তহবিল সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ নিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ খাদ্য রেশন ও প্রয়োজনীয় সেবা পুনর্বহাল করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি বাংলাদেশ)। সংগঠনটি জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত মানবিক সংকটকে আরও গভীর করতে পারে। এই সংকট দূরীকরণে খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পাশাপাশি যথাযথ পুনর্বাসনের মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কাছে পিটিশন দাখিল করেছে ১১০ এর অধিক প্রতিষ্ঠান।

রোববার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে খানি বাংলাদেশ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফিয়ান ইন্দোনেশিয়া, ফিয়ান সুইজারল্যান্ড, এডাব, এএলআরডি, সিএসআরএল, একশনএইড অস্ট্রেলিয়া, একশনএইড বাংলাদেশ, বারসিক, কোস্ট ফাউন্ডেশন, কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি এলায়েন্স, ইনসিডিন বাংলাদেশ, এনজিও ফোরাম অন এডিবিসহ মানবাধিকার, খাদ্য অধিকার ইত্যাদি নানা ইস্যুতে কর্মরত আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক, জাতীয় এবং স্থানীয় ১১০ এর অধিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি এ পিটিশনে সই করেছেন। 

এতে বলা হয়, সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রতিষ্ঠান বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, জরুরিভাবে পর্যাপ্ত অর্থায়ন না পেলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর খাদ্য রেশন মাথাপিছু মাসিক ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নামিয়ে আনতে হবে। আকস্মিক এই সহায়তা হ্রাসের বিষয়ে খানি বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং এর ফলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিদ্যমান মানবিক সংকট গভীরতর হতে পারে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে দাখিল করা পিটিশনে বলা হয়, তহবিল ঘাটতি মোকাবিলা করতে, প্রয়োজনীয় সেবাগুলো পুনরায় চালু করতে এবং দীর্ঘমেয়াদি, টেকসই সহায়তা নিশ্চিত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এটি এমন একটি সময়ে ঘটছে যখন শরণার্থীরা ইতোমধ্যেই একটি ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন।

আরও বলা হয়, রোহিঙ্গারা খাদ্যের জন্য সম্পূর্ণরূপে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। যার কারণে এই সহায়তা বজায় রাখা শুধু প্রয়োজনীয়ই নয় বরং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন অপুষ্টি প্রতিনিয়ত বাড়ছে।  ২০১৭ এর পর ২০২৫ সালে এসে ক্যাম্পগুলোতে সর্বোচ্চ অপুষ্টি দেখা দিয়েছে। শিশুদের মধ্যে পুষ্টিহীনতার হার ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে এবং গুরুতর তীব্র পুষ্টিহীনতার ঘটনা ২০২৪ সালের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছর জানুয়ারিতে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, এরপর ফেব্রুয়ারিতে আরও ২৭ শতাংশ বেড়েছে। 

রোহিঙ্গাদের পূর্ণ মানবাধিকার নিশ্চিত করতে, বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে হবে যতদিন না তারা এই শিবিরে আছেন। যদি এমন পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিবিরে পাচার, গ্রেপ্তার বা সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় জীবনহানির মতো ভয়ংকর ঘটনা ঘটতে পারে, যা ক্যাম্পের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যেও অস্থিরতা সৃষ্টি করবে বলে জানিয়েছে খানি বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ। 

তিনি আরও বলেন, যথাযথ খাদ্য সহায়তা নিশ্চিতকরণে পদক্ষেপ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদী কৌশল গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। 

খানি বাংলাদেশ সহসভাপতি রেজাউল করিম সিদ্দিকি রানা বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ রোহিঙ্গারা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। খাদ্য সহায়তা সীমিত করার অর্থ হবে ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি মহা প্রতারণা।

কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরামের সহসভাপতি এবং কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সব ত্রাণ সহায়তার মূল শর্ত হলো খাদ্য। যদি কেউ খেতে না পায়, তাহলে আমরা যতই সুরক্ষা, শিক্ষা বা অন্য সহায়তা দেই না কেন, সেগুলোর কোনো প্রভাব পড়বে না। খাদ্যের পর্যাপ্ততা না থাকলে রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে, শৃঙ্খলা ভেঙে হোস্ট কমিউনিটিতে প্রবেশের আশঙ্কা তৈরি হবে এবং এর ফলে শ্রমবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যদি তারা বাইরে গিয়ে কম পারিশ্রমিকে কাজ শুরু করে, তাহলে হোস্ট কমিউনিটির শ্রমিকরা তাদের কর্মসংস্থান হারাবে। ফলে সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর জনগ ষ ঠ র পদক ষ প ন সহ য ত

এছাড়াও পড়ুন:

চেন্নাইয়ের বিদায়, অবসরের ইঙ্গিত দিলেন ধোনি!

আইপিএল ২০২৫-এর প্লে-অফে জায়গা হলো না চেন্নাই সুপার কিংসের। ঘরের মাঠ এম চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে পাঞ্জাব কিংসের কাছে ৪ উইকেটে হেরে এবারের আসর থেকে ছিটকে গেছে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর শুধু চেন্নাইয়ের বিদায়ই নয়, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’ ধোনি। শুরু হয়েছে জোর গুঞ্জন—এটাই কি তার শেষ আইপিএল?

ম্যাচ শুরুর আগেই টসের সময় ধোনিকে ঘিরে তৈরি হয় রহস্য। ধারাভাষ্যকার ড্যানি মরিসনের সরাসরি প্রশ্ন ছিল, ধোনি কি আগামী মৌসুমেও আইপিএলে দেখা যাবে? জবাবে হেসে ধোনি বলেন, ‘আমি তো জানি না পরের ম্যাচেই খেলব কি না।’ এই মন্তব্যেই ধোনির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। যদিও ম্যাচ শেষে নিজের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি ধোনি। তাকেও সে ব্যাপারে আর প্রশ্ন করেননি সঞ্চালক।

ধোনির মন্তব্যে সাবেক অস্ট্রেলিয়ান উইকেটকিপার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট বলেন, ‘ধোনি একজন চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি। তার আর কিছু প্রমাণের নেই। সম্ভবত এবার সরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। যদিও ভক্তদের জন্য তা কষ্টদায়ক হবে।’

 চেন্নাই প্রথমে ব্যাট করে ১৯১ রান তোলে। স্যাম কারানের ৮৮ রানের ইনিংস ছাড়া ব্যাট হাতে কেউই তেমন জ্বলে উঠতে পারেননি। শেষ দিকে যুজবেন্দ্র চাহালের হ্যাটট্রিকে মাত্র ৪ বল বাকি থাকতে গুটিয়ে যায় ইনিংস। চাহাল ৪ উইকেট নেন, জানসেন ও আর্শদীপ নেন ২টি করে।

জবাবে পাঞ্জাবের হয়ে ঝড়ো সূচনা এনে দেন প্রিয়াংশ আর্য ও প্রভসিমরান সিং। প্রভসিমরান খেলেন ৩৬ বলে ৫৪ রানের দারুণ ইনিংস। এরপর শ্রেয়াস আইয়ারের ৭২ রানের অনবদ্য ইনিংস এবং শশাঙ্ক সিংয়ের শেষের ২৩ রানের ক্যামিওতে দুই বল বাকি থাকতেই জয় তুলে নেয় পাঞ্জাব। এই জয়ে তারা উঠে এসেছে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ