পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়া পাইকারি কাপড়ের মার্কেটের বেচাকেনা জমে উঠেছে। দোকানিরা সাধ্যমতো পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ক্রেতা আকর্ষণে নানা অফারে ডাকছেন কেউ কেউ। রেডিমেড কাপড়ের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় তুলনামূলক কম হলেও জাকাতের লুঙ্গি এবং শাড়ি কাপড়ের দোকানগুলোয় উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। গত রোজায় মার্কেটটিতে বিক্রি হয়েছিল প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এ বছর তা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৫৫০ কোটি টাকায়। যদিও কাপড়ের বাড়তি দাম এবং চলমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এ লক্ষ্য অর্জনে শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন কয়েক ব্যবসায়ী। 

জানা গেছে, প্রায় ২৪ একর জায়গায় ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া মার্কেটে বর্তমানে দোকানের সংখ্যা ৫ হাজার ৪৭২টি। নির্মাণকাজ শেষ হলে এ সংখ্যা ১৪ হাজারে দাঁড়াবে। শনিবার বাদে সপ্তাহের ছয় দিনই চলে জমজমাট বেচাকেনা। ঈদ উপলক্ষে তিন সপ্তাহ ধরে শনিবারও মার্কেট খোলা থাকছে। সপ্তাহের সোম ও মঙ্গলবার তৈরি পোশাকের পাইকারি বেচাকেনা চলে এ মার্কেটে। এ দু’দিন দৈনিক ৫০ থেকে ৭০ কোটি টাকার পাইকারি কাপড় বেচাকেনা হয়। ঈদের সময় বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। বাকি দিনগুলোয় চলে খুচরা বেনাকেনা। 
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকা ছাড়াও রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, সিলেট, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, বরিশালসহ সারাদেশের ব্যবসায়ীরা পাইকারি কাপড় কিনতে এসেছেন। এ বছর দাম একটু বেশি হলেও কেনাবেচার যেন কমতি নেই। 
রাজশাহী থেকে আসা আসিয়া ফ্যাশনের মালিক জসীমউদ্দীন বলেন, আমি এই মার্কেট থেকেই পাইকারি কাপড় কিনে থাকি। এই মার্কেটের কাপড়ের দাম বেশ সাশ্রয়ী এবং মানও ভালো। ইদানীং ব্যবসায়ীরা আর আগের মতো বাকিতে পণ্য দিতে চাচ্ছেন না। নগদ টাকায় ব্যবসা করতে অনেকেরই বেগ পেতে হচ্ছে। 
গাউছিয়া মার্কেটের আলিফ বস্ত্র বিতানের মালিক রইসুল ইসলাম বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য, সর্বনিম্ন লাভ করে সবচেয়ে ভালো কাপড়টি পাইকারি ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া। ফলে সারাদেশের ব্যবসায়ীরা আমাদের ওপর আস্থা রাখছেন। 

ব্যবসায়ীরা জানান, এখানে ৩০০ থেকে শুরু করে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে ভালো মানের বুটিক থ্রিপিস পাবেন। জয়পুরি সুতির কাপড় পাবেন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে। সিল্কের শাড়ি ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩-৪ হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। রুহিতপুরি লুঙ্গি ২৫০ থেকে ১ হাজার, জয়পুরহাটের লুঙ্গি পাবেন ২৫০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০ টাকার মধ্যে ভালো মানের জাকাতের কাপড় পাবেন। এ ছাড়া সুতি গজ কাপড়, সুতি থ্রিপিস, ওড়না, জামদানি শাড়ি, লুঙ্গিসহ সব ধরনের কাপড় খুব সস্তায় পেয়ে যাবেন। 
বিক্রি নিয়ে খুচরা রেডিমেড কাপড়ের ব্যবসায়ীদের গলার সুর একটু ভিন্ন। সজীব ফ্যাশনের মালিক ইমরান হোসেন বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরের বেচাকেনা একটু কম। গত বছরের এ সময় প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার কাপড় বিক্রি করেছি। কিন্তু এবার একটু কমে গেছে। আগামী কয়েকদিন বাড়বে বলে আশা করছি। 
ভুলতা গাউছিয়া মার্কেটের বাইরে ফুটপাতের দোকানগুলোও সেজেছে ঈদের সাজে। রংবেরঙের বাহারি জামাকাপড় নিয়ে ফুটপাতে প্রায় ৫০০ দোকান বসেছে। সরকার পরিবর্তনের পর ফুটপাতে ব্যবসা করার জন্য কোনো চাঁদা দিতে হয়নি বলেও জানান ব্যবসায়ীরা। 
গাউছিয়া করপোরেশনের মালিক মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়া বলেন, গাউছিয়া করপোরেশন এখন দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি কাপড়ের মার্কেট। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, আধুনিক ফায়ার ডিফেন্স সিস্টেমসহ সর্বোত্তম সেবা দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদ র ক ন ক ট ব যবস য

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরিতে না ফেরালে রাজপথ ছাড়বেন না ইআরপিপি স্বাস্থ্যকর্মীরা

পাঁচ মাস ধরে বেতন নেই। পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন কেউ, কেউ আবার চাকরির বয়সসীমা পার করে এখন আর নতুন কোথাও আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন না। এর মধ্যেই প্রকল্প শেষের অজুহাতে চাকরিচ্যুত হয়েছেন তারা—যারা ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এই অবস্থায় নিজেদের চাকরি স্থায়ীকরণ এবং অবিলম্বে বকেয়া বেতনের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ারডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের আউটসোর্সিং স্বাস্থ্যকর্মীরা। 

আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাদের প্রধান দাবি হলো স্থায়ীকরণের মাধ্যমে চাকরি বহাল রাখতে হবে এবং রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্তির লিখিত নিশ্চয়তা দিতে হবে। সেইসঙ্গে গত চার মাসের বকেয়া ভাতা অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে অবস্থান কর্মসূচি চলবে, প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

বিক্ষোভরত কর্মীদের একজন বলেন, সরকারের ডাকেই তো আমরা এসেছিলাম। ভয়ঙ্কর সময় ছিল সেটা। তখন যদি পেছনে না ফিরে মানুষকে সেবা দিতে পারি, আজ যখন একটু স্থিতি এসেছে—তখন কেন আমরা উপেক্ষিত হবো? ৫ মাস ধরে একটা টাকাও পাইনি, পরিবার চালানো দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিপসমে কর্মরত ইআরপিপির মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবু সুফিয়ান বলেন, প্রায় পাঁচ বছর এই প্রকল্পে কাজ করেছি। এখন বয়স ৩৫ ছাড়িয়েছে। সরকারি চাকরির আবেদনের শেষ সীমা পেরিয়ে গেছি। এখন আমাদের বাদ দিয়ে নতুন অদক্ষ জনবল নেয়ার চেষ্টা চলছে। এটা শুধু অবিচার না, আমাদের মর্যাদায় আঘাত।

ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি সেন্টারের ডাটা অপারেটর আব্দুর রহমান বলেন, ঘরে ছোট বাচ্চা, স্কুলের বেতন দিতে পারিনি। স্ত্রী-সংসার নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছি। করোনার সময় এই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডাকেই আমি কাজে গিয়েছিলাম, এখন সেই অধিদপ্তরের সিঁড়িতেই বসে থাকতে হচ্ছে দাবি আদায়ের জন্য।

ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় কর্মরত এসব স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ, করোনার সময় গড়ে তোলা আরটি-পিসিআর ল্যাব, ডেডিকেটেড আইসিইউ বা আইসোলেশন ইউনিটে তারাই প্রথম দিন থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ আজ তাদের বাদ দিয়ে সেই পদে নতুন লোক নিয়োগের পাঁয়তারা চলছে। 

তারা বলছেন, আমরা চাকরি ভিক্ষা চাই না। আমরা যেটুকু প্রাপ্য, সেটুকু চাই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্প চলবে, তবে আমাদের চাকরি কেড়ে নেয়া হলো কেন? আমাদের রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত না করে অন্যদের সুযোগ দেওয়া মানে অবিচারকে পুরস্কৃত করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ