গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ইসরায়েলের রাস্তায় বিক্ষোভ
Published: 21st, March 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় নতুন করে যুদ্ধবিরতির দাবিতে ইসরায়েলের রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভকে ঘিরে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বন্ধ করা হয়। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ করেছেন তাঁরা। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সরকার রাজনৈতিক কারণে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। গাজায় এখনও হামাসের কাছে জিম্মি থাকা ৫৯ জনের পরিণতি নিয়ে ভাবছে না। জিম্মিদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, এখনো গাজায় অন্তত ৫৯ ইসরায়েলি জন বন্দি আছেন। যাদের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর বন্দি করেছিলেন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হামাস। এর মধ্যে ২০ জন এখনো জীবিত আছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নেতানিয়াহু সংঘর্ষ-বিরতির চুক্তি ভঙ্গ করে নতুন করে গাজায় অভিযান চালানোয় জীবিত বন্দিদেরও মেরে ফেলা হবে বলে মনে করছেন বিক্ষোভকারীরা। সংঘর্ষ-বিরতি শুরু হওয়ার পর অধিকাংশ বন্দিকেই হস্তান্তর করেছে হামাস। সকলে ফিরে আসার আগেই নেতানিয়াহু নতুন করে আক্রমণ শুরু করায় বিরক্ত দেশের একটি বড় অংশের মানুষ। সম্প্রতি একটি জনমত সমীক্ষাও করা হয়েছিল। সেখানে দেখা গেছে, দেশের অধিকাংশ মানুষ চান, লড়াই বন্ধ করে বন্দি প্রত্যার্পণ নিয়ে আরো বেশি আলোচনা চালাক সরকার।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বার’কে বরখাস্ত করার প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে এ বিক্ষোভ শুরু হয় মঙ্গলবার। তবে গাজায় প্রাণঘাতী বিমান হামলা চালিয়ে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়ে ওঠে। হাজার হাজার মানুষ ইসরায়েলের রাস্তায় নেমেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে তারা তীব্র বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। বুধবার হাজার হাজার মানুষ জেরুজালেমের মধ্যাঞ্চলে নেতানিয়াহুর সরকারি বাসভবনের কাছের সড়কগুলোতে অবস্থান নেন। তাঁদের অনেকের হাতে ছিল পতাকা এবং গাজায় এখনও জিম্মি থাকা মানুষদের সমর্থনে লেখা স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড। ‘এখনই জিম্মি মুক্তির চুক্তি করুন’ এমন স্লোগান দিতে থাকেন।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেছেন, হামাসের হাত থেকে সমস্ত বন্দিকে উদ্ধার না করে নতুন করে গাজায় আক্রমণ চালিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভুল করেছেন। দ্রুত এই অভিযান বন্ধের দাবি তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা। একইসঙ্গে তারা নেতানিয়াহুর একাধিক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। এরই জেরে রনেনকে সরিয়ে দেওয়া হলো বলে মনে করা হচ্ছে। নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে রনেন একটি তদন্তও শুরু করেছিলেন। অভিযোগ, ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করলেও কাতারে তাদের বেআইনি অর্থের লেনদেন আছে। রোনেন বার’কে বরখাস্তের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনের জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওঠে। ওই বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে বরখাস্তের পক্ষে মত দেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, নেতানিয়াহু সরকার দেশের গণতন্ত্রকে আঘাত করেছে। জেরুজালেম ও তেল আবিব থেকে পুলিশ কমপক্ষে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আয়োজকেরা বলছেন, বিক্ষোভ কর্মসূচি যেভাবে গতি পাচ্ছে, তাতে আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি বিক্ষোভ হতে পারে। যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখতে বিদেশি সরকারগুলোর আহ্বান উপেক্ষা করে সম্প্রতি আকাশ ও স্থলপথে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। এর মধ্য দিয়ে গত জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেস্তে গেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গাজায় গত কয়েক দিনে ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ৬০০ মানুষ নিহত হয়েছেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ওরা নাকাশ পেলেড বলেন, ‘ইসরায়েল তুরস্ক নয়, ইসরায়েল ইরান নয়।’ নেতানিয়াহুর নেওয়া বেশ কিছু সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে ইসরায়েলি গণতন্ত্রের জন্য ‘লাল পতাকা’ হিসেবে মন্তব্য করেন তিনি। এর একটি হলো, রোনেন বার’কে বরখাস্ত করার তৎপরতা। আরেকটি হলো, অ্যাটর্নি জেনারেল গ্যালি বাহারাভ মিয়ারাকে বরখাস্ত করার তৎপরতা। মিয়ারা যুক্তি দেখিয়েছেন, বারকে তাঁর পদ থেকে উৎখাত করা হলে তা অবৈধ হতে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র বরখ স ত মন ত র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রাশিয়ার কাছাকাছি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ ট্রাম্পের
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের ‘অত্যন্ত উস্কানিমূলক’ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন ‘যথাযথ অঞ্চলে মোতায়েন’ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
শুক্রবার (১ আগস্ট) ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, “ওই মন্তব্য় যদি নেহাতই বোকামি ও উস্কানিমূলক বক্তব্য না হয়ে, তার থেকে বেশি কিছু হয়, তাই আমি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছি।” খবর বিবিসির।
ট্রাম্প আরো লিখেছেন যে, “শব্দগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রভাবও অপ্রত্যাশিত হতে পারে। তবে আশা করি এই বিবৃতি তেমন কিছু ঘটাবে না।”
আরো পড়ুন:
পুতিনকে এবার ১০ দিনের আল্টিমেটাম দিলেন ট্রাম্প
পুতিনকে এবার ১২ দিনের আল্টিমেটাম দিলেন ট্রাম্প
মার্কিন সামরিক প্রোটোকল মেনে দুটি সাবমেরিন কোথায় মোতায়েন করা হচ্ছে, তা তিনি বলেননি।
একদিন আগেই ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে মস্কোকে আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এরপরই প্রতিক্রিয়া দেন মেদভেদেভ।
পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় জানিয়ে শুক্রবার ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, “রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ, যিনি বর্তমানে রাশিয়ান ফেডারেশনের নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান, তার অত্যন্ত উস্কানিমূলক বক্তব্যের ভিত্তিতে, আমি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিনকে উপযুক্ত অঞ্চলে মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছি।”
ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পারমাণবিক চালিত নাকি পারমাণবিক অস্ত্রধারী সাবমেরিনের মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন, তা খোলাসা করেননি।
রাশিয়া এবং আমেরিকার কাছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র আছে এবং উভয় দেশেরই পারমাণবিক সাবমেরিনের বহর রয়েছে।
শুক্রবার পরবর্তীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, “একটি হুমকি দেওয়া হয়েছিল এবং আমরা এটিকে উপযুক্ত মনে করিনি। তাই আমাকে খুব সতর্ক থাকতে হবে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, “আমি মার্কিন জনগণের নিরাপত্তার ভিত্তিতে এটি করেছি। রাশিয়ার একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট হুমকি দিয়েছিলেন। এবং আমরা আমাদের জনগণকে রক্ষা করব।”
ক্রেমলিন এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করেনি, তবে ট্রাম্পের বক্তব্যের পর মস্কোর শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে।
সম্প্রতি ট্রাম্প এবং মেদভেদেভ সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অপরের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যক্তিগত আক্রমণে জড়িয়ে পড়েছেন।
ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার জন্য ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দুই দফায় নতুন করে সময় বেধে দিয়েছেন, তবে যুদ্ধ থামানোর কোনো লক্ষণ পুতিন এখনও দেখাননি।
মেদভেদেভ- যিনি ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন- এই সপ্তাহের শুরুতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘রাশিয়ার সঙ্গে আল্টিমেটাম খেলা’ খেলার অভিযোগ করেছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে মেদভেদেভ বলেছিলেন, “প্রতিটি নতুন আল্টিমেটাম একটি হুমকি এবং যুদ্ধের দিকে একটি পদক্ষেপ।”
এর আগে, তিনি জুলাইয়ের শুরুতে তিনি ট্রাম্পের আল্টিমেটামকে ‘নাটকীয়’ বলে অভিহিত করে বলেছিলেন, “রাশিয়া এসবের পরোয়া করে না।”
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) টেলিগ্রামে একটি পোস্টে মেদভেদেভ ট্রাম্পকে রাশিয়ার ‘ডেড হ্যান্ড’ সম্পর্কে সতর্ক করেন। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ‘ডেড হ্যান্ড’ হলো রাশিয়ার প্রতিশোধমূলক পারমাণবিক হামলা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কোডনাম।
এরপরই শুক্রবার ট্রাম্প মেদভেদেভের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রথমবারের মতো প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি মেদভেদেভকে ‘রাশিয়ার ব্যর্থ সাবেক প্রেসিডেন্ট, নিজেকে এখনো প্রেসিডেন্ট বলে ভাবেন’ বলে কটাক্ষ করেন।
ট্রাম্প মেদভেদেভকে ‘তার কথার দিকে নজর রাখার’ বিষয়ে সতর্কও করে বলেন, “তিনি খুব বিপজ্জনক অঞ্চলে প্রবেশ করছেন!”
মেদভেদেভ ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আক্রমণকে সমর্থন করেন এবং পশ্চিমাদের একজন স্পষ্ট সমালোচক।
ঢাকা/ফিরোজ