দুই সপ্তাহ আগে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে পদায়ন করা হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। আগের দপ্তর থেকে দেওয়া হয় বিদায় সংবর্ধনাও। তবে নিয়ম না মেনে এখনও পেছনের তারিখ দিয়ে সই করছেন বিভিন্ন দাপ্তরিক নথিতে। ব্যবহার করছেন আগের অফিসের গাড়ি। হস্তান্তর করেননি নিজ কক্ষের চাবি। বিষয়টি নিয়ে নানামুখী সমালোচনা হলেও কানে তুলছেন না তিনি। এই কাণ্ড বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) সাবেক সদস্য মো.

ওয়াহিদুজ্জামানের। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওয়াহিদুজ্জামান খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব। সর্বশেষ তিনি বিএফএসএর সদস্য ছিলেন। ২০১৮ সালের ‘রাতের ভোটের’ সময় ফেনীর জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত থাকায় শাস্তি হিসেবে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ওএসডি করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০ ফেব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয় উপসচিব মো. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশের মাধ্যমে তাঁকে বিএফএসএর সদস্যপদ থেকে অবমুক্ত করা হয়। অর্থাৎ, বিএফএসএর কোনো পদ-পদবিতে তিনি বৈধভাবে নেই। খাদ্য মন্ত্রণালয়  থেকে অবমুক্তির দিনই বিএফএসএর চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে তাঁকে আনুষ্ঠানিক বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
ওয়াহিদুজ্জামান বিএফএসএর সদস্য হিসেবে মূল দায়িত্বের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির জাইকা-স্টার্ক (স্ট্রেনদেনিং দ্য ইন্সপেকশন, রেগুলেটরি অ্যান্ড কোঅর্ডিনেটিং ফাংশনস) প্রকল্পের পরিচালকেরও দায়িত্ব পালন করেন।  

তবে ওএসডির আদেশের দুই সপ্তাহ পার হলেও তিনি বিএফএসএতে অফিস করছেন নিয়মিত। সরাসরি আনুষ্ঠানিক সভা-সেমিনারে উপস্থিত না থাকলেও গোপনে চালাচ্ছেন বিভিন্ন দাপ্তরিক কার্যক্রম। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নথিতে পেছনের তারিখে সই করছেন। বিএফএসএর চেয়ারম্যান জাকারিয়ার কক্ষে গোপনে বিভিন্ন সভা করছেন। প্রকল্প পরিচালকের জন্য বরাদ্দের ৪২৪ নম্বর কক্ষের চাবি এখনও তাঁর পকেটে। দপ্তরে এলে কক্ষ খোলেন, কাজ শেষে চলে যাওয়ার সময় তালা লাগিয়ে চাবি নিয়ে যান। 

এ ছাড়া নিয়মের তোয়াক্কা না করে ব্যবহার করছেন দুটি গাড়ি। এর মধ্যে একটি বিএফএসএর সদস্য হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া সরকারি গাড়ি ও অন্যটি প্রকল্পের। ২০ ফেব্রুয়ারি তাঁকে অবমুক্ত করা হলেও ১ মার্চ পর্যন্ত সরকারি ও প্রকল্পের দুটি গাড়িই ব্যবহার করেছেন। ১ মার্চের পর সরকারি গাড়ি ব্যবহার না করলেও প্রকল্পেরটি এখনও তাঁর নিয়ন্ত্রণে।
বিএফএসএ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি প্রকল্পের দায়িত্ব পালনকালে তিনি ঢাকার অদূরের একাধিক জেলায় সেমিনারের টাকা বরাদ্দ দিয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ‘খুশি করার’ কথা বলে বরাদ্দের একটা অংশ নিয়ে নেন। সংশ্লিষ্ট জেলা অফিসারকে সমন্বয় করে প্রকল্প পরিচালক বরাবর বিল ভাউচার পাঠাতে বলেন। এসব কিছুর তথ্যপ্রমাণ সমকালের হাতে রয়েছে। 
জানা গেছে, ওয়াহিদুজ্জামানের সঙ্গে একই দিনে বিএফএসএর আরেক সদস্য মাহমুদুল কবীর মুরাদকেও ওএসডি করা হয়। তবে তাঁকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করার পর তিনি বিএফএসএতে আর আসেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএফএসএর এক সাবেক কর্মকর্তা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী তিনি কোনোভাবে এটা করতে পারেন না। তবে পতিত সরকারের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চেয়ারম্যানের ছত্রচ্ছায়ায় ওএসডি হওয়ার পরও ওয়াহিদুজ্জামান বিএফএসএতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। 
এ ব্যাপারে সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, অবমুক্ত করার পরে তিনি পেছনের তারিখ ব্যবহার করে কোনো নথিতে সই করতে পারেন না। সরকারি গাড়ি বা কক্ষ ব্যবহারেরও সুযোগ নেই। এটা আইনবহির্ভূত কাজ। 
এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া সমকালকে বলেন, ‘কিছু পেন্ডিং কাজ ছিল। সেগুলো হয়তো করেছেন। তিনি গাড়ি ব্যবহার করছেন কিনা, জানা নেই।’
অভিযোগের বিষয়ে ওয়াহিদুজ্জামান সমকালকে বলেন, ‘আমি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ থেকে বেতন পেয়েছি। সেখানে সব কাজ অনলাইনে, নতুন করে সই করার সুযোগ নাই। রিলিজ করার পরও তো কিছু কাজ পেন্ডিং থাকে, সেগুলো তো অবশ্যই করতে হয়। তাছাড়া আমি প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করছি না। আপনাকে কে দিয়েছে তথ্য। আমি অনিয়ম তো দেখছি না।’
 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র করছ ব যবহ র কর প রকল প র অবম ক ত বর দ দ করছ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হচ্ছে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে

জালিয়াতির মাধ্যমে এলসির বিপরীতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে পাঁচটি মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন, তাতে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানও আসামি হতে যাচ্ছেন।

আজ সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় মামলাগুলোর অনুমোদন দেয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি, শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান রহমানের পাশাপাশি তাঁর ছেলে, ভাই, ভাতিজা, জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে এই মামলাগুলো হবে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অনুমোদিত পাঁচ মামলায় ৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে মোট ২১ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৮০১ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৯৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় সালমান এফ রহমান ছাড়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর ছেলে শায়ান এফ রহমান, ভাই বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান, সোহেল রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমান, বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক ইকবাল আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী, পরিচালক এ বি সিদ্দিকুর রহমান, মাসুদ ইকরামুল্লাহ খান, শাহ মঞ্জুরুল হক ও রীম এইচ শামসুদ্দোহা।

এ ছাড়া স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল বাশার ও পরিচালক নাসরিন আহমেদ, ক্রিসেন্ট অ্যাকসেসরিজের এমডি আবু নাঈম মাহমুদ সালেহিন ও পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তানভীর, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ আলিফ ইবনে জুলফিকার ও পরিচালক নুসরাত হায়দার, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি ওয়াসীউর রহমান ও পরিচালক রিজিয়া আক্তার, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি সালাউদ্দিন খান মজলিস ও পরিচালক আবদুর রউফ, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের এমডি মাহফুজুর রহমান খান ও পরিচালক সৈয়দ তানবির এলাহী আফেন্দী সম্ভাব্য আসামির তালিকায় রয়েছেন।

জনতা ব্যাংকের মধ্য থেকে আসামি করা হচ্ছে ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ ও আবদুল জব্বার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক আবদুর রহিম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক শহিদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম (রপ্তানি বিভাগ) মমতাজুল ইসলাম, সিনিয়র অফিসার রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক সালেহ আহম্মেদ, অবসরপ্রাপ্ত এজিএম মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) মোহাম্মদ শাজাহান, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) হুমায়ুন কবির ঢালী ও প্রিন্সিপাল অফিসার শ ম মাহাতাব হোসাইন বাদশাকে।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের যোগসাজশে জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করা হয়। এর মধ্যে পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ দশমিক ২৫ ডলার, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৩ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৯১ ডলার, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ৮ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৭ দশমিক ৪৫ ডলার, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ ডলার এবং ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৮২ দশমিক ৪৬ ডলার আত্মসাৎ হয়।

সব মিলিয়ে আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

সাবেক সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ