ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে রাজনীতি স্থগিত ঘোষণা, নিষিদ্ধ করার দাবি শিক্ষার্থীদের
Published: 5th, March 2025 GMT
ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ‘স্থগিত’ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে অধ্যক্ষ পদে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা আলমগীর হোসেনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে ক্যাম্পাসে রাজনীতি স্থগিত নয়, নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আগে থেকেই ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি আসছেন শিক্ষার্থীরা। এ পরিপ্রেক্ষিতে কলেজে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে ৪ মার্চ কলেজের একাডেমিক কাম-প্রশাসনিক কাউন্সিল সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক পূর্বের ২০ আগস্ট নোটিশের আলোকে ক্যাম্পাসের ভেতর সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত করা হলো।
২০ আগস্ট জারি করা ওই নোটিশে কলেজের একাডেমিক কাম-প্রশাসনিক কাউন্সিল সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পৃক্ততা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়।
এ বিষয়ে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসিফ আহমেদ বলেন, ‘২০ আগস্ট আমাদের ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। এর মধ্যেই ছাত্রদল কমিটি দেয়। এ জন্য আমরা ২০ আগস্টের সিদ্ধান্ত বহালের দাবিতে আন্দোলনে নামি। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি স্থগিত করার নামে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। আমরা এ সিদ্ধান্ত চাইনি। আমাদের এক দফা দাবি, ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ চাই।’
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কাজী সুরাইয়া বলেন, তিন-চার দিন আগে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর পর থেকে বহিরাগত লোকজন ক্যাম্পাসে আসছেন; মোটরসাইকেলে মহড়া দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মো.
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ পদে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কলেজের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমরা নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি। এর বাইরে আমাদের আর কোনো কথা নেই।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ষ দ ধ কর ২০ আগস ট কল জ র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
আমাদের কাছে এসে সমস্যার কথা বলছে মানুষ: মির্জা ফখরুল
জনগণ বিএনপির কাছে এসে সমস্যার কথা বলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এসে ভিড় করছে লোকজন, যে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। আগে তো এমপি ছিল, মেয়র ছিল, তাঁরা কথা বলতে পারত, এখন কিন্তু তারা কথা বলতে পারছে না। এই যে বিষয়টা, এটা সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।’
সবাইকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একজন সাধারণ চেতনার মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সেটা হয় না। কারণ, আমাদের বাংলাদেশে এখন একটা প্রবণতা দেখা দিয়েছে যে লিবারেল ডেমোক্রেসিকে এখন কিছুটা নিচে নেমে যেতে হচ্ছে। একটু পরাজিত হতে হচ্ছে পপুলিস্টদের কাছে রিসেন্ট টাইমে। এটা বাস্তবতা। এটা কেন হচ্ছে, গবেষকেরা বলতে পারবেন।’
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এ কথাগুলো বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতীয় প্রেসক্লাবের উদ্যোগে জুলাই–আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা প্রকৃতপক্ষে মুক্তি পেয়েছি ১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ কলোনি থেকে। তারপরে পাকিস্তানি গোলামি শুরু হয়, তারপর বাংলাদেশি প্রভুদের গোলামি শুরু হয়েছে। এই গোলামিতেই আছি আমরা। আমরা একটা মুক্ত সমাজ চাই, আমরা একটা মুক্ত রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই, আমরা মানুষের মধ্যে মানুষের ভালোবাসা তৈরি করতে চাই।’
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আশুলিয়ায় পাঁচজন হত্যার ঘটনার স্মরণে গতকাল বুধবার বিএনপি একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব। গণ–অভ্যুত্থানে স্বামী হারানো এক নারীর কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সেই অনুষ্ঠানে এক মা তাঁর ১৪ মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে এসে বলেন, ‘আমার স্বামীকে এখানে হত্যা করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আমি জানি না, এই শিশুকে নিয়ে এখন কী করে বাঁচব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই বোনের কথা যখন আমি শুনি, তখন আমার মনে প্রশ্ন জাগে যে, আসলে রাষ্ট্রটা কী? রাষ্ট্র কার জন্য? যাঁরা এখন দায়িত্বে আছেন রাষ্ট্র পরিচালনার, তাঁরা এই এক বছরেও কি তাঁদের খুঁজে পেলেন না?’
২০২৪ সালের আগস্টে গণ–অভ্যুত্থানের পর পল্টনে বিএনপির সভা থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তখন আমার খুব সমালোচনা হয়েছিল। আপনারা বলেছিলেন যে বিএনপি ও মির্জা ফখরুল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এত অস্থির হয়ে গিয়েছে কেন? এখন আপনারাই বলছেন যে ব্যাপারটা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, যার শক্তি, যার ক্ষমতা, যার মালিকানা, তার হাতেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় এরই মধ্যে ১২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলেন মির্জা ফখরুল। বাকি বিষয়েও ঐকমত্যে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কাদা–ছোড়াছুড়ি হলেও সেটার একটা সীমা থাকা দরকার বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোয় পারস্পরিক একটা বোঝাপড়া থাকতে হবে। সেটা না হলে এই কাদা–ছোড়াছুড়ি ভবিষ্যতে রাজনীতিকে আরও কলুষিত করে।
আলোচনা সভায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সময়ে নির্যাতিত পাঁচ সম্পাদককে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দৈনিক যায়যায়দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির ও দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ। প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, উত্তরায় শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন ও জুলাই শহীদ আবদুল্লাহ বিন জাহিদের মা ফাতেমাতুজ জোহরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘জুলাই বাংলাদেশ’ নামে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার।