তুলকালাম পড়ে গেছে কাশ্মীরে। উত্তাল বিধানসভাও। প্রবল চিৎকারের মধ্যে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘আমি গুলমার্গের ফ্যাশন শো নিয়ে প্রতিবেদন তলব করেছি। আমার সরকার ওই শোর সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত ছিল না। মানুষের ক্ষোভ খুবই সংগত। আয়োজকেরা জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের ভাবাবেগ ও সংবেদনশীলতাকে গুরুত্ব দেননি।’
গত শুক্রবার (৭ মার্চ) কাশ্মীরের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শৈল শহর গুলমার্গে ফ্যাশন শোর আয়োজন করেন দুই ভারতীয় পোশাকশিল্পী শিভন ও নরেশ। তুষারাবৃত গুলমার্গ স্কির (বরফে একধরনের খেলা) জন্য বিখ্যাত। শিভন ও নরেশের পোশাক ভাবনাও ছিল ‘স্কি ওয়্যার’ বা স্কি উপযুক্ত পোশাক। কোনো রিসোর্টের অন্দরমহলে সেই শো না করে তুষারাচ্ছন্ন সড়ক বেছে নেওয়া হয়েছিল। খোলা আকাশের নিচে বরফের আস্তরণের ওপর তৈরি করা হয়েছিল র্যাম্প। সেখানেই নানা পোশাকে শো করেছিলেন নামীদামি পুরুষ-নারী মডেলেরা।
ফ্যাশন শোর ভাবনা ও মডেলদের পোশাক নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। স্বল্পবসনা নারী-পুরুষদের ছবি, ভিডিও গণমাধ্যম ও সমাজমাধ্যমে প্রচার পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই সমালোচনার সূচনা হয়।
হুরিয়ত নেতা মীরওয়াইজ ওমর ফারুক ওই ফ্যাশন শোকে ‘কুরুচিকর, অশালীন ও আপত্তিকর’ বলে মন্তব্য করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি লেখেন, ‘পবিত্র রমজান মাসে এমন জঘন্য আয়োজন মেনে নেওয়া যায় না।’
একই রকম আপত্তি তোলেন পিডিপি নেত্রী ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। এক্সে তিনি লেখেন, ‘পবিত্র রমজান মাসে এই অশ্লীলতা মানা যায় না। এটা কাশ্মীরি মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না। এমন আয়োজন জম্মু-কাশ্মীরের সমাজ ও সংস্কৃতির পক্ষে বিপজ্জনক।’
মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ নিজেও চুপ করে থাকেননি। সামগ্রিক বিরোধিতার সুরে শোনা গেছে তাঁর কণ্ঠেও। তিনি বলেছেন, ‘কাশ্মীরি জনতার রাগ হওয়া স্বাভাবিক। স্থানীয় ভাবাবেগের তোয়াক্কা না করেই রমজান মাসে ওই আয়োজন, যার সঙ্গে প্রশাসনের কোনো যোগ ছিল না।’
সোমবার বিধানসভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। দল–মতনির্বিশেষে সমালোচনার মুখে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ফ্যাশন শোর সমালোচনায় সামাজিক মাধ্যমে কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। একজন লিখেছেন, ‘রমজান তো সারা দেশেই পালিত হচ্ছে। তাই বলে দেশে কি ফ্যাশন শো বন্ধ আছে? ফ্যাশন বিশ্বের নজরে আসায় কাশ্মীরের বরং গর্ব করা উচিত।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম খ যমন ত র রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
৫৮ দিনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও সরগরম বাগেরহাটের মৎস্য আড়ত
ভোরের আলো ফোটার আগেই বাগেরহাটের কেবি বাজারে হইচই। সাগরে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় মাছ ধরে ফিরেছেন জেলেরা। আজ শুক্রবার ভোরে দুটি ট্রলার একসঙ্গে মাছ নিয়ে ঘাটে ভিড়তেই সরব হয়ে ওঠে এলাকার প্রধান সামুদ্রিক মৎস্য অবতরণকেন্দ্রটি।
নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রথম দিনেই বাজারে ভিড় করেন শত শত মৎস্য ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও আড়তদার। শুরু হয় ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক। মাছের সরবরাহ কম হলেও চাহিদা ছিল অনেক বেশি।
কেবি মৎস্য অবতরণকেন্দ্রটি শহরের দড়াটানা নদীর তীরের বাসাবাটি এলাকায়। জেলেরা সাগর থেকে ধরা মাছ নিয়ে সরাসরি ঘাটে আসেন। এখান থেকেই বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা মাছ কিনে নিয়ে যান।
ভোরে বাজারে দেখা যায়, ঘাটে ভিড়েছে দুটি ট্রলার। সেখান থেকে শ্রমিকেরা ঝুড়িতে করে মাছ তুলছেন। ইলিশ, রুপচাঁদা, ভেটকি, লইট্টা, ছুরি, জাবা, ঢেলা, চ্যালাসহ নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছ উঠেছে বাজারে। তবে বাজারে যে পরিমাণ মাছ এসেছে, তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ফলে দাম ছিল চড়া।
সাগর থেকে মাছ ধরে ফেরা জেলে রুহুল আমিন বলেন, ‘সাগরে যাওয়ার পরে কয়েকবার জাল ফেলতে পেরেছি। অল্প কিছু ইলিশ পেয়েছি, বাকি সব আজেবাজে মাছ। পরে ট্রলারে সমস্যা হওয়ার কারণে চলে এসেছি।’
মোরেলগঞ্জ থেকে মাছ কিনতে আসা তৈয়ব মুন্সি বলেন, ‘অনেক দিন পর এলাম। দাম বেশি, তবু কিছু মাছ কিনছি। এখন এলাকায় বিক্রি করতে পারলে ভালো হয়।’
আরও পড়ুনসাগরে মাছ ধরায় ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ আজ, সুফল পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন১১ জুন ২০২৫বাজারে ইলিশের দাম ছিল আকাশছোঁয়া। ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ইলিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রুপচাঁদা বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। এ ছাড়া কঙ্কণ, তুলারডাটি, ঢেলা, চ্যালা, ভেটকি, লইট্টা, ছুরি, জাবাসহ নানা মাছ বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজিতে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধীরে ধীরে ট্রলারের সংখ্যা ও মাছের পরিমাণ বাড়লে দামও স্বাভাবিক হবে।
কেবি বাজারে মাছ বিক্রি হয় সাধারণত ‘পণ’ হিসেবে। এক পোণে ৮০টি মাছ থাকে। আকার অনুযায়ী প্রতি পোণের দাম নির্ধারিত হয়। ক্রেতারা ঢাকের শব্দে বিট দিয়ে মাছ কেনেন।
কেবি বাজার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার বিশ্বাস বলেন, অবরোধের পর আজই প্রথম বঙ্গোপসাগর থেকে ট্রলার এসেছে। তেমন মাছ পায়নি। তবে বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক পাইকার আসছেন। যার কারণে দাম কিছুটা বেশি। তবে মাছ বেশি হলে দাম কিছুটা কমে আসবে।
উল্লেখ্য, মাছের প্রজনন ও টেকসই আহরণ নিশ্চিত করতে বঙ্গোপসাগরে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এ সময় সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা, পরিবহন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ ছিল। এর আগে এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ছিল ৬৫ দিন।