বড়াইগ্রামে জমি নিয়ে বিরোধে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ, একজন নিহত
Published: 21st, March 2025 GMT
নাটোরের বড়াইগ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষে নাজিম উদ্দিন (৫১) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ সময় জাহাঙ্গীর আলম (৪৫), আরিফুল ইসলাম (৩৮) ও বাবু মিয়া (৪৫) নামে আরও তিনজন আহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে বড়াইগ্রাম উপজেলার আহমেদপুর নওপাড়া এলাকায় সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটেছে।
নিহত নাজিম উদ্দিন নওপাড়া গ্রামের প্রয়াত আলাউদ্দিনের ছেলে। আহতদের নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় কবরস্থানে জমি দান করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি নেতা গনি মিয়া ও ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের দ্বন্দ্ব চলছিল। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে। আজ গনি মিয়ার ছেলে ফারুখ হোসেন ও জামাতা গুরুদাসপুর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের বাসিন্দা ফারুখ হোসেনের সঙ্গে জাহাঙ্গীর আলমের কথাকাটি হয়। এর এক পর্যায়ে গনি মিয়ার ছেলে ফারুখ হোসেন নজিম উদ্দিনকে ছুরিকাঘাত করে। তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে গেলে জাহাঙ্গীর আলম, আরিফুল ইসলাম ও বাবু মিয়াকে আঘাত করলে তারাও আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক নজীম উদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নজিম উদ্দিনের ভাই দুলাল উদ্দিন বলেন, কিছুদিন আগে গনি মিয়ার বাবা গোরস্থানে জমি দান করেন। গনি মিয়া সেই জমি অন্য লোকের কাছে বিক্রি করেন। একটি ধর্মীও প্রতিষ্ঠানে জমি দানের কারনে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
এ ব্যাপারে গনী মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার তারা আমার ছেলের ওমর ফারুখকে মারপিট করে। নিজেরা মারামারি করে আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) মাহবুবুর রহমান জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নাজিমুদ্দিন নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টিতে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা- তা খতিয়ে দেখাসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ হ ঙ গ র আলম স ঘর ষ ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হয়েছেন। এতে একজন শিক্ষকসহ হোটেলের দুই কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাতে উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের বড়িকান্দি গণি শাহ মাজার বাজারের একটি হোটেলে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে উভয় পক্ষের লোকজন এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।
নিহত ব্যক্তির নাম শিপন মিয়া (৩০)। তিনি বড়িকান্দি ইউনিয়নের নুরজাহানপুর গ্রামের মোন্নাফ মিয়া ওরফে মনেক মিয়ার ছেলে। নবীনগর থানা সূত্রে জানা গেছে, ওই দুজনের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ২০টি মামলা আছে।
গুলিবিদ্ধ আহত ব্যক্তিরা হলেন বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা এমরান হোসেন (৩৮) এবং হোটেলের দুই কর্মচারী—উপজেলার আলমনগর গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে ইয়াসিন মিয়া (২০) ও চরলাপাং গ্রামের রশিদ মিয়ার ছেলে নুর আলম (১৮)। এমরান উপজেলার শ্যামগ্রামের মোহিনী কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। তাঁর ভাই ঢাকায় কর্মরত পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিল্লাল হোসেন।
বড়িকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মনেক ডাকাত এলাকাটা শেষ করে ফেলেছেন। তাঁর কারণেই এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়েছে। মনেক ডাকাতদের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। গুলিতে মনেক ডাকাতের ছেলে নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় মোন্নাফ মিয়া ও তাঁর ছেলে শিপনের দীর্ঘদিন ধরে একক প্রভাব ছিল। তাঁদের সঙ্গে একই এলাকার থোল্লাকান্দি গ্রামের মিস্টার মিয়ার ছেলে আরাফাত মিয়ার বিরোধ চলছিল। শনিবার রাত আনুমানিক নয়টার দিকে বড়িকান্দি গণি শাহ মাজার বাজারের একটি হোটেলে শিপন মিয়া আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে আরাফাতের নেতৃত্বে সশস্ত্র একটি দল হোটেলে ঢুকে গুলি চালায়। এতে শিপনসহ হোটেলের দুই কর্মচারী ইয়াসিন ও নুর আলম গুলিবিদ্ধ হন। গুলির শব্দে বাজারজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলার পর আরাফাত ও তাঁর সহযোগীরা দ্রুত পালিয়ে যান।
শিপনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর নুরজাহানপুরে পৌঁছালে মোন্নাফ মিয়ার নেতৃত্বে একদল লোক গণি শাহ মাজারের অদূরে তালতলায় এমরান হোসেনের কার্যালয়ে হামলা চালান। সেখানে এমরান গুলিবিদ্ধ হন। এরপর তাঁরা থোল্লাকান্দি গ্রামে হামলা চালিয়ে একাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। রাতে ঘটনাস্থলে অভিযান চালালেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। কারণ, উভয় পক্ষের লোকজন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গুলিবিদ্ধ কাউকেই শনিবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়নি। তাঁদের হয়তো অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, শিপনের ওপর হামলাকারী আরাফাত থোল্লাকান্দি গ্রামের এমরান হোসেনের আত্মীয়। এ কারণেই এমরানের কার্যালয়ে গিয়ে হামলা এবং তাঁকে গুলি করা হয়েছে।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিহত শিপন ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন। শিপন ও তাঁর বাবার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ২০টি মামলা আছে। ওই ঘটনায় একজন শিক্ষকসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ঘটনার পর থেকে সবাই পলাতক। তাই কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।