`সাজা মাইন্যা নিছি, কিন্তু ন্যায্য বিচার পাইনি’
Published: 23rd, March 2025 GMT
‘আমার ৫১টা গাভী ছিলো। প্রতিদিন ৩৫০-৩৬০ লিটার দুধ পাই। হাতিরপুলের বাড়ি থেকে আমার মা তিনটা ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিছে আমাকে বাড়ি করে দেওয়ার জন্য। আমার আয়কর নথির বাইরে কিছু পাইনি। তারপরও এই সাজা আমি মাইন্যা নিছি, কিন্তু ন্যায্য বিচার পাইনি।’
রবিবার (২৩ মার্চ) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক জাকারিয়া হোসেনের আদালত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আলোচিত সাবেক গাড়িচালক আব্দুল মালেককে পৃথক দুই ধারায় ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। রায় শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে নেওয়ার পথে সাংবাদিকদের আব্দুল মালেক এসব কথা বলেন।
মালেক বলেন, “আমি ৩৮ বছর ৯ মাস ১৮ দিন সরকারি চাকরি করেছি। সরকার আমাকে চার বছরের বেতন, ওভারটটাইমের টাকার হিসাব নিছে। বাকি ৩৫ বছর বিনা বেতনে চাকরি করেছি? আমার বাড়িতে আয়কর নথির বাইরে কিছু পাই নাই। মাত্র চার বছরের বেতন মামলার মধ্যে নথিভূক্ত করেছে। আর বাকি ৩৫ বছর বেতন ছাড়া চাকরি করলাম।'
তিনি বলেন, “হাতিরপুলের বাড়ি থেকে পৈত্রিক সম্পত্তি, দাদার সম্পত্তি। এই সম্পত্তি বিক্রি করে বাড়ি করি। অন্য যে সব সম্পদ দেখায়ছে কিছু পাই নাই। সরকার আমার নামে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকার সম্পদ দেখিয়েছি। অথচ ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার সম্পদের ট্যাক্স আমি দেয়। ট্যাক্স ফাইলের বাইরে কিছু নাই। আমারে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ মামলা দিছে।”
দণ্ডিত এ ব্যক্তি বলেন, “আপনারা জানেন করোনাকালীন সময় আমাদের অফিসে যে অকারেন্স ঘটছে। সে সময় সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমাদের নিরীহ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিছে। আর মিডিয়া দেখায় আমার কোটি কোটি টাকা সম্পদ। কিন্তু মামলায় তো এগুলি নাই। মামলায় দেখায়ছে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আমি ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার ট্যাক্স দেয়। এর বাইরে কিছু নাই। অথচ দেখেন ষড়যন্ত্রের মামলায় আমি সাজা পেলাম। টাকা কি আমি জেলখানায় নিয়ে গেছি। আমার সম্পদগুলি গেল কোথায়? মিথ্যা মামলা দিলো। কেন আমার নামে মিথ্যা মামলা দিলো। দেশে কি একটাও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি নাই। মিথ্যা মামলায় কারাভোগ করতেছি।”
জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরও ৬ মাস কারাভোগ করতে হবে। তথ্য গোপনের অভিযোগে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
অবৈধভাবে অর্জিত এক কোটি ৫০ লাখ ৩১ হাজার ৮১০ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
দুই ধারার সাজা একত্রে চলবে মর্মে আদালত আদেশ দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে তাকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের সাজা ভোগ করতে হবে বলে জানান দুদক প্রসিকিউটর আসাদুজ্জামান রানা।
রায় ঘোষণার সময় মালেককে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আব্দুল মালেক এবং তার স্ত্রী নার্গিস বেগমের আরেক মামলায় রায় প্রস্তুত না হওয়া পিছিয়ে আগামী ১৬ এপ্রিল ধার্য করা হয়েছে।
ঢাকা/মামুন/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
আয়কর ফাঁকির মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন খালেদা জিয়ার ভাগনে শাহরিন
আয়কর ফাঁকির মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগনে শাহরিন ইসলাম। এই মামলায় ১৭ বছর আগে তাঁর জেল-জরিমানা হয়।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এ আজ মঙ্গলবার সকালে শাহরিন ইসলাম আত্মসমর্পণ করেন, জামিনের আবেদন জানান।
প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন শাহরিন ইসলামের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন ও শেখ সাকিল আহমেদ রিপন।
আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, শাহরিন ইসলাম অসুস্থ। তিনি নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। ১৭ বছর আগে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য আয়কর অধ্যাদেশের মামলায় তাঁকে সাজা দেওয়া হয়েছিল। আজ তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানান।
আইনজীবীদের তথ্য অনুযায়ী, ৮১ লাখ টাকা আয়কর ফাঁকির মামলায় ২০০৮ সালে শাহরিন ইসলামকে আট বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। এ ছাড়া তাঁকে ৯২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
জামিনের আবেদনে শাহরিন ইসলাম উল্লেখ করেছেন, তিনি ১৯৯৮-১৯৯৯ কর বছর থেকে ২০০৬-২০০৭ কর বছর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন। তিনি সেখানে তাঁর সব সম্পদের তথ্য উল্লেখ করেছেন। বিচারিক আদালত থেকে তিনি ন্যায়বিচার পাননি।