সুন্দরবনের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের অবস্থান বরগুনার তালতলী উপজেলায়। সেই টেংরাগিরি বনাঞ্চল নিঃশেষ হওয়ার পথে। বনরক্ষীদের সহায়তায় স্থানীয় একটি চক্র বনটিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। টেংরাগিরিকে উজাড় করে দেওয়ার এ অপকর্ম নতুন নয়, দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে। প্রথম আলো এ বিষয়ে প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয়ও প্রকাশ করেছে। এরপরও টেংরাগিরিকে রক্ষার কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

স্থানীয়ভাবে ফাতরার বন নামে পরিচিত টেংরাগিরি বনাঞ্চলের আয়তন ১৩ হাজার ৬৪৪ একর। পায়রা, বলেশ্বর ও বিষখালী—দক্ষিণের এই তিন বড় নদ-নদী এখান থেকে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। দেশের নদ-নদীতে সাগর থেকে উঠে আসা বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ৬০ শতাংশ এখান দিয়ে আসা-যাওয়া করে। মাছের প্রজনন ও চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ এই অংশে শত শত জেলে বন বিভাগকে ম্যানেজ করে ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে প্রতিদিন মাছ ধরায় একদিকে দেশের বিশাল মৎস্যভান্ডার শূন্য হচ্ছে; অন্যদিকে বনরক্ষীদের ঘুষ দিয়ে বনের গাছও কেটে ফেলছেন তাঁরা। বনরক্ষীদের ঘুষের টাকার দর–কষাকষি নিয়ে সম্প্রতি একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আলোচনা তৈরি করেছে।

সরেজমিনে ভিডিওটির সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদক বনের ভেতরে গিয়ে দেখতে পান, সেখানে অনেক জায়গায় বড় গাছ কেটে নেওয়ার পর গোড়া পড়ে আছে। স্থানীয় জেলেরা তাঁকে জানান, এই বনসংলগ্ন তিনটি নদ-নদীতে কয়েক শ জেলে ছোট ফাঁসের খুঁটা জাল দিয়ে মাছ ধরেন। এ জন্য জেলেরা এই বনের গাছ কেটে এসব জালের খুঁটা তৈরি করেন। এ জন্য প্রত্যেক জেলেকে জালপ্রতি দেড় থেকে দুই হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় বনরক্ষীদের। নদীতে মাছের পরিমাণ কমলেও প্রতিবছর বাড়ে তাঁদের ঘুষের পরিমাণ। সময়মতো টাকা পরিশোধ না করলে জাল কেটে দেওয়া হয়। বনের ভেতরে পশু চরানোর জন্যও দিতে হয় ঘুষ। তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়া বিট কার্যালয়টি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলেরা।

যদিও বিটের বনরক্ষী ও কর্মকর্তারা তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, অবৈধ জাল কেটে দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে এসব অভিযোগ তোলা হয়েছে। তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো.

মতিয়ার রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি অভিযোগ পাই, তাহলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এখন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন হওয়ার পর তিনি কী ব্যবস্থা নেন, সেটি দেখার অপেক্ষা। বন বিভাগের একশ্রেণির কর্মকর্তার নামে নিত্য অভিযোগের বিষয়টি আমাদের অজানা নয়। আমরা আশা করব, অবাধে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরা, গাছ কাটা থামাতে তিনি কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বনরক ষ দ র কর মকর ত ব যবস থ ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

২ উপদেষ্টার গড়ি আটকে বিক্ষোভের ঘটনায় ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ৩

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়ি আটকে বিক্ষোভের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে।

বেআইনিভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে অবৈধভাবে গতিরোধ করা, সরকারি কাজে বাধা ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগে রোববার রাতে গোয়ানঘাট থানায় ১৫০ জনকে আসামি করে এ মামলা করেন থানার এসআই ওবায়েদ উল্লাহ। মামলার পর সোমবার ভোরে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরা হলেন- মামলার ৬নং আসামি কালিনগরের দেলোয়ার হোসেন দুলু, মোহাম্মদপুরের শাহজাহান মিয়া ও ছৈলাখেল অষ্টম খন্ডের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ।

শনিবার সকালে জাফলং এলাকা পরিদর্শনে যান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তারা ফেরার পথে জাফলং পাথর কোয়ারি চালুর দাবিতে বিএনপির সংগঠনের নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে দুই উপদেষ্টার আটকে নানান স্লোগানে বিক্ষোভ করা হয়। ঘটনার পর গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খানকে বহিষ্কার ও জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি আজির উদ্দিনকে শোকজ করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমদ তিনজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে সমকালকে জানান, গতকাল রাতে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সদ্য বহিষ্কৃত গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খানকে। দ্বিতীয় আসামি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- সোহেল আহমদ, ওমর ফারুক, সুমন শিকদার, দেলোয়ার হোসেন দুলু, আব্দুস সালাম ও আব্দুল জলিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ