মুঠোফোনে বিয়ে, দেশে ফিরে প্রবাসী জানলেন স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা, ধর্ষণের অভিযোগে শ্বশুর গ্রেপ্তার
Published: 22nd, March 2025 GMT
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে শ্বশুরকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকালে ভুক্তভোগী গৃহবধূ বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে। পরে অভিযুক্ত শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
পুলিশ জানায়, প্রায় এক বছর আগে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর সঙ্গে মুঠোফোনে ভিডিও কলে চৌদ্দগ্রামের এক প্রবাসী যুবকের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ওই কিশোরী গৃহবধূ তার শ্বশুরবাড়িতে থাকত। মাস দেড়েক আগে প্রবাস থেকে দেশে ফেরেন স্বামী। সম্প্রতি স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসক দেখাতে গিয়ে জানতে পারেন, স্ত্রী কয়েক মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পরে এ ঘটনায় আজ সকালে শ্বশুরের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে ওই গৃহবধূ।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েটি বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছিল। মেয়েটি নিজেই বাদী হয়ে আজ শ্বশুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছে। পরে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে এলাকা থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, মেডিকেল পরীক্ষার জন্য মেয়েটিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আর আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, প্রায় এক বছর আগে অভিযুক্ত ব্যক্তির ওমানপ্রবাসী ছেলের সঙ্গে মুঠোফোনে বাদীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর সে স্বামীর অবর্তমানে শ্বশুরবাড়িতে থাকত। এর মধ্যে তার প্রতি খারাপ দৃষ্টি পড়ে শ্বশুরের। বিভিন্ন সময় পুত্রবধূকে প্রসাধনী, খাবার ও মূল্যবান জিনিস উপহার দিতেন তিনি। এমনকি সোনার গয়নাসহ জমি লিখে দেওয়ার প্রলোভন দেখাতেন। গত বছরের ১৮ আগস্ট তার শাশুড়ি বাবার বাড়িতে গেলে এ সুযোগে ভোরবেলা ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় পুত্রবধূকে ধর্ষণ করেন শ্বশুর। এরপর ধর্ষণের ঘটনাটি প্রকাশ করলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন তিনি।
এজাহারে আরও বলা হয়, তিন মাস আগে দেশে আসেন তার প্রবাসী স্বামী। দেড় মাস আগে সে শারীরিক অসুস্থতা বোধ করে। তখন বুঝতে পারে, সে অন্তঃসত্ত্বা। সর্বশেষ ১৮ মার্চ স্বামীকে নিয়ে সে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে জানতে পারে, সে কয়েক মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।