রোহিঙ্গাদের পূর্ণাঙ্গ রেশন দেওয়ার আহ্বান খানি বাংলাদেশের
Published: 16th, March 2025 GMT
তহবিল সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ নিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ খাদ্য রেশন ও প্রয়োজনীয় সেবা পুনর্বহাল করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি বাংলাদেশ)। সংগঠনটি জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত মানবিক সংকটকে আরও গভীর করতে পারে। এই সংকট দূরীকরণে খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পাশাপাশি যথাযথ পুনর্বাসনের মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কাছে পিটিশন দাখিল করেছে ১১০ এর অধিক প্রতিষ্ঠান।
রোববার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে খানি বাংলাদেশ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফিয়ান ইন্দোনেশিয়া, ফিয়ান সুইজারল্যান্ড, এডাব, এএলআরডি, সিএসআরএল, একশনএইড অস্ট্রেলিয়া, একশনএইড বাংলাদেশ, বারসিক, কোস্ট ফাউন্ডেশন, কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি এলায়েন্স, ইনসিডিন বাংলাদেশ, এনজিও ফোরাম অন এডিবিসহ মানবাধিকার, খাদ্য অধিকার ইত্যাদি নানা ইস্যুতে কর্মরত আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক, জাতীয় এবং স্থানীয় ১১০ এর অধিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি এ পিটিশনে সই করেছেন।
এতে বলা হয়, সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রতিষ্ঠান বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, জরুরিভাবে পর্যাপ্ত অর্থায়ন না পেলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর খাদ্য রেশন মাথাপিছু মাসিক ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নামিয়ে আনতে হবে। আকস্মিক এই সহায়তা হ্রাসের বিষয়ে খানি বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং এর ফলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিদ্যমান মানবিক সংকট গভীরতর হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে দাখিল করা পিটিশনে বলা হয়, তহবিল ঘাটতি মোকাবিলা করতে, প্রয়োজনীয় সেবাগুলো পুনরায় চালু করতে এবং দীর্ঘমেয়াদি, টেকসই সহায়তা নিশ্চিত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এটি এমন একটি সময়ে ঘটছে যখন শরণার্থীরা ইতোমধ্যেই একটি ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন।
আরও বলা হয়, রোহিঙ্গারা খাদ্যের জন্য সম্পূর্ণরূপে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। যার কারণে এই সহায়তা বজায় রাখা শুধু প্রয়োজনীয়ই নয় বরং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন অপুষ্টি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ২০১৭ এর পর ২০২৫ সালে এসে ক্যাম্পগুলোতে সর্বোচ্চ অপুষ্টি দেখা দিয়েছে। শিশুদের মধ্যে পুষ্টিহীনতার হার ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে এবং গুরুতর তীব্র পুষ্টিহীনতার ঘটনা ২০২৪ সালের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছর জানুয়ারিতে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, এরপর ফেব্রুয়ারিতে আরও ২৭ শতাংশ বেড়েছে।
রোহিঙ্গাদের পূর্ণ মানবাধিকার নিশ্চিত করতে, বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে হবে যতদিন না তারা এই শিবিরে আছেন। যদি এমন পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিবিরে পাচার, গ্রেপ্তার বা সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় জীবনহানির মতো ভয়ংকর ঘটনা ঘটতে পারে, যা ক্যাম্পের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যেও অস্থিরতা সৃষ্টি করবে বলে জানিয়েছে খানি বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ।
তিনি আরও বলেন, যথাযথ খাদ্য সহায়তা নিশ্চিতকরণে পদক্ষেপ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদী কৌশল গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
খানি বাংলাদেশ সহসভাপতি রেজাউল করিম সিদ্দিকি রানা বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ রোহিঙ্গারা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। খাদ্য সহায়তা সীমিত করার অর্থ হবে ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি মহা প্রতারণা।
কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরামের সহসভাপতি এবং কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সব ত্রাণ সহায়তার মূল শর্ত হলো খাদ্য। যদি কেউ খেতে না পায়, তাহলে আমরা যতই সুরক্ষা, শিক্ষা বা অন্য সহায়তা দেই না কেন, সেগুলোর কোনো প্রভাব পড়বে না। খাদ্যের পর্যাপ্ততা না থাকলে রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে, শৃঙ্খলা ভেঙে হোস্ট কমিউনিটিতে প্রবেশের আশঙ্কা তৈরি হবে এবং এর ফলে শ্রমবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যদি তারা বাইরে গিয়ে কম পারিশ্রমিকে কাজ শুরু করে, তাহলে হোস্ট কমিউনিটির শ্রমিকরা তাদের কর্মসংস্থান হারাবে। ফলে সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর জনগ ষ ঠ র পদক ষ প ন সহ য ত
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’