মাগুরার শিশুর ধর্ষণ ও হত্যার কি প্রতিকার হবে
Published: 14th, March 2025 GMT
মাগুরার শিশুটিকে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে মারা গেল সে। আশা করি, এই ধর্ষণ আর হত্যার বিচার দ্রুত হবে। কারণ, এ ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যম সরব ছিল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভও হয়েছে। কিন্তু এটাও বলতে হয়, আরও অগণিত ঘটনা চাপা পড়ে থাকবে সমাজের অন্ধকার রন্ধ্রে। প্রতিদিন এমন কোনো না কোনো ঘটনা ঘটে যাবে আমরা জানবও না। আরও কোনো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের নিচে চাপা পড়বে শিশুর প্রতি নির্মমতার আরও খবর। কেন ধর্ষণের শিকার হয় এত ছোট শিশু? কেন যাঁদের আদরে-স্নেহে বেড়ে ওঠার কথা, তাঁদের হাতে সর্বনাশ ঘটে শিশুর?
উন্নয়নশীল দেশে যৌন সহিংসতা বৃদ্ধির কারণ ও প্রতিকারউন্নয়নশীল দেশে, বিশেষ করে শিশু ও নারীদের প্রতি যৌন সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়া একটি জটিল সামাজিক সমস্যা, যার পেছনে বহু কারণ কাজ করে। জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের গবেষণায় এই সমস্যার নানা দিক উঠে এসেছে। নিচে কয়েকটি প্রধান কারণ তুলে ধরা হলো—
১.
২. আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা: ক. দুর্বল আইন ও প্রয়োগের অভাব: অনেক দেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইন দুর্বল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হয় দুর্নীতিগ্রস্ত, নয়তো অপরাধ দমনে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়। খ. বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা: মামলার নিষ্পত্তি হতে দীর্ঘ সময় লাগে, অপরাধীরা রাজনৈতিক প্রভাব বা দুর্নীতির কারণে শাস্তি এড়িয়ে যায়।
৩. অর্থনৈতিক কারণ: ক. দারিদ্র্য ও বেকারত্ব: অর্থনৈতিক সংকট ও হতাশা পারিবারিক সহিংসতা এবং অপরাধপ্রবণতা বাড়িয়ে তোলে। খ. মানব পাচার ও যৌন শোষণ: দরিদ্র নারী ও শিশুরা পাচার ও যৌন শোষণের শিকার হয়, যা অপরাধের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটি কী বলে গেল১৬ ঘণ্টা আগে৪. গণমাধ্যম ও প্রযুক্তির প্রভাব: ক. পর্নোগ্রাফি ও নারীবিদ্বেষী কনটেন্ট: অবাধে সহিংস ও অসম্মতিসূচক যৌন কনটেন্টের প্রসার মানুষকে বাস্তব জীবনে নিষ্ঠুর করে তুলতে পারে। খ. সোশ্যাল মিডিয়া ও ব্ল্যাকমেল: প্রযুক্তি ব্যবহার করে হুমকি, প্রতারণা, ব্ল্যাকমেল ও সাইবার নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে।
কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায়? গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। আজকের দিনে প্রতিটি কিশোর ও যুবকের হাতে মোবাইল, যেখানে সহজেই পাওয়া যায় অশ্লীল কনটেন্ট। পর্নোগ্রাফির বিস্তার কেবলই একটি বিনোদনমাধ্যম নয় বরং এটি অপরাধপ্রবণতা উসকে দিচ্ছে। নানা ধরনের পর্নোসাইট, ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামের রিল, টিকটক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের সমাজে যৌন প্রবৃত্তিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে, যেখানে নারীদের শুধু ভোগের বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। সরকার পর্নোসাইটগুলোর ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণ আনতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অশ্লীল কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে পৃথক টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। প্রযুক্তিগতভাবে ফিল্টারিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করা প্রয়োজন।
কী করণীয়১. আইনি ও নীতিগত পদক্ষেপ: ক. কঠোর আইন ও দ্রুত বিচার: দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষণের বিচার নিশ্চিত করা ও শাস্তি কার্যকর করা। খ. ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা ও সহায়তা: নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র, পুনর্বাসন ও বিনা মূল্যে আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা। গ. বিচার ও পুলিশ প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধি: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লিঙ্গ-সংবেদনশীল প্রশিক্ষণ দেওয়া।
২. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন: ক. শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি: স্কুল, পরিবার ও সমাজে লিঙ্গসমতা ও যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা। খ. কমিউনিটি নজরদারি: স্থানীয় পর্যায়ে অপরাধ ঠেকাতে সক্রিয় সামাজিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
৩. অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন: ক. নারীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি: অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নারীদের সহিংসতার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে পারে। খ. সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি: ভুক্তভোগী ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান।
৪. প্রযুক্তি ও গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ: ক. ডিজিটাল নীতিমালা শক্তিশালীকরণ: অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে নারীবিদ্বেষী ও সহিংস কনটেন্টের বিস্তার রোধ করা। খ. নিরাপদ অভিযোগ ব্যবস্থা: ভুক্তভোগীরা যাতে সহজে ও গোপনে অভিযোগ করতে পারে, তার ব্যবস্থা করা।
অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা১. ভারতের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট ও নির্ভয়া ফান্ড: ২০১২ দিল্লি গণধর্ষণ-কাণ্ডের (নির্ভয়া কেস) পর ভারত দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালু করে। নারীদের সুরক্ষায় নির্ভয়া ফান্ড গঠন করা হয়, যার মাধ্যমে জরুরি সহায়তা ব্যবস্থা, আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ ও ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার তৈরি করা হয়। এখন অনেক মামলার নিষ্পত্তি কয়েক মাসের মধ্যেই হচ্ছে, যা আগে বছরের পর বছর লেগে যেত। মানুষ আগের চেয়ে বেশি অভিযোগ দায়ের করছে, কারণ সচেতনতা বেড়েছে। তবে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, বিশেষ করে নির্বিচার দোষীদের শাস্তি না হওয়া বড় সমস্যা।
২. রুয়ান্ডার গণহত্যার পর নারীবান্ধব সংস্কার: ১৯৯৪ সালের গণহত্যার পর, রুয়ান্ডা নারী নির্যাতন ঠেকাতে কঠোর আইন ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা (জিবিভি) কমিটি গঠন করে। নারীদের সংসদে ৬০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা হয়, যা নীতি নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে। কঠোর আইন ও লিঙ্গসচেতন নীতি থাকায় ধর্ষণের হার অনেক কমেছে। রুয়ান্ডা এখন নারীর ক্ষমতায়নের মডেল হিসেবে পরিচিত।
৩. সুইডেনের সম্মতিভিত্তিক ধর্ষণ আইন: ২০১৮ সালে সুইডেন একটি নতুন আইন পাস করে, যেখানে বলা হয় স্পষ্ট সম্মতি ছাড়া শারীরিক সম্পর্ক ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে। সরকার জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালায়, যাতে সবাই বুঝতে পারে সম্মতি কাকে বলে। ধর্ষণের মামলা আগের চেয়ে বেশি দায়ের করা হচ্ছে, কারণ ভুক্তভোগীদের আর প্রমাণ করতে হচ্ছে না যে তারা বাধা দিয়েছিল। এই নীতিটি শাস্তির চেয়ে প্রতিরোধের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়।
৪. দক্ষিণ আফ্রিকার থুথুজেলা কেয়ার সেন্টার (টিসিসি): দক্ষিণ আফ্রিকায় ধর্ষণের হার বিশ্বের অন্যতম বেশি, তাই সরকার থুথুজেলা কেয়ার সেন্টার চালু করে। এই কেন্দ্রগুলোয় মেডিকেল, আইনি ও মানসিক সহায়তা একসঙ্গে পাওয়া যায়, ফলে ভুক্তভোগীদের আলাদা জায়গায় যেতে হয় না। ধর্ষণের শিকার মানুষ দ্রুত চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা পাচ্ছে। শাস্তির হার ৪ থেকে বেড়ে ৭০ শতাংশ হয়েছে, কারণ ভুক্তভোগীরা সহজেই ন্যায়বিচার পাচ্ছে।
শুধু কঠোর শাস্তি দিলেই হবে নাবাংলাদেশে ধর্ষণের জন্য মৃত্যুদণ্ড ও কমিউনিটি পুলিশিং রয়েছে। ২০২০ সালে দেশে ধর্ষণের ঘটনা বাড়তে থাকায় সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংশোধন এনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে।
কমিউনিটি পুলিশিং চালু করা হয়, যাতে স্থানীয় মানুষ সহজেই অভিযোগ করতে পারে। কঠোর শাস্তির কারণে কিছুটা ভীতি তৈরি হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শাস্তির চেয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বেশি দরকার। নারীবাদী সংগঠনগুলো বলছে, শুধু কঠোর শাস্তি দিলেই হবে না, বরং পুলিশের প্রশিক্ষণ ও ভুক্তভোগীদের সহায়তাব্যবস্থাও উন্নত করতে হবে।
আমাদের এ বিষয়ে কঠোর আইন ও দ্রুত বিচারের মাধ্যমে ধর্ষণের শাস্তি দ্রুত কার্যকর করতে হবে। পরিবার থেকে স্কুল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান—সর্বত্র সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে, যেন অপরাধী বুঝতে পারে, সে সমাজে লুকিয়ে থাকতে পারবে না। এ সমস্যার সমাধান শুধু কঠোর শাস্তি দিয়ে হবে না, বরং সামাজিক মূল্যবোধ, শিক্ষা, আইনের কার্যকর প্রয়োগ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমন্বিত প্রচেষ্টায় একটি নিরাপদ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। সময় এসেছে সবাই মিলে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার।
আমিমুল এহসান স্থপতি-নগরবিদ
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর ব যবস থ ক র যকর কনট ন ট সহ য ত সমস য সরক র অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
ভাঙা বেড়িবাঁধ, আমন নিয়ে দুশ্চিন্তায় মাতারবাড়ীর চাষিরা
চলতি মৌসুমে আমন চাষ করার জন্য এক ব্যক্তির এক একর জমি ১৮ হাজার টাকায় ইজারা নেন কক্সবাজারের মহেশখালীর সাগর উপকূলীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়নের নয়াপাড়ার কৃষক জাকের হোছাইন। এই মাসের শেষের দিকে আমন চাষ শুরু করার কথা তাঁর। তবে সাগরে বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে বর্ষায় ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কায় আমনের চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কেবল জাকের হোছাইন নন, তাঁর মতো একইভাবে আমনের চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মাতারবাড়ী ইউনিয়নের অন্তত ২০০ চাষি।
কুহেলিয়া নদীর পশ্চিমে আর বঙ্গোপসাগরের পূর্বে জেগে ওঠা প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটার চর নিয়ে মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউনিয়ন। এর পশ্চিম পাশে রয়েছে আট কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, যার মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে এক দশক ধরে। ওই অংশ দিয়ে আশপাশের লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়া ঠেকাতে সর্বশেষ চার বছর আগে বসানো হয়েছিল জিও টিউব। তবে গত ২৯ ও ৩০ মে নিম্নচাপের প্রভাবে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে জিও টিউব বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বেড়িবাঁধের ওই ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি তিন দফায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে অন্তত ১০টি কাঁচা বসতঘর। স্থানীয় মানুষের চোখে ঘুম নেই। চাষিরাও আমন ধানের চাষাবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।সরওয়ার কামাল, সদস্য, মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদবেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি ইউনিয়নের ষাইটপাড়া এলাকায়। গত শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা বেড়িবাঁধের পাশে বসানো জিও টিউব সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। সাগরের পানি ঢেউয়ের সঙ্গে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ উপচে পাশের ফসলি জমিতে ঢুকে পড়ছে। সেখানে স্থানীয় মাঝের ডেইল এলাকার বাসিন্দা আবদুল কাদেরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, বেড়িবাঁধের জিও টিউব বিলীন হওয়ার দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা খুবই উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আমনচাষিরা চাষাবাদ করতে পারবেন কি না তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মানুষ তাঁদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা উচিত।
মাতারবাড়ী ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুরুল হোছাইন মোহাম্মদ তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে ষাইটপাড়াসহ আশপাশের চারটি গ্রামে জলাবদ্ধতার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে এসব এলাকার অন্তত ৮০ একর জমিতে আমন চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সরওয়ার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্প্রতি তিন দফায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে অন্তত ১০টি কাঁচা বসতঘর। স্থানীয় মানুষের চোখে ঘুম নেই। চাষিরাও আমন ধানের চাষাবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।’ ইউপি সদস্য সরওয়ার কামাল আরও বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই এলাকার মানুষের উদ্বেগ বাড়ে। অথচ ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কারের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।
মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি নিম্নচাপের প্রভাবে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় অন্তত ১ হাজার ৬০০ মিটারের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতত বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি টেকানোর জন্য ভাঙা বেড়িবাঁধের ওপর জিও টিউব বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জামাল মুর্শিদ প্রথম আলোকে বলেন, মাতারবাড়ী ও ধলঘাট ইউনিয়নে স্থায়ী বাঁধের জন্য প্রায় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় চারপাশে ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার সুপার ডাইকের আদলে স্থায়ী বেড়িবাঁধ ও ৭টি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া খনন করা হবে সাড়ে ১৯ কিলোমিটার কুহেলিয়া নদী। গত এপ্রিলে প্রকল্প প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।