কোথাও পানি নিষ্কাশনের নালা ও রাস্তার উন্নয়নকাজের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সড়ক খুঁড়ে-কেটে রাখা হয়েছে। হেঁটে চলাচলও করা যাচ্ছে না। কিছু এলাকায় পয়োনালার পানি আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও বাসাবাড়ির বর্জ্য নিয়ে মানুষকে জিম্মি করা হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় হাঁটার রাস্তা (ওয়াকওয়ে), পার্ক-মাঠ কিছুই নেই। সড়কবাতিগুলো নষ্ট হয়ে আছে মাসের পর মাস। ওয়ার্ড কার্যালয়ে গেলে হয়রানি করা হচ্ছে। ঘুষ না দিলে সনদ পাওয়া যাচ্ছে না।

এমন সব অভিযোগ জানালেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গে যুক্ত নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশান ২ নম্বরে ডিএনসিসির নগর ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক গণশুনানিতে এসব ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এমন অভিযোগ জানান। নাগরিকসেবা–সংক্রান্ত বিষয়ে এ গণশুনানির আয়োজন করে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ।

শুনানি শুরু হয় বেলা ১১টার কিছু পরেই। গণশুনানিতে ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ উপস্থিত হন একেবারে শেষে, বেলা একটা এক মিনিটে। এর প্রায় আধা ঘণ্টা আগে শুনানিতে যুক্ত হন সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো.

কামরুজ্জামান। প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শুনানিতে পৌঁছানোর আগেই ১৮টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যক্তিরা নিজেদের এলাকার সমস্যা ও অভিযোগগুলো তুলে ধরেন। কিছু কিছু অভিযোগ ও সমস্যার বিষয়ে উত্তর দেন সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন।

ভাঙাচোরা রাস্তাঘাটের সমস্যার কথা তুলে ধরে ডিএনসিসির ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাদেক আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, ওই ওয়ার্ড এলাকায় তিনি ২৫ বছর ধরে বসবাস করছেন। গত ১৭ বছরে সেখানে রাস্তার কোনো উন্নয়নকাজ করতে দেখেননি।

সাদেক আহমেদ ভূঁইয়া আরও বলেন, আশকোনার মদিনা টাওয়ার থেকে দক্ষিণখান মূল রাস্তা পর্যন্ত অংশে সড়কটি সংস্কার করা হবে—এমনটা এক বছর আগে শুনেছেন। এই শুষ্ক মৌসুমেও ওই রাস্তায় পানি জমে আছে। প্রধান প্রকৌশলী এ সময় বলেন, সব জায়গায় একসঙ্গে কাজ ধরলে লোকজন বাসা থেকেই বের হতে পারবেন না।

ডিএনসিসির ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোহাম্মদ বাদশা কয়েকটি সমস্যা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সাত মাস ধরে ওই এলাকায় সড়কবাতি নষ্ট। করপোরেশনকে জানালেও বাতি ঠিক করা হয়নি। নালার ময়লা-আবর্জনা তুলে নালার পাশেই রাখা হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই যা নালায় গিয়ে পড়বে। নুরেরচালা বোটঘাটের রাস্তা দেড় মাসের বেশি সময় কেটে ফেলে রাখা হয়েছে।

ঈদের পরে আমরা এ ধরনের বড় বড় প্রোগ্রামে যাব। ঈদের আগে খুব একটা ঝামেলা করতে চাচ্ছি না এখন। ঈদের পরে গ্র্যাজুয়ালি আমরা রিকশাগুলোকে মেইন রোড থেকে সরিয়ে দেব। এটা হচ্ছে আমাদের টার্গেট।ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান প্রকৌশলী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন

৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ওয়ার্ডের ৪ নম্বর সড়কে নবজাগরণী ক্লাব থেকে মুন্সি মার্কেট এলাকা পর্যন্ত রাস্তার কাজ অনেক দিন ধরে বন্ধ। এ নিয়ে তাঁরা করপোরেশনে গিয়েছেন। করপোরেশন তাঁদের ভোগান্তির মূল্যায়ন করেনি। এমন পরিস্থিতিতে বৃষ্টি হলেই সেখানে কোমরপানি জমার শঙ্কায় রয়েছেন বাসিন্দারা। প্রধান প্রকৌশলী তাঁদের আঞ্চলিক কার্যালয়ে আবেদনের অনুরোধ জানান।

দীর্ঘ সময় নিয়ে চালানো উন্নয়নকাজে দুর্ভোগ, অপ্রতুল নাগরিক–সুবিধা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ওয়াসার পানির সংকট নিয়ে অভিযোগ দেন ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সৈয়দ আহমেদ। তিনি বলেন, তাঁদের এলাকায় দুই বছর আগে থেকে শুরু হওয়া রাস্তার কাজ শেষ হচ্ছে না। এতে বাসিন্দাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তাঁদের এলাকায় বয়স্ক, নারী ও শিশুদের হাঁটাচলার কোনো সুযোগ নেই। উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের পাশে আবদুল্লাহপুর খালের পাড়ে হাঁটার রাস্তা করার আবেদন করা হলেও তা হয়নি। বাসিন্দাদের জিম্মি করে ইচ্ছেমতো ময়লার বিল নেওয়া হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ময়লার বিল নগরবাসী জানেন না। এ জন্য মানুষের চোখে পড়ে, এমন বিভিন্ন স্থানে ঠিকাদারের নাম ও নির্দিষ্ট বিল সাইনবোর্ডে লিখে দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

ডিএনসিসির ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাত্তার চৌধুরী বলেন, কয়েক দিন আগে তাঁর এক স্কুলশিক্ষকের মৃত্যুসনদ নিতে গিয়ে সাত হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। জন্মনিবন্ধনের সরকারি ফি ৫০-১০০ টাকা হলেও, ২০০–৩০০ টাকা চেয়ে বসে থাকে। ময়লা সংগ্রহের কাজও কল্যাণ সমিতি থেকে জোর করে দখল করে নেওয়া হয়েছে। এ কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলেন তিনি। এই ব্যক্তির বক্তব্যের পরে করপোরেশনের কোনো কর্মকর্তা জবাব দেননি।

উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নগরের জন্য তিনি চারটি কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। যেগুলোর ভিত্তিতে ন্যায্য নগর গড়ে তোলা হবে।

সন্ধ্যার পর প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে নিমন্ত্রণ

গণশুনানির এক পর্যায়ে বক্তব্য দেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এক ঘণ্টা ২০ মিনিট এখানে আমি ছিলাম। মশার ব্যাপারটা কিন্তু তেমনভাবে উঠে আসে নাই। আপনাদের প্রয়োরিটিতে ছিল রাস্তাঘাট, কালভার্ট-ব্রিজ, হোল্ডিং ট্যাক্স। মশার ব্যাপারটা আসেনি। তার মানে এটা হচ্ছে লেস প্রায়োরিটি (কম অগ্রাধিকার)।’

এমন সময় শুনানিতে আসা উত্তরার এক বাসিন্দা ওই কর্মকর্তাকে থামিয়ে বলেন, ‘আপনি বলছেন, মশার বিষয়টি লেস প্রায়োরিটি দিয়ে আলোচনায় এসেছে। বিষয়টি সে রকম নয়। আপনাকে উত্তরা এলাকায় দাওয়াত দিয়ে গেলাম। সন্ধ্যার পর যদি আমাদের এলাকা পরিদর্শন করতেন, আমরা অনেক খুশি হতাম। আমরা যে বাস্তব পরিস্থিতিতে বসবাস করছি, সেটা তুলে ধরতে পারতাম।’

ঈদের পর অটোরিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

গণশুনানিতে উপস্থিত থাকা অনেকেই তাঁদের বক্তব্যে অবৈধ অটোরিকশার চলাচল বন্ধ কিংবা নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান। এ বিষয়ে সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘ডিএমপির সঙ্গে আমাদের একটি মিটিং হয়েছে। আমরা গ্র্যাজুয়ালি ফেস আউট করে দিচ্ছি, রিকশাগুলো যাতে মেইন রোডে আসতে না পারে। আমরা একটা ট্র্যাপ তৈরি করছি।’

প্রধান প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘ঈদের পরে আমরা এ ধরনের বড় বড় প্রোগ্রামে যাব। ঈদের আগে খুব একটা ঝামেলা করতে চাচ্ছি না এখন। ঈদের পরে গ্র্যাজুয়ালি আমরা রিকশাগুলোকে মেইন রোড থেকে সরিয়ে দেব। এটা হচ্ছে আমাদের টার্গেট। রিকশা ঈদের পরে মূল সড়কে আসবে না, এই প্ল্যানে আমরা ডিএমপি পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে আগাব।’

অগ্রাধিকারে ১৮টি ওয়ার্ডের উন্নয়ন

শুনানির একেবারে শেষ পর্যায়ে উপস্থিত হন ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। প্রথমেই তিনি মশার সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। পরে সার্বিকভাবে তিনি বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নগরের জন্য তিনি চারটি কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। যেগুলোর ভিত্তিতে ন্যায্য নগর গড়ে তোলা হবে। এর মধ্যে প্রথমে পরিবেশ ঠিক করা, দ্বিতীয়ত জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত, তৃতীয়ত আবাসনে ন্যায্যতা এবং চতুর্থত ১৮টি ওয়ার্ডের অবকাঠামো উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করা হবে। নগরবাসীকে সেবা প্রদানে জনবলসংকটের বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড এনস স র কর মকর ত দ র এল ক ম হ ম মদ গণশ ন ন ক জ কর আম দ র এল ক য় সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি

নিয়োগপত্র নেই। এ কারণে চাকরির নিশ্চয়তাও নেই। দেওয়া হয় না পরিচয়পত্র। নেই কর্ম ঘণ্টার হিসাব। তবে রয়েছে মজুরিবৈষম্য ও জীবনের ঝুঁকি। এ চিত্র খুলনার বরফকলে কর্মরত বরফ শ্রমিকদের।

অবহেলিত ও অধিকার বঞ্চিত বরফকলের শ্রমিকেরা জানেন না মে দিবসের অর্থ। তারা শুধু এটুকু জানেন, কাজ থাকলে মজুরি পাবেন, অন্যথায় জুটবে না কিছু। খুলনার নতুন বাজার, রূপসা, শিপইয়ার্ড ও নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বরফ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে ঝুঁকি ও বৈষম্যের এই চিত্র।

সরেজমিনে জানা গেছে, লবণ পানি এবং অ্যামোনিয়া গ্যাসের সংমিশ্রণে বরফের প্রতিটি ক্যান তৈরি হয়। এ কাজে প্রচণ্ড ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার লিকেজ হলে মৃত্যুসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এছাড়াও অধিকাংশ সময় হাত-পা ভিজে ঠান্ডা থাকায় ক্ষত থেকে ইনফেকশন হয়। এর বাইরে বুকে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় ভোগেন এখানকার শ্রমিকেরা। পাতলা বরফে অনেক সময় হাত-পা কেটে যায়। কিন্তু মালিক বা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জন্য কোন ধরনের অ্যাপ্রোন বা নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করেন না। তবে দুর্ঘটনায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

আরো পড়ুন:

ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত

মহান মে দিবস: শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় সংস্কারে জোর সরকারের

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর নতুন বাজার, নিউমার্কেট, শিপইয়ার্ড, রায়েরমহল এবং রূপসা উপজেলার পূর্ব রূপসা এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫টি বরফকল রয়েছে। এর মধ্যে নতুন বাজার ও পূর্ব রূপসায় সর্বাধিক বরফকল রয়েছে। এসব কলে গড়ে দশ জন হিসেবে দেড় শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন।

রূপসার নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত ‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’ কাজ করেন মোহাম্মদ রাসেল হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি হলেও পরিবার নিয়ে রূপসার জাবুসা এলাকায় বসবাস করেন। দীর্ঘ সাত বছর ধরে এই বরফকলে কাজ করছেন তিনি। রাসেল জানান, তাদের মাসিক বেতন নেই। নেই নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র। মূলত উৎপাদনের উপর প্রতি পিস বরফের ক্যান অনুযায়ী ১২ টাকা হারে মজুরি পান। নামমাত্র এ মজুরিতে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে সংসার ঠিকমতো চলে না।

‘‘তিন বছর আগে নির্ধারণ করা মজুরি এখনো চলছে। লোকসানের অজুহাতে মালিকপক্ষ মজুরি বাড়াতে চান না। তাদের মতো শ্রমিকদের কোন বেতন-বোনাস নেই। নো ওয়ার্ক, নো পে অর্থাৎ কাজ থাকলে মজুরি আছে কাজ না থাকলে নেই। মালিকদের এ সিদ্ধান্ত না মানলে চাকরিও থাকে না।’’ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন রাসেল হোসেন।

একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মোঃ জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘গড়ে প্রতিমাসে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা মজুরি পাই। কিন্তু মাসিক খাবার খরচ প্রায় ৩ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া বাবদ ৩ হাজার টাকা চলে যায়।’’

তবে জাকির হোসেন ব্যাচেলর হওয়ায় কারখানার মধ্যেই থাকেন। বিয়ের পর এ কাজ করার ইচ্ছা নেই বলে জানান তিনি।

বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ-১-এ অপারেটর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন মোঃ সেলিম শেখ। তার জন্ম নড়াইলের লক্ষ্মীপাশা হলেও কর্মসংস্থানের কারণে রুপসার বাগমারা গ্রামে বসবাস করছেন। তিনি জানান, বর্তমান বয়স ৮৪। ২০ বছর বয়স থেকেই বরফ কারখানার সঙ্গে জড়িত। প্রথমে হেলপার হিসেবে ২৫০০ টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে অপারেটর হিসেবে মাসিক ১৫ হাজার টাকা পান। প্রতিদিন ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে কাজ শুরু করতে হয়। তবে সবসময় উৎপাদন না থাকলেও ২৪ ঘণ্টা কারখানায় থাকতে হয়। ছুটি পান না।

‘অ্যামোনিয়া গ্যাসের অতিরিক্ত চাপের কারণে সিলিন্ডার লিকেজ হলে মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে। তবে তিনি কখনো বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হননি বলে জানান তিনি।

‘মায়ের দোয়া আইস এন্ড কোল্ড স্টোরেজে’র শ্রমিক জাকারিয়া হাওলাদার বলেন, ‘‘চার বছর বরফকলে কাজ করছি। চাকরির ভবিষ্যৎ নেই। শ্রম দিতে পারলে মজুরি হয়, না হলে হয় না। নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র দেন না মালিকপক্ষ। বেতন বাড়ানোর কথা বললে তারা আমলে নেন না।’’

একই এলাকার ‘ব্রাইট অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’ কাজ করছেন মোঃ মুন্না গাজী ও মোঃ হাসান শেখ। তারা নগরীর জিন্নাপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। তারা দুজনেই মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতন পান। এর বাইরে তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই।

‘ব্রাইট অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’র ম্যানেজার আশিকুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করে জানান, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সুরক্ষায় উদাসীন। এখানে অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার মাঝেমধ্যেই লিক হয়। তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। প্রতিষ্ঠানটিতে ৫৩২টি আইস উৎপাদনের ক্যানের প্লান্ট রয়েছে। তবে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ ক্যান বরফ উৎপাদন হয়। ছয়জন শ্রমিক কাজ করে বলে জানান তিনি।

‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ- ২'র ম্যানেজার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘‘বরফের মূল ক্রেতা চিংড়ি ও সাদা মাছের ব্যবসায়ীরা। এর বাইরে গ্রীষ্ম মৌসুমে ভ্রাম্যমাণ ও দোকানে শরবত বিক্রেতারাও কারখানা থেকে বরফ কিনে নেন। গ্রীষ্ম মৌসুমের ৬ মাস চাহিদা থাকে এবং কিছুটা লাভের মুখ দেখা যায়। তবে শীত মৌসুমের ছয় মাস বরফের চাহিদা কম থাকে। তখন কারখানা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ও মজুরি দিয়ে লোকসান গুণতে হয়।’’

জামাল উদ্দিন স্বীকার করেন কারখানায় নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলেও তা এড়াতে কোন সরঞ্জাম নেই। তবে অপারেটরদের অ্যামোনিয়া গ্যাসের ঝুঁকি প্রতিরোধে মাক্স সরবরাহ করা হয়।

‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ-১'র মালিকপক্ষের প্রতিনিধি রিয়াদ-উল-জান্নাত সৈকত বলেন, ‘‘ব্যবসা খুব ভালো যাচ্ছে না। কখনো লাভ, কখনো লোকসান এভাবেই চলছে। গত বছর কারখানা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ৯ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।’’

তবে লাভ হলে শ্রমিক কর্মচারীদের মজুরি ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ বিষয়ে শ্রমিকদের সংগঠন রূপসা বেড়িবাঁধ হ্যান্ডলিং শ্রমজীবী ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ রিপন শেখ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত কয়েকটি বরফকলের ৪০ জন শ্রমিক তাদের ইউনিয়নের সদস্য। বিগত দেড় বছর আগে মজুরির সমস্যা নিয়ে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে দুই একজন শ্রমিক অভিযোগ করলে ইউনিয়নের মাধ্যমে সেটির সমাধান করে দেন তারা। কিন্তু বর্তমানে অভিযোগ নিয়ে কেউ আসে না।’’

বরফকলের শ্রমিকদের নিয়ে তারা মে দিবসের কর্মসূচি পালন করেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ