কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কখনও বা অঝোর ধারা। শিলংয়ের আকাশ থেকে রোববার দুপুর থেকেই অনবরত বৃষ্টি ঝরেছে। মেঘালয়ের রাজধানীতে এমনিতেই প্রচুর ঠান্ডা। বজ্রবৃষ্টিতে তাই বেড়েছে শীতের প্রকোপ। মেঘালয় রাজ্যে মেঘের খেলা হবে না, তা কী করে হয়? তবে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলকে খেলতে হচ্ছে অন্য খেলা। মাঠের বাইরে ভারতীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে অনুশীলন ভেন্যু নিয়ে গত কয়েক দিন রীতিমতো যুদ্ধ চলছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের।
বাংলাদেশ কোচ ক্যাবরেরা চেয়েছিলেন গতকাল অন্তত মূল ভেন্যুর ঘাসের মাঠে অনুশীলন করতে। কিন্তু তাদের দেওয়া হয়েছে সেই ভেন্যুর পাশে আর্টিফিশিয়াল টার্ফের গ্রাউন্ড। বাংলাদেশ দলের টিম ম্যানেজার আমের খানের অভিযোগ, ভারতীয় দল মূল ভেন্যুতে অনুশীলন করতে পারলে অতিথি হয়ে তারা কেন পাবেন না সেই সুযোগ। কিন্তু স্বাগতিক ভারত নিয়মের কথা সামনে এনে বাংলাদেশ দলকে এই সুযোগ দেয়নি।
এ ব্যাপারে এএফসির নিয়ম হচ্ছে, ম্যাচের ৪৮ ঘণ্টা আগে নির্দিষ্ট শহরে পৌঁছাতে হবে অতিথি দলকে। ম্যাচ ভেন্যুতে সফরকারীদের আগের দিন অনুশীলন করতে দেওয়া বাধ্যতামূলক। তার এক দিন আগে অনুশীলন ভেন্যুর (ম্যাচ ভেন্যুর বাইরে) ব্যবস্থা করে দেওয়া স্বাগতিক ফেডারেশনের দায়িত্ব।
সেই হিসেবে ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচটি যে ভেন্যুতে হবে, সেই জওহরলাল স্টেডিয়ামে আজ বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় বাংলাদেশ দল অনুশীলন করবে। ম্যাচের পাঁচ দিন আগে শিলং চলে আসায় নেহু গ্রাউন্ডে প্রথম দিন অনুশীলন করার পর ভেন্যু নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন ক্যাবরেরা। শনিবার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের পাশের মাঠে অনুশীলন করতে গিয়ে ফ্লাডলাইট বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে জাতীয় দলকে। দেশ থেকে টাকা পাঠানোর পর সেদিন অনুশীলন করে বাংলাদেশ দল।
রোববার দুপুর পর্যন্ত অনুশীলন ভেন্যু চূড়ান্ত করতে পারছিল না বাফুফে। একবার বলেছে নেহু গ্রাউন্ড আবার জওহরলাল স্টেডিয়ামের টার্ফের মাঠ। এমন দোটানায় থাকতে থাকতে স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় অর্থাৎ অনুশীলন শুরুর ৩০ মিনিট আগে বাফুফে থেকে জানানো হয় টার্ফের মাঠেই হবে অনুশীলন। ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ ফুটবল দলের কর্তারা। পছন্দের ভেন্যু না পাওয়ায় ভারতের বিপক্ষে অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছেন জাতীয় দলের ম্যানেজার আমের খান, ‘আজ (রোববার) ম্যাচ কমিশনারের সঙ্গে সকালে কথা হয়েছে। আমরা বললাম, যেহেতু অফিসিয়াল ডে আর ভারত যেহেতু ম্যাচ ভেন্যুতে সকালে অনুশীলন করেছে, তাহলে আমাদেরও এই ভেন্যুতে অনুশীলন করার সুযোগ দেওয়া হোক। যখন দেখলাম সেই সুযোগ তারা দিচ্ছে না, তখন আমি বাফুফে সভাপতির সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানাই। তিনি এএফসির সঙ্গে কথা বলেন। তার পর আমাদের টার্ফের এই ভেন্যুতে অনুশীলন করার অনুমতি দিয়েছে।’
গুরুত্বপূর্ণ তিন ফুটবলার ইনজুরির কারণে এমনিতেই ভারতীয় দল কিছুটা দুর্বল। আর প্রতিপক্ষ দলে যেহেতু হামজা চৌধুরীর মতো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা ফুটবলার আছেন, স্বাগতিকরা চাইবে তিনি যেন দলের সঙ্গে মানিয়ে উঠতে না পারেন। সে জন্য নানাভাবে প্রতিপক্ষ দলকে ভারত বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। ভেন্যু নিয়ে এত নাটকীয়কতার পেছনে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও নিজেদের দায় এড়াতে পারে না। সৌদি আরবে গিয়ে যে ক্যাম্প করেছিল, তার প্রস্তুতি তো এক মাস আগে নিয়েছিল। তাহলে পাঁচ দিন আগে ভারতে আসার পরিকল্পনা নিলেও তার বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তারা। তাদের পরিকল্পনার ঘাটতি দেখছেন ফুটবল সংশ্লিষ্টরা।
আগে থেকেই যদি কোনো কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে অনুশীলন ভেন্যুসহ সবকিছু ঠিক করে যেত, তাহলে এই সমস্যা হতো না বলে জানান ম্যানেজার আমের খান, ‘জুনে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ঢাকায় বাংলাদেশের ম্যাচ। এখন থেকেই তাদের এক কর্মকর্তা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে এপ্রিলে বাংলাদেশে আসতে। তারা মাঠ ভেন্যু, অনুশীলন ভেন্যু দেখে যেতে চায়। আমি মনে করি, ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে আমাদের এখানে কাউকে আগে পাঠানো উচিত ছিল। তাহলে অন্তত এই সমস্যায় পড়তে হতো না।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল দ শ দল ত য় দল ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
পাবনায় অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় প্রতিবাদ অব্যাহত, একজন গ্রেপ্তার
পাবনা শহরের কালাচাঁদপাড়ার নিজ বাড়িতে জওহরলাল বসাক তুলশী (৭৭) নামের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে শহরের আবদুল হামিদ সড়কে জেলা ছাত্রদল, যুবদল ও সেচ্ছাসেবক দল মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনায় করা মামলায় জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ঢাকা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাঁর নাম–পরিচয় প্রকাশ করেনি।
আরও পড়ুনপাবনা এডওয়ার্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে কুপিয়ে জখম, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন২৮ জুলাই ২০২৫স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকেই জেলা শহরের বিভিন্ন মহলে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দুপুর ১২টার দিকে জেলা ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল যৌথভাবে মানববন্ধনের আয়োজন করে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সেই সঙ্গে অবিলম্বে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দাবি করা হয়।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুর মাসুম, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক হিমেল রানা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ইয়ামিন খান, সদস্যসচিব কমল শেখ, যুগ্ম আহ্বায়ক দীপঙ্কর সরকার প্রমুখ।
বক্তারা জানান, জহুরলাল বসাক সর্বজনশ্রদ্ধেয় একজন শিক্ষক। তিনি মানুষ গড়ার কারিগর। দেশব্যাপী তাঁর হাজার হাজার ছাত্র রয়েছে। তাঁর মতো একজন মানুষের ওপর এই হামলা ন্যক্কারজনক। এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবি করছেন মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা।
নুর মোহাম্মদ মাসুম বলেন, ‘স্যার (জওহরলাল বসাক তুলশী) একজন সাদামাটা ও হাসিখুশি মানুষ। তাঁর মতো মানুষের ওপর হামলা আমাদের জন্য লজ্জাকর। আমরা ছাত্র হিসেবে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করছি।’
এ প্রসঙ্গে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পরই পুলিশের বিভিন্ন শাখা আসামিদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঢাকা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি হামলার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁকে ঢাকা থেকে পাবনায় আনা হচ্ছে। ঘটনায় জড়িত অন্যজনকে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই বিস্তারিত বিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, আহত জওহরলাল বসাক পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। গত রোববার বিকেলে দুই ব্যক্তি তাঁর বাড়িতে ঢুকে তাঁকে কুপিয়ে আহত করে ও আসবাবপত্র তছনছ করে। এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছেন জওহরলাল বসাক। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার দুপুরে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এবং শহরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যানারে মানববন্ধন করেন।