ইলন মাস্কের স্টারলিংক স্যাটেলাইট কি বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তরের ক্ষতি করছে
Published: 5th, March 2025 GMT
পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর মাধ্যমে সারা বিশ্বে মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট-সেবা দিয়ে থাকে স্টারলিংক। তবে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্টারলিংকের পাঠানো বিভিন্ন স্যাটেলাইটের কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে থাকা ওজোনস্তরে চাপ পড়ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গত জানুয়ারি মাসে প্রায় ১২০টি স্টারলিংক স্যাটেলাইট পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে পুড়ে গেছে। এতে কৃত্রিম উল্কাবৃষ্টির সৃষ্টি হয়েছিল। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই উল্কাবৃষ্টি দেখা গেছে।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে স্যাটেলাইটের পুনঃপ্রবেশ পরিবেশের জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করতে পারে। আর তাই বায়ুমণ্ডলের মেসোস্ফিয়ারে স্যাটেলাইটের পুনঃপ্রবেশ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, স্যাটেলাইটের কারণে পৃথিবীর প্রতিরক্ষামূলক ওজোনস্তর ধারণকারী স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। এসব স্যাটেলাইটের অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড কণা দীর্ঘমেয়াদে ওজোন স্তরের ক্ষতি করতে পারে। যখন স্যাটেলাইট বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে পুড়ে যায়, তখন স্যাটেলাইটের অনেক ধাতু ছড়িয়ে পড়ে। স্টারলিংকের স্যাটেলাইটেও প্রচুর পরিমাণে অ্যালুমিনিয়াম থাকে এবং স্যাটেলাইটগুলো প্রায় পাঁচ বছর কার্যকর থাকে। এরই মধ্যে ২০১৯ সালের মে মাসে পাঠানো ৬০টি স্যাটেলাইটের প্রায় সবই বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশ করছে।
আরও পড়ুনইলন মাস্কের স্যাটেলাইটের কারণে বিপাকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা, কেন২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ) তথ্যমতে, মহাকাশে ২৮ হাজারের বেশি বস্তু রয়েছে, যার বেশির ভাগের অবস্থান নিম্ন কক্ষপথে। গত কয়েক বছরে প্রায় আট হাজার স্টারলিংক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। আরও ১২ হাজার স্টারলিংক স্যাটেলাইট পাঠানোর কথা রয়েছে। অন্যদিকে অ্যামাজনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও ১৩ হাজারের মতো স্যাটেলাইট পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। এসব স্যাটেলাইট সাধারণত পৃথিবী থেকে ৫৫০ থেকে ১২০০ কিলোমিটার ওপরের কক্ষপথে ছুটতে থাকে। সময়কাল শেষ হয়ে গেলে এসব স্যাটেলাইট পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে টেনে আনা হয়। বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশের সময় এসব স্যাটেলাইট ঘণ্টায় প্রায় ২৭ হাজার কিলোমিটার গতিতে ছুটতে থাকে। এই উচ্চগতিতে ঘন বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে স্যাটেলাইটের সংঘর্ষের ফলে প্রচণ্ড তাপ উৎপন্ন হয়। এর ফলে স্যাটেলাইট ধ্বংস হয়ে গেলেও উপাদানগুলো বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তরের ক্ষতি করে।
আরও পড়ুনদেশে দেখানো হচ্ছে স্টারলিংকের রিসিভার, চালু হবে কবে১৪ নভেম্বর ২০২৪বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় স্যাটেলাইটের বিভিন্ন ধাতু রাসায়নিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায়। তখন অ্যালুমিনিয়াম নতুন বিপত্তি তৈরি করে। এই উপাদান সাধারণত একটি স্যাটেলাইটের ভরের প্রায় ৪০ শতাংশ। গবেষণায় দেখা গেছে, একটি সাধারণ স্টারলিংক স্যাটেলাইটের ওজন প্রায় ২৫০ কেজি। সেই হিসাবে স্টারলিংকের একটি স্যাটেলাইটের কারণে বায়ুমণ্ডলে প্রায় ৩০ কেজি অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড কণা জমা হয়।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
আরও পড়ুনপৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কীভাবে পরিচালিত হয় ইলন মাস্কের স্টারলিংক২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক স য ট ল ইট স য ট ল ইট প প ন প রব শ
এছাড়াও পড়ুন:
৩০ ক্রাসার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন
সিলেটে অবৈধ ক্রাসার মেশিনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। শনিবার (১৪ জুন) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সিলেট সফরকালে এ মেশিনের জন্য বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দেন।
ক্রাসার মেশিন হলো এক ধরনের যন্ত্র যা পাথর, আকরিক বা অন্যান্য উপকরণকে ছোট ছোট টুকরায় ভেঙে ফেলার জন্য ব্যবহৃত হয়।
সোমবার (১৬ জুন) সিলেট শহরতলীর ধোপাগুল এলাকায় যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে ৩০টি ক্রাসার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এ সময় ২৬টি বৈদ্যুতিক মিটার জব্দ করা হয়।
আরো পড়ুন:
নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু
গ্রাহকদের জরুরি বার্তা দিল ডেসকো
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ধোপাগোলসহ আশপাশের এলাকায় কোনো ধরনের পরিবেশগত ছাড়পত্র (ইআইএ) ও বৈধ অনুমোদন ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে বেশকিছু ক্রাসার মিল চলছিল। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল স্থানীয় পরিবেশ। পরিবেশ রক্ষার অংশ হিসাবে অভিযান চালিয়ে ৩০টি ক্রাসার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ২৬টি মিটার জব্দ করা হয়েছে।
সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোশূর রুবাইয়াত জানান, ধোপাগোলে বিদ্যুৎ বিভাগসহ সমন্বিত অভিযান হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাবের একাধিক টিম।
এদিকে, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভের ঘটনায় যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রবিবার (১৫ জুন) রাতে গোয়াইনঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওবায়েদ উল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমেদ জানান, সরকারি কাজে বাধা দেয়া, উপদেষ্টাদের সড়ক অবরোধ ও জনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে একটি মামলা রুজু হয়েছে। মামলায় গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খানকে প্রধান করে ১৫৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র জাফলং পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় বালু–পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা। শনিবার (১৪ জুন) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে গোয়াইনঘাটের বল্লাঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও শ্রমিক দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতাকে এ বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।
শনিবার সকালে জাফলং এলাকা পরিদর্শনে যান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সেখান থেকে ফেরার পথে বল্লাঘাট এলাকায় তাঁদের গাড়িবহর আটকে বালু–পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা বন্ধ থাকা জাফলংসহ সিলেটের পাথর কোয়ারি চালুর দাবিতে স্লোগান দেন।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, দুই উপদেষ্টা জাফলং পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা জানান, পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে জাফলংসহ সিলেটের কোনো পাথর কোয়ারি আর ইজারা দেয়া হবে না। এরপরই কিছু ব্যক্তি বিক্ষোভ শুরু করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর উপদেষ্টারা গাড়িতে ওঠেন। ফেরার পথে বল্লাঘাট এলাকায় স্থানীয় বালু-পাথর ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ কয়েকশত মানুষ পাথর কোয়ারির ইজারা দেয়ার দাবিতে তাদের গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ করেন। পাঁচ থেকে সাত মিনিট দুই উপদেষ্টার গাড়ি আটকে রাখেন তারা। পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিলে উপদেষ্টারা সিলেটে চলে আসেন।
ঢাকা/নূর/বকুল