মাদারীপুরে ‘তিন কারণে’ তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যা
Published: 9th, March 2025 GMT
পুরনো শত্রুতা, নদী থেকে বালু তোলার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ ও হাটবাজারের দখল নিয়ে বিরোধের কারণে মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুরে দুই ভাইসহ তিনজনকে খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছে পুলিশ ও এলাকাবাসী। এ ঘটনায় মামলা হলে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নিহত দুই ভাইয়ের মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে রোববার সকালে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৪৯ জনকে এজাহারভুক্ত ও ৮০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।
সরেজমিন জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে খোয়াজপুরে কীর্তিনাশা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল সরদার। এলাকায় তিনি হিটার সাইফুল হিসেবে বেশি পরিচিত ছিলেন। বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও স্থানীয় হাটবাজারের ইজারা নিতেন তিনি। বালু তোলার সিন্ডিকেট ও খোয়াজপুর-টেকেরহাট বাজারের ইজারা দখল নিয়ে হোসেন সরদার (৬০) নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে সাইফুলের বিরোধ সৃষ্টি হয়। তারা সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। এর জেরে গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ্যে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হোসেনের দুই পা ভেঙে দেন সাইফুল ও তাঁর সহযোগীরা। এ ঘটনা ছাড়া আরও কিছু ঘটনায় সাইফুলের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা হয়েছিল। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হলে পরে জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করতেন সাইফুল। এ নিয়ে এলাকার মানুষ তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।
এ ছাড়া জেলার রাজনৈতিক বিরোধেও জড়িয়ে পড়েছিলেন হোসেন সরদার (৬০) ও সাইফুল (৩৫)। দীর্ঘদিন ধরে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগে দুটি বলয় তৈরি হয়েছিল। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিতেন সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান এবং অপর পক্ষের নেতা ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। সাইফুল বাহাউদ্দিন নাছিম সমর্থিত খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তাঁর প্রতিপক্ষ হোসেন সরদার ছিলেন শাজাহান খান সমর্থিত আওয়ামী লীগ নেতা। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাইফুল বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সখ্য বাড়ানোর চেষ্টা করেন। এতে আরও ক্ষুব্ধ হয় স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাইফুলের এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় জানান, এক সময় এলাকায় খুব প্রভাব ছিল সাইফুলের। বিভিন্ন বিচার-সালিশও করতেন তিনি। মানুষ তাঁর কথা মানত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। হোসেন সরদারও তখন আওয়ামী লীগে ছিলেন। সম্প্রতি সাইফুল তাঁর লোকজন নিয়ে হোসেনের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে তাঁর লোকজনকে মারধর করে। হোসেনের লোকজন আবার সাইফুলের এক মামাকে তুলে নিয়ে মারধর করে। সেই ঘটনার মাসখানেক আগে মীমাংসাও হয়ে গেছে। তারপর বালু তোলার ড্রেজার ব্যবসা দখলে নিতে যান সাইফুল ও তাঁর লোকজন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। এর জেরে গত শনিবার সাইফুল ও তাঁর ভাই আতাউর সরদার (৪০) এবং চাচাতো ভাই পলাশ সরদারকে (১৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহত সাইফুলের স্ত্রী সতি বেগম (২৬) অভিযোগ করেন, গত বছর তাঁর স্বামীর সঙ্গে হোসেন সরদারের একটা বিরোধ হয়েছিল। সেই ক্ষোভ থেকেই হোসেন ও তার লোকজন দেশিয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে তিন দিক থেকে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা পালানোর চেষ্টা করেন। হামলাকারীরা তাদের বাড়িঘরে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনি বলেন, হামলার সময় তাঁর স্বামী ও ভাশুর মসজিদে গিয়ে আত্মগোপনের চেষ্টা করেন। সেখান থেকে তাদের ধরে এনে মেরে ফেলা হয়। এ সময় পলাশ নামে তাদের এক আত্মীয়কেও মেরে ফেলা হয়।
সাইফুলের মা সুফিয়া বেগম বলেন, তাঁর দুই ছেলেকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। সরকারের কাছে ঘটনার বিচার ও হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করেন তিনি।
তিনজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি বালু ব্যবসা ও পূর্বশত্রুতার জের ধরেই ঘটেছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করতে তাদের অভিযান অব্যাহত আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ স ন সরদ র র ল কজন আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
আদাবরে কুপিয়ে হত্যা: তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিল সেনাবাহিনী
রাজধানীর আদাবরে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধে রিপন সরদার (৪২) খুনের ঘটনায় তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, রিপন হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইমন ওরফে ভাইগ্না ইমন ওরফে দাঁতভাঙা ইমনকে তাঁর দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে দুটি সামুরাই উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ইমন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী জানায়, গতকাল ভোরের দিকে রাজধানীর আদাবর থানার বালুর মাঠ এলাকায় বাসায় ঢুকে রিপন নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। কিশোর গ্যাং এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ। পরে আহত অবস্থায় রিপনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে তিনি মারা যান।
৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গতকাল সকালে বালুমাঠ এলাকায় একটি হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া যায়। বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ করে জানা যায় এলেক্স সবুজ, মনির ও ইমন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান নির্ণয় করে অভিযান চালিয়ে ইমন ও তাঁর দুই সহযোগীকে দুটি সামুরাইসহ গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযান চালানোর কিছুক্ষণ আগে সবুজ ও মনির সেই জায়গা থেকে পালিয়ে যান। তাই তাঁদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। বাকিদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে আদাবরের ১০ নম্বরের বালুর মাঠ এলাকায় ‘বেলচা মনির’ ও ‘রাজু গ্রুপে’র মধ্যে এ মারামারি হয়। ‘বেলচা মনিরের’ লোকজন ‘রাজু গ্রুপের’ রিপনকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিপন সরদারের মৃত্যু হয়।
আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও বিরোধকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটির বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
আরও পড়ুনআদাবরে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মারামারিতে নিহত ১১৮ ঘণ্টা আগেতবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিপন সরদারের ছেলে ইমন সরদার গতকাল দাবি করেন, রিপন মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন না। রিপন পেশায় চা–দোকানি। বেলচা মনিরের লোকজনের সঙ্গে দুই দিন আগে তাঁর বাবার কথা-কাটাকাটি হয়। এর জেরে তাঁর বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর মা আরজু বেগমও আহত হয়েছেন। তাঁদের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায়।
পুলিশের ভাষ্য, নিহত রিপন সরদার মাদক কারবারি রাজুর চাচাতো ভাই। ‘রাজু গ্রুপ’ ও ‘বেলচা মনিরের’ নেতৃত্বে আদাবরের ১০ ও ১৭ নম্বর এলাকায় মাদক ব্যবসা হয়। ওই বিরোধের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে। নিহত রিপনের বিরুদ্ধে ভোলায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।