বিশ্ব জুনিয়র টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে ( অনূর্ধ্ব-১৪) এশিয়া অঞ্চলের খেলায় আগে কখনো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার সেই গেরো কেটেছে। বাহরাইনে অনুষ্ঠানরত ২১ দেশের প্রতিযোগিতায় পরশু রাতে সৌদি আরবকে হারিয়ে এই প্রথম বাংলাদেশ সেরা আটে জায়গা পেয়েছে।  টুর্নামেন্টের শীর্ষ চারটি দল আগামী ৪-৯ আগস্ট চেক প্রজাতন্ত্রে অনুষ্ঠেয় চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পাবে।

চূড়ান্ত পর্বে উঠতে পারলে সেটা হবে বাংলাদেশের জন্য বিশাল অর্জন। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেই বাংলাদেশ একটা ইতিহাস গড়ে ফেলেছে বলে দাবি করেছেন টেনিস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ,' বিশ্ব জুনিয়রের বাছাইয়ে আগে কখনো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারিনি আমরা। এবারই এই প্রথম উঠেছি। সেদিক থেকে এটি আমাদের জন্য এক ঐতিহাসিক সাফল্যই।'

নেপালকে ৩-০ ম্যাচে হারিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম এককে রাকিন রহমান ৬-৩, ৬-১ গেমে নেপালের রোকেয়াকে এবং দ্বিতীয় এককে কাব্য গায়েন ৬-৩, ৬-৩ গেমে নেপালের বিশ্ব বিশেসকে হারায়। দ্বৈতে বাংলাদেশের কাব্য ও আকাশ জুটি ৬-১, ৬-১ গেমে নেপালের বিশ্ব বিশেস ও রিজাল প্রার্থীকে হারিয়ে তুলে নেয় সহজ জয়।

দ্বিতীয় ম্যাচের প্রথম এককে বাংলাদেশের  আকাশ হোসেন  ৫-৭, ০-৬ গেমে সৌদি আরবের হামজা আল মনসুরির কাছে হেরেছে। দ্বিতীয় এককে বাংলাদেশের কাব্য গায়েন ৬-৭, ৬-২, ৩-৬ গেমে সৌদি আরবের সারুজি আহমেদকে হারায়।  ১-১ ম্যাচে সমতা আসে ম্যাচে। দ্বৈতে বাংলাদেশের  কাব্য গায়েন ও আকাশ হোসেন ৬-৩, ৩-৬, ১০-৭ গেমে সৌদি আরবের সারুজি আহমেদ ও সুহিল আল ফারুকিকে হারিয়ে ২-১ ম্যাচে জয় তুলে নেয়।

এদিকে ঢাকায় চলমান জাতীয় টেনিস প্রতিযোগিতায় শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে দেশের অন্যতম সেরা টেনিস খেলোয়াড় হানিফ মুন্নাকে। রমনা টেনিস কমপ্লেক্সে গতকাল পুরুষ একক কোয়ার্টার দীপু লালের বিপক্ষে খেলছিলেন হানিফ। ম্যাচের শুরুতেই চেয়ার আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত অমান্য করেন হানিফ। সুযোগ দেওয়ার পর আবারও রেফারির সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ। একই সঙ্গে তর্কে জড়ান রেফারির সঙ্গে। প্রতিপক্ষ দীপু লালকে গালাগাল এবং তাঁকে হুমকিও দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

হানিফের এমন আচরণে দিপু নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন ম্যাচ থেকে। চেয়ার আম্পায়ার ও দিপুর অভিযোগের পাশাপাশি রেফারির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হানিফের খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে টেনিস ফেডারেশন। একই সঙ্গে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রমনা টেনিস কমপ্লেক্সে অভ্যন্তরে তাঁর প্রবেশেও স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ খেলা দূরের কথা হানিফ এখন টেনিস কমপ্লেক্সেই ঢুকতে পারবেন না।
এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করলে হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ' আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ঠিক নয়। আমি কোনো অসদাচরণ করিনি। অন্যায়ভাবে আমাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।'


শৃঙ্খলাভঙ্গে কারণ দেখিয়ে এর আগে ডেভিস কাপের জন্য হানিফকে দলে নেয়নি টেনিস ফেডারেশন। তবে হানিফের দাবি, 'আমি অন্যায়ের শিকার। এখানে স্বজনপ্রীতি হয়। এ কারণে আমাকে বাদ দেওয়া হয়।'

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা

কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।

আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।

তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।

বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।

গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।

ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’

বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’

সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’

জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’

আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’

ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা
  • দেশে প্রথমবারের মতো ২৫টি ‘বেশি বিপদজনক’ বালাইনাশক চিহ্নিত
  • হামাসকে অস্ত্রত্যাগে ও গাজার শাসন ছাড়তে সৌদি, কাতার, মিসরের আহ্বান