সুনামগঞ্জের শাল্লায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের সময় এক কৃষককে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এ জন্য বদলানো হয়েছে বাঁধটির পরিকল্পনা ও নকশায়। কৃষকদের অভিযোগ, ঠিকাদারের টাকা বাঁচানোর জন্যই এই কাজ করা হয়েছে। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা এসব বক্তব্য অস্বীকার করেছেন। 
ঘটনার শিকার পিকলু চন্দ্র তালুকদার উপজেলার বাহাড়া ইউনিয়নের ডুমরা গ্রামের বাসিন্দা। ওই গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের কৃষকরা জানান, শাল্লা উপজেলায় ৫৫৫৩ কিলোমিটার থেকে ৬৭৫৩ কিলোমিটার পর্যন্ত ছায়ার হাওর সাব-মার্সিবল বাঁধের সিসি ব্লক, বাঁধের কাজ ২০২৪ সালের ২৮ নভেম্বর শুরু হয়েছে। বাঁধটি সুলতানপুর সেতুর কাছে এসে নদীর পার থেকে প্রায় ২৩০ মিটার পশ্চিমে বাঁকা করে কৃষক পিকলু তালুকদারের জমির মাঝখান দিয়ে মাটি ফেলা হয়েছে। অথচ জমির পূর্বদিকে জমির পার থেকে প্রায় ২৫০ ফুট খাসজমি ও নদীর পারসংলগ্ন প্রায় ৫০ ফুট প্রশস্ত জায়গা রয়েছে। 
জানা গেছে, পিকলুর বাবা প্রবোধ চন্দ্র তালুকদার আট কেয়ার (২৮ শতাংশে কেয়ার, তিন কেয়ারে এক একর) জমি রেখে মারা যান। পরে ওই জমি সমানভাবে ভাগ হয় দুই ছেলে পিকলু ও কল্লোল তালুকদারের মধ্যে। তাদের জমির দুই কেয়ার পড়েছে ছায়ার হাওরের দুর্বিলা অংশে। হাওরের এই অংশে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধের কাজ গেল ৪-৫ বছর ধরেই ঢিমেতালে চলছে।
জমির ওপর বাঁধের মাটি ফেলায় জীবন-জীবিকা নিয়ে সংকটে পড়েছেন বলে জানান পিকলু চন্দ্র তালুকদার। তিনি প্রতিকার চেয়ে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও শাল্লার ইউএনও বরাবর অভিযোগ করেছেন। পিকলু তালুকদার বলেন, বাঁধটি তাঁর জমির কাছে এসেই খোড়ের (প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট গভীর গর্ত) দোহাই দিয়ে সোজা না রেখে, বাঁকা করে তাঁর জমির ওপর দিয়ে নিচ্ছে। তিনি 
বাধা দিলেই কর্মকর্তারা কাজ করা হবে না বলেন। তবে তিনি চলে যেতেই ঠিকাদারের লোকজন 
কাজ শুরু করে। তিনি লিখিত অভিযোগ দিলেও ঠিকাদার কাজ বন্ধ না করে তাদের মতো করেই করছেন। এই সামান্য জমিটুকুকেই নিজের সম্বল জানিয়ে পিকলু প্রশ্ন ছুড়ে দেন, এটি নিয়ে নিলে তিনি পরিবার নিয়ে কীভাবে চলবেন?
স্থানীয় কৃষকরাও মনে করেন, বাঁধটি বর্তমান জায়গা থেকে মাত্র ২০-২৫ ফুট পূর্বদিকে সরিয়ে নির্মাণ করলেই পিকলুর জমি ঠিক থাকতো, বাঁধটিও সোজা ও টেকসই হতো। কিছু মাটি ও ব্লক বেশি লাগবে, এতে ঠিকাদারের খরচ বেশি হবে– এ কারণেই প্রান্তিক এই কৃষকের সারাজীবনের ক্ষতি করে ফেলা হয়েছে। বিষয়টি কিছুতেই মানতে পারছেন না তারা।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এনলাজ ট্রেডার্সের পরিচালককে একাধিকবার কল দিলেও ধরেননি। সুনামগঞ্জ পাউবো’র (পওর বিভাগ-২) নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

ইমদাদুল হক বললেন, ‘এখানে বাঁধ আছে ৭-৮ বছর ধরে। আমরা কেবল বাঁধের ওপর আরও কিছু মাটি ও ব্লক দিয়ে শক্তিশালী করছি।’ ওই কৃষকের ক্ষতিপূরণ বিষয়ে তিনি বলেন, ডিপিপিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা নেই, কারণ এই বাঁধগুলো মানুষের জমিতে বহু বছর ধরেই আছে।
এর আগে কেউ এমন অভিযোগ করেনি উল্লেখ করে এই প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘বহু পিআইসি হয়েছে এখানে। তখন উনার (কৃষক পিকলু তালুকদার) জীবন-জীবিকা কোথায় ছিল, বাঁধ 
তো আমরা আজ জমির ওপর উঠাইনি। তিনি যদি মনে করেন বাধা সৃষ্টি করে ঠিকাদারের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিতে পারবেন, সেটা হবে না। তিনি কাজ করতে না দিলে আমরা করবো না, অন্য জায়গায় কাজ করবো।’
প্রকৌশলী ইমদাদুল হকের বক্তব্য জানিয়ে পিকলু তালুকদারের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগে আমার জমির ওপর সামান্য মাটি ফেলা হয়েছিল। আমরা বাধা দেওয়ার পর তারা কথা দিয়েছিল, আর মাটি পড়বে না। এখন বাঁধের বরাদ্দের টাকা বাঁচিয়ে লুটপাটের জন্যই নকশা বদলিয়ে আমার জমির ওপর দিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’
ইউএনও পিয়াস চন্দ্র দাস কৃষক পিকলু তালুকদারের অভিযোগ পেয়েছেন। তিনি পাউবোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে সেটি পাঠিয়েছেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

সেই রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যা ঘটেছিল

২৩ আগস্ট রাতে আমাদের গ্রেপ্তার

সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ,  ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামন, এই লেখক শেখ আবদুল আজিজ ও আবদুস সামাদ আজাদ—এই ৬ জনকে ১৯৭৫ সালের ২৩ আগস্ট একসঙ্গে গ্রেপ্তার করে আমাদের পল্টনে কন্ট্রোল রুমে একটি ভাঙা বাড়িতে নেওয়া হয়। আমরা বসা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি সৈয়দ আহমদকে মুক্তি দেওয়ার জন্য জনৈক কর্নেল ফারুককে অনুরোধ করেছিলেন।

কর্নেল ফারুক উত্তরে বলেছিলেন, ‘আপনাদের সবার ট্রায়াল এখানে হবে।’ আমাদের উদ্দেশ করে বলা হয়েছিল, ‘ইউ উইল হ্যাভ টু জাস্টিফাই ইয়োর করাপশন।’ এ কথা শুনে আমরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। ভাবলাম, এটা কোর্ট নয়, আদালত নয়, কীভাবে এখানে বিচার হবে? এই পরিস্থিতিতে আমাদের পরস্পরের কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
ইতিমধ্যে মেজর ডালিম এসে এইচ এম কামারুজ্জামানের সঙ্গে আস্তে আস্তে কথা বলতে লাগল। কামরুজ্জামান ডালিমকে বলেছিল, ‘এ রকম তো কথা ছিল না!’ তারপর ডালিম চলে গেল। আমাদের সামনে আমাদের সহানুভূতিশীল পুলিশ কর্মচারীরা দৌড়াদৌড়ি করছিল। কিছু সময় পর তারা এসে বলল, ‘আপনারা এই গাড়ি ও মাইক্রোবাসে তাড়াতাড়ি ওঠেন; সেন্ট্রাল জেলে যেতে হবে।’ আমরা গাড়িতে উঠলাম এবং ভাবলাম, বেঁচে গেলাম। সেন্ট্রাল জেলে প্রবেশ করলাম। আমাদের নতুন জেলে থাকার জায়গা করে দেওয়া হলো।

শেখ আবদুল আজিজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ