বিএসইসির ওপর আস্থাহীনতা কেন বাড়ছে
Published: 4th, March 2025 GMT
আবারও আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নেতৃত্বের ওপর। গত আগস্টে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে ওলটপালট হয়ে যাওয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পুনর্গঠিত কমিশনের ওপর আস্থার ঘাটতি নয়া এক সংকটেরই বার্তা দেয় শেয়ারবাজারে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর আস্থার সংকট মানে বিনিয়োগে স্থবিরতা। নতুন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কয়েক মাস ধরেই শেয়ারবাজারে এ স্থবিরতা বিরাজ করছে, যা হতাশার জন্ম দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের মনে।
দেশের শেয়ারবাজারের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউস লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ সম্প্রতি শেয়ারবাজার নিয়ে বাজার অংশীজনদের মনোভাব বা সেন্টিমেন্টভিত্তিক এক জরিপ করেছে। সেই জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল বিএসইসির নতুন নেতৃত্বের ওপর তাদের আত্মবিশ্বাস কেমন? জবাবে মতামতদানকারীদের সাড়ে ৪৯ শতাংশই জানিয়েছে, বিএসইসির বর্তমান নেতৃত্বের ওপর তাদের কোনো আস্থা নেই। আর প্রায় ৩৭ শতাংশ বলেছেন, বিএসইসির বর্তমান নেতৃত্বের ওপর ‘কিছুটা আস্থা’ আছে তাদের। আর ৯ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা বর্তমান নেতৃত্বের ওপর ‘খুবই আস্থাশীল’।
লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ শেয়ারবাজার নিয়ে ২০১২ সাল থেকে নিয়মিত এই মনোভাব জরিপ করে আসছে। এবারের জরিপটি করা হয়েছে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে গত ২৫ জানুয়ারির মধ্যে। এবারের জরিপে ১০১ জন তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন সেবা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, বিনিয়োগ ব্যাংকার, বিদেশি বিনিয়োগকারী, শেয়ারবাজারে লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ট্রেডার বা লেনদেনকারী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, শিক্ষার্থী ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে এসব অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি জরিপে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।
জরিপে মতামত প্রদানকারীদের সংখ্যাটি হয়তো কম। কিন্তু তাঁরা তাঁদের যে মনোভাব তুলে ধরেছেন, সেটি ‘আমলযোগ্য’। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিয়ে বাজার–সংশ্লিষ্টদের ধারণা দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ। বিশেষ করে ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধস পরবর্তী দুই কমিশন নিয়ে বাজারে অভিযোগ ও সমালোচনার অন্ত নেই। এসব অভিযোগ ও সমালোচনা একেবারেই যে অমূলক তা–ও নয়। বিগত দুই কমিশনের ভূমিকা নিয়ে এখন তদন্ত চলছে। এর মধ্যে নতুন কমিশনের ওপরও আস্থাহীনতার কথা উঠে এসেছে সাম্প্রতিক জরিপে।
বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাস না যেতেই কমিশনের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমেছেন। বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন, সমাবেশও হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলে। বর্তমান কমিশনের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত অনিয়ম বা আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ শোনা যায় না। কেউ এই ধরনের দাবিও তোলেনি। তবে এই কমিশনের দক্ষতা ও সক্ষমতা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন রয়েছে। আর সেই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে কমিশন নিজেই।
গত প্রায় ১৫ বছরে শেয়ারবাজারের নানা অনিয়মের জন্য অভিযোগের তির সবচেয়ে বেশি ছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থার দিকে। এ কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সবার প্রত্যাশা ছিল বিএসইসিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হবে। কিন্তু বাজার–সংশ্লিষ্টদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। আবার কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর শুরুতে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যা পরবর্তীতে প্রশ্নের মুখে পড়ে। এ কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করতে গিয়ে বারবার সিদ্ধান্ত বদল করতে হয়েছে কমিশনকে। আবার নতুন কমিশন বিএসইসির অভ্যন্তরেও নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। কমিশনের কর্মকর্তাদের আস্থাও পুরোপুরি অর্জনে ব্যর্থ হয় তারা। তাতে গত ছয় মাসে কমিশনের কাজে একধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
শেয়ারবাজারবিষয়ক প্রতিবেদনের কাজে ২০০৭ সাল থেকে বিএসইসিতে নিয়মিত যাতায়াত করছি। এখনকার মতো বিএসইসির কাজে এত বেশি স্থবিরতা অতীতে খুব একটা দেখা যায়নি। বিএসইসির কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশই এখন শুধু নিয়মিত দায়িত্ব পালনের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছেন। তাতে সংস্থাটির কার্যক্রম বড় ধরনের স্থবিরতার মধ্যে পড়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজে যখন স্থবিরতা দেখা দেয়, তখন তার রেশ বাজারে ছড়িয়ে পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।
বর্তমান কমিশনের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা ও দক্ষতার ঘাটতি। এ কারণে শেয়ারবাজারে অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর ক্ষত এখনো ব্যথা ছড়াচ্ছে বাজারে। সেই ব্যথায় কাতরাতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। সেখান থেকে যত অনাস্থার জন্ম হচ্ছে।
সম্প্রতি শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে ডিবিএ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা খুবই দুঃখজনক। বিএসইসির বিগত দুই কমিশনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যায়। বর্তমান কমিশনের বিরুদ্ধে এখনো সেই ধরনের কোনো অভিযোগ শোনা না গেলেও তাদের অভিজ্ঞতায় বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে বর্তমান কমিশন অনেক উদ্যোগ নিলেও সেগুলোর ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না।
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী আরও বলেন, বিগত দুই কমিশনের সময় বাজারে আসা অনেক কোম্পানি এখন বাজারের জন্য বড় বোঝা বা বার্ডেন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বার্ডেন দূর করতে না পারলে বাজারে স্বাভাবিক গতি ফিরে আসবে না।
একই আলোচনা সভায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক ব্যাংক সুপারভাইজার সাবিদ সিদ্দিকী বলেন, পৃথিবীর যেকোনো শেয়ারবাজারের ক্ষেত্রে আস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেখানে কোনো ঘাটতি তৈরি হলে বা দেখা দিলে সেই বাজারে গতি আসবে না। শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের আস্থার ক্ষেত্রে তথ্য সত্যতা ও নির্ভরযোগ্যতা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এই দুই আলোচকের আলোচনাকে বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, বর্তমান কমিশন তা এখনো নিতে পারেনি। সে শেয়ারবাজারের লেনদেন কমে ৪০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। যেকোনো কিছু নতুন শুরুর ক্ষেত্রে বড় নিয়ামক হচ্ছে পুরোনো জঞ্জাল দ্রুত সরিয়ে ফেলা ও বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপের মাধ্যমে নতুন আশাবাদ তৈরি করা। বিএসইসির বর্তমান কমিশনের কাছে বাজার–সংশ্লিষ্টদের এই দুটি প্রত্যাশায় সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সেই প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির মিলছে না। এ কারণে দিন দিন হতাশা বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের। তার মধ্যে শেয়ারের দরপতন এই হতাশাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে আরও জানতে চাওয়া হয়েছিল, সাম্প্রতিক সময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোন পদক্ষেপ বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে? জবাবে ২৮ শতাংশ জানিয়েছেন, কারসাজির দায়ে কারসাজিকারকদের বিরুদ্ধে যে জরিমানা কমিশন করেছে, সেটি বাজারের জন্য ইতিবাচক। অর্থাৎ শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা শেয়ারবাজারকে কারসাজিমুক্ত দেখতে চান। এ কারণে কারসাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সেটিকে বাজারের জন্য ইতিবাচকই বলছেন জরিপে অংশগ্রহণকারীরা।
বিএসইসির বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নিয়ে অতীতের বেশ কিছু কারসাজির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাতে তাৎক্ষণিকভাবে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও দীর্ঘ মেয়াদে তা বাজারের জন্য যে ইতিবাচক, সেই ধারণা পাওয়া গেছে জরিপ থেকে। তাই কারসাজির বিরুদ্ধে কমিশনকে দৃঢ় অবস্থান অব্যাহত রাখতে হবে। সেই সঙ্গে সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের কাজটি দ্রুত করতে হবে।
শেয়ারবাজারের অতীতের ক্ষতকে যদি আমরা ক্যানসারের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে সেই ক্ষত যত দ্রুত নির্মূল করা যাবে, ততই মঙ্গল। সেই কাজটি যত বেশি বিলম্বিত হবে, ততই তা আশপাশে ছড়াতে থাকবে। তাতে এই ক্যানসার থেকে বাঁচার উপায় ক্ষীণ হয়ে আসবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বর্তমান কমিশন এখন শেয়ারবাজারের ক্ষত সারানোর চিকিৎসকের ভূমিকায়। যার ওপর নির্ভর করছে শেয়ারবাজার নামক রোগীর ভবিষ্যৎ। এই চিকিৎসকের ওপর যদি আস্থার সংকট বাড়তে থাকে, তাহলে তা পুরো বাজারকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ন ত ত ব র ওপর ব জ র র জন য শ য় রব জ র র শ য় রব জ র ন ব এসইস র ব পর স থ ত ল নদ ন ধরন র ব যবস মত মত
এছাড়াও পড়ুন:
এপ্রিলজুড়ে দর পতন, আস্থা ফেরানোর উদ্যোগ নেই
পতনই যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের শেয়ারবাজারের। টানা দুই সপ্তাহ ধরে চলা লাগাতার দর পতনের পর চলতি সপ্তাহের শুরুতে বেশির ভাগ শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে ভর করে গত রোববার ৪২ পয়েন্ট বাড়ে সূচক। তবে ওই বৃদ্ধি এক দিনও টিকল না। গতকাল সোমবার ফের পতনের ধারায় ফিরেছে এ বাজার। অধিকাংশ শেয়ারের দর পতন হয়েছে, ৪২ পয়েন্ট হারিয়ে সূচক নেমেছে ৪৯৫২ পয়েন্টে।
এমন দর পতনের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বাজারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন বিনিয়োগকারীরা। এর প্রকাশ গত দুই দিনে দেখা গেছে। আগের দুই সপ্তাহের ধারাবাহিক পতনে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসেও দর পতনে লেনদেন শুরু হয়। এতে প্রথম আড়াই ঘণ্টাতে সূচক ৫৭ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৯১৪ পয়েন্টে নামে। তবে বিএসইসির চেয়ারম্যান পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন– এমন গুজবে হঠাৎ ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। ওই পতনের ধারা থেকে ১০০ পয়েন্ট বেড়ে ৫০১১ পয়েন্ট পর্যন্ত ওঠে। তবে ‘চেয়ারম্যান পদত্যাগ করছেন না’– এমন খবরে ফের দর পতন হয়েছে।
শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টদের অনেকে মনে করছেন, খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপরই বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। লাগাতার পতনের ধারা তারই ইঙ্গিত। ‘শেয়ারদর বা সূচকের উত্থান-পতন দেখা বিএসইসির কাজ নয়’– এমন মনোভাব পোষণ করে সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তারা বাজারের এ ধারাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শুধু চলতি এপ্রিলেই দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ২৬৬ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ১০ শতাংশ পতন হয়েছে। এ সময়ের ১৬ কর্মদিবসের মধ্যে ১৩ দিনই হয়েছে দর পতন। তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ৩০৯টির বা ৮৫ শতাংশের পতন হয়েছে। তাতে সূচক হারিয়েছে ৩০৮ পয়েন্ট। বিপরীতে বাকি তিন দিনে শেয়ারদরের সামান্য বৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছিল মাত্র ৪২ পয়েন্ট। গতকালও ডিএসইতে ৯৩ শেয়ার ও ফান্ডের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২৪৩টির দর পতন হয়েছে।
বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিনই লোকসান নিয়ে সব শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন কিছু না কিছু বিনিয়োগকারী। যাদের লোকসান অনেক বেশি, তারা বাধ্য হয়ে পড়ে আছেন। নতুন করে কেউ বিনিয়োগে আগ্রহ পাচ্ছেন না। এ চিত্র এক বা দুই দিনের হলে সমস্যা ছিল না। যখন দিনের পর দিন, মাসের পর মাস একই ধারায় চলছে, তখনও বিএসইসি যদি মনে করে, এটা সমস্যা নয় বা এটা দেখা তাদের কাজ নয়, তাহলে এমন কমিশন না থাকাই ভালো।
টাকার অভাবে বিনিয়োগ হচ্ছে না, দর পতন হচ্ছে– এমন ধারণা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক রিচার্ড ডি’ রোজারিও। জানতে চাইলে তিনি সমকালকে বলেন, শত সমস্যার মধ্যেও কিছু মানুষের কাছে বিনিয়োগযোগ্য টাকা থাকে। তারা বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ চান। এটা নিশ্চিত করার দায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জসহ সব বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। বিনিয়োগে এই আস্থার পরিবেশ তৈরিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জসহ সবাই ব্যর্থ।
বিনিয়োগে আস্থার পরিবেশ না থাকার ধারণাকে সমর্থন করেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তবে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কিছু কর্মকাণ্ড শেয়ারবাজারে ‘আতঙ্ক’ তৈরি করায় দর পতন হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
এমন ধারণার ব্যাখ্যায় বিএসইসির সাবেক এ চেয়ারম্যান বলেন, ‘নানা কারণে এখন দেশে বিনিয়োগ কমেছে। এর মধ্যে ব্যাংক সুদহার ও সরকারি (ট্রেজারি) বন্ডের সুদহার বেশি। মূল্যস্ফীতিও আগের তুলনায় কমলেও এখনও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক। এ অবস্থায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ কম হওয়ারই কথা। তাই বলে লাগাতার পতনের কোনো কারণ আছে বলে মনে করি না।’ কমিশন (বিএসইসি) কিছু কর্মকাণ্ড বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আনাস্থা এবং আতঙ্ক তৈরি করেছে, যার কারণে দর পতন দীর্ঘায়িত হচ্ছে, এমনটা ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে বলে মন্তব্য তাঁর।
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, শেয়ারবাজারে সুশাসন না থাকলে মানুষ বিনিয়োগে আস্থা পায় না। সুশাসন ফেরানোর দায় যার, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিজেদের মধ্যেই গণ্ডগোল পাকিয়ে রেখেছে। কমিশনের সঙ্গে কর্মকর্তাদের আস্থার পরিবেশ নেই, নিজেদের মধ্যে দলাদলি হচ্ছে। এ খবর গণমাধ্যমেও আসছে। এর থেকে বের হওয়ারও কোনো লক্ষণ বা উদ্যোগ দেখছি না। এমন পরিবেশে কোনো বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করবেন না, এটাই স্বাভাবিক।
সূচকের উত্থান বা পতন ঠেকানো নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ নয়– এমন ধারণার বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাবেক এ প্রধান বলেন, অবশ্যই সূচক কোথায় উঠল বা কোথায় গিয়ে পড়ল, তা দেখার দায় বিএসইসির নয়। তবে বিএসইসির সৃষ্ট আতঙ্কে বাজারে নেতিবাচক ধারা তৈরি হলে তা সামাল দেওয়া তাদের দায়িত্ব। তবে এ দায়িত্ব কাউকে শেয়ার বিক্রি বন্ধ করতে বা কাউকে কিনতে বাধ্য করা নয়, যেসব ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড চলছে, তা বন্ধ করে এবং বিনিয়োগকারীরা যেসব বিষয়ে অস্বস্তি বোধ করছেন, তা দূর করেই করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।