জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আলী আহসান জুনায়েদের নেতৃত্বে এপ্রিলে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে নতুন প্ল্যাটফর্ম।

জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ না দেওয়া জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া অংশ নতুন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হচ্ছেন। ভবিষ্যতে এই প্ল্যাটফর্ম রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।

রবিবার (১৬ মার্চ) আলী আহসান জুনায়েদ তার ফেসবুক প্রোফাইলে নতুন প্ল্যাটফর্ম গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। কার্যক্রম নিয়ে এপ্রিলে আত্মপ্রকাশ করতে করবে তাদের এই প্ল্যাটফর্ম, যাকে শক্তিশালী হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি।

এনসিপি গঠনের পরই এমন একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম আসার কথা শোনা যাচ্ছিল। অবশেষে জুনায়েদের ঘোষণা থেকে বিষয়টি পরিষ্কার হলো।

অভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সাবেক সভাপতি জুনায়েদ, রাফে সালমান রিফাত, শরফুদ্দিনসহ অন্তত ৩০ নেতা যোগ দেন জাতীয় নাগরিক কমিটিতে। 

শিবিরের সাবেক নেতারা আলী আহসান জুনায়েদকে এনসিপির সদস্য সচিব পদে চেয়েছিলেন। ছাত্রশক্তি, ছাত্র অধিকার, ছাত্রলীগের পক্ষত্যাগী এবং বাম সংগঠন থেকে আসা নেতারাও নিজ নিজ বলয় থেকে শীর্ষ পদ চেয়েছিলেন।

তখন বলাবলি হয়েছে, পদ-পদবি নিয়ে নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহদের সঙ্গে বিরোধ সাবেক শিবির নেতারা এনসিপিতে যোগ দেননি। তারা এখন নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হচ্ছেন।

এনসিপি গঠনের পর জাতীয় নাগরিক কমিটি বা জনাক বর্তমানে নিষ্ক্রিয়। এই কমিটির ব্যানারে এখন কোনো কার্যক্রম দেখা যায় না। 

যোগ না দেওয়া নেতাদের ভাষ্য- আওয়ামী লীগ আমলে শিবির হত্যাকে যেভাবে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল, নতুন দলেও শুধু অতীতে শিবির সংশ্লিষ্টতার কারণে নেতৃত্বে আসতে দেওয়া হয়নি। ট্যাগিংয়ের রাজনীতি অব্যাহত রাখা হয়েছে। 

জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আলী আহসান জুনায়েদ রবিবার রাতে তার ফেসবুক প্রোফাইলে নতুন প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা দেন।

এই অবস্থায় নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম নিয়ে জুনায়েদের ফেসবুক পোস্টের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

‘আসসালামু আলাইকুম’ সম্বোধন করে জুনায়েদ লিখেছেন, “৩৬শে জুলাই ফতহে গণভবনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা হলেও, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বহু মানুষের কাছে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।”

“পিলখানা, শাপলা ও জুলাই গণহত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধের বিচার, ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ, দুর্নীতিমুক্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণ, ধর্মবিদ্বেষ ও ইসলামোফোবিয়ামুক্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গঠন, ফ্যাসিবাদী কাঠামোর সম্পূর্ণ বিলোপ এবং আধিপত্যবাদের বিপক্ষে কার্যকর অবস্থান- এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আজ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গৌণ হয়ে পড়েছে।”

জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও সম্মান দেওয়ার কাজ এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে বলে মন্তব্য করে জুনায়েদ লিখেছেন, “এই পরিস্থিতিতে, আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা গণঅভ্যুত্থানের দাবিগুলো প্রকৃতই বাস্তবায়ন করতে চাই।”

“৩৬শে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশে যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছে, তা পূর্ণতা দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সমাজের সর্বস্তরে যোগ্য ও নৈতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, সামাজিক সুবিচার ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিতকরণ, সামাজিক নিরাপত্তা বিধান, বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার মূলোৎপাটন এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে এই বিপ্লব পরিপূর্ণতা পাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”

ফেসবুক পোস্টে জুনায়েদ লিখেছেন, “আমরা বিশ্বাস করি, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সামাজিক চুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুনর্গঠন সম্ভব।”

অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ পুনর্গঠনের এই উদ্যোগে সবার সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি লিখেছেন, “আসুন, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ গঠনের এই সংগ্রামে শামিল হই।”

নতুন প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে কমন্টে অংশ গুগল ফর্ম জুড়ে দিয়েছেন জুনায়েদ।

পোস্টের শেষে জুনায়েদ নিজেকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ শক্তির নতুন প্ল্যাটফর্মের প্রধান উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ল ই গণঅভ য ত থ ন আহস ন জ ন য় দ ফ সব ক প র জন ত ক ন র পর ইসল ম এনস প গঠন র

এছাড়াও পড়ুন:

জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না

জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ‘মুহাম্মদ ইউনূস: রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে সাক্ষাৎকারটি গতকাল রোববার আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে  কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।

আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে।

লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে– তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে।

তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এই আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান, তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তাঁর জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে আগাতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
  • মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ
  • বিদ্যালয়ের ১৮টি গাছ বিক্রি করলেন প্রধান শিক্ষক 
  • কর্ণাটকে ক্রিকেট খেলার সময় বচসা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা
  • দেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর দাবি 
  • রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডোর’ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব
  • কানাডায় আবারও লিবারেল পার্টির সরকার গঠনের আভাস
  • আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে
  • জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না
  • আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে: ড. ইউনূস