আগের দপ্তরে গোপনে কাজ সারছেন ওএসডি ওয়াহিদুজ্জামান
Published: 7th, March 2025 GMT
দুই সপ্তাহ আগে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে পদায়ন করা হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। আগের দপ্তর থেকে দেওয়া হয় বিদায় সংবর্ধনাও। তবে নিয়ম না মেনে এখনও পেছনের তারিখ দিয়ে সই করছেন বিভিন্ন দাপ্তরিক নথিতে। ব্যবহার করছেন আগের অফিসের গাড়ি। হস্তান্তর করেননি নিজ কক্ষের চাবি। বিষয়টি নিয়ে নানামুখী সমালোচনা হলেও কানে তুলছেন না তিনি। এই কাণ্ড বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) সাবেক সদস্য মো.
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওয়াহিদুজ্জামান খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব। সর্বশেষ তিনি বিএফএসএর সদস্য ছিলেন। ২০১৮ সালের ‘রাতের ভোটের’ সময় ফেনীর জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত থাকায় শাস্তি হিসেবে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ওএসডি করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০ ফেব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয় উপসচিব মো. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশের মাধ্যমে তাঁকে বিএফএসএর সদস্যপদ থেকে অবমুক্ত করা হয়। অর্থাৎ, বিএফএসএর কোনো পদ-পদবিতে তিনি বৈধভাবে নেই। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে অবমুক্তির দিনই বিএফএসএর চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে তাঁকে আনুষ্ঠানিক বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
ওয়াহিদুজ্জামান বিএফএসএর সদস্য হিসেবে মূল দায়িত্বের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির জাইকা-স্টার্ক (স্ট্রেনদেনিং দ্য ইন্সপেকশন, রেগুলেটরি অ্যান্ড কোঅর্ডিনেটিং ফাংশনস) প্রকল্পের পরিচালকেরও দায়িত্ব পালন করেন।
তবে ওএসডির আদেশের দুই সপ্তাহ পার হলেও তিনি বিএফএসএতে অফিস করছেন নিয়মিত। সরাসরি আনুষ্ঠানিক সভা-সেমিনারে উপস্থিত না থাকলেও গোপনে চালাচ্ছেন বিভিন্ন দাপ্তরিক কার্যক্রম। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নথিতে পেছনের তারিখে সই করছেন। বিএফএসএর চেয়ারম্যান জাকারিয়ার কক্ষে গোপনে বিভিন্ন সভা করছেন। প্রকল্প পরিচালকের জন্য বরাদ্দের ৪২৪ নম্বর কক্ষের চাবি এখনও তাঁর পকেটে। দপ্তরে এলে কক্ষ খোলেন, কাজ শেষে চলে যাওয়ার সময় তালা লাগিয়ে চাবি নিয়ে যান।
এ ছাড়া নিয়মের তোয়াক্কা না করে ব্যবহার করছেন দুটি গাড়ি। এর মধ্যে একটি বিএফএসএর সদস্য হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া সরকারি গাড়ি ও অন্যটি প্রকল্পের। ২০ ফেব্রুয়ারি তাঁকে অবমুক্ত করা হলেও ১ মার্চ পর্যন্ত সরকারি ও প্রকল্পের দুটি গাড়িই ব্যবহার করেছেন। ১ মার্চের পর সরকারি গাড়ি ব্যবহার না করলেও প্রকল্পেরটি এখনও তাঁর নিয়ন্ত্রণে।
বিএফএসএ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি প্রকল্পের দায়িত্ব পালনকালে তিনি ঢাকার অদূরের একাধিক জেলায় সেমিনারের টাকা বরাদ্দ দিয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ‘খুশি করার’ কথা বলে বরাদ্দের একটা অংশ নিয়ে নেন। সংশ্লিষ্ট জেলা অফিসারকে সমন্বয় করে প্রকল্প পরিচালক বরাবর বিল ভাউচার পাঠাতে বলেন। এসব কিছুর তথ্যপ্রমাণ সমকালের হাতে রয়েছে।
জানা গেছে, ওয়াহিদুজ্জামানের সঙ্গে একই দিনে বিএফএসএর আরেক সদস্য মাহমুদুল কবীর মুরাদকেও ওএসডি করা হয়। তবে তাঁকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করার পর তিনি বিএফএসএতে আর আসেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএফএসএর এক সাবেক কর্মকর্তা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী তিনি কোনোভাবে এটা করতে পারেন না। তবে পতিত সরকারের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চেয়ারম্যানের ছত্রচ্ছায়ায় ওএসডি হওয়ার পরও ওয়াহিদুজ্জামান বিএফএসএতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, অবমুক্ত করার পরে তিনি পেছনের তারিখ ব্যবহার করে কোনো নথিতে সই করতে পারেন না। সরকারি গাড়ি বা কক্ষ ব্যবহারেরও সুযোগ নেই। এটা আইনবহির্ভূত কাজ।
এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া সমকালকে বলেন, ‘কিছু পেন্ডিং কাজ ছিল। সেগুলো হয়তো করেছেন। তিনি গাড়ি ব্যবহার করছেন কিনা, জানা নেই।’
অভিযোগের বিষয়ে ওয়াহিদুজ্জামান সমকালকে বলেন, ‘আমি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ থেকে বেতন পেয়েছি। সেখানে সব কাজ অনলাইনে, নতুন করে সই করার সুযোগ নাই। রিলিজ করার পরও তো কিছু কাজ পেন্ডিং থাকে, সেগুলো তো অবশ্যই করতে হয়। তাছাড়া আমি প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করছি না। আপনাকে কে দিয়েছে তথ্য। আমি অনিয়ম তো দেখছি না।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র করছ ব যবহ র কর প রকল প র অবম ক ত বর দ দ করছ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এবারের ঈদযাত্রায় প্রাণহানি গত ঈদের চেয়ে বেশি: যাত্রী কল্যাণ সমিতি
পবিত্র ঈদুল আজহায় সারা দেশে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত ১১৮২ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত, ১২ জন আহত হয়েছে। নৌপথে ১১টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৪১৫টি দুর্ঘটনায় ৪২৭ জন নিহত ও ১১৯৪ জন আহত হয়েছে।
ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৩১ মে থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৪ জুন পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত ১১৮২ জন আহত হয়েছে। বিগত ২০২৪ সালের ঈদুল আজহায় ৩০৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৬ জন নিহত ও ৭৬২ জন আহত হয়েছিল। বিগত ঈদুল আজহার সাথে তুলনা করলে সড়ক দুর্ঘটনা ২২ দশমিক ৬৫ শতাংশ, প্রাণহানি ১৬ দশমিক ০৭ শতাংশ, আহত ৫৫ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়েছে।
সোমবার (১৬ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এতথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “সড়কে দুর্ঘটনা ও মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি কমিয়ে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে হলে ঈদের আগে কমপক্ষে ৪ দিনের সরকারি ছুটি থাকা দরকার। ঈদের যাতায়াত ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। সবার আগে আমাদের গণপরিবহন ও ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, ছোট যানবাহন মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। প্রশিক্ষিত দক্ষ চালক, ফিটনেস বিহীন যানবাহন, মানসম্মত সড়কের পাশাপাশি আইনের সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।”
আরো পড়ুন:
কক্সবাজারে সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি, অপহরণ ৩
রামুতে বাস-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে নিহত ৩
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কের বৃষ্টির কারণে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে বেপরোয়া যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। ঈদের পরে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালাতে গিয়ে সংগঠিত হয়েছে। ফলে এসব দুর্ঘটনায় সিংহভাগ খাদে পড়ে ও দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনের লেগে যাওয়ার ঘটনা বেশি ঘটেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি এবারের ঈদেও চরমে ছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনদের ঈদে বাড়ি যাতায়াত করতে হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৩৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত, ১৪৮ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৬১ জন চালক, ৫০ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫৮ জন পথচারী, ৪০ জন নারী, ৩০ জন শিশু, ৩২ জন শিক্ষার্থী, ৭ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৫ জন শিক্ষক, একজন চিকিৎসক, একজন প্রকৌশলী, ৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।
সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ২৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৯ দশমিক ১১ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, ১৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ বাস, ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ কার-মাইক্রো, ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ নছিমন-করিমন ও ৭ দশমিক ০৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
দুর্ঘটনার ২৮ দশমিক ২৩ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪০ দশমিক ৬৩ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২০ দশমিক ০৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায়, দশমিক ৭৯ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনে ও ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৭ দশমিক ২০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৮ দশমিক ২৩ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়া সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, দশমিক ৭৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও দশমিক ৭৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মাসুদ, সংগঠনের অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ, ড্রাইভারস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. বাদল আহমেদ, জিএম মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
ঢাকা/এম/এসবি