বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ সাক্ষাৎ হওয়ার কথা ছিল সেপ্টেম্বর, ২০২৪ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের যে কোনো সময়। কিন্তু দিল্লির রাজনৈতিক মহলের টালবাহানায় সেটি হয়নি। তবে বিশ্বরাজনীতিতে অভিজ্ঞরা সে সময় আশঙ্কা করেছিলেন এ ঘটনা আগামী দিনগুলোতে ভারতের জন্য অশনি সংকেত ডেকে আনবে। কারণ ড.

ইউনূস ওই সফরে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, আইএমএফের প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘের মহাসচিব, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়কসহ অন্তত ৪০টি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। তখনই মনে করা হচ্ছিল ওই বৈঠকগুলো বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মজার বিষয় হলো, এর বেশ কিছু বৈঠক পূর্বনির্ধারিত ছিল না, এগুলো সম্ভব হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে। সেসময় নরেন্দ্র মোদির আত্মবিশ্বাস ছিল আকাশচুম্বী। কারণ, তিনি বুঝতে পারছিলেন, আগামীতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার দিকেই বইছে আটলান্টিকের জোয়ার। মোদি আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে ২০১৬ সালেও ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে কথা বলেছিলেন। 

মূল আলোচনায় আসি, ড. ইউনূস একমাত্র বৈশ্বিক ব্যক্তি যার সঙ্গ পেতে তামাম দুনিয়ার বুদ্ধিভিত্তিক মানুষেরা উন্মুখ হয়ে থাকেন। সেখানে তাকে উপেক্ষা করাটা অনেকের মতো ভালোভাবে নেয়নি মার্কিন ধনকুবের সম্রাট ইলন মাস্ক। এর কয়েকদিন পর মাস্কের সঙ্গে বৈঠক ছিল মোদির। অথচ বৈঠকের ঠিক এক ঘণ্টা আগেই তিনি প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে তার আগ্রহের কথা জানান। সুযোগ পেলে ব্যবসায় বিনিয়োগের কথাও বলেন। এরপরই ইলন মাস্ক এক্সে প্রফেসর ইউনূসকে ফলো করে রাখেন। 

শুধু তাই নয়, যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকির বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে তিনি পদত্যাগ করেন। এই ঘটনাটিও ইলন মাস্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। সেখানে লিখেছেন, ‘লেবার সরকারের শিশুকল্যাণমন্ত্রী নিপীড়নকারীদের সুরক্ষা দেন এবং তাদের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত।’ 

অথচ টিউলিপের খালার পক্ষ নিতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ নামক দেশটির বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন। অর্থাৎ দেশের চেয়ে একজন ব্যক্তিকে তিনি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী সরকারের সম্পর্ক থাকবে সরকারের সঙ্গে। সেই নিয়মের ব্যতিক্রম আমরা দেখলাম এবং অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম, দিল্লির সুরে ভারতের মিডিয়াও প্রফেসর ইউনূসকে ‘জঙ্গি সর্দার’ বানানোর অপসাংবাদিকতা করছে। 

ইলন মাস্কের খেলা শেষ হয়েও হচ্ছিল না। প্রফেসর ইউনূসের আহ্বানে এবার তিনি স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক আগামী ৯০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে নিয়ে আসার কথা বলেছেন। এ জন্য প্রতিনিধি দলও বাংলাদেশে এসেছে। শোনা যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্য ব্যবসায়ীরাও ইউনূসের দেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। মনে রাখা প্রয়োজন, এই ইলন মাস্ক এখন শুধু একজন ব্যবসায়ী নন, তিনি আমেরিকার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরামর্শক, এবং আমেরিকার নীতি নির্ধারণীদের অন্যতম। আর তিনি চাচ্ছেন প্রফেসর ড. ইউনূসের থ্রি জিরো দুনিয়ার সকলের কাছে পৌঁছে দিতে। ইউনূস শুধু যে সমস্যার সমাধান দিচ্ছেন তা নয়, অন্যের জন্য কিছু কৃত্রিম সংকটও সামনে তৈরি করছেন। এটাই বৈশ্বিক ক্রিটিক নেতার চরিত্র। 

২.
মার্চের শুরুতে চোখ বড়ো করার মতো খবর আসে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দরবার থেকে। কী সেই খবর? আসলে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে বাংলাদেশের ভূমিকা তেমন চোখে পড়ে না। পড়ার কথাও না। কারণ, আন্তঃকলহ সমাধানে যেখানে ত্রাহি অবস্থা, সেখানে রাজনৈতিক মঞ্চে নিজেকে হাজির করবে কীভাবে? এবার বাংলাদেশ নিজেকে হাজির করতে না চাইলেও বিশ্বমঞ্চই লাল কার্পেট বিছিয়ে দিয়েছে। শি জিনপিং ড. ইউনূসকে চারদিনের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ইউনূস আলোকিত করবেন বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) সম্মেলন। তার জন্য বেইজিং পাঠাবে বিশেষ এক বিমান। বলাবাহুল্য চীনারা এই বিমান সবার জন্য সবসময় পাঠায় না, কেবল মাত্র কৌশলগত কারণেই পাঠায়। আর বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম এবং একমাত্র ঘটনা। 

শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের বিশেষ দিন বরাদ্দ করা হয়েছে ২৮ মার্চ। অর্থাৎ উপদেষ্টার পৌঁছানোর দুদিন পর। এই সফর চীনের অর্থায়নে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। সফরটি কৌশলগত কারণেও বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চীন ভারত প্রধানের জন্য কখনই বিশেষ বিমান পাঠানোর অফার করেনি। বিশ্লেষকরা শি জিনপিংয়ের মগজ ধরতে চুলচেড়া বিশ্লেষণ শুরু করেছেন।

ড. ইউনূস এখানেই থামছেন না, মে মাসে তিনি যাবেন জাপান। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষীক বৈঠক করার পাশাপাশি বাংলাদেশের উন্নতি, বিনিয়োগ ও জাইকা প্রসঙ্গে হতে পারে দীর্ঘ আলাপ। জুন মাসে যাবেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজারের দেশ সৌদি আরবে। মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম ভারত। শ্রম বাজারে বিনিয়োগ, আর্থিক সহায়তাসহ নানান বিষয়ে বৈঠক করবেন দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদের সঙ্গে। ফলে সবদিক দিয়ে নরেন্দ্র মোদির মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠছেন মি. ইউনূস। এ কথা সন্দেহাতীতভাবে সত্য দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বদলে যাচ্ছে। আর এই বদলের নেতৃত্বে হয়তো প্রথম সারির ভূমিকা রাখবেন প্রফেসর ইউনূস।

ইউনূস শুধু যে প্রতিবেশী পরাশক্তিকে সামাল দিচ্ছেন তা নয়, তাকে সমাল দিতে হচ্ছে শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ মেরামতেও। এই অন্তর্বর্তী সরকার সর্বশেষ ৬ মাসে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করেছে ৬২ হাজার কোটি টাকা, পাশাপাশি গত বছরের এই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে চার বিলিয়ন ডলার, রিজার্ভে যুক্ত হয়েছে ২ হাজার ১৪০ কোটি ডলার, দেশের পণ্যের ভর্তুকি বেড়েছে ১২ শতাংশ, বাফুফে থেকে ফিফার দেওয়া নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেয়া হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের অনুরোধে। সামাল দিতে হয়েছে কমপক্ষে দেড় শতাধিক প্রতিবিপ্লব!

৩.
আরাকানের নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রামে আশ্রয় দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হতে চেয়েছিলেন শান্তিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় নোবেল লরিয়েট। আগের সরকারের ধারণা ছিল রোহিঙ্গা একটি প্রোডাক্ট। যা ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। অথচ রোহিঙ্গা একটি ইস্যু ছিল। আবার কারো কাছে ছিল ট্রার্ম কার্ড। যা ব্যবহার করে চীন এবং ভারতও নিতে চেয়েছিল বিশেষ সুবিধা। খেলাটা আগে থেকেই জানতেন ইউনূস। তাই তিনি বাংলার মসনদে বসার আগেই ভারত নেতাকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে প্রতিবেশী মিয়ানমার, সেভেন সিস্টার্স, পশ্চিমবঙ্গসহ আশেপাশের সব জায়গাতেই ছড়িয়ে পড়বে অস্থিরতা। এই ঘোষণার মাধ্যমে ড. ইউনূস হয়তো বুঝাতে চেয়েছেন আমি উপমহাদেশ নয়, বিশ্বমঞ্চের খেলোয়াড়। আমার জন্য ফাঁদ তৈরি এতটা সহজ হবে না। 

মায়ানমার যখন বাংলাদেশের চোখে আঙুল রেখে কথা বলছে, তখন বুঝতে অসুবিধা ছিল না এর পেছনে কে বা কারা কলকাঠি নাড়ছে। হিতে কখনো কখনো বিপরীত হয়, এখন মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্য নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। আগে ছিল ইয়াঙ্গুনের শাসন, এখন সেখানে আরাকান শক্তির রাজত্ব। এই পরিবর্তন শুধু মায়ানমারকে ভাবনায় ফেলেছে তা নয়, ভাবনার সমীকরণে বসতে হয়েছে ভারত ও বাংলাদেশকেও। ভাবছে বেইজিংয়ের শাসক জিনপিংও। কীভাবে জান্তা এবং বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। অন্যদিকে দিল্লি ভাবছে সামরিক জান্তাদের মাধ্যমে মায়ানমার নিয়ন্ত্রণে রাখবে। তবে কৌশলগতভাবে এগিয়ে বাংলাদেশ। সরাসরি যোগাযোগ করছে রাখাইনের আরাকান আর্মিদের সঙ্গে। ভারতের প্রভাবশালী ইন্ডিয়া টুডে এক প্রতিবেদনে `Yunus joins hands with arakan army in Myanmar’ শিরোনামে উল্লেখ করেছে, ইউনূসের এই কৌশল শুধু বাংলাদেশের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে তা নয়, বরং ভারতের জন্য এক বিশাল কূটনৈতিক ধাক্কা হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশ যে পরিকল্পনায় সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে, ভারত এবং চীনের মাথা ব্যথার কারণ ইউনূস। 

আরকানের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নাম বাংলাদেশ। আরাকান যদি রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে নিশ্চয়তা দেয় তাহলে বাংলাদেশও ভাববে তাদের স্বীকৃতি, রাষ্ট্র পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য, অর্থ ও অন্যান্য সহযোগিতার বিষয়ে। আরাকান রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অর্থ হলো জান্তার পরাজয়, দিল্লির পরাজয়, বেইজিংয়েরও পরাজয়। এর ভেতর দিয়ে ভারত ও চীনের বঙ্গোপসাগর নিয়ে করা পরিকল্পনা ও শত শত কোটি ডলারের অপচয় নিশ্চিত। ড. ইউনূস ভারতের পররাষ্ট্রনীতির কারণে চীন যাচ্ছেন, চীনের কারণে যাচ্ছেন জাপান। জাপানকে কাছে রাখতে আমেরিকার টেবিলে বসছেন। এমন দূরদর্শী নেতা পেয়ে বিশ্ব মঞ্চ সত্যিই আলোকিত।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে যখন ভারত ও চীনকে পাশে পাচ্ছে না বাংলাদেশ, তখনই জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চারদিনের সফরে ১ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করেছেন কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। অথচ ভারতের সকল মিডিয়া তখনও অন্ধের মতো বলছে দিল্লির স্বর ও সুরে। কলকাতার আনন্দ বাজারের এক প্রতিবেদনের শিরোনাম `উত্তপ্ত বাংলাদেশের তিন দিনের সফরে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব`! ভাবনায় মিলে না, তাদের মিডিয়া কি বৈশ্বিক কোনো খোঁজ খবর রাখে না! নাকি ইচ্ছাকৃত গুজব ছড়াচ্ছে? নাকি গরম খবর ছাড়া তাদের মিডিয়া চলে না! নাকি দেশটির সাধারণ মানুষ মিডিয়ার ওপর আস্থা হারিয়েছে, তাই এমন সংবাদ পরিবেশন করছে! 

গুতেরেস ভারতের মিডিয়াকে চপেটাঘাত দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইফতার মাহফিলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বিষয়ে একমাত্র সমাধান তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন’। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও জাতিসংঘ মহাসচিরে সঙ্গে সুর মিলিয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের কীভাবে দ্রুত তাদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা যায়, সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে বর্তমান সরকার।’ এমন ইস্যু যখন তাজা তখনই চীন, জাপান, সৌদি আরবের আমন্ত্রণ। বিশ্বরাজনীতির ধারা ঠিক করতেই যেন ইউনূস ছুটছেন!

৪. 
ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরে যে রাজনৈতিক সরকার আসবে, কেবল তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বার্তা ইতোমধ্যে দিয়েছে ভারত। অন্যদিকে শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ইতোমধ্যেই ‘স্ট্রিক গ্লোবাল ডেপ্লোম্যাসি’ নামের সিঙ্গাপুরভিক্তিক একটি লবিস্ট ফার্মকে মাসে দুই লাখ ডলার চুক্তিতে নিয়োগ দিয়েছে। ওই লবিস্ট ফার্ম মার্কিন নেতাদের আওয়ামী লীগের পক্ষে আনার লক্ষ্যে কাজ করবে বলে জোর প্রচারণা। সেইসাথে আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত বন্ধুরা ভারতে বসে সকল ধরনের চেষ্টা ও তদবির করে যাচ্ছে। 

মিসরে যখন মুসলিম ব্রাদার হুডের মুহাম্মদ মুরসি ক্ষমতাচুত্য হলেন, তখন তার অনুসারী নেতারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিকভাবে আশ্রয় গ্রহণ করে। এর একটি দেশ তুরস্ক। কর্মীদেরকে স্বাধীনভাবে থাকার সুযোগ করে দেয় রিসেফ তাইয়েফ এরদোয়ান। এর ফলে মিসরের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে চিড় ধরে। এরই ধারাবাহিকতায় সকল ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু মাস কয়েক পূর্বে রিসেফ তাইয়েফ এরদোয়ান মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতাকর্মীদের তুরস্ক ত্যাগের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ত্যাগ না করলে তাদেরকে জেলে দেয়া হবে। নিরুপায় হয়ে কর্মীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় খোঁজা শুরু করে। এমন একটা সময় সামনে হয়তো দেখতে পাব, বৈশ্বিক মঞ্চটা যখন ইউনূসের হবে, ভারত তখন সেখানে আশ্রয় নেয়া আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের হয়তো বাংলাদেশে পাঠাবে, নয়তো আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে অন্য কোনো দেশকে ভাবতে বাধ্য হবে।

৫.
সর্বশেষে বলা যেতে পারে, দেশের ভেতরেও প্রফেসর তার ক্লাস ঠিক রাখতে হবে, নয়তো ছাত্র-জনতা উত্তপ্ত হবে, ৩৬ জুলাই তৈরি করবে। রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে তার পরিকল্পনা অবশ্যই আছে, সেসকল জাতির সামনে হাজির করা, মব দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা, ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে। নয়তো রাষ্ট্রের কাঠামো ধ্বসে পড়বে, বিচার ব্যবস্থা যদিও তলানিতে। এসব ঠেকাতে অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য ভূমিকা থাকবে, একটি নির্বাচন ব্যবস্থা দাঁড় করিয়ে বিজয়ী দলের কাছে রাষ্ট্রের হেফাজতের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া। এতদিন তিনি দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন না বলেই নিজের ক্ষমতার প্রদর্শন করতে পারেননি, এখন তিনি তা করবেন। কারণ তিনি ভালো জানেন, দেশ আগে। দেশের মানুষ আগে।

লেখক : কবি ও কথাসাহিত্যিক

তারা//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইলন ম স ক ম হ ম মদ র জন ত ক আম র ক র ইউন স র ন সরক র সরক র র আর ক ন র জন য ত র জন মন ত র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ