চাঁদপুর থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে এমভি বোগদাদীয়া-৮ লঞ্চে এক নবজাতকের জন্ম হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় সাদিয়া আক্তার নামের এক যাত্রী মেয়েসন্তানের জন্ম দেন।

ওই নবজাতক এমভি বোগদাদীয়া-৮–এ আজীবন বিনা মূল্যে যাতায়াতের সুবিধা পাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন লঞ্চটির মালিক হামিদুল্লাহ সুমন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন লঞ্চের কেরানি মো.

দীপু।

সাদিয়া আক্তার চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ভিঙ্গুলিয়া গ্রামের দিনমজুর জহির খানের স্ত্রী। চিকিৎসার জন্য তিনি চাঁদপুর থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন।

লঞ্চের কেরানি মো. দীপু বলেন, ‘গতকাল বিকেল পাঁচটায় এমভি বোগদাদীয়া-৮ লঞ্চটি চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনাল থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকা সদরঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়। সন্ধ্যায় লঞ্চটি ঢাকার কাছাকাছি পৌঁছায়। তখন নিচতলার ডেকে সাদিয়া আক্তার নামের এক যাত্রীর প্রসবব্যথা ওঠে। আমরা তাঁকে কেবিনে নিয়ে যাই। সন্ধ্যা ৭টা ৩১ মিনিটের সময় তিনি একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তান জন্ম দেন।’

মো. দীপু জানান, এই খুশিতে লঞ্চের মালিক হামিদুল্লাহ সুমন আনন্দিত হয়ে শিশুটির জন্য আজীবন ওই লঞ্চে যাতায়াত ফ্রি ঘোষণা দিয়েছেন।

সাদিয়া আক্তারের সঙ্গে ছিলেন তাঁর চাচিশাশুড়ি মৌসুমি বেগম। তিনি বলেন, সাদিয়ার প্রসবব্যাথা হলে তাঁকে প্রথমে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে ঢাকায় যাওয়ার কথা বলা হয়। তবে তাঁরা সাদিয়াকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, চাঁদপুরে নবজাতকের জন্য আইসিইউর ব্যবস্থা নেই। এ জন্য তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামশ্য দেন। গতকাল বিকেল পাঁচটার লঞ্চে তাঁরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। তবে লঞ্চের মধ্যেই সাদিয়া স্বাভাবিকভাবে বাচ্চার জন্ম দিয়েছেন।

মৌসুমি বেগম জানান, গতকাল রাতে ঢাকায় নেমে সাদিয়াকে একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। পরে রাত ১২টার লঞ্চে করে ঢাকা থেকে চাঁদপুরের হাইমচরে চলে আসেন। এখন নবজাতক বাচ্চা ও মা দুজনই সুস্থ আছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ম গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাস্থ্য খাতের সংকট উত্তরণ হবে কবে?

দেশের স্বাস্থ্য খাত বড় সংকটে রয়েছে। এক বিভাগের সঙ্গে অন্য বিভাগের স্বচ্ছ ও ত্বরিত যোগাযোগ নেই। অনেক ক্ষেত্রে আছে স্থবিরতা। এর ফলে প্রতিবছর চিকিৎসার নামে লাখ লাখ টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। নবীন ডাক্তারদের উপজেলা বা থানা পর্যায়ে দুই বছর চাকরিকালীন উন্নততর সুযোগ-সুবিধা, ইনসেনটিভ বা পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের জন্য ট্রেনিং হিসেবে ধরা হবে কিনা– এসব ব্যাপারে পরিষ্কার দিকনির্দেশনা নেই। ফলে জীবনের শুরুতেই জুনিয়র ডাক্তাররা হতাশায় পড়েন। এর ফলে তারা ফাঁকিবাজি বা কদাচারের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনে জড়িয়ে পড়েন। 

দেশে প্রায় দেড়শ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং ডাক্তার তৈরি হচ্ছে। অথচ সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে শূন্য পদ অসংখ্য এবং বেসরকারি বহু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নিম্নমানের, ভালো ছাত্র থাকা সত্ত্বেও, যাদের জন্য চাকরি পাওয়া বা পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করা অত্যন্ত কঠিন। কারণ তাদের জন্য  বিসিপিএস কেবল বিকল্প। বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) বাংলাদেশে চিকিৎসাবিদ্যায় স্নাতকোত্তর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান। সুতরাং বিসিপিএসের পাশাপাশি দেশে ইউএসএমএলই বা রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস বা সার্জারি বা গাইনি পরীক্ষার আরও সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা উচিত, যাতে দেশেই স্কিল্ড ডাক্তার তৈরি হয়ে বিদেশে যেতে পারেন। আমরা শুধু স্কিল্ড নার্স পাঠানোর চিন্তা করি। অথচ দেশেই নার্সের সংখ্যা অপ্রতুল। কিন্তু স্কিল্ড ডাক্তার বিদেশে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে তাতে আমাদের রেমিট্যান্স আসবে বেশি। 

আমাদের দেশের এমবিবিএস বা এফসিপিএস ডিগ্রি উন্নত বিশ্বে স্বীকৃত নয়। সুতরাং বিসিপিএসকে আমাদের এমবিবিএস বা এফসিপিএস, ইউএসএমডি বা এমআরসিপি বা এফআরসিএস বা এমআরসিওজি কারিকুলামের সঙ্গে কীভাবে মেলানো যায়, সে বিষয়টি ভাবতে হবে, যার মাধ্যমে আমাদের ডাক্তাররা গুণগত মানসম্পন্ন হবেন।

ডাক্তারদের বলা হয় ‘ক্রিম অব দ্য সোসাইটি’। তারা মানুষের জন্য সর্বোত্তম মেধা ও শ্রম দেন। বিনিময়ে রাষ্ট্র, সরকার বা সোসাইটি ডাক্তার ও তাঁর পরিবারকে একটি নিরাপদ জীবনযাপনের সুযোগ দেবে– এটিই কাম্য। অথচ পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনরত ডাক্তাররা প্রাইভেট প্র্যাকটিস না করার শর্তে মাত্র ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে এই মুদ্রাস্ফীতির যুগে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অর্থাৎ তাঁকে পেটের দায়ে বলা যায় এক প্রকার চুরি করে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে বাধ্য করা হচ্ছে।  

দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ২ ঘণ্টা খাদ্য ও বিশ্রামের বিরতি দিয়ে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সব অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও সিনিয়র কনসালট্যান্টকে হসপিটাল বেজ্ড প্র্যাকটিস করতেই হবে। জুনিয়র কনসালট্যান্টরা রোটেশন অনুযায়ী সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ইন্টার্ন বা ট্রেইনি ডাক্তারদের গাইড বা মেন্টর হিসেবে কাজ করবেন, যাতে সার্বক্ষণিক উন্নত চিকিৎসায় কোনো রোগীর অসুবিধা না হয়। কারণ সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত বেশির ভাগ হাসপাতালে ইন্টার্ন বা ট্রেইনি ডাক্তারদের কোনো প্রেসক্রিপশনে একটি ট্যাবলেটও যোগ বা বিয়োগ করার ক্ষমতা নেই। ফলে রোগীদের জীবন বেশির ভাগ সময় বিপন্ন হয়।  

সরকারি হাসপাতালের রোগীর দায়িত্বে থাকেন অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক/সহকারী অধ্যাপক এবং হাসপাতালের প্রধান হচ্ছেন ডাইরেক্টর। কিন্তু সব অধ্যাপকের এসিআর লেখেন হাসপাতালের প্রিন্সিপাল। ফলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এটি একটি গোঁজামিল, যা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না করলেও এটিই বাস্তব। আবার টারশিয়ারি হাসপাতালের ডাইরেক্টর ও প্রিন্সিপাল দুই ধরনের সরকারি নিয়মের ধারায় চলতে চলতে এক সময় এসে একই প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে কাজ করেন; কিন্তু দু’জন দু’ভাবে কাজ করতে অভ্যস্ত থাকেন দীর্ঘদিন ধরে। ফলে দু’জনের চিন্তাধারা এক হয়ে সুচারুভাবে কাজ করার আগেই তাদের মধ্যে একজনের কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফলে কাজে অচলাবস্থা বা স্থবিরতা সৃষ্টি হয়। ভুক্তভোগী হয় রোগী।

অধ্যাপকরা প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকেন তাদের প্রাইভেট চেম্বার নিয়ে। হাসপাতালে রোগী দেখা; মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিটিং-সিটিং-ব্রিফিং ইত্যাদি; তার ওপর আবার নিজস্ব প্রাইভেট চেম্বার। তাই বাস্তবে অনেক রোগীর নালিশ হচ্ছে, বড় বা ভালো ডাক্তাররা কথা শোনেন না বা শোনার আগেই ইনভেস্টিগেশন/প্রেসক্রিপশন লিখে বসে থাকেন। ফলে রোগীদের জীবন অনেক সময় বিপন্ন হয়।
দেশের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনগুলো সাড়ে তিন দশক ধরে সরাসরি দেশীয় রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তর্ভুক্ত হয়ে নানা ভাগে বিভক্ত। যে দল যখন ক্ষমতায় আসে তখন তাদের সমর্থকদের ট্রান্সফার, 
পোস্টিং, প্রোমোশন ইত্যাদিতে পোয়াবারো থাকে। ক্ষমতাসীন দলের অনেকে তখন এগুলোর মাধ্যমে 
অর্থবাণিজ্যে লিপ্ত হয়। স্বাস্থ্য খাত থেকে এ ধরনের সংকট দূর করা অতীব জরুরি।

ডা. গোলাম শওকত হোসেন: চিকিৎসক ও লেখক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ