পানামা সরকার বলেছে, দেশের সার্বভৌমত্ব ও পানামা খালের সুরক্ষায় তারা দৃঢ় অবস্থানে থাকবে। কৌশলগত এ পানিপথের নিয়ন্ত্রণ নিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন উপায় খুঁজছেন বলে খবর প্রকাশের পর গতকাল বৃহস্পতিবার পানামা সরকার এ কথা বলেছে।

দুই মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পানামাতে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি বাড়াতে উপায় খোঁজার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে হোয়াইট হাউস। যুক্তরাষ্ট্র ও পানামার মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার থেকে শুরু করে দখল করা পর্যন্ত বিভিন্ন উপায়গুলো পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগনের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছিল এএফপি, তবে তাৎক্ষণিক সাড়া পাওয়া যায়নি।

পানামার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হ্যাভিয়ার মার্তিনেজ-আচা সাংবাদিকদের বলেন, ‘এসব বিবৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শুধু বলতে চাই, নিজেদের ভূখণ্ড, খাল ও সার্বভৌমত্বের সুরক্ষায় পানামা দৃঢ় অবস্থান বজায় রেখেছে।’

হ্যাভিয়ার মার্তিনেজ-আচা আরও বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলছি, এ খাল পানামার মানুষের এবং তা তাদেরই থাকবে।’

এনবিসি নিউজের ওই প্রতিবেদন মধ্য আমেরিকার দেশ পানামাকে হতবাক করে দিয়েছে। ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে দেশটিতে কোনো মার্কিন সেনা নেই। যুক্তরাষ্ট্র পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার পর ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সবশেষ মার্কিন সেনা পানামা ছেড়েছে। পানামা খাল নির্মাণ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

এক দশক আগে পানামার স্বৈরশাসক ম্যানুয়েল নোরিয়েগাকে আটক করতে পানামায় অভিযান চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের অভিযোগ, নোরিয়েগা মানব পাচারের দায়ে অভিযুক্ত।

সম্প্রতি ট্রাম্পের পানামা খাল দখল করে নেওয়ার হুমকিকে কেন্দ্র করে আবারও যুক্তরাষ্ট্র ও পানামার মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। ট্রাম্প বলেন, প্রয়োজনে জোর করে হলেও পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেবে যুক্তরাষ্ট্র।

খালের বন্দর পরিচালনাকারী হংকংয়ের একটি কোম্পানিকে সরে যেতে চাপ দেওয়াসহ ট্রাম্পকে বেশ কিছু সুবিধা দিয়েছে পানামা। হংকংয়ের ওই কোম্পানি কাজ করার কারণে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, আন্তমহাসাগরীয় পানিপথটিতে চীন প্রভাব বিস্তার করছে। ইতিমধ্যে হংকংয়ের কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের কাছে বন্দরটি বিক্রি করে দিয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা

হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলেয়ে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।

চা বাগানে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। এর বিনিময়ে মজুরি পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাগানে নিয়মিত এই মজুরিও দেওয়া হয় না।

শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করতে হবে। বর্তমানে যে মজুরি পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।

আরো পড়ুন:

বৈষম্য কেন? নারী শ্রমিকেরা পান না সমান মজুরি

ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা

সরেজমিনে কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু-বেলা পেটভরে খেতে পারেন না।

শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে বৈঠক হয়েছে। সে সময় ৮ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।’’

শ্রমিকদের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই টাকায় চলা যায় না। দেশের কোথাও এতো সস্তা শ্রমের দাম নেই। বর্তমানে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় করেন, একজন  রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে একজন চা শ্রমিক পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এজন্য তাকে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়।’’

চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া, শ্রমিকদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’

ঢাকা/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ