স্থানীয় সরকার কাঠামোকে কার্যকর না করলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে না। জাতীয় রাজনীতির অস্থিরতা, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের প্রবণতা কমিয়ে আনতে হলে স্থানীয় সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাববলয় থেকে বেরিয়ে এসে অনেকটাই স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত হতে হবে।

কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় সরকারের মধ্যে দূরত্ব বাড়াতে পারলে জাতীয় রাজনীতির চরিত্রও পরিবর্তিত হবে। তখন তা উন্নয়ননির্ভর থেকে নীতিনির্ভর হয়ে উঠবে। সেখানে স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিনিধিরা জনগণের কল্যাণে কাজ করবেন। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাব ও হস্তক্ষেপ কমে আসবে।

একটি শক্তিশালী স্থানীয় সরকার থাকলে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের প্রবণতা কমে যাবে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ যত কমানো যাবে, স্থানীয় সরকার ততই নিজস্ব ক্ষমতা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করতে পারবে। তখন স্থানীয় সরকারের বাজেট, আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতার কারণে জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থের সংঘাত কমবে।

স্থানীয় সরকার যদি প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলে জাতীয় রাজনীতি অলাভজনক একটি ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হবে। আর তেমন হলে ক্ষমতা দখলের লড়াইও কমে আসবে। ক্ষমতা হস্তান্তর হবে অনেকটাই শান্তিপূর্ণভাবে। তাই কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রবণতার অবসান করে একটি কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা জরুরি।

সম্প্রতি রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য গঠিত ছয়টি কমিশন সরকারের কাছে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বাংলাদেশকে চারটি প্রদেশে ভাগ করার যে প্রস্তাব করেছে, বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামো এবং আঞ্চলিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিলে প্রাদেশিক বিভাজন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এটি শাসনব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নষ্ট করে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে কার্যকর স্থানীয় সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই হতে পারে প্রশাসনিক জটিলতা নিরসনের একটি কার্যকর উপায়। আর এর জন্য প্রয়োজন এক কাঠামোগত প্রক্রিয়া।

বাংলাদেশের সংবিধানে স্থানীয় সরকারকে ‘স্থানীয় শাসন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা কার্যকরভাবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। একে সত্যিকার অর্থে স্থানীয় সরকার হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্ব থেকে এর স্বাধীনতা। এ কাঠামোকে কার্যকর করার জন্য তিন স্তরের স্থানীয় সরকারব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন—ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ।

একটি কার্যকর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য তার কেন্দ্রস্থল হতে হবে জেলা পরিষদ, যা জেলা সরকারের আদলে পরিচালিত হবে। প্রতিটি পরিষদের সদস্যদের সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হবে এবং পরিষদের সভাপতি ও সহসভাপতিদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই মনোনীত করা উচিত। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে একটি মনিটরিং কাউন্সিল গঠন করতে হবে। এই কাউন্সিলের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে।

ঔপনিবেশিক আমলে তৈরি হওয়া স্থানীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রয়োজনের চেয়ে সরকারের প্রয়োজনকে বেশি গুরুত্ব দিত। তাই স্থানীয় পর্যায়ে প্রকৃত জনকল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এ বাস্তবতায় স্থানীয় সরকারকে স্বশাসিত ও গণপ্রতিনিধিত্বশীল করে তোলা দরকার, যাতে এটি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে স্থানীয় সরকারকে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি জনগণের জবাবদিহির নিশ্চয়তা বিধানের জন্য প্রয়োজনে রিকল বা প্রত্যাহার পদ্ধতি চালু করা দরকার। গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে ন্যূনতম ৬৫ শতাংশ ভোটারের আবেদন থাকলেই কেবল কোনো জনপ্রতিনিধিকে প্রত্যাহার করা যেতে পারে।

স্থানীয় সরকার যেন জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে পারে, সে জন্য প্রশাসনিক সেবার বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি। যে সেবা ইউনিয়ন পর্যায়ে দেওয়া সম্ভব, তার জন্য যেন উপজেলায় যেতে না হয় এবং যে সেবা উপজেলা পর্যায়ে দেওয়া সম্ভব, তার জন্য যেন জেলা পর্যায়ে যেতে না হয়। সেবার ক্ষেত্রে জনগণের চাহিদার ভিত্তিতেই স্থানীয় সরকারের কর্মপরিধি নির্ধারণ করতে হবে।

এ ছাড়া পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়নের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা যাতে স্বচ্ছ হয়, সে জন্য পৃথক তহবিল গঠন করতে হবে এবং এটি স্থানীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করা অর্থ ও রাষ্ট্রীয় বাজেটের ওপর নির্ভর করবে। বাজেট ব্যবহারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে মনিটরিং কাউন্সিলের রিপোর্ট পাওয়ার পরই পরবর্তী বাজেট অনুমোদন করা উচিত।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে প্রবেশের ফলে স্থানীয় সরকারকেও ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার আওতায় আনতে হবে। জনগণ যাতে সহজেই সরকারি সেবা গ্রহণ করতে পারে এবং সরকারি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে, সে জন্য স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় করে আধুনিকায়ন করতে হবে।

স্থানীয় সরকারের সঙ্গে বৈদেশিক শ্রমবাজারের কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। বাংলাদেশের বৈদেশিক শ্রমবাজারে যাঁরা কাজ করতে যান, তাঁদের বড় অংশই গ্রামীণ অঞ্চল থেকে আসে। স্থানীয় সরকারকে তাই প্রতিটি অঞ্চলের কর্মসংস্থানের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর পরিকল্পনা নিতে হবে। পাশাপাশি বিদেশি নিয়োগদাতাদের স্থানীয় পর্যায়ে সংযুক্ত করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে।

স্থানীয় সরকারের নির্বাচনকে সরকারের প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত তারিখে দেশের সব স্তরের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। নির্বাচনে দলীয় পরিচয় ও প্রতীক ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। এর মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে দলীয় স্বার্থের পরিবর্তে জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া যাবে।

এ ছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্যদের স্থানীয় সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা প্রশাসনিক কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ রাখা যাবে না। তাদের ভূমিকা কেবল জাতীয় পর্যায়ে আইন প্রণয়ন এবং সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।

স্থানীয় সরকারব্যবস্থার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হওয়া উচিত, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনের পদ্ধতিতে। সরাসরি জনপ্রতিনিধিদের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পরিবর্তে পরিষদের সদস্যদের রোটেশন বা ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়া হলে স্থানীয় পর্যায়ে একনায়কতন্ত্রের ঝুঁকি হ্রাস পাবে।

স্থানীয় সরকারকে স্বশাসিত ও জনমুখী করতে হলে তার প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্গঠন করতে হবে এবং তাকে কোনো সরকারি দপ্তরের অধীনস্থ না রেখে স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত করার নীতি গ্রহণ করতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাজ হবে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা প্রদান করা, কিন্তু তাদের নিয়ন্ত্রণ করা নয়।

স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ করার জন্য প্রতিটি পরিষদের অধিবেশনে নাগরিকদের উপস্থিত থাকার সুযোগ এবং প্রশ্ন করার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক উন্নয়নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে এবং তাঁদের সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।

একটি শক্তিশালী স্থানীয় সরকার শুধু প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের উপায় নয়। এটি হলো গণতন্ত্রের প্রকৃত রূপ। এখানে ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরে যাওয়ার প্রয়াস শুরু হবে এবং জাতীয় রাজনীতির কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা রুদ্ধ হবে বলে আশা করা যায়। একটি শক্তিশালী, স্বশাসিত ও কার্যকর স্থানীয় সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা গেলে তা জাতীয় রাজনীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ কমিয়ে আনবে, প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করবে এবং ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করবে।

স্থানীয় সরকার যদি সত্যিকার অর্থে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তবে জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে এবং জাতীয় রাজনীতি শুধু ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতায় সীমাবদ্ধ না থেকে জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে মনোযোগী হবে। স্থানীয় প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত হলে দুর্নীতি কমবে এবং জনগণের করের অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহৃত হবে। তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্তিশালী হলে জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিরতা অনেকাংশেই কমে আসবে। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে অভ্যন্তরীণ অভিবাসন কমে আসবে এবং শহরকেন্দ্রিক চাপও হ্রাস পাবে। তাই স্থানীয় সরকারকে কার্যকর ও গণমুখী করা শুধু একটি নীতিই নয়, বরং এটি টেকসই উন্নয়ন এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের জন্য এক অনিবার্য শর্ত।

আলাউদ্দীন মোহাম্মদ যুগ্ম সদস্যসচিব, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ন দ র য় সরক র র স থ ন য় সরক র র র স থ ন য় সরক র জ ত য় র জন ত র স থ ন য় পর য য় ন শ চ ত করত য় সরক র র ক ন শ চ ত কর সরক র র প কর ত ত ব র র জন য ক র যকর ক জ করত ব যবস থ জনগণ র প রবণত জন য প উপজ ল ক ষমত গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান

জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি বলেন, “দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কিংবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।”

আরো পড়ুন:

বরগুনায় জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মামুন 

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির 

রবিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।

প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি মানুষকে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন, এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু সংসদীয় সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাকে মেনে নেবেন।”

জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, “দেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী নাগরিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে, যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?... এমন তো হবার কথা ছিল না।”

বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।”

শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ‘ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিগত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।”

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান জানান, তবে বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের আস্থা, ভালোবাসা থাকায় সে সংকট কাটিয়েছে তার দল।

তারেক রহমান বলেন, “দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।”

দেশে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সামাজিক উদাসীনতা প্রকট হয়ে উঠছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, “নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।”

সেজন্য তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলসহ বাংলাদেশের সচেতন নারী সমাজকে তাদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে অনলাইনে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ এবং তার ফি পরিশোধের প্রক্রিয়া নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তাতে বলা হয়, এখন থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে অনলাইনে বিএনপির দলীয় ওয়েবসাইটে গিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করা যাবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জে ড এম জাহিদ হাসান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর হোসেন প্রমুখ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জনগণের সহজে ভূমিসেবা নিশ্চিত করতে হবে: সিনিয়র সচিব
  • কোনো দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হলে জোট হতে পারে: সারজিস আলম
  • অবিলম্বে গণভোটের দাবি চাকসুর
  • ক্ষমতার লোভে কেউ কেউ ধর্মকে ব্যবহার করছে: আব্দুস সালাম
  • উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
  • ভুল শুধরে জনগণের আস্থা ফেরানোর সুযোগ এই নির্বাচন: আইজিপি
  • ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
  • ইরান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আরো শক্তিশালী করে পুনর্নির্মাণ করবে
  • জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিতে সংগ্রাম, শপথ যুব সংসদের সদস্যদের
  • বন্দরে বিএনপি নেতা তাওলাদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম