চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণবিরোধী সমাবেশকে কেন্দ্র করে হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে সমালোচনা করে এক ছাত্রী বক্তব্য দেওয়ার সময় ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগান দিয়ে তাঁকে থামিয়ে দেওয়া হয়। পরে সমাবেশ শেষ না করেই চলে যান শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের প্রতিবাদে প্রথমে বিক্ষোভ সমাবেশ ডেকেছিলেন একদল শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন ফেসবুকে এটির প্রচারণা চালান। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে জিরো পয়েন্টে এটি হওয়ার কথা ছিল। অন্যদিকে নারীদের হেনস্তা ও ধর্ষণের শাস্তি ফাঁসির দাবিতে সাড়ে ছয়টার মশালমিছিলের ডাক দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রীরা।

ছাত্রীদের মিছিলটি বিজয় চব্বিশ হলের (সাবেক জননেত্রী শেখ হাসিনা হল) সামনে থেকে শুরু হয়। পরে তাঁরা প্রীতিলতা ও নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী (সাবেক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল) ঘুরে প্রীতিলা হল–সংলগ্ন জামাল নজরুল ইসলাম সড়কে আসেন। আর ছাত্রদের মিছিলটিও জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে কাটা পাহাড় সড়ক হয়ে জামাল নজরুল ইসলাম সড়কে আসে। সেখান থেকে ছাত্র ও ছাত্রীদের মিছিলটি এক হয়ে দক্ষিণ ক্যাম্পাস ঘুরে আবার জিরো পয়েন্টে পৌঁছায়। সেখানে সমাবেশ হয়। এতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এ বক্তব্য দেওয়া নিয়েই হট্টগোল হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে ৯ ছাত্রীর বহিষ্কার নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা চলছে। ওই ৯ ছাত্রীর একজন ছিলেন সুমাইয়া শিকদার। তিনি সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার এক পর্যায়ে হট্টগোল শুরু হয়। সুমাইয়া শিকদার তাঁর বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন। এ সময় সমাবেশে অবস্থানকারী একটি অংশ ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ বলে স্লোগান দেয়। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ উপস্থিত অন্য শিক্ষার্থীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন।

জানতে চাইলে সমাবেশে থাকা ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আরমান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সুমাইয়া শিকদার বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী। তাই তাঁর বক্তব্য দেওয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন কয়েকজন। আবার এটা ছিল ধর্ষণবিরোধী কর্মসূচি। সারা দেশে নারীদের নিরাপত্তার দাবিতে এ কর্মসূচি ছিল। কিন্তু এখানে ক্যাম্পাসের কোনো বিষয় ছিল না। এখানে একটা গোষ্ঠী ক্যাম্পাসের বিষয় নিয়ে আসায় আরেকটা গোষ্ঠী এর প্রতিবাদ করেছে। তিনি এই প্রতিবাদে সম্মতি জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল। ভুল–বোঝাবুঝি থেকে এমনটা হয়েছে। পরে যে যাঁর মতো করে হলে চলে গেছেন।

জানতে চাইলে সুমাইয়া শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ছাত্রীদের ‘হানি ট্র্যাপার’ বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি এ বিষয়টি শুরু করেছিলেন। তবে কথা শেষ করার আগেই একদল ভুয়া ভুয়া বলে তাঁকে থামিয়ে দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

আমি আজ যা কিছু, সবই নারীদের জন্য: শাহরুখ

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। একষট্টি বছর বয়সেও ধারাবাহিকভাবে ব্লকবাস্টার সিনেমা উপহার দিয়ে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। মেধা, কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় সংকল্প তাকে ‘সুপারস্টার’ মর্যাদা এনে দিয়েছে। যশ-খ্যাতির পাশাপাশি অঢেল সম্পদের মালিক ‘কিং খান’। তবে শাহরুখ খান নিজের কৃতিত্ব নিজে নেন না। বরং এই সাফল্যের কৃতিত্ব তার জীবনের নারীদেরকে দিয়েছেন। বিশেষ করে তার সহঅভিনেত্রীদের।

এর আগে দ্য গার্ডিয়ান-কে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন শাহরুখ খান। এ আলাপচারিতায় তার জীবনের নারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পুরোনো সেই সাক্ষাৎকার নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে।

আরো পড়ুন:

জাতীয় দল থেকে অবসরে স্বর্ণ জয়ী রোমান সানা

ক্রিমিয়ায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন

শাহরুখ খান বলেন, “খুব ছোটবেলায় আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি, তারপর মাকেও। কিন্তু আমার জীবনের নারীরা, অভিনেত্রীরা—আমাকে ভীষণভাবে সাহায্য করেছেন। আমি আজ যা কিছু, সবই তাদের (নারী) কারণে। তারাই সব কাজ করেন, আর বেশিরভাগ সময় আমি সেই কাজের কৃতিত্ব নিয়ে নিই। আমি শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে কেউ শাহরুখ খান হয়ে ওঠেননি। কিন্তু আমি চাই তারা হোক। আমি অহংকার করছি না।”

বলিউড অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিত, জুহি চাওলা ও কাজলের উদাহরণ টেনে শাহরুখ খান বলেন, “নাচের দৃশ্যে মাধুরী দীক্ষিত আমার হাত ধরে রাখতেন, সে আমাকে লিড দিয়েছে, আমি নই। জুহি চাওলা আমাকে কমেডি টাইমিং শিখিয়েছে, কাজল আমাকে কাঁদতে শিখিয়েছে। তারা প্রাণপণে কাজ করেছে, আর সিনেমা শেষে বলা হয়—‘শাহরুখ খান: দ্য সুপারস্টার’। আমি জানি এটা। আমি এসব অস্বীকার করতে পারি না, কোনোদিন ভুলবও না। আমি আজ যেখানে আছি, সবই নারীদের জন্যই।”

“আমার ভদ্রতা, সৌজন্যতা, জেন্টলম্যান সুলভ আচরণ—সবই তাদের প্রতি আমার ধন্যবাদ জানানোর উপায়। তারা সিনেমায় অসাধারণ কাজ করে, প্রতিটি সিনেমাতেই।” বলেন শাহরুখ খান।

নারী পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করা প্রসঙ্গে অন্য একটি সাক্ষাৎকারে শাহরুখ বলেছিলেন, “পুরুষেরা তাদের অনুভূতিকে ভাগ করে রাখে। কিন্তু নারীরা অনেক বেশি সূক্ষ্ম ও ব্যাপকভাবে অনুভব করেন। তারা সব দিকেই ছড়িয়ে যান। আমার মনে হয়, আমি নারীদের সঙ্গে করতে উপভোগ করি। কারণ নারীদের সংবেদশীলতা। তারা সিনেমাকে আরো সুন্দর করে তোলেন।”

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেন মোট পাঁচবার।  তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ