সুন্দরবনে আবারও আগুন, কাছে নেই পানির উৎস
Published: 23rd, March 2025 GMT
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ি-সংলগ্ন বনে আগুন লেগেছে। গতকাল শনিবার সকালে ট্যাপার বিলে ধোঁয়া দেখতে পান পাশের বাসিন্দারা। পরে বন বিভাগ ও স্থানীয়রা একসঙ্গে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। বিকেলের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিস। তবে কাছাকাছি জলাশয় না থাকায় পানি ছিটাতে পারেনি।
স্থানীয়দের ভাষ্য, বনাঞ্চলে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখার পর বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। বন বিভাগের সঙ্গে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকসহ শত শত বাসিন্দা আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেন। আগুন যেন আর ছড়াতে না পারে, সে জন্য বনের মাটির ওপর জমা হওয়া শুকনো লতাপাতা সরিয়ে নালা (ফায়ার লাইন) তৈরি করছেন। তবে কাছাকাছি নদী-খাল বা জলাশয় না থাকায় গতকাল পানি ছিটানো শুরু করা যায়নি।
গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় বনের মধ্যে এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে। তবে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, আগুন লেগেছে আরও আগে। পাতার আস্তরের মাঝে আগুন ছড়ানোর আগে ধোঁয়া বাড়ে না। ধোঁয়া বাড়ার পর সবাই দেখেছে। তা ছাড়া ঘটনাস্থল বন বিভাগের অফিস থেকে দূরে। এ কারণে খবর পেতে দেরি হয়েছে।
ফায়ার লাইন কাটার পাশাপাশি বন বিভাগ ভোলা নদীতে পাম্প বসিয়ে পাইপ টানতে শুরু করেছে গতকাল দুপুর থেকে। ঘন গাছপালার মাঝ দিয়ে চলাচল ও পাইপ নিয়ে যাওয়া কষ্টকর। সাড়ে ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিস। তবে সন্ধ্যা নামায় তারা কার্যক্রম স্থগিত করে বন থেকে বের হয়ে আসে।
রাজাপুরের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পান্না মিয়া জানান, সকালে সুন্দরবনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ির টেপার বিলে ধোঁয়া দেখা যায়। পরে দুপুর থেকে স্থানীয় শত শত মানুষ আগুন নিয়ন্ত্রণে বন বিভাগরে সঙ্গে কাজ শুরু করেন। তিনিও সেখানে যান। বেশ দুর্গম পথ। আশপাশে কোনো নদী-খাল নেই। তাই পানি নিতে দেরি হচ্ছে। আগুন যেন না ছড়ায় সে জন্য সরু পথ (ফায়ার লাইন) কাটা হয়েছে এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকায়।
বন রক্ষায় নিয়োজিত কমিউনিটি প্যাট্রলিং গ্রুপের (সিপিজি) সদস্য শাহ্ আলম বলেন, সুন্দরবন জোয়ারের সময় পানিতে ডুবে যাওয়ার কথা। ভোলা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বনভূমি বেশ উঁচু হয়ে গেছে। বর্ষা ছাড়া ওই এলাকা পানিতে ডোবে না। শুকনা মৌসুমে আগুন লাগে।
আগুন যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, এ জন্য স্থানীয় লোকজন নিয়ে বন বিভাগ কিছুটা পাতার স্তূপ সরালেও গভীর ফায়ার লাইন কাটতে পারেনি। তাই রাতে বাতাস উঠলে বা কয়েক বছরের জমা পাতার স্তূপের নিচ দিয়েও আগুন ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি স্টেশন ঘটনাস্থলে যায়। তবে তারা পানি দিতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা আফতাব-ই-আলম বলেন, দেড় কিলোমিটারজুড়ে ফায়ার লাইন কাটা হয়েছে। আশা করা যায় আগুন আর ছাড়াবে না। কোথাও ধোঁয়া আছে, কোথাও একটু একটু করে জ্বলছে। আলো না থাকায় রাতে কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। অর্ধেক পথ পাইপ টানা হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আগুন ততটা বেশি না, বেশি হলো ধোঁয়া। আগুন ছড়ানোর তেমন শঙ্কা নেই।
এর আগে গত বছর মের শুরুতে সুন্দরবনের একই রেঞ্জের আমোরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলায় আগুন লেগে প্রায় ৪ একর বনভূমি পুড়ে যায়। তখন প্রায় তিন দিন ধরে জ্বলে সুন্দরবন। তার আগে ২০২১ সালের ৩ মে শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানিতে আগুন লেগেছিল। শুকনো মৌসুমে গেল ২৩ বছরে সুন্দরবনে অন্তত ২৬ বার আগুন লেগেছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন দরবন ফ য় র ল ইন স ন দরবন বন ব ভ গ গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের বিএসএফের হাতে আটক ১৯ বাংলাদেশি মৎস্যজীবী
অবৈধভাবে ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশের অভিযোগে ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
বিএসএফ সূত্রে জানানো হয়েছে, সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের উত্তাল নদীতে দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে তাদের আটক করা হয়। ধৃত মৎসজীবীরা বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার পুরালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মাছ ধরার ট্রলার ও জালসহ তাদেরকে আটক করা হয়।
আরো পড়ুন:
কলকাতায় সম্মিলিত সেনা সম্মেলন উদ্বোধন নরেন্দ্র মোদির
অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি নরম হওয়ার দিন শেষ: ট্রাম্প
বিএসএফ জানায়, রবিবার সীমান্তের সুন্দরবন অংশে রুটিন টহল দেয়ার সময় গোসাবা রেঞ্জের বাঘমারি জঙ্গল এলাকায় বাংলাদেশি অবৈধ ট্রলারের উপস্থিতি নজরে আসে বিএসএফ জওয়ানদের। বিএসএফ জওয়ানদের পেট্রোল বোট ট্রলারটির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করতেই ট্রলারটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। দ্রুততার সঙ্গে ট্রলারের পিছু ধাওয়া করা হয়। দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে পরবর্তীতে পাকড়াও করা হয় বাংলাদেশি ট্রলারটিকে। অবৈধ অনুপ্রবেশ এর অভিযোগে আটক করা হয় এতে থাকা ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে। বাজেয়াপ্ত করা হয় ট্রলারটি।
বিএসএফ আরো জানায়, আটকের পর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগের বিপরীতে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারেনি। ফলে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাদের স্থানীয় সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আজ সোমবার তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হবে।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ