সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন বনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। রোববার সকালে বন বিভাগের ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর দেবনাথ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সন্ধ্যার দিকে চলে গেলেও শনিবার রাত ৯টা থেকে বন বিভাগের নিজস্ব পাম্প ও পাইপ লাইনের মাধ্যমে আগুনে পানি দেওয়া হয়। বনরক্ষী ও বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয় অর্ধশতাধিক স্বেচ্ছাসেবক রাতভর আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছেন। আগুন এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
রোববার সকাল আটটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। নিয়ন্ত্রণে আসা আবারও আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কিনা তা যাচাই করছেন বন বিভাগ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও করণীয় জানতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপন চন্দ্র দাসকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
শনিবার সকাল ৯টার দিকে ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজি টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন বনে ধোঁয়া দেখতে পান স্থানীয়রা। দুপুরের দিকে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে বন বিভাগ। বিকেলের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট।
ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ ও স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে বনের মধ্যে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ফায়ার লাইন (শুকনো পাতা, মাটি সরিয়ে নালা) তৈরি করে। রাত হয়ে যাওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা অভিযান শেষ করে চলে যান। তবে, বন বিভাগ নিজস্ব ব্যবস্থায় আগুন নেভানোর কাজ করে। বন বিভাগের সঙ্গে যোগ দেন অর্ধশতাধিক স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন দরবন আগ ন বন ব ভ গ র
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস