ্দ দেওয়া হবে না।

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে ধর্মেন্দ্র প্রধান আগের ভাষা দিবসের দিনে বলেন, ত্রিভাষা ১৯৬৮ সাল থেকে শিক্ষানীতির অংশ। ধারাবাহিক শিক্ষানীতির অংশ হওয়া সত্ত্বেও দুর্ভাগ্যবশত এটি প্রয়োগ করা হয়নি। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভারতীয় ভাষাগুলোর পদ্ধতিগত শিক্ষা কমছে।

তামিলনাড়ুর সরকারের প্রতিক্রিয়া

ধর্মেন্দ্র প্রধানের চিঠির উত্তরে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ২২ ফেব্রুয়ারি এক জনসভায় শিক্ষাক্ষেত্রে ২০০০ কোটি রুপি না দেওয়ার প্রসঙ্গে বলেন, ‘যদি আমরা নেপ চালু করি, তাহলে আমরা রাজ্যকে দুই হাজার বছরের বেশি পেছনে নিয়ে যাব। এমনকি যদি আমাদের ১০ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাবও করা হয়, যতক্ষণ আমি মুখ্যমন্ত্রী আছি, ততক্ষণ সরকার নয়া শিক্ষানীতি নেপ চালু করবে না।’

তামিলনাড়ুতে ক্ষমতায় থাকা সব সরকার–নির্বিশেষে সর্বদা একটি দ্বিভাষা নীতি (তামিল ও ইংরেজি) অনুসরণ করেছে এবং তৃতীয় ভাষা চাপিয়ে দেওয়াকে তামিলরা একটি অপ্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বলে মনে করে।

তামিলনাড়ুতে সমাজের নিম্ন আয় এবং নির্যাতিত জাত ও সামাজিক গোষ্ঠীবর্গের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কারণে সেখানে তামিল ছাড়া অন্য ভাষা ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে সেখানে বরাবরই ইংরেজি ব্যবহার করা হয়। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এখন সেখানে তৃতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি চালু করার চেষ্টা করছে।

তৃতীয় ভাষা বেছে নেওয়া রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর দিকে নজর দিলে দেখা যাবে, ৩২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিন্দিকে তৃতীয় ভাষা হিসেবে বেছে নিয়েছে। ১৬টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দ্বিতীয় সর্বাধিক নির্বাচিত ভাষা হলো সংস্কৃত। ভারতে ১৯টি অ–হিন্দিভাষী রাজ্য এবং ৯টি হিন্দিভাষী রাজ্য রয়েছে। আটটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে তিনটিতে প্রাথমিক ভাষা হিসেবে হিন্দিতে কথা বলা হয়।

কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা মনিশংকর আইয়ার এক প্রবন্ধে লিখেছেন, ভাষা নিয়ে ধর্মেন্দ্র প্রধান ও বিজেপির অসংবেদনশীলতা ‘ভারতের অখণ্ডতার জন্য বড় বিপদ’।

ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা কী হবে

এ অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকার কেন কেন্দ্র সরকারকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দিচ্ছে রাজ্যে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করার। পশ্চিমবঙ্গের একাধিক সংগঠন ইতিমধ্যেই বলেছে, এই শিক্ষানীতির ফলে পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসার কমবে এবং হিন্দির প্রচার ও প্রসার বাড়বে।

তামিলনাড়ুতে বিজেপি ছাড়া সব রাজনৈতিক দল নেপ বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এমনকি বিজেপির জোটসঙ্গী পাট্টালি মক্কাল কাচ্চি ও দেশিয়া মুরপোক্কু দ্রাবিড় কাজগাম কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতির অধীন হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরোধিতা করেছে। তারা এটিকে রাজ্যের স্বায়ত্তশাসনের লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম খ যমন ত র মন ত র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ভুলে সীমানায় পা, বিএসএফ সদস্যকে আটক করল পাকিস্তান

ভুলক্রমে সীমানায় ঢুকে পড়ায় পাকিস্তানি রেঞ্জারদের হাতে আটক হয়েছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্য পুর্নমকুমার সাউ। ঘটনার পর পাকিস্তানের সঙ্গে তিনবার পতাকা বৈঠকে বসলেও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি। এমনকি বিএসএফের অনুরোধেও কর্ণপাত করছে না পাকিস্তান। এমন পরিস্থিতিতে কলকাতা থেকে পঠানকোট বিএসএফ দপ্তরে স্বামীর সর্বশেষ খবর জানিত ছুটে গেছেন পুর্নমের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও পরিবার। 

ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে পেহেলগাও সন্ত্রাসবাদী হামলা নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের চলমান উত্তেজনার মধ্যেই মঙ্গলবার ভুল করে পাকিস্তানের সীমানায় ঢুকে আটক হন বিএসএফ সদস্য পুর্নমকুমার সাউ। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার রিষড়া পৌরসভার ১৩ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। পুর্নম পাঠানকোটের ফিরোজপুর বর্ডারে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি চব্বিশ ব্যাটেলিয়ানের বিএসএফ কনস্টেবল। 

বিএসএফ সূত্রে জানা যায়, দায়িত্ব পালনকালে কড়া রোদে ক্লান্ত হয়ে পড়লে গাছের নিচে আশ্রয় নেন পুর্নম। এ সময় তিনি ভুল করে বর্ডার পেরিয়ে গেলে পাকিস্তান রেঞ্জার্সের হাতে আটক হন। এ দিকে ঘটনার পর তিনবার পাকিস্তানি রেঞ্জারদের সঙ্গে পতাকা বৈঠক করেছে বিএসএফ। কিন্তু তারা পুর্নমকুমার সাউকে ফিরিয়ে দেয়নি। 

স্বামীর এমন দুঃসংবাদে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রজনী। শেষবার হোলির সময় ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলেন পুর্নম। গত ৩১ মার্চ কাজে যোগ দেন তিনি।  

পুর্নমের বাবা ভোলানাথ সাউ জানান, ছেলেকে নিয়ে তিনি খুবই চিন্তিত। কোনো খবর পাচ্ছেন না। বিএসএফ কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে তিনি কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা মিটিংয়ে ব্যস্ত রয়েছেন বলে তাকে জানানো হয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কাছে ছেলেকে মুক্ত করে ফিরিয়ে নিয়ে আসার আবেদন জানিয়েছেন। 

সীমান্তরক্ষীদের ভুল করে নিয়ন্ত্রণরেখা পার হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এ ক্ষেত্রে দুই বাহিনীর বৈঠকের পরে তাদের মুক্তিও দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান সীমান্ত পরিস্থিতি ভিন্ন। পাক রেঞ্জার্সের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়। গত শুক্রবার পর্যন্ত এই ইস্যুতে তিনবার পতাকা বৈঠকে বসেছেন বিএসএফ এবং পাক রেঞ্জার্সের প্রতিনিধি দল। কিন্তু মিমাংসা হয়নি।   

এরপরই রবিবার পুর্নমের বাড়ি যান বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা পুর্নমকে মুক্ত করে ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দেন। যদিও মৌখিক কথায় আর ভরসা রাখতে রাজি নন রজনী। এ কারণে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আজ সোমবার পাঠানকোটের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। সেখানে তথ্য না পেলে দিল্লি গিয়ে স্বামীর খবর জানতে চাইবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। 

বিএসএফের পরিচালক জেনারেল দলজিৎ চৌধুরী জানিয়েছেন ঘটনার পরে ভারত-পাক নিয়ন্ত্রণরেখায় উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পুর্নমকুমার সাউকে ফিরিয়ে আনতে সব রকমের চেষ্টা চলছে। এমনকি পাকিস্তানি রেঞ্জারদের সঙ্গে কমান্ডার স্তরে বৈঠকের অনুরোধ জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। 

সুচরিতা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্বনেতাদের সতর্ক দৃষ্টির সামনেই ঘটছে গণহত্যা
  • প্রত্যন্ত গ্রামে ক্লিনিক খুলে ‘এমবিবিএস ডাক্তার’ পরিচয়ে চিকিৎসা, এক বছরের কারাদণ্ড
  • ‘শি জিনপিং ফোন করেছিলেন’ ট্রাম্পের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান চীনের
  • শি জিনপিং ফোন করেছিলেন, ট্রাম্পের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান চীনের
  • ভুলে সীমানায় পা, বিএসএফ সদস্যকে আটক করল পাকিস্তান