ম্যাচের বাকি ১৭ দিন। তার আগেই বাংলাদেশ-ভারত ফুটবল ম্যাচ ঘিরে উন্মাদনা শুরু হয়েছে। ২৫ মার্চ শিলংয়ে অনুষ্ঠেয় এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে দুই প্রতিবেশীর লড়াইয়ে মূল আকর্ষণ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরী। লাল-সবুজের জার্সিতে তাঁর অভিষেক নিয়ে বাংলাদেশে যেমন উচ্ছ্বাস বইছে, বিপরীতে ভারতীয় শিবিরে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।
হামজার মতো ফুটবলারের বিরুদ্ধে কীভাবে খেলতে হবে, সেই পরিকল্পনাও কষছে ভারত। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে বড় খবর হয়ে আসে অবসর ভেঙে ভারতের কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রির ফুটবলে ফেরার ঘোষণা দেওয়া। ৯ মাসের মধ্যে তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের পেছনে অনেকেই সামনে এনেছেন হামজাকে। শেফিল্ড ইউনাইটেডের তারকার মুখোমুখি হতেই কিনা ৪০ বছর বয়সে অবসর ভেঙেছেন ছেত্রি! এই প্রশ্নও উঠেছে।
গত বছরের জুনে কলকাতার সল্ট লেকে কুয়েতের বিপক্ষে ভারতের জার্সিতে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছিলেন ছেত্রি। আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানালেও ক্লাব পর্যায়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে যাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি আইএসএলে বেঙ্গালুরুর হয়ে বেশি বয়সী ফুটবলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করার অনন্য কীর্তি গড়েছিলেন তিনি। ছেত্রির অবসর নেওয়াটা বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য আশীর্বাদই মনে করছিলেন সবাই। কারণ কয়েকবার শেষ মুহূর্তে গোল করে বাংলাদেশের জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তিনি।
লাল-সবুজের দলটির বিপক্ষে খেলা ১১ ম্যাচে ৮ গোল করার সঙ্গে সতীর্থকে দিয়ে করিয়েছেন ৩ গোল। অবসর নেওয়া ছেত্রির বিকল্পও খুঁজে পায়নি ভারত। তাঁর না থাকার প্রভাব পড়েছে ভারতীয় দলের পারফরম্যান্সে। এর পর পাঁচটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের একটিতেও জিততে পারেনি ভারত। তাই তাঁর অবসর ভেঙে ফেরায় ভারতীয়রা ভীষণ খুশি।
তবে ফুটবলবোদ্ধারাদের ধারণা, বাংলাদেশের হয়ে হামজা খেলবেন, তাই সুযোগ হারাতে চান না বলেই ছেত্রির ফেরা। ইংল্যান্ড প্রবাসী হামজা ডাক পাওয়ায় এবারের বাংলাদেশ দলের শক্তিও বেড়েছে। ভারতের স্প্যানিশ কোচ মানোলা মার্কেজ বাংলাদেশের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডের জন্য ২৬ জনের স্কোয়াডে ছেত্রিকে রেখেছেন। তবে ছেত্রির ফেরাকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর কলকাতায় ভারতের বিপক্ষে গোল করা মোহাম্মদ সাদ উদ্দিনের কাছে ছেত্রির ফেরাটা স্বাভাবিক, ‘এটা (অবসর থেকে ফিরে আসা) ফুটবলে স্বাভাবিক। চাপের কিছু নেই। ওর (সুনীল) সঙ্গে খেলতে পারলে ভালো হবে। সমস্যার কিছু নেই।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ টবল র
এছাড়াও পড়ুন:
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন আসরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা, খেলা কবে-কোথায়
অভাগাদের বছরে ‘কুফা’ কাটানোর তালিকায় সর্বশেষ নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। লর্ডসে গতকাল অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টেস্টের রাজদণ্ড হাতে পেয়েছে টেম্বা বাভুমার দল। প্রোটিয়াদের শ্রেষ্ঠত্বের মধ্য দিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসর শেষ হয়েছে।
তবে এর রেশ থাকতেই চলে এসেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ আসর বা চক্র। ২০২৫-২৭ চক্রের শুরুটা হচ্ছে বাংলাদেশকে দিয়েই। আগামী ১৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্ট খেলতে নামছে নাজমুল হোসেন দল। ২৫ জুন কলম্বোয় শুরু দুই দলের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এটিই প্রথম সিরিজ।
ক্রিকেটের অভিজাত এই সংস্করণে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ বছর পার দিলেও রেকর্ড ভালো নয়। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আসার পর থেকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ক্রমশ উন্নতির দিকে।
প্রথম চক্রে (২০১৯-২১) কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দ্বিতীয় চক্রে (২০২১-২৩) মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ঐতিহাসিক জয় বাদ দিলে বলার মতো কিছু নেই। প্রথম দুই চক্র শেষ করতে হয়েছে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থেকে।
তবে তৃতীয় চক্রে (২০২৩-২৫) বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বেশ আশাব্যঞ্জক। ১২ টেস্ট খেলে জিতেছে চারটিতে। এর মধ্যে গত বছর পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ধবলধোলাইয়ের সুখস্মৃতিও আছে। পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান ছিল সাত নম্বরে; পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপরে। তিন চক্র মিলিয়ে বাংলাদেশ খেলেছে ৩১ টেস্ট। জিতেছে পাঁচটি, ড্র করে দুটি আর হেরেছে ২৪টি।
এবার কী হবে? শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার আগে মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে আশার বাণীই শুনিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল। তিনি বলেছেন, ‘গত চক্রে আমরা চারটা ম্যাচ জিতেছি। আমাদের একটু উন্নতি হয়েছে। লক্ষ্য থাকবে এই চক্রে কীভাবে আরও একটা-দুইটা ম্যাচ বেশি জিততে পারি।’ সেটা কতটুকু সম্ভব, সময়ই বলে দেবে।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগের তিন চক্রের মতো এবারও অংশ নিচ্ছে ৯ দল। প্রত্যেক দল খেলবে ছয়টি করে সিরিজ—তিনটি নিজেদের মাঠে, তিনটি প্রতিপক্ষের মাঠে। পয়েন্ট সিস্টেমেও কোনো পরিবর্তন আসেনি (জিতলে ১২, ড্র করলে ৪, টাই করলে ৬ পয়েন্ট)।
তবে এবার ম্যাচের সংখ্যা গত দুবারের চেয়ে একটি বেড়েছে। ফাইনালসহ মোট ম্যাচ হবে ৭১টি, সিরিজ ২৭টি। প্রত্যেক সিরিজেই সর্বনিম্ন দুই ও সর্বোচ্চ পাঁচটি ম্যাচ হবে।
চতুর্থ চক্রের ফাইনালও লর্ডসে আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ম্যাচ হবে ২০২৭ সালের জুনে। ফাইনালের আগে শেষ সিরিজ হবে সেই বছরের মার্চে; পাকিস্তানে দুটি টেস্ট খেলতে যাবে নিউজিল্যান্ড।
এবার সবচেয়ে বেশি ২২ ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ ম্যাচ খেলবে ইংল্যান্ড। সবচেয়ে কম ১২টি করে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা, যাদের সিরিজ দিয়েই শুরু হচ্ছে এবারের চক্র। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ দলের টেস্ট সিরিজ এই একটিই। নাজমুল-মুশফিক-তাইজুলদের বাকি পাঁচ সিরিজই ২০২৬ ও ২০২৭ সালে। সব সিরিজেই দুটি করে ম্যাচ।
২০২৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ মার্চে, ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই বছরের আগস্টে দল যাবে অস্ট্রেলিয়ায়। ২০০৩ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেটিই হবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের প্রথম টেস্ট সিরিজ।
এই চক্রে বাংলাদেশের ঘরের মাঠে দ্বিতীয় সিরিজ খেলবে ২০২৬ সালের অক্টোবরে; খেলতে আসবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের মাসে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। বাংলাদেশের শেষ সিরিজ দেশের মাটিতেই; ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আসবে ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালের পর এটিই হবে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সিরিজ।
অনুপ্রেরণা জোগানোর মতো খবর হলো ২০২৫-২৭ চক্রে বাংলাদেশ যে ছয় দলের বিপক্ষে খেলবে, এর চারটির বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে তারা হারেনি। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করেছে আর পাকিস্তানকে করেছে ধবলধোলাই (দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়)। সিরিজ হেরেছে শ্রীলঙ্কা আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে।